আইন পেশায় ক্যারিয়ার গড়তে চাইলে করনীয় কি?
আপনি কি আইন পেশায় ক্যারিয়ার গড়তে চান ? আপনি কি হবেন? অ্যাডভোকেট না বিচারক না ব্যারিস্টার নাকি সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি ?
আপনি একজন অ্যাডভোকেট/বিচারক/ব্যারিস্টার, হবেন কীভাবে বা আইন পেশায় ক্যারিয়ার গড়তে হলে আপনাকে কি কি করতে হবে ?
চলুন জেনে নেওয়া যাক আইন পেশায় ক্যারিয়ার গড়তে চাইলে আপনার করনীয় বিষয় সমূহ :-
বাংলাদেশে যতগুলো আত্মনির্ভরকেন্দ্রিক পেশা রয়েছে তার মধ্যে আইন পেশা হল সবার পরিচিত একটি গুরুত্বপূর্ণ পেশা। এ পেশায় এসে আপনি যেমন অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারবেন, তেমনি সমাজে সবার কাছে নিজেকে উপস্থাপন করার সুযোগ পাবেন।
আপনিও পারেন আইন পেশায় এসে সফল ক্যারিয়ার গড়তে। সে জন্য কি কি করতে হবে কোথায় ভর্তি হতে হবে এবং এ পেশায় আর্থিক সুবিধা কি?
♣অ্যাডভোকেট হতে হলে/আইন পেশায় ক্যারিয়ার গড়তে হলে:-
- প্রথমে আপনাকে এইচএসসি পাসের পর যে কোনো সরকারি অথবা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন অনুষদে ভর্তি হতে হবে।
- এখানে আপনাকে চার বছরমেয়াদি এলএলবি অনার্স সম্পন্ন করতে হবে।
- এ ক্ষেত্রে যে কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদে ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে।
- আপনি ইচ্ছা করলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারেন। আর বাংলাদেশের প্রায় সব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আইনের জন্য এলএলবি অনার্স কোর্স চালু আছে। এখানে পড়তে হলে প্রতিষ্ঠানভেদে খরচ পড়বে ৩ থেকে ৫ লাখ টাকা।3
- আপনাকে এলএলবি অনার্স শেষে বার কাউন্সিল সনদ গ্রহণ করে সিএমএম জজকোর্ট, হাইকোর্ট ও সুপ্রিমকোর্টের জন্য আলাদা আলাদা বারের সনদ গ্রহণ করতে হবে।
- সনদ পাওয়ার জন্য প্রথমে বার কাউন্সিলের ফরমে আবেদন করতে হবে। এরপর তিন ধাপে তথা এমসিকিউ,লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে।
- আইনজীবী হতে চাইলে এলএলবি বা এলএলবি(অনার্স) অথবা এলএলএম পাশ করেই বাংলাদেশ বার কাউন্সল থেকে সনদপ্রাপ্ত হয়ে যে কোন আইনজীবী সমিতির সদস্য হয়ে সরাসরি আইনজীবী হয়ে যেতে পারেন।
♣বিচারক হতে হলে/ বিচারক পেশায় ক্যারিয়ার গড়তে হলে:-
এলএলবি অনার্স ও এলএলবি (পাস) কোর্সের পর জেএসসি অর্থাৎ জুডিসিয়াল সার্ভিস কমিশন / সহকারী জজ নিয়োগ পরীক্ষা দিতে পারবেন।
♣ব্যারিস্টারি ডিগ্রি নিতে হলে/আইন পেশায় ক্যারিয়ার গড়তে হলে:-
