ডেস্ক রিপোর্ট
প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের আগামী ৩০ ডিসেম্বর শেষ কর্মদিবস।৩১ ডিসেম্বর তিনি অবসরে যাবেন।প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের বয়স ৬৭ বছর পূর্ণ হতে চলেছে।এরই মধ্যে আইনাঙ্গনে জল্পনা-কল্পনা শুরু হয়েছে কে হচ্ছেন নতুন প্রধান বিচারপতি।
রাষ্ট্রপতি সংবিধানের ৯৫ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দেন। সংবিধানের ৯৫ (১) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘প্রধান বিচারপতি রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিযুক্ত হইবেন এবং প্রধান বিচারপতির সহিত পরামর্শ করিয়া রাষ্ট্রপতি অন্যান্য বিচারককে নিয়োগদান করিবেন।’
প্রধান বিচারপতি বাদে বর্তমানে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে চারজন বিচারপতি আছেন। জ্যেষ্ঠতা অনুসারে তারা হলেন- বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলী, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী, বিচারপতি মো. নুরুজ্জামান ননী ও বিচারপতি ওবায়দুল হাসান। তাদের মধ্যে একজন হবেন দেশের ২৩তম প্রধান বিচারপতি।
সংবিধানে এ বিষয়ে বিস্তারিত আর কিছু বলা হয়নি। তবে দীর্ঘদিনের রীতি অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি আপিল বিভাগের যে বিচারপতিকে প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেবেন সে বিষয়ে সম্মতি দিয়ে প্রথমে তা আইন মন্ত্রণালয়কে জানাবেন। এরপর মন্ত্রণালয় থেকে ওই বিচারপতির ব্যাপারে ফাইল প্রস্তুত করে তা প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হবে। প্রধানমন্ত্রীর স্বাক্ষরের পর বিষয়টি রাষ্ট্রপতির কাছে যাবে। রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষরের পর প্রধান বিচারপতি নিয়োগের গেজেট জারি করবে আইন মন্ত্রণালয়।
আপিল বিভাগে বর্তমানে চারজন বিচারপতি আছেন। জ্যেষ্ঠতা অনুযায়ী বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলী প্রথমে রয়েছেন। অপর তিন বিচারপতি হলেন- বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী, বিচারপতি মো. নুরুজ্জামান ননী ও বিচারপতি ওবায়দুল হাসান।
এ প্রসঙ্গে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন ঢাকা পোষ্টকে বলেন, বর্তমান প্রধান বিচারপতির মেয়াদ শেষ হলে রাষ্ট্রপতি প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দেবেন। আপিল বিভাগের বিচারপতিদের মধ্য থেকে তিনি যেকোনো একজনকে প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দিতে পারেন। সংবিধানে প্রধান বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতিকে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।
রাষ্ট্রপতি সংবিধানের ৯৫ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দেন। সংবিধানের ৯৫ (১) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, প্রধান বিচারপতি রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিযুক্ত হইবেন এবং প্রধান বিচারপতির সহিত পরামর্শ করিয়া রাষ্ট্রপতি অন্যান্য বিচারককে নিয়োগদান করিবেন
সংবিধানের ৯৭ অনুচ্ছেদ বলা হয়েছে, ‘প্রধান বিচারপতির পদ শূন্য হলে কিংবা অনুপস্থিতি, অসুস্থতা বা অন্য কোনো কারণে প্রধান বিচারপতি তার দায়িত্ব পালনে অসমর্থ বলে রাষ্ট্রপতির কাছে সন্তোষজনকভাবে প্রতীয়মান হলে ক্ষেত্র মতে অন্য কোনো ব্যক্তি অনুরূপ পদে যোগদান না করা পর্যন্ত বা প্রধান বিচারপতি স্বীয় কার্যভার পুনরায় গ্রহণ না করা পর্যন্ত আপিল বিভাগের অন্যান্য বিচারকের মধ্যে যিনি কর্মে প্রবীণতম, তিনি অনুরূপ কার্যভার পালন করবেন।’
প্রধান বিচারপতি নিয়োগ-সংক্রান্ত সংবিধানের ৯৫ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, রাষ্ট্রপতি প্রধান বিচারপতি নিয়োগ করবেন এবং প্রধান বিচারপতির সঙ্গে পরামর্শ করে রাষ্ট্রপতি অন্যান্য বিচারক নিয়োগ দেবেন।
প্রধান বিচারপতি নিয়োগের বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতিকে প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া উচিত। প্রধান বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্রে জ্যেষ্ঠতার নীতি অনুসরণ করা প্রয়োজন বলে আমি মনে করি।’
বিচার প্রশাসনে শৃঙ্খলা আনার জন্য জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে শুধু প্রধান বিচারপতি নয়, আপিল বিভাগে বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্রেও জ্যেষ্ঠতার নীতি অনুসরণ করা উচিত। সংবিধানও জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ সমর্থন করে
