বিডি ল নিউজঃ তথ্য ও প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারার কথা শুনলেই অনেকের গায়ে জ্বর উঠে যায়। এই ধারা বাতিলেরও আহবান উঠেছে সহস্রবার। কিন্তু বাতিল বা সংশোধন হয়নি। সেই ধারাতেই অবশেষে মামলা করতে হলো আইনমন্ত্রীর এলাকার নেতাকর্মীদের, অপপ্রচার বন্ধের উদ্দেশ্যে।
ফেসবুকের একাধিক ফেক আইডি থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ কসবা-আখাউড়া আসনের সংসদ সদস্য ও আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক এবং তার ব্যক্তিগত সহকারী স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা অ্যাড. রাশেদুল কায়ছার ভূইয়া জীবনের নামে মিথ্যা তথ্য প্রকাশের ঘটনায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে স্থানীয় অওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে। এ ঘটনায় দলীয় নেতাকর্মীদের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত তথ্য ও প্রযুক্তি আইনের ৫৭ধারায় ৭টি মামলা রুজু করা হয়েছে। এসব মামলার কোনোটিতে সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলম এবং কেন্দ্রীয় যুবলীগ নেতা শ্যামল কুমার রায়সহ তাদের অনুসারীদের আসামি করা হয়েছে। আবার কোনোটিতে অজ্ঞাতদের আসামি হিসেবে দেখানো হয়েছে।
তথ্য প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় দায়ের করা একটি মামলার বাদী কসবা ছাত্রলীগের সহসভাপতি মো. ইব্রাহিম গণমাধ্যমকে বলেন, “ক্রস ফায়ার’, ‘জাগ্রত জনতা’, ‘জয় হাসান’, ‘সৈয়দ মহসিন’ সহ মোট ৩৬টি ফেসবুক আইডি থেকে আমাদের নেতা আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক ও উনার ব্যক্তিগত সহকারী অ্যাড. রাশেদুল কায়ছার ভূইয়া জীবনের বিরুদ্ধে অশ্লিল ভাষায় নিয়মিত কুৎসা রটানো হচ্ছে। এসব আইডি থেকে কখনও কখনও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জড়িয়েও কুৎসিত ভাষায় কথাবার্তা লিখা হচ্ছে। আবার এসব আইডি থেকে সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাড. মোহাম্মদ শাহ আলম ও যুবলীগ নেতা শ্যামল রায়ের পক্ষে বিভিন্ন লেখা আসে। আমরা মনে করি এসবের পেছনে তাদের যোগসাজশ আছে। এটা তাদের অপকর্ম। তবে আমি আমার মামলায় কারোর নাম সরাসরি উল্লেখ করিনি। পুলিশি তন্ততে প্রকৃত দোষীরা বের হয়ে আসবে বলে আমি মনে করি।’
এ ব্যাপারে কসবা উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক এমজে হাক্কানী বলেন, ‘নামে বে-নামে ফেসবুকের একাধিক ফেক আইডি থেকে আমাদের আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক ও উনার ব্যক্তিগত সহকারী কসবা আওয়ামী লীগ নেতা অ্যাড. রাশেদুল কায়ছার ভূইয়া জীবনের বিরুদ্ধে নানা ধরনের কুৎসা রটানো হচ্ছে। এসব ঘটনার সঙ্গে কসবা-আখাউড়ার আওয়ামী লীগের সাবেক সদস্য সংসদ মোহাম্মদ শাহ আলম এবং কেন্দ্রীয় যুবলীগ নেতা শ্যামল কুমার রায়সহ তাদের অনুসারীরা জড়িত বলে আমরা মনে করি। এসব ফেক আইডির মাধ্যমে আমাদের কসবা-আখাউড়ার উন্নয়নকে বাধাগ্রস্থ করার একটা অপ-প্রয়াস। এ ঘটনায় তথ্য প্রযুক্তি আইনে একাধিক মামলা হয়েছে। আমি দোষীদের গ্রেফতারের দাবি করছি।’
কসবা পৌরসভার মেয়র এমরান উদ্দিন জুয়েল বলেন, ‘এগুলো করছে সাবেক সদস্য সংসদ মোহাম্মদ শাহ আলম ও তার অনুসারীরা। তারা ভেবেছিল আমাদের আইনমন্ত্রীকে ব্যবহার করে তারা এলাকায় দালালী বাটপারি করবে। কিন্তু মন্ত্রী দালাল বাটপার পছন্দ করেন না। বিধায় তারা হতাশাগ্রস্থ হয়ে ফেসবুকের মাধ্যমে কুৎসা রটাচ্ছেন। যার কারণে কসবা উপজেলার বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সোচ্চার হয়ে মানববন্ধন এবং তাদের কুশপুত্তলিকা দাহ করছেন। আমরা দোষীদের গ্রেফতার চাই।’
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন সরকার বলেন, ‘ফেসবুকে কুৎসা রটানো হচ্ছে, এটা সত্য। তবে কে কারা এর সঙ্গে জড়িত আমরা তা এখনও স্পষ্ট করে বলতে পারছি না। আমরা জেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে মনে করি, প্রকৃত দোষীদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা উচিত।’
এ ব্যাপারে সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের-সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলম এবং কেন্দ্রীয় যুবলীগ নেতা শ্যামল কুমার রায়ের মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
মামলা সর্ম্পকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া কসবা-আখাউড়া পুলিশের সার্কেল সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার আব্দুল করিম বলেন, ‘গত বুধ ও বৃহস্পতিবার পৃথকভাবে তথ্য প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় মোট ৭টি মামলা হয়। এসব মামলায় কোনোটিতে সাবেক সদস্য সংসদ মোহাম্মদ শাহ আলম এবং কেন্দ্রীয় যুবলীগ নেতা শ্যামল কুমার রায়সহ তাদের অনুসারীদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। আবার কোনোটিতে অজ্ঞাতনামাদের আসামি করা হয়েছে। পরে আমরা এ মামলাগুলো অনুমোদনের জন্যে পুলিশ সদর দফতরে পাঠাই। সেখান থেকে অনুমোদনের পর মামলাগুলো নথিভুক্ত করা হয়। বর্তমানে মামলাগুলো তদন্তের জন্যে সিআইডি’র বিশেষজ্ঞদের কছে পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে তথ্য আসলে মামলার পরবর্তী আপডেট জানা যাবে।’
এদিকে ফেসবুকের ফেক আইডির বিরুদ্ধে গত কয়েক দিন ধরেই ক্ষোভ প্রকাশ করছেন কসবা বিনাউটি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এ ঘটনার প্রতিবাদে শনিবার কসবা সৈয়দাবাদ ও কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ সমাবেশও হয়। এর আগে ফেক আইডিতে কুৎসা রটানোর প্রতিবাদে গত বৃহস্পতিবার দুপুরে পৌর শহরের সুপার মার্কেট সামনে নেতাকর্মীরা হাতে হাত রেখে মানববন্ধনে অংশ নেন।
মামলার তদন্তেই বের হয়ে আসবে কে বা কারা এসব অপপ্রচার চালাচ্ছে। তাছাড়া, সরকারও এখানে নজর দিতে পারে বিশেষভাবে, যেহেতু দ্বন্দ্ব এখানে আওয়ামীলীগের নিজেদের মধ্যেই, সুতরাং নিজেরাই ঝামেলা মিটিয়ে ফেলবে, আশা করা যায়।
Discussion about this post