এম এস মিরাজ
প্রায় দেড় বছর দেশের সমস্ত আদালত বন্ধ বললেই চলে ।ভার্চ্যুয়াল পদ্ধতিতে আদালতের কার্যক্রম শুরু হলেও এই পদ্ধতিতে শিক্ষানবিশদের কাজ করার সুযোগ নাই ।এমতাবস্থায় আশ্চর্যজনক হলেও সত্য বাংলাদেশ বার কাউন্সিল অস্বচ্ছল আইনজীবীদের জন্য ৪ কোটি টাকা সাহায্য প্রদান,১ কোটি টাকা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাহায্য তহবিলে দান,দেশের বিভিন্ন জেলা আইনজীবী সমিতি থেকে আইনজীবীদের জন্য বিনা সুদে লোনের ব্যবস্থা করলেও;শিক্ষানবিশদের জন্য ন্যূনতম কোন ব্যবস্থা গ্রহন করার প্রয়োজন মনে করেণি!
বরং দেখা যাচ্ছে বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে দেশের অধিকাংশ জেলা বারে যেসব আইনজীবী প্রতিনিয়ত প্রাকটিস করে জীবিকা নির্বাহ করতে হয় তাদের করোনা মহামারীতে দীর্ঘদিন আদালত বন্ধ থাকাকালীন সময় এবং বাংলাদেশ বার কাউন্সিল ও জেলা বার আইনজীবী সমিতি থেকে তাদের প্রতি খুব একটা অভিভাবক সুলভ আচরণ না করার কারণে তারা আজকে সম্পূর্ণভাবে অসহায় বললেই চলে!
২০১৪ সালে বাংলাদেশ বার কাউন্সিল বনাম দারুল ইহসান মামলার আপীলেট ডিভিশনের পূর্নাঙ্গ রায় আসে ২০১৭ সালে।সেই রায়ের ১২ টি নির্দেশনার সর্বশেষ নির্দেশনা ছিলো “প্রতি ক্যালেন্ডার ইয়ারে এনরোলমেন্ট পরীক্ষার সম্পূর্ণ প্রসেস সম্পন্ন করা”।
আপীলেট ডিভিশনের পূর্নাঙ্গ রায়ের নির্দেশনা অনুযায়ী বার কাউন্সিল এনরোলমেন্ট পরীক্ষা নিতে পুরোপুরি ব্যর্থ অথচ উপর্যুক্ত মামলার পূর্নাঙ্গ রায়ের ৭ নাম্বার নির্দেশনা না মানার দরুণ ২০২০ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি এম সি কিউ পরীক্ষার পূর্বে বেশ কিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের রেজিষ্ট্রেশন কার্ড দেয়নি বাংলাদেশ বার কাউন্সিল যার ফলশ্রুতিতে ভুক্তভোগী বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় গুলো বার কাউন্সিলের বিপক্ষে রিট পিটিশন দায়ের করে এবং সর্বশেষ আপীল বিভাগ ভুক্তভোগী বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় গুলোকে ১০ লাখ টাকা করে জরিমানা প্রদানের শর্তে বার কাউন্সিল কে রেজিষ্ট্রেশন কার্ড প্রদানের অনুমতি দেন।
সর্বশেষ ২০২১ সালে বেসরকারি স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের রেজিষ্ট্রেশন কার্ড দেয়নি বাংলাদেশ বার কাউন্সিল যার ফলশ্রুতিতে ভুক্তভোগী বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়টির ১৯৪ জন শিক্ষার্থী বার কাউন্সিলের বিপক্ষে রিট পিটিশন দায়ের করে এবং সর্বশেষ হাইকোর্ট বিভাগ ভুক্তভোগী বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে ৩৭ লাখ টাকা জরিমানা প্রদানের শর্তে ১৯৪ শিক্ষার্থীকে বার কাউন্সিলকে রেজিষ্ট্রেশন কার্ড প্রদানের অনুমতি দেন।
আমরা চাই বাংলাদেশ বার কাউন্সিল বৈশ্বিক এই মহামারী পরিস্থিতি বিবেচনা করে ২০২১ সালের ভিতরেই আপীলেট ডিভিশনের পূর্নাঙ্গ রায়ের নির্দেশনা অনুযায়ী এনরোলমেন্ট পরীক্ষার সম্পূর্ণ প্রসেস সম্পন্ন করবে।দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আমরা আমাদের নায্য দাবী নিয়ে বার কাউন্সিলের কাছে যাব এবং জাতির জনক বঙ্গবন্ধু যেহেতু আইনের ছাত্র ছিলেন সেহেতু মুজিব বর্ষে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে শিক্ষানবিশ আইনজীবীদের জট নিরসনের জন্য আমরা এই নায্য দাবী তুলে ধরব।
সকল শিক্ষানবিশদের স্বপ্ন আইনজীবী হবে।এভাবে দীর্ঘদিন পরীক্ষার জন্য অপেক্ষা করতে হলে আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে অনেক মেধাবী আইন পেশা থেকে ঝরে যাবে।এরকম পরীক্ষার নামে প্রহসন চলতে থাকলে দেশের আইনাঙ্গনের জন্য তা কোনোভাবেই সুখকর খবর নয়।”
যদিও আমরা বর্তমানে লক্ষ্য করছি বার কাউন্সিল অনেকটাই ঘুরে দাড়ানোর চেষ্টা করছে, এখন দেখার বিষয় এর ধারাবাহীকতা বজায় রাখতে কমিটি নিজেদের পরিকল্পনা কতটুকু এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে!