আইন পেশায় উচ্চতর ডিগ্রি নেয়ার জন্য আপনি বাংলাদেশের স্বীকৃত কোনো বিশ্ববিদ্যালয় অথবা আন্তর্জাতিক সংস্থা যেমন- সার্ক, কমনওয়েলথ, আইডিবি, ব্রিটিশ কাউন্সিল, আগাঁখান মেমোরিয়াল ট্রাস্ট থেকে স্কলারশিপ নিয়ে লন্ডনে ব্রিটিশ কাউন্সিলে বার-এট-ল অর্থাৎ ব্যারিস্টারি করতে পারবেন।
ব্যারিস্টারি করতে হলে আপনাকে লন্ডন বার কাউন্সিলের সনদ নিতে হবে। স্কলারশিপের জন্য আপনাকে জাতীয় অথবা আন্তর্জাতিক স্কলারশিপ বৃত্তি অফিসে যোগাযোগ করতে হবে।
চাকরির সুবিধা:-
- একজন আইনজীবী আইন পেশার পাশাপাশি যে কোনো কোম্পানির লিগ্যাল অ্যাডভাইজার হতে পারেন।
- যে কোনো ব্যাংকের নিজস্ব আইনজীবী অথবা জাতীয় বা আন্তর্জাতিক কোনো সংস্থার আইন উপদেষ্টা হিসেবে চাকরি করতে পারেন।
- আইন কমিশনেও চাকরির সুযোগ আছে। এখানে আয় ও সম্মান উভয়টি ভালো মানের।
আইনজীবী হওয়ার যোগ্যতা-অযোগ্যতা এবং পরীক্ষার প্রক্রিয়া সমূহ:-
এখন আমরা জানবো আইনজীবী হওয়ার যোগ্যতা-অযোগ্যতা এবং পরীক্ষার প্রক্রিয়া সমূহ সম্পর্কে ।আরো জানার চেষ্টা করবো আইনজীবী কাকে বলে? আইনজীবী হবার যোগ্যতা সমুহ কি কি? হাই কোর্টের আইনজীবী হবার যোগ্যতা কি? সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী হবার যোগ্যতা কি?
আমরা অনেকেই আছি যারা আইনজীবী হতে চাই। কিন্তু আমরা অনেকই জানিনা, কিভাবে কি করতে হবে বা কিভাবে পড়াশোনা করতে হবে এবং পড়াশোনা শেষ করে কি কি ধাপ সম্পন্ন করতে হবে।
এক সময় আইনজীবী হবার জন্য খুব সহজ একটি ধাপ ছিল কিন্তু বর্তমান সময়ে বিসিএস (Bangladesh Civil Service) পরীক্ষার মতো তিন ধাপের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পরই কেবল আইনজীবীদের সনদ প্রদান করা হয়।আমরা এই সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো, তো চলুন দেখে নেওয়া যাক।

আইনজীবীর সংজ্ঞাঃ-
আইনজীবী বলতে বুঝায় ,একজন এ্যাডভোকেট, ব্যারিস্টার, এটর্নি , আইনি উপদেশক বা পরামর্শক যিনি আইন ব্যবসায়ী ।যিনি আইনের তাত্ত্বিক বিষয়গুলির বাস্তব প্রয়োগের মাধ্যমে ব্যক্তির বা সংস্থার আইনি সমস্যা সমাধানের কাজ করে থাকেন তাকে আইনজীবী বলা হয়।
The Bangladesh Legal Practitioners and Bar Council Order 1972 এর অনুচ্ছেদ ২(ক) মতে, আইনজীবী বলতে এমন একজন ব্যক্তিকে বোঝায়, এই আইনের বিধান অনুসারে যার রোল(Roll) নাম্বার বার কাউন্সিলে অন্তভুক্ত আছে। রোল(Roll) বলিতে, যে নম্বর অনুসারে বার কাউন্সিলে আইনজীবীর নাম, তালিকা প্রস্তুত ও সংরক্ষণ করা হয় । অর্থাৎ বার কাউন্সিল আইনের বিধান অনুসারে, বার কাউন্সিলে যাহার রোল আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত, তিনিই আইনজীবী।