সুপ্রিম কোর্ট বারের সম্পাদক ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমাদের বিচার বিভাগে জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন, অনেকাংশে রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগ, বিচারপতি নিয়োগে নানা অনিয়মের কারণে বিচার বিভাগের প্রতি মানুষের আস্থার জায়গাটা অনেকাংশে হ্রাস পেয়েছে। আমি বিশ্বাস করি, সংবিধানে প্রধান বিচারপতি নিয়োগের ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির কাছে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বিচার বিভাগের প্রতি আস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য, বিচার প্রশাসনে শৃঙ্খলা আনার জন্য জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে শুধু প্রধান বিচারপতি নয়, আপিল বিভাগে বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্রেও জ্যেষ্ঠতার নীতি অনুসরণ করা উচিত। সংবিধানও জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ সমর্থন করে।’
আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতিকে প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগের বাধ্যবাধকতা আছে কি না— এ প্রশ্নের জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘প্রধান বিচারপতির অনুপস্থিতিতে সংবিধানে অস্থায়ী প্রধান বিচারপতি নিয়োগের ব্যাপারে যিনি কর্মে প্রবীণতম তার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু প্রধান বিচারপতি নিয়োগের ব্যাপারে কিছু বলা হয়নি। বলা হয়েছে, রাষ্ট্রপতি প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দেবেন। তাই রাষ্ট্রপতি আপিল বিভাগের বিচারপতিদের মধ্য থেকে যেকোনো বিচারপতিকে প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দিতে পারেন।’
আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতিকে প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া উচিত। প্রধান বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্রে জ্যেষ্ঠতার নীতি অনুসরণ করা প্রয়োজন বলে আমি মনে করি।
২০১৮ সালের ২ ফেব্রুয়ারি আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি আবদুল ওয়াহাব মিয়াকে নিয়োগ না দিয়ে রাষ্ট্রপতি বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনকে প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেন। বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনকে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দেওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে পদত্যাগ করেন বিচারপতি আব্দুল ওয়াহাব মিয়া।
যদিও ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে প্রধান বিচারপতি নিয়োগে জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘিত হয়নি। ২০০৩ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় থেকে এর প্রচলন শুরু। এখন পর্যন্ত জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন হওয়াদের অন্তত দুজন পরে প্রধান বিচারপতি হন। বাকি দুজনের একজন আপিল বিভাগে আর না বসে অবসরে যান। আরেকজন নীরবে পদত্যাগ করেন। বিচারপতি ফজলুল করিম চারবার জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘনের শিকার হলেও পঞ্চমবার প্রধান বিচারপতি হন।
প্রধান বিচারপতির অনুপস্থিতিতে সংবিধানে অস্থায়ী প্রধান বিচারপতি নিয়োগের ব্যাপারে যিনি কর্মে প্রবীণতম তার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু প্রধান বিচারপতি নিয়োগের ব্যাপারে কিছু বলা হয়নি। বলা হয়েছে, রাষ্ট্রপতি প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দেবেন। তাই রাষ্ট্রপতি আপিল বিভাগের বিচারপতিদের মধ্য থেকে যেকোনো বিচারপতিকে প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দিতে পারেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন।
২০০৩ সালে বিএনপি প্রথম জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে। তারা দুজন বিচারপতিকে (এম এম রুহুল আমিন ও ফজলুল করিম) ডিঙিয়ে বিচারপতি কে এম হাসানকে প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেয়। পরে অবশ্য ওই দুজন প্রধান বিচারপতি হন।
Discussion about this post