ব্যারিস্টার গাজী ফরহাদ রেজা: আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট । তিনি বলেন, শিক্ষানবিশ আইনজীবী এবং সিস্টেম লস এই বিষয়ে তার সম্পুর্ণ আর্টিকেলটি তুলে ধরা হলোঃ- তিনি লেখেন, সাম্প্রতিক সময়ে শিক্ষানবিশ আইনজীবীদের বার কাউন্সিলের আইনজীবী তালিকাভুক্তি পরীক্ষা নেওয়ার জন্য আন্দোলনের খবর কারো নজর এড়িয়ে যাওয়ার কথা না। সুপ্রীম কোর্টের ভিতরে কিছু শিক্ষানবিশ আমরণ অনশন কর্মসূচি পালন করেন।
সারা জীবন শুনে আসলাম শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা ভয় পায়, পরীক্ষা পেছানোর আন্দোলন করে, আর এখন পরীক্ষার জন্য আন্দোলন! ব্যাপারটা অনেক দুঃখের এবং অমানবিক। এই সমস্যার দ্রুত সমাধান একান্ত কাম্য। এই লেখাতে বর্তমান আইন অঙ্গনের উপরেউল্লেখিত সমস্যা ও এর থেকে উত্তরের উপায় নিয়ে একজন আইনজীবী হিসেবে আমার নিজস্ব চিন্তা এবং বক্তব্যে তুলে ধরা হয়েছে।
প্রশ্ন আসা স্বাভাবিক কেন পরীক্ষার্থীরা লেখা পড়া ছেড়ে রাস্তায় থাকতে বাধ্য হচ্ছে? কেন তাদের ন্যায্য অধিকারের জন্য আন্দোলন করতে হচ্ছে? এ দায় কার? এই প্রশ্নের উত্তরের জন্য যেকোন আইনজীবী, আইনের ছাত্র, আইন গবেষক জেনে থাকবেন যে বাংলাদেশে আইনজীবী হিসেবে পেশা চালানোর জন্য একজন ব্যক্তিকে এলএলবি পাশ করার পর দশ বছরের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন কোনো আইনজীবির তত্ত্বাবধানে ‘Intimation’ জমা দিতে হয় এর পর ছয় মাসের অভিজ্ঞতা অর্জনের পর একজন শিক্ষানবিশ বার কাউন্সিলের পরীক্ষায় বসতে পারেন।
বার কাউন্সিল প্রতিবছর এই পরীক্ষা নিবে এটাই উচ্চ আদালতের সিদ্ধান্ত। কিন্তু বিগত কয়েক বছরে বার কাউন্সিল এমন হয়েছ যে দুই বছর পার হলেও পরীক্ষার ব্যবস্থা করতে পারে নাই! যার ফলে হাজার হাজার এলএলবি পাশ করা শিক্ষানবিশ আইনজীবী পরীক্ষা দিতে না পেরে হতাশ হয়ে যাচ্ছেন।
পরিচিত অনেক আইনজীবী বড়ো ভাই, সিনিয়র, বার কাউন্সিলের নির্বাচিত সদস্য অনেকের সাথেই কথা বলে জানতে চেয়েছি যে কেন এমন সমস্যা দেখা দিচ্ছে এবং এর সমাধান কি? অনেকে অনেক কথাই বলেছেন, ব্যক্তিগত ভাবে তাদের মতামত দিয়েছেন কিন্তু একটি ব্যাপারে সবাই একমত যে দুই/তিন বছরেও একটা পরীক্ষা নেওয়া এটি বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ব্যর্থতা এবং বার কাউন্সিলের উচিৎ হবে অতি দ্রুত এই সমস্যার সমাধান করে শিক্ষানবিশ আইনজীবীদের পরীক্ষার ব্যবস্থা করা। এই বিষয়ে আলোচনার মাঝে আমি এমন কিছু বিষয় বা মতামত খেয়াল করেছি যা নিয়ে আলোচনার অবকাশ রাখে।