General Clauses Act 1897 এর ৩ ধারার ২(ক) দফা মতে, Advocate বলতে এমন একজন ব্যক্তিকে বোঝায়, যিনি “The Bangladesh Legal Practitioners and Bar Council Order 1972 [P.O 46 of 1972]” এর অধীনে তালিকাভুক্ত হয়েছেন তাহাকেই আইনজীবী বলা হয়।
দেওয়ানী কার্যবিধি ১৯০৮এর ২(১৫) ধারা মতে, আইনজীবী (Pleader) বলতে এমন একজন ব্যক্তিকে বোঝায়, যিনি অপরের পক্ষে আদালতে উপস্থিত হবার এবং যুক্তিতর্ক পেশ করার অধিকারী ।
ফৌজদারী কার্যবিধি ১৮৯৮’-এর ৪(১-ক) ধারা মোতাবেক, কোন আদালতের কার্যক্রমে ব্যবহৃত ‘আইনজীবী বলতে’ বর্তমানে কার্যকর কোন আইন মোতাবেক এরূপ কোন আদালতে আইন পেশা পরিচালনা করতে ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোন আইনজীবীকে বুঝায় এবং এরূপ কার্যক্রমে আদালতের অনুমতিক্রমে নিযুক্ত অন্য কোন ব্যক্তিও এই সংজ্ঞার অন্তভুক্ত।
আইনজীবী হবার যোগ্যতাঃ-
আইনজীবী হতে হলে একজন ব্যক্তিকে Bangladesh Legal Practitioner and Bar Council Order 1972 এর অনুচ্ছেদ – ২৭ অনুযায়ী নিম্নো লিখিত শর্তাবলী পূরণ করতে হবেঃ
আমরা জানি ১৯৭১ সালে পাকিস্তান হতে স্বাধীনতা অর্জনের পর বাংলাদেশে নিজস্ব সংবিধান গঠন এবং আইনী ব্যবস্থার প্রচলন হয়। আইনী কার্যকলাপ পরিচালনার জন্য বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় স্বতন্ত্র আইন বিভাগ চালু করা হয়।
দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বর্তমানে বহুসংখ্যক আইনজীবী তৈরি হচ্ছে এবং বিভিন্নভাবে তারা দেশের বিচার বিভাগে তাদের অবদান রেখে যাচ্ছে।
বাংলাদেশ লিগ্যাল প্রাকটিশনার এবং বার কাউন্সিল অর্ডার, ১৯৭২ এর বিধি: ৬০(১,২) বলা হয়েছে যে বিধি অনুযায়ী অ্যাডভোকেট হওয়ার জন্য প্রত্যেক ব্যক্তিকে সর্বনিম্ন ১০ বছর ধরে আইন পেশায় নিয়োজিত আছে এমন অ্যাডভোকেটের অধীন ৬ মাস শিক্ষানবিশ আইনজীবী হিসেবে কাজ করতে হবে। আবেদন পত্রের সাথে ১০ টি মামলা ( ৫ টি সিভিল মামলা এবং ৫ টি ফৌজদারি মামলা) জমা দিতে হবে। যে অ্যাডভোকেটের অধীন শিক্ষানবিশ নেওয়া হয়, তার সাথে চুক্তি করার মেয়াদ থেকে ৩০ দিনের মধ্যে উক্ত চুক্তিপত্রসহ আবেদনপত্র বার কাউন্সিলে পৌঁছাতে হবে।
মনে রাখা প্রয়োজন আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্তির জন্য ১০ বছর আইন পেশায় অভিজ্ঞ, পেশায় অবস্থানরত আইনজীবীর নিকট ৬ মাস আইন চর্চায় নিওজিত থাকতে হবে।উক্ত সময়ে ৫ টি দেওয়ানী ও ৫ টি ফৌজদারী মোট=১০ টি মামলা সম্পর্কে জ্ঞান থাকতে হবে।
অনুচ্ছেদ ২৭(১):- অনুযায়ী আইনজীবী হবার যোগ্যতাঃ-
- তাকে বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে।
- নূন্যতম বয়স ২১ বছর হতে হবে ( বয়সের সর্বোচ্চ এর কোন সীমা নেই।
- আইন বিষয়ে ডিক্রি থাকতে হবে ( বার কাউন্সিল কর্তৃক স্বীকৃত)।
