প্রশ্নঃ আসসালামুয়ালাইকুম, আমার বাবার নামে আমাদের বাড়ির পাশে ১০ শতাংশ কৃষি জমি ছিল। আমাকে বিদেশ পাঠানোর উদ্দেশ্যে আমার বাবা আমাদের প্রতিবেশী এক চাচার কাছে ৭ শতাংশ জমি বিক্রি করেছিল। কিন্তু, আমার বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে ঐ চাচা একটা জাল দলিল বানিয়ে সেখানে দাবী করছেন যে, আমার বাবা নাকি ১০ শতাংশ জমি বিক্রি করেছে। আমি বিক্রিটা অস্বীকার করছি না, কিন্তু বিক্রি হয়েছে কেবল ৭ শতাংশ, বাকী ৩ শতাংশ জমি এখনো আমার বাবার নামে রয়েছে। এখন, আমার প্রশ্ন হল, আমরা ঐ চাচার তৈরি করা জাল দলিল কীভাবে বাতিল করবো বা আমাদের কি করনীয়?
উত্তরঃ
ওয়ালাইকুমআসসালাম। আপনার প্রশ্নের জন্য ধন্যবাদ। আপনাদের সাথে যেটা ঘটেছে, সেটা সত্যি দুঃখজনক। কিন্তু, আমাদের সমাজে এমন অনেক অসাধু লোকজন রয়েছে, যারা অপরের সম্পত্তি প্রতারণা করে নিজ নামে বাগিয়ে নেয়ার জন্য নানা কৌশলে জাল দলিল তৈরি থাকে। কখনো মালিকের অনুপস্থিতিতে, কখনো বা অশিক্ষিত হওয়ার সুবাধে, আবার কখনো মালিককে মৃত্যুতে উত্তরাধিকারদের অসহায় অবস্থায় পেয়ে সর্বোপরি মালিকের অজান্তে নিজে মালিক সেজে গোপন জাল দলিল তৈরি করে সম্পত্তি হাতিয়ে নেওয়ার চিন্তাভাবনা করে থাকে। অনেক ক্ষেত্রে তারা সফলও হয়ে থাকে, আমাদের আইন না জানার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে।
তবে জাল দলিল যেভাবেই তৈরি করা হোক না কেন, জাল দলিল মূল মালিক বা তার ওয়ারিশদের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে বলে জাল দলিল সম্পর্কে জানা মাত্রই জাল দলিল বাতিলের জন্য মামলা করা উচিত। আপনি যেদিন থেকে জানতে পেরেছেন যে, আপনার সম্পত্তি অসাধুভাবে হাতিয়ে নেওয়ার জন্য কেউ একজন জাল দলিল তৈরি করেছে, সেদিন থেকে ৩ বছরের মধ্যেই আপনাকে জাল দলিল বাতিলের জন্য মামলা করতে হবে। এটা হচ্ছে, দেওয়ানী প্রতিকার।
আপনি চাইলে দেওয়ানী প্রতিকারের পাশাপাশি উক্ত অসাধু জাল দলিলকারীর বিরুদ্ধে জাল দলিল তৈরি করা এবং এর মাধ্যমে প্রতারণা করে সম্পত্তি আদায়ের জন্য দন্ডবিধির ৪০৬/৪২০/৪৬৩-৪৭৩ ধারায় তার বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলাও করতে পারেন।
সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ৪০ ধারা অনুসারে দলিল আংশিক বাতিলের মামলা করা যায়।
আপনার প্রশ্নে আপনি উল্লেখ করেননি যে, আপনি দখলে আছেন কিনা। আপনি যদি দখলে না থাকেন, তাহলে দলিল বাতিলের সাথে সম্পত্তির দখল পাবার মামলাও করা যায়। আদালত দলিল বাতিলের আদেশ/রায় প্রদান করলে ডিক্রির একটি কপি সংশ্লিষ্ট সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে প্রেরণ করবেন। উক্ত কপির আলোকে রেজিস্ট্রি অফিস দলিল বাতিলের বিষয়টি সংশ্লিষ্ট বালাম বহিতে লিপিবদ্ধ করে রাখবেন। দলিলে যার সত্ত্ব আছে তিনিই কেবল দলিল বাতিলের মামলা করতে পারবেন।
এই প্রশ্নটির উত্তর দিয়েছেন, এবিএম শাহজাহান আকন্দ মাসুম।
এডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রীমকোর্ট।
আইন সম্পর্কিত আপনার কোন প্রশ্ন থাকলে আমাদেরকে ইমেইল বা ইমো/হোয়াটসঅ্যাপে ম্যাসেজ করে জানাতে পারেন, আমরা আপনার প্রশ্নটি দিয়ে আরেকটি ‘আইনি জিজ্ঞাসা’র পর্ব তৈরি করার চেষ্টা করবো।
আমাদের ইমেইল: ainadalotbd@gmail.com, ইমো/হোয়াটসঅ্যাপ: 01921535513.
Discussion about this post