প্রথমত, শিক্ষানবিশ আইনজীবীরা কেন রাস্তায় আন্দোলন করবে, তাদের তো উচিৎ পড়াশুনা করা, সিনিয়রকে সহায়তা করা, পরীক্ষা যখন হবে হবে, এই সব আন্দোলন করে অহেতুক সময় নষ্ট করতেছে শিক্ষানবিশ আইনজীবীরা। সত্যি কথা বলতে আমি আন্দোলনকারী কয়েকজনের সাথে আলোচনা করে যা জানতে পেরেছি তারা নিজেরাও এই আন্দোলন করতে চান না কিন্তু দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়ায় তারা এই আন্দোলন করতে বাধ্য হচ্ছেন, যেন তাদের কণ্ঠ বার কাউন্সিলের দায়িত্ব প্রাপ্তদের কাছে পৌঁছানো যায়।
আমিতো কোনো ভাবেই তাদের তাদের এই যুক্তির সাথে সহমত পোষণ না করে পারছিনা। কারণ আমরা আজ যারা প্র্যাক্টিস করছি তারা একদিন শিক্ষানবিশ ছিলাম এবং দেখেছি প্র্যাক্টিস করার সনদ থাকা আর না থাকার ভিতর অনেক পার্থক্য। এখন আইনের মেধাবী ছাত্র যখন দেখে যে অনার্স করার পর যেখানে তারই অন্য বিষয়ে পড়া বন্ধু ভালো জব পেয়ে যায়, জীবন শুরু করতে পারে তখনও সে সনদ পাওয়ার পরীক্ষায় বসতে পারে না! এইটা অনেক অমানবিক। আমাদের জীবন তো সংক্ষিপ্ত, কর্মজীবন আরো ছোট, তার উপর আইন পেশায় টিকে থাকা অনেক কঠিন একটা কাজ। তাই বছরে অন্তত একটা পরীক্ষা নিতে পারলেও সমস্যার অনেক সমাধান হবে বলে আমি মনে করি।
দ্বিতীয়ত, অনেক শিক্ষানবিশ মনে করেন বার কাউন্সিলের দায়িত্বপ্রাপ্ত এবং সিনিয়র আইনজীবীরা আইনজীবীদের সংখ্যা কমানোর জন্য দেরি করে পরীক্ষার আয়োজন করেন। সাম্প্রতিক সময়ে আইনজীবীদের সংখ্যাধিক্য হয়েছে একথা সত্য। এর প্রভাব যে আইনপেশায় পড়েছে এটাও একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। কিন্তু তাই বলে এই কারণে বার কাউন্সিল পরীক্ষা নিচ্ছে না এই বিষয়ে আমি কোনো প্রমাণ পাইনি বা আমি নিজেও বিশ্বাস করি না।
কারণ আইনজীবীদের এই সংখ্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য এলএলবি এর ভর্তির সময় থেকে ব্যবস্থা নিতে হবে, এলএলবি পাশ করার পর নয়। আমার জানা মতে বাংলাদেশ বার কাউন্সিল একটি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে সকল বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি সেশন এ ৫০ জনের বেশি ভর্তি করা যাবে না মর্মে বলেছে।
বেশ কিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এই প্রজ্ঞাপন না মেনে ছাত্র ভর্তি করে এবং ছাত্ররাও না জেনে ভর্তি হয়। যার ফলে সাম্প্রতিক সময়ে বার কাউন্সিল বিশেষ কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাজুয়েটদের পরীক্ষার রেজিস্ট্রেশন করতে দেয় নাই যার ফলে ব্যাপারটা কোর্ট পর্যন্ত গড়ায় এবং মনে করা হয় এটাও পরীক্ষা না হাওয়ার একটা কারণ।
যা হোক সেই সমস্যার সমাধান হোয়েছে, সর্বোচ্চ আদালত থেকে সমাধান এসেছে আইন ভঙ্গকারী বিশ্ববিদ্যালয়কে জরিমানা করা হয়েছে এবং ভুক্তভুগী শিক্ষানবিশ দের কে পরীক্ষায় বসার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
আইন ভঙ্গের কারণে উচ্চ আদালত ভুক্তভুগী শিক্ষানবিশদের পরীক্ষায় বসার অনুমতি নাও দিতে পারতেন কিন্তু মানবিক কারণে এমনটা হয়নি কারণ আইন পেশার সাথে যুক্ত সবাই জানেন আইনজীবী হিসেবে কাজ করার চ্যালেঞ্জটা। তো আমার মনে হয় ঢালাও ভাবে এইটা মনে করার কারণ নেই যে নতুনদেরকে পুরাতনরা চাননা বা তাদের পরীক্ষা পেছানোর এইটা কোনো কারণ বরং শিক্ষানবিশদের এই সমস্যা নিয়ে আমি দেখেছি বিভিন্ন ফোরামে সিনিয়র আইনজীবীরা আলোচনা করছেন কিভাবে কত দ্রুত এই সমস্যার সমাধান করা যায়।
তৃতীয়ত, প্রশ্ন থেকে যায় আমরা কত দ্রুত এই সমস্যার সমাধান আশা করতে পারি? কারণ লোকমুখে শোনা ডিসেম্বরে পরীক্ষা হতে পারে, না হলে জানুয়ারী, না হলে একেবারে এপ্রিল মাসে কারণ এর মাঝে ঢাকা বার এবং সুপ্রীম কোর্ট বারের ইলেকশন আছে। তো এর মানে হলো, আমরা কেউ এখনো জানছি না যে কবে হবে পরীক্ষা। বার কাউন্সিলও এখনো কোনো কিছু জানায়নি।
এভাবে চলা কি ঠিক? প্রতিবছর একটা নির্দিষ্ট সময়ে পরীক্ষা হলে সবাই উপকৃত হয়। পরীক্ষার আয়োজকরা সঠিক এবং সুন্দর প্ল্যানিং করে পরীক্ষা নিতে পারে আর পরীক্ষার্থীরা তাদের পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে পারে এতে পরীক্ষায় পাশ করার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়। আমি ব্যাক্তিগত ভাবে মনে করি পরীক্ষা কবে হবে, বা আদৌ হবে কিনা এই চিন্তা একজন পরীক্ষার্থীর জন্য অনেক ক্ষতিকর এবং এইটা আমরা যারা প্র্যাক্টিস করছি তাদের জন্যও বিব্রতকর কারণ আমরাও সারা দিন কোর্ট-কাচারীতে থাকার পরও জানি না কখন কি হবে। তো এই বিষয়ে আসলেই একটি নিশ্চয়তা দরকার।
পরিশেষে আমার মনে হয় বিষয়টি নিয়ে আমাদের সিনিয়র আইনজীবী এবং আইনজীবী নেতৃবৃন্দের একমত হওয়া দরকার এবং চিন্তা করা দরকার যে কিভাবে নিয়মিত বার কাউন্সিল আইনজীবী অন্তর্ভুক্তি পরীক্ষা নেওয়া যায় এবং এটাও চিন্তার ভিতরে রাখা উচিৎ যে প্রতি বছরে এই পরীক্ষার জন্য একটি নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দেওয়া যায় কিনা। আইনজীবির সন্তান হিসেবে আমি আমার বাবার কাছে শুনেছি বার কাউন্সিল আগে বছরে দুইটি পরীক্ষা নিয়েছে এমন নজিরও আছে। সেই তুলনায় বর্তমানের এই অবস্থা খুবই দুঃখের এবং মেনে নেওয়া কষ্টকর।
আমাদের আইন অঙ্গনের সার্বিক অবস্থার উন্নতির প্রয়োজনে মেধাবীদের এই পেশায় আসতে উৎসাহিত করতে হবে। এর জন্য নিয়মিত পরীক্ষার মাধ্যমে নতুন আইনজীবী অন্তর্ভুক্তির কোনো বিকল্প নেই। এইটা সত্য আইনজীবীদের সংখ্যাধিক্য নিয়ে ভাবার বিষয় আছে কিন্তু সেইটার জন্য সামগ্রিক পরিকল্পনা প্রয়োজন, আইন শিক্ষার মান উন্নয়ন প্রয়োজন, আইন পেশা এবং আইন শিক্ষার ভিতর একটি সমন্বয় প্রয়োজন। বার কাউন্সিল, সরকারি এবং বেসরকারি ইউনিভার্সিটি কতৃপক্ষের সাথে ইউনিভার্সিটি গ্রান্ট কমিশনের সমন্বয় প্রয়োজন।
পরীক্ষা না নেওয়া কোন সমস্যার সমাধান হতে পারে না। নিয়মিত পরীক্ষা নিতে হবে। না হলে বাংলাদেশের আইন পেশা অনেক মেধাবী আইনজীবী পাওয়া থেকে বঞ্চিত হবে। সঠিক সময়ে আইনজীবী তালিকাভূক্তি পরীক্ষা না হাওয়ার কারণে শিক্ষানবিশ আইনজীবীদের জীবন থেকে অনেক মূল্যবান সময় হারিয়ে যাচ্ছে যা তারা আইন পেশায় নিয়োজিত করতে পারতেন। তাই বিষয়টি নিয়ে বার কাউন্সিলের দায়িত্ব প্রাপ্তদের এবং আমাদের বিজ্ঞ সিনিয়রদেরকে ভাবার জন্য অনুরোধ করছি। কারণ আমরা যারা আইনজীবী হিসেবে প্র্যাক্টিস করছি তারা কেউ এর দায়িত্ব এড়িয়ে যেতে পারেন না।
আমাদের ভবিষ্যত আইনজীবীদের পথ চলা সুস্থ স্বাভাবিক এবং নিয়মতন্ত্রিক করাও আইনজীবী হিসেবে আমাদের নৈতিক দায়িত্ব।
এই ছিলো ব্যারিস্টার গাজী ফরহাদ রেজা সারের সম্পূর্ন আর্টিকেল।
আইন পেশায় সম্বোধন বিতর্ক ও অপব্যবহার আহমদ মুসাননা চৌধুরী আইনবিষয়ক গবেষক, এবং অ্যাডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আহমদ মুসাননা চৌধুরী বলেন , ‘অ্যাডভোকেট’, ‘লইয়ার’ এবং ‘আইনজীবী—এই সম্বোধন তিনটিকে পৃথক করে দেখলে প্রতারণার ক্ষেত্র তৈরি হয়।‘অ্যাডভোকেট’, ‘লইয়ার’ এবং ‘আইনজীবী—এই সম্বোধন তিনটিকে পৃথক করে দেখলে প্রতারণার ক্ষেত্র তৈরি হয়।
বাংলাদেশের বিচারাঙ্গনের আচার হচ্ছে, একজন অ্যাডভোকেটকে ‘বিজ্ঞ অ্যাডভোকেট’ (Learned Advocate) সম্বোধন করা। এটি প্রথাগত সম্মানসূচক অভিধা। জ্ঞান, প্রজ্ঞা, মেধা, বিচক্ষণতা, বিচার-বিশ্লেষণী ক্ষমতা, পেশাদারত্ব, দায়িত্ববোধ, সততা, পরিচ্ছন্ন আচরণ-ভূষণ দ্বারা নিজ পেশার মর্যাদা উজ্জ্বল করবেন—এমনই প্রত্যাশা একজন অ্যাডভোকেটকে নিয়ে। ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায়, সমাজ ও রাষ্ট্রের মঙ্গলে, দেশের কল্যাণমুখী রাজনীতিতে অ্যাডভোকেটদের সক্রিয় প্রতিনিধিত্ব থাকবে, এটি স্বাভাবিক চিন্তা।
বাংলাদেশে আইন পেশার সঙ্গে ‘অ্যাডভোকেট’ শব্দের সম্বন্ধ নিয়ে কোনো বিতর্ক নেই। কিন্তু বিতর্ক কিংবা বলা চলে, অস্পষ্টতা তৈরি করা হয়েছে ইংরেজি ‘lawyer’ আর বাংলা ‘আইনজীবী’ শব্দের ব্যবহার নিয়ে।
ইংরেজি ‘lawyer’ (লইয়ার) শব্দের অর্থ ব্যাপক। দেশি–বিদেশি বিভিন্ন অভিধানে সাধারণত ‘লইয়ার’ শব্দের মানে করা হয়, একজন ব্যক্তি যিনি ‘আইন অনুশীলন করেন’, ‘আইনের পরামর্শদাতা’, ‘আইনজ্ঞ’, ‘অ্যাডভোকেট’, ‘আইনজীবী’, ‘উকিল’, ‘লিগ্যাল প্র্যাকটিশনার’, ‘ব্যারিস্টার (barrister)’, ‘সলিসিটর (solicitor)’, ‘অ্যাটর্নি (attorney)’, ‘প্লিডার (pleader)’, ‘কাউন্সেল (counsel)’, ‘প্রসিকিউটর (prosecutor)’, ‘মোক্তার’, ‘আইনের ডিগ্রি অর্জনকারী’ ইত্যাদি।
শব্দার্থের ব্যাপকতা বিবেচনায় মূলত বিদেশি অভিধানের বরাত দিয়ে, অনেকে যুক্তি দেখিয়ে বলে থাকেন, ‘সকল অ্যাডভোকেট লইয়ার কিন্তু সকল লইয়ার অ্যাডভোকেট নন।’ আবার অনেকে আছেন যাঁরা ‘আইনজীবী’ শব্দের ব্যবহারের ক্ষেত্রেও এই একই ধারণা উপস্থাপন করতে চান। তাঁদের মতে, একজন ব্যক্তি আইনবিষয়ক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে থেকে অর্থ উপার্জনের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করলেই তাঁকে আইনজীবী বলা যায়। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে উভয় সম্বোধন নিয়ে এই দৃষ্টিভঙ্গি ও প্রতীতি সঠিক নয়।
ইদানীং দেশে দেখা যাচ্ছে, বিভিন্ন আইন কলেজ, সরকারি কিংবা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দুই বা চার বছরের এলএলবি ডিগ্রি সম্পন্ন করামাত্রই অনেকে নিজেকে লইয়ার কিংবা আইনজীবী পরিচয় দেওয়া শুরু করেন। এঁরা হয়তো আইন পেশার সঙ্গে সম্পর্কিত বিভিন্ন কার্যক্রমে যুক্ত হয়েছেন, কিন্তু বাংলাদেশ বার কাউন্সিলে তালিকাভুক্ত অ্যাডভোকেট নন।
অ্যাডভোকেট হয়ে ওঠেননি, অথচ আইনজীবী অথবা লইয়ার শব্দ দুটির একটিকে জুড়ে দিয়ে ‘ট্যাক্স/ইনকাম-ট্যাক্স আইনজীবী’ (‘Tax/Income-tax Lawyer’), ‘ভ্যাট আইনজীবী’ (‘VAT Lawyer’), ‘শিক্ষানবিশ আইনজীবী’ (‘Apprentice Lawyer’), ‘অ্যাপ্রেনটিস/প্র্যাকটিসিং লইয়ার অ্যাট জজকোর্ট’—এরূপ পরিচয় ধারণ করছেন এমন লোকের সংখ্যা এখন ভূরি ভূরি।
আবার কোনো কোনো অ্যাডভোকেট আছেন, যাঁরা সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে প্র্যাকটিস অনুমতিসংক্রান্ত আবেদন বার কাউন্সিলে জমা দিয়েই ‘প্র্যাকটিসিং/অ্যাপ্রেনটিস লইয়ার/ব্যারিস্টার অ্যাট সুপ্রিম কোর্ট’ হিসেবে নিজেকে প্রচার করেন। উক্ত ব্যক্তিদের এমন পরিচয় প্রদানের কোনো আইনগত ভিত্তি নেই; আদালত থেকে শুরু করে আইনাঙ্গন তাঁদের এই পরিচয়কে স্বীকৃতি দেয় না।
এ ছাড়া অনেকে আছেন, যাঁদের আইন বিষয়ে কোনো ডিগ্রি নেই, কিন্তু নিজেকে আইনজীবী, লইয়ার এমনকি অ্যাডভোকেট পরিচয় দিয়ে লোক ঠকিয়ে উপার্জন করে থাকেন। এঁরা প্রতারক। এসব লোক যখন আইন পেশাসংক্রান্ত কাজ বা মামলা ভাগিয়ে নিয়ে অর্থের বিনিময়ে একজন অ্যাডভোকেটের হাতে তুলে দেন বা তুলে দেওয়ার প্রস্তাব করেন, তখন তাঁদের আলাদাভাবে আমরা চিহ্নিত করি ‘টাউট’ হিসেবে। টাউট প্রসঙ্গে নির্দিষ্ট আইন দেশে রয়েছে। উল্লেখ্য, টাউটরা এই লেখার উপলক্ষ নয়।
ইতিহাসের বিভিন্ন পর্যায়ে আমাদের এখানে আইন পেশার একই মানে ছিল না। ভূমিকাও এক ছিল না। আইন পেশায় নিয়োজিত ব্যক্তিরা এক শব্দে পরিচিত হতেন না, এখনো হন না। আইন পেশায় নিয়োজিতরা কালপ্রবাহে কী নামে পরিচয় পাবেন বা পরিচিত হয়ে থাকেন, তা সমকালীনতা রেওয়াজ। এর পাশাপাশি দেশ ও সমাজের ইতিহাস, সংশ্লিষ্টদের আচার-দৃষ্টিভঙ্গি, আদালতি নজির (precedence), আইনকানুন অনুশীলনের ঐতিহ্য এবং গতিবিধির অন্তর্গত চর্চা ও তর্কবিতর্ক বিচার করে বুঝতে হবে। সে অনুসারে বর্তমান বাংলাদেশে ‘অ্যাডভোকেট’, ‘লইয়ার’ এবং ‘আইনজীবী’—এই তিনটি সমার্থক শব্দ। আর এই শব্দত্রয় আইন পেশার অন্তর্ভুক্ত লোকদের নির্দেশ করে। যাঁরা হলেন বাংলাদেশ বার কাউন্সিলে তালিকাভুক্ত একেকজন অ্যাডভোকেট।
প্রসঙ্গক্রমে বাংলাদেশে একজন অ্যাডভোকেট মূলত কে, সংক্ষেপে তা জেনে নেওয়া যাক। জেনারেল ক্লজেস অ্যাক্ট, ১৮৯৭-এর ধারা ৩(২এ) ‘অ্যাডভোকেট’ শব্দের সংজ্ঞা করেছে এ রকম, ‘অ্যাডভোকেট’ হচ্ছেন এমন একজন ব্যক্তি, যিনি ‘বাংলাদেশ লিগ্যাল প্র্যাকটিশনারস অ্যান্ড বার কাউন্সিল অর্ডার, ১৯৭২’ অনুসারে তালিকাভুক্ত। সে ধারাবাহিকতায় ১৯৭২ সালের অর্ডার (রাষ্ট্রপতির আদেশ)-এর ২(এ) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘অ্যাডভোকেট’ হচ্ছেন একজন অ্যাডভোকেট, যিনি অত্র আদেশের বিধান অনুসারে তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। এখানে তালিকা (roll) বলতে বার কাউন্সিল কর্তৃক প্রস্তুতকৃত ও ব্যবস্থাপনাকৃত অ্যাডভোকেটবৃন্দের তালিকাকে বোঝায়। অ্যাডভোকেট হিসেবে তালিকাভুক্ত হতে গেলে একজন ব্যক্তির কী কী যোগ্যতা থাকতে হবে এবং তাঁকে কোন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হবে; সে সম্পর্কে বিধান রাখা আছে পূর্বোক্ত ১৯৭২ সালের রাষ্ট্রপতির আদেশে। এবং সেই আদেশের বলে একই সালে প্রণীত বিধিমালায়। কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া, আইন পেশা অনুশীলন (practice) করার অনুমোদন কেবল একজন অ্যাডভোকেটকে দেওয়া হয়েছে এবং একজন অ্যাডভোকেটই আদালতে আইন প্র্যাকটিস করার জন্য অনুমতিপ্রাপ্ত [পড়ুন পূর্বোক্ত রাষ্ট্রপতির আদেশের ১৯ ও ৪১ অনুচ্ছেদ দুটি]।
ইংরেজি ‘Advocate’ শব্দের বাংলা হিসেবে বর্তমানে ‘আইনজীবী’ বহুল ব্যবহৃত একটি শব্দ। কদাচিৎ ‘উকিল’ বা ‘কৌঁসুলি’ শব্দের ব্যবহার এখনো দেখা গেলেও, ১৯৮৫ সালে ‘বাংলা ভাষা প্রচলন আইন’ প্রণীত হওয়ার পর থেকে, বিশেষ করে সাম্প্রতিক সময়ে, বিভিন্ন আইন, নীতিমালা, সরকারি দলিলাদি, মামলার রায় ও বিচার বিভাগীয় আদেশ-বিজ্ঞপ্তি কিংবা বার কাউন্সিল এবং বার অ্যাসোসিয়েশনসমূহের দাপ্তরিক (official) দলিলাদিতে বাংলায় অ্যাডভোকেট সম্পর্কে লিখতে গেলে ‘আইনজীবী’ শব্দেরই ব্যবহার হচ্ছে। আবার ‘অ্যাডভোকেট’ শব্দের সমার্থক হিসেবে ‘লইয়ার’ শব্দের ব্যবহার একটি প্রাত্যহিক ব্যাপার। বাংলাদেশের আইনসমূহ এবং আদালতের বিভিন্ন রায় ও আদেশসমূহ দেখলেই এই বক্তব্যের সমর্থন মিলবে।
‘লইয়ার’ শব্দের অর্থের ব্যাপকতা থাকলেও অ্যাডভোকেট না হলে এ দেশের আইন চর্চা ও প্রথা (custom) কোনো ব্যক্তিকে ‘লইয়ার’ পরিচয় দেওয়ার অনুমোদন দেয় না। আমাদের দেশে আজও অ্যাডভোকেট নন এমন কোনো ব্যক্তি ‘লইয়ার’ সম্বোধিত হয়েছেন বলে জানা যায় না। একই কথা ‘আইনজীবী’ শব্দের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।
‘অ্যাডভোকেট’, ‘লইয়ার’ এবং ‘আইনজীবী’—এই সম্বোধন তিনটিকে পৃথক করে দেখলে প্রতারণার ক্ষেত্র তৈরি হয়। বিচারপ্রার্থীরা বিভ্রান্তিতে পড়েন। অ্যাডভোকেট না হয়ে ‘আইনজীবী’ কিংবা ‘লইয়ার’ শব্দ জুড়ে দিয়ে কারও পদবি গ্রহণ ও পরিচয় প্রচার আইনের দৃষ্টিকোণ থেকে শুদ্ধ নয়। ইঙ্গিতবাহী পরিভাষা ব্যবহার করে অ্যাডভোকেট ভান (pretend) করা অনুচিত ও বেআইনি কর্ম। কোনো কোনো ক্ষেত্রে অপরাধও। সদ্বিচার নিশ্চিতকল্পে অ্যাডভোকেট পরিচয়ের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িয়ে থাকা এজাতীয় সব শব্দের যত্রতত্র এবং কপটতাপূর্ণ ব্যবহার ও প্রচার বন্ধে অংশীজনদের সচেষ্ট হওয়া প্রয়োজন।
এই ছিলো অ্যাডভোকেট, আহমদ মুসাননা চৌধুরী স্যারের কথা ।
ইদানীং দেশে দেখা যাচ্ছে, বিভিন্ন আইন কলেজ, সরকারি কিংবা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দুই বা চার বছরের এলএলবি ডিগ্রি সম্পন্ন করামাত্রই অনেকে নিজেকে লইয়ার কিংবা আইনজীবী পরিচয় দেওয়া শুরু করেন। এঁরা হয়তো আইন পেশার সঙ্গে সম্পর্কিত বিভিন্ন কার্যক্রমে যুক্ত হয়েছেন, কিন্তু বাংলাদেশ বার কাউন্সিলে তালিকাভুক্ত অ্যাডভোকেট নন।
আইন বিষয়ক গবেষক, এবং অ্যাডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট, আহমদ মুসাননা চৌধুরীসহ বাংলাদেশ বার কাউন্সিল ও বার কাউন্সিল কর্তৃৃক নিবন্ধিত আইনজীবীদের বিবেকের কাছে আমার প্রশ্ন আইন শিক্ষার মান উন্নয়ন এবং আইন পেশার মান উন্নয়নে পাহাড় সমান ব্যার্থতা এই দ্যায় কার ???????????????????????????????????????????????
লেখক: এম এস মিরাজ
এল.এল.এম কুষ্টিয়া বিশ্ববিদ্যালয় , আইন ও মানবাধিকার বিভাগ ।
Discussion about this post