বাংলাদেশের যেকোন স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় হতেবা বার কাউন্সিল কর্তৃক স্বীকৃত দেশের বাইরের কোন বিশ্ববিদ্যালয় হতে বা ১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চের পূর্বে হলে পাকিস্তানের যেকোন স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় হতে বা ১৯৪৭ সালের ১৪ই আগষ্টের পূর্বে হলে ভারতবর্ষের যেকোন স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় হতে বা ব্যরিস্টার এট ল’ থাকলে;
4.নিবন্ধন ফি দিতে হবে এবং বার কাউন্সিলের অন্যান্য শর্তাবলী পূরণ করতে হবে।
উপরে উল্লেখিত শর্তগুলো পূরণ করলে যে কেউ বার কাউন্সিলের নির্ধারিত ফরম পূরণ করে জমা দিতে পারবেন। যেটাকে ১ম ইন্টেমিশন ফর্ম বলা হয়।সেটার সঙ্গে আরো যা দিতে হবে সেগুলো হলো:
১ম ধাপঃ–নিচে উল্লেখিত সকল ধাপ বা প্রক্রিয়া সমূহ একজন ১০ বছরের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন সিনিয়র আইনজীবী কর্তৃক স্বাক্ষরিত এবং এ্যাটাস্টেট হতে হবে।
- Bar Council Order এর অনুচ্ছেদ ২৭ এ যে সকল যোগ্যতার কথা বলা হয়েছে তার সন্তোষজনক সাক্ষ্য প্রমাণ দাখিল করতে হবে।
- আবেদনকারীর চরিত্র ও আচরণ সম্পর্কে দুজন স্বনামধন্যব্যক্তির প্রশংসাপত্র জমা দিতে হবে।
- আবেদনকারীর জন্ম তারিখের সন্তোষজনক সাক্ষ্য প্রমাণ হিসেবে জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি জমা দিতে হবে।
- ফরমে উল্লিখিত তথ্য সম্পূর্ণ নির্ভুল ও সত্য এইমর্মে একটি এফিডেফিট প্রদান করতে হবে।
- ১ম ইন্টেমিশন ফর্ম জমা দেওয়ার সময় ৮০০+৪০০=১২০০ টাকা প্রদানের দুটি রসিদ ফরমের সাথে প্রদান করতে হবে।
১ম ধাপঃ- ১ম ইন্টেমিশন ফর্ম জমা দেওয়ার পরে অ্যাডভোকেট হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার আগে তাঁকে একজন ১০ বছরের অভিজ্ঞ সিনিয়র আইনজীবীর অধীনে ধারাবাহিকভাবে ছয় মাস শিক্ষানবিশকাল অতিক্রম করতে হবে এবং ৬ মাস অতিক্রম করার পর আবেদনকারীকে ২য় ইন্টেমিশন ফর্ম জমা দিতে হবে।
২য় ধাপঃ- ২য় ইন্টেমিশন ফর্ম জমা দেওয়ার সময় যে সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবেঃ-
- বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের অনুকূলে পরীক্ষার ফি বাবদ নির্ধারিত টাকার ব্যাংক ড্রাফট বা পে-অর্ডার বা ব্যাংকে বার কাউন্সিলের অ্যাকাউন্টে নগদ জমা দেওয়ার রসিদ প্রদান করতে হবে।
- ২য় ইন্টিমিশন ফর্ম পূরণ করতে হবে।
- ১০ বছর প্রাকট্রিসরত সিনিয়র আইনজীজীর সাথে ৬ মাস কাজ করার প্রমাণ স্বরূপ একটি হলফনামা বা এফিডেভিট জমা দিতে হবে।
- ৫টি দেওয়ানী এবং৫টি ফৌজদারী মামলার তালিকা জমা দিতে হবে।
- শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ, চারিত্রিক সনদ ও ৪কপি ছবি যা সিনিয়র আইনজীবী কর্তৃক স্বাক্ষরিত এবং এ্যাটাস্টেট হতে হবে।
এবার আপনার পাঠানো কাগজপত্র বার কাউন্সিল কর্তৃক গৃহীত হওয়ার পর বার কাউন্সিল আপনার বরাবর একটি রেজিস্ট্রেশন কার্ড ইস্যু করবে। সেখানে আপনাকে একটা রেজিস্ট্রেশন নম্বর দেওয়া হবে। সে নম্বর দিয়ে পরবর্তীতে আপনাকে পরীক্ষার প্রবেশপত্র (Admit Card) দেয়া হবে। আপনি (Admit Card) টি নিজস্ব বার থেকে বা বার কাউন্সিল থেকে নিদিষ্ট তারিখে সংগ্রহ করতে পারবেন।
অনুচ্ছেদ ২১(১)(ক):- মোক্তারগণও আইনজীবী হতে পারবেন।একজন ব্যক্তি ৭ বছর মোক্তার হিসেবে কাজ করলে এবং আইন বিষয়ে ডিক্রি অর্জন করলে আইনজীবী তালিকা ভুক্তি পরীক্ষায় অংশ গ্রহন করতে পারবেন।
৩য় ধাপঃ– পরীক্ষা পদ্ধতিঃ-
বার কাউন্সিল পরীক্ষার সিলেবাসঃ– মোট ৭টি বিষয়ের ওপর এ্যাডভোকেট তালিকাভুক্তির পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।
- দেওয়ানি কার্যবিধি,১৯০৮
- সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইন, ১৮৭৭
- তামাদি আইন, ১৯০৮
- সাক্ষ্য আইন, ১৮৭২
- ফৌজদারি কার্যবিধি, ১৮৯৮
- দণ্ডবিধি, ১৮৬০
- বার কাউন্সিল অর্ডার, ১৯৭২
আবেদন কারী প্রার্থীদের প্রথমেই ১০০ নম্বরের (MCQ) পরীক্ষা নেওয়া হবে। MCQ উত্তীর্ণ প্রার্থীদের এরপর ১০০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেওয়া হবে। উভয় পরীক্ষায় পাস নম্বর ৫০। লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীরা ১০০ নম্বরের মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নিবেন। যার পাশ নম্বর ২৫।
মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার মাধ্যমেই একজন প্রার্থী চূড়ান্ত হিসেবে আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হতে পারবেন।বার কাউন্সিলের সদস্য পদ লাভের মাধ্যমেই সে দেশের একজন আইনজীবীর মর্যাদা লাভ করবে।
অনুচ্ছেদ ২৭(৩):- আইনজীবী হবার অযোগ্যতা: দুটি অযোগ্যতা থাকলে আইনজীবী হতে পারবেন না।
- সরকারী চাকুরী থেকে নৈতিক অবক্ষয়ের কারণে বরখাস্ত হলে বা অপসারিত হলে, অপসারিত হবার পরবর্তী দু, বছর অতিক্রান্ত না হওয়া পর্যন্ত।
- নৈতিক অবক্ষয়জনিত কারনে দন্ডিত হলে, দন্ডিত হবার পরবর্তী ৫ বছর অতিক্রান্ত না হওয়া পর্যন্ত।
সুতরাং এক কথায় সরকারী চাকুরী থেকে বরখাস্ত হলে = ২ বছর , দন্ডিত হলে =৫ বছর আইনজীবী তালিকা ভুক্তী পরীক্ষায় অংশগ্রহন করতে পারবেন না।
বার কাউন্সিলের পরীক্ষায় পাশ করলেই সে আইনজীবী হিসেবে তার কর্মজীবন শুরু করতে পারে এবং ২ বছর নিম্ন আদালতে কাজ করার অভিজ্ঞতা থাকলে অথবা এল এল এম ডিগ্রি থাকলে ১ বছর নিম্ন আদালতে কাজ করার অভিজ্ঞতা থাকলে সেই ব্যক্তি সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী হওয়ার লাইসেন্স লাভের জন্য বার কাউন্সিলে আবেদন করতে পারবেন।
হাই কোর্টের আইনজীবী হবার যোগ্যতাঃ-

অনুচ্ছেদ-২১ঃ– অনুযায়ী বাংলাদেশের কোন অধঃস্তন আদালতে নুন্যতম ২ বছর আইন পেশায় অভিজ্ঞতা থাকতে হবে অথবা আইনে সম্মান পাস বা বাংলাদেশের বাইরে কোন আদালতে আইনজীবী হিসেবে আইন পেশায় নিওজিত থাকতে হবে। ব্যারিষ্টারও এর অন্তভুক্ত হবে। এছাড়াও বার কাউন্সিলের অন্যান্য শর্ত পূরণ করতে হবে।
হাই কোর্টের আইনজীবী হবার জন্য ২ বছর নিম্ন আদালতে কাজ করার অভিজ্ঞতা থাকলে অথবা এল এল এম ডিগ্রি থাকলে ১ বছর নিম্ন আদালতে কাজ করার অভিজ্ঞতা থাকলে সেই ব্যক্তি হাইকোর্র্টের আইনজীবী হিসেবে প্রাকটিস করার সুযোগ পাবেন বা হাইকোর্টের আইনজীবী হওয়ার লাইসেন্স লাভের জন্য বার কাউন্সিলে আবেদন করতে পারবেন।
আবেদনের পর বার কাউন্সিলের ১০০ মার্কের লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবার পর পরবর্তী ধাপ সাক্ষাৎকারের এর পর সে যদি যোগ্য প্রার্থী হয় তবে সে ব্যক্তি হাই কোর্টে প্র্যাকটিসের লাইন্সেস পাবে।
হাইকোর্টের আইনজীবী হওয়ার পদ্ধতি সম্পর্কে আরো বিস্তারিতঃ-
- বার কাউন্সিল পরীক্ষার মাধ্যমে যে কোন বার এসোসিয়েশনে অ্যাডভোকেট হিসাবে তালিকাভুক্তহতে হবে।
- বাংলাদেশের কোন নিম্ন আদালতে কমপক্ষে ২ বছর প্র্যাকটিস করতে হবে ।
- আইন বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রী এবং অ্যাডভোকেট হিসাবে বিদেশের কোন আদালতে সরকারের অফিসিয়াল গেজেটে নির্দেশিত পন্থায় প্র্যাকটিস করেছেন ।
- যুক্তরাজ্যের বারে ব্যারিস্টার হিসাবে Call পেয়েছেন অথবা কোন স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় থেকেLL.M এ 2nd class (50%mark) পেয়েছেন এবং সুপ্রীম কোর্টের একজন সিনিয়র আইনজীবীর চেম্বারে কমপক্ষে ২ বছর কাছ করেছেন ।
- বিচার বিভাগীয় অফিসার হিসাবে অন্ততঃ দশ বছর কাজ করেছেন। এরূপ অফিসারকে লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রণের আবশ্যকতা নেই।
হাইকোর্টের আইনজীবী হওয়ার দ্বিতীয় পর্যায়ের শর্তাবলীঃ
- কোন অ্যাডভোকেট যিনি উপরিউক্ত শর্তাবলী পূরন করেছেন তাকে নির্দেশিত পন্থায় হাইকোর্ট বিভাগে আইন চর্চা করার অনুমতি চেয়ে আবেদন জানাতে হবে। আবেদন পত্র বার কাউনসিলে জমা দিতে হবে এবং উক্ত আবেদনপত্রে নিম্নোক্ত সংযুক্তি থাকতে হবে।
- সংশ্লিষ্ট বার এসোসিয়েশন হতে একটি সনদ এই মর্মে যে, উক্ত অ্যাডভোকেট তার বার এসোসিয়েশনের নিয়মিত সদস্য এবং ২ বছর আইন চর্চা করেছেন বা যুক্তারাজ্যের বারেতাকে ব্যারিস্টার হিসাবে Call করেছে এই মর্মে একটি সনদ বা কোন স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় হতে LL.M এ উচ্চতর দ্বিতীয় বিভাগ অর্জন করেছেন ।
- কোর্টের একজন সিনিয়র অ্যাডভোকেটের চেম্বারে কমপক্ষে দুই বছর কাজ করেছেন ।
- দেওয়ানী বা ফৌজদারী বা উভয় মামলা যা নিয়ে উক্ত অ্যাডভোকেট সংশ্লিষ্ট আদালতে উপস্থিত হয়েছে এরূপ ২৫টি মামলার তালিকা ।
- হাইকোর্টের অনুমোদন ফি ৫,০০০ টাকা প্রদানের রশিদ কিংবা ব্যাংক ড্রাফট।
- উক্ত অ্যাডভোকেটের ১ কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি।
- প্রত্যেক আবেদনকারীকে Bangladesh Legal Paractitioners and Bar Council Rules, 1972 (65(2)) অনুযায়ী লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণপূর্বক পাশ করতে হবে।
সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের আইনজীবী হবার যোগ্যতাঃ-

সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের আইনজীবী হতে হলে হাই কোর্টে ৫ বছর সফল ভাবে প্র্যাকটিসের পর একজন আইনজীবী সুপ্রিম কোর্টে আইনজীবী হিসেবে যোগদানের যোগ্যতা অর্জন করে এবং আবেদন করার পর তা বাংলাদেশ বার কাউন্সিল ও সুপ্রিম কোর্টের বিচারক কর্তৃক মূল্যায়নের মাধ্যমে তাকে লাইসেন্স প্রদান করা হয়।
আইনজীবী হতে হলে যেসব পোশাক ও জিনিষপত্র প্রয়োজন তা জেনে নেইঃ-

অর্ধস্তন আদালতের আইনজীবীদের পোশাক সম্পর্কে “Civil Rules and Order 1935, Part 1″ এর ৩৭ তম অধ্যায়ের ৮২৫, ৮২৬ বিধিতে বলা হয়েছে।
বিধি ৮২৫- সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবীগণ অর্ধস্তন আদালতে উপস্থিত হবার সময় সুপ্রীম কোর্টের ন্যায় একই প্রকার গাউন পরিধান করবেন ।
বিধি ৮২৬- আদালতে উপস্থিত কালে অর্ধস্তন আদালত সমূহের আইনজীবীগণ নিমোক্ত বিশেষ পোশাক পরিধান করিবেন –
(১) পাজামার সহিত মানানসই কালো বা সাদা চাপকান, আচকান বা বোতামযুক্ত লম্বা কোর্ট এবং বিএ গাউনের কাটা এবং কালো আকৃতির আলপাকা গাউন, অথবা
(২) ইউরোপীয় পোশাক পরিধান করিলে কালো বা সাদা পাজামা সহ কালো কোট এবং কালো বা গাঢ় কালো রং এর বন্ধনী এবং গাউন ।
টীকা ১। বিধিতে “সাদা” বলিতে সাদা ফিকে ক্রিম রং এর ন্যায় সরল বিমর্ষ রং, প্রাকৃতিক টাসর ইত্যাদিকে বুঝায়।
টীকা ২। গাউন পরিধান বাধ্যতামূলক ।

পরিশেষে বলা যায় যে আইনজীবী হওয়ার যোগ্যতা-অযোগ্যতা এবং পরীক্ষার প্রক্রিয়া সমূহ আইনজীবী হতে হলে আপনার প্রয়োজন সে সম্পর্কে আপনার অবশ্যই ধারণা রাখা দরকার । ধন্যবাদ
লেখকঃ ল ফর ন্যাশনস, ইমেইলঃ lawfornations.abm@gmail.com, মোবাইল: 01842459590.
আইন সম্পর্কে আরো জানতে বিডি ‘ল’ নিউজ এর সঙ্গেই থাকুন ধন্যবাদ
Discussion about this post