ডেস্ক রিপোর্ট
পারিবারিক আদালতকে অবমাননা করা হলে অবমাননাকারীকে মাত্র ২০০ টাকা জরিমানা করার বিধান রয়েছে। এ কারণে সময়ের বাস্তবতায় পারিবারিক আদালত অবমাননায় শাস্তির এই বিধানটি সংশোধন করে আরো কঠোর করার কথা বলেছেন হাইকোর্ট।
উচ্চ আদালতের মতে, এক্ষেত্রে সিভিল জেল এবং পর্যাপ্ত জরিমানার বিধান প্রণয়ন সময়ের বাস্তবতা। সরকারের নীতি নির্ধারক মহল এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বিষয়টি শুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে অবিলম্বে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলেও আশা করেছেন হাইকোর্ট।
রাজশাহী-রংপুরের এক দম্পতির সন্তানের হেফাজত নিয়ে করা এক রিট মামলার চূড়ান্ত শুনানি শেষে গত ৭ নভেম্বর হাইকোর্টের বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ রায় দেন।
রায়ে দেশের পারিবারিক আদালতে সন্তানের অভিভাবকত্ব নিয়ে থাকা মামলাগুলো ছয় মাসের মধ্যে নিষ্পত্তির নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। এ নির্দেশ বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের অবহিত করতে আইন সচিব ও সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলকে ব্যবস্থা নিতে বলেছেন আদালত।
সম্প্রতি এ রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে।
রায়ে আদালত মামলার সামগ্রিক প্রেক্ষাপট ও পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে ওই মামলাটি নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত শিশু সন্তানটি বাবার হেফাজতে রাখার সিদ্ধান্ত দেন। তবে মা রাজশাহীর বাসায় কিংবা রাজশাহী শহরের যেকোনো স্থানে শিশু সন্তানের সঙ্গে দেখা ও একান্তে সময় কাটানোর সুযোগ পাবেন। কিন্তু রাজশাহী শহরের বাইরে নিতে পারবেন না।
রায়ে আদালত বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে হাইকোর্ট বিভাগের এই বেঞ্চে পিতা-মাতার বিবাহ বিচ্ছেদ, মনোমালিন্য, দাম্পত্য কলহ-সহ বিভিন্ন কারণে শিশুদের হেফাজত সম্পর্কে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক হেবিয়াস করপাস (শিশুদের হাজির করতে রিট) মামলা পরিচালনা করতে হয়েছে এবং হচ্ছে। আদালত এ অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে যে, পারিবারিক আদালতসমূহে শিশুদের অভিভাবকত্ব ও হেফাজত সম্পর্কে মামলাসমূহ দীর্ঘ সময় ধরে চলমান। আদালতের নজরে এসেছে যে, ২০১০ সাল, ২০১৪ সাল এবং ২০১৮ সালের দাখিল করা মামলাসমূহ এখনো বিচারাধীন।
দীর্ঘ সময় এসব মামলায় বিচার চলমান থাকার বিষয়ে আদালত বলেন, শিশুদের অভিভাবকত্ব ও হেফাজত সম্পর্কে মামলাগুলো এতো দীর্ঘ সময় ধরে চলমান থাকা দুঃখ ও হতাশাজনক এবং ন্যায়-নীতির পরিপন্থী। এসকল মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি হওয়া বাঞ্ছনীয়। এমতাবস্থায়, সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১০৯ অনুযায়ী দেশের সকল পারিবারিক আদালতসমূহকে শিশু সন্তানদের অভিভাবকত্ব ও হেফাজত সম্পর্কিত মামলাসমূহ যাতে ছয় মাসের মধ্যে নিষ্পত্তি করা সম্ভব হয় সে বিষয়ে নির্দেশনা প্রদান করা হলো।
আদালত আরও বলেন, পারিবারিক আদালতসমূহের বিভিন্ন আদেশ বিশেষত শিশু সন্তানকে দেখা-সাক্ষাতের আদেশ সংশ্লিষ্ট পক্ষ মান্য করছেন না। ফলশ্রুতিতে তারা হাইকোর্ট বিভাগে এসে হেবিয়াস করপাস অধিক্ষেত্রে আশ্রয় গ্রহণ করছেন।
পারিবারিক অধ্যাদেশ ১৯৮৫ এর ধারা-১৯ অনুযায়ী পারিবারিক আদালতকে অবমাননা করা হলে অবমাননাকারীকে মাত্র ২০০ টাকা জরিমানা করার বিধান রয়েছে। সময়ের বাস্তবতায় পারিবারিক আদালত অবমাননায় শান্তির এই বিধানটি সংশোধন করে আরও কঠোর করা বাঞ্ছনীয়। এক্ষেত্রে সিভিল জেল এবং পর্যাপ্ত জরিমানার বিধান প্রণয়ন সময়ের বাস্তবতা। আদালত প্রত্যাশা করেন সরকারের নীতি নির্ধারক মহল এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বিষয়টি শুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে অবিলম্বে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
আদালতে ওইদিন শিশুটির মায়ের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মোতাহার হোসেন সাজু। আর বাবার পক্ষে ছিলেন আইনজীবী ফাওজিয়া করিম ফিরোজ ও কাজী মারুফুল আলম।
শিশুটির মায়ের পক্ষের আইনজীবী মোতাহার হোসেন সাজু রায় ঘোষণার দিন বলেছিলেন, আমার মক্কেলকে তার স্বামী অনেক নির্যাতন করতেন। পরে তাকে তালাকও দেন। এ ঘটনায় শিশুকে জিম্মায় চেয়ে মা হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন। ওই রিটের শুনানি শেষে আদালত দেখেন ২০১৮ সালের মামলায় এখনও অগ্রগতি নেই। তাহলে তো সন্তান হেফাজতে চেয়ে করা মামলা তিন বছর ধরে নিম্ন আদালতে পড়ে থাকে। এটি দেখে আদালত ছয় মাসের মধ্যে এ ধরনের মামলা নিষ্পত্তির নির্দেশ দিয়েছেন। একই সঙ্গে আমাদের যে মামলাটি আছে সেটি মার্চ মাসের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে বলেছেন।
মামলা থেকে জানা যায়, রংপুরের মেয়ের সঙ্গে ২০১১ সালে বিয়ে হয় রাজশাহীর এক ছেলের। ২০১৫ সালে তাদের কন্যাশিশুর জন্ম হয়। ২০১৮ সালে ওই দম্পতির বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। এরপর শিশুটি তার বাবার কাছে ছিল। এ অবস্থায় শিশুটিকে ফিরে পেতে হাইকোর্টে রিট করেন শিশুটির মা। এর প্রাথমিক শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট রুলসহ আদেশ দেন।
আইনজীবী ফাওজিয়া করিম ফিরোজ বলেন, শিশুটির বয়স এখন প্রায় ছয় বছর। বাবার সঙ্গে শিশুটি রাজশাহীতে থাকে। মা রাজশাহী গিয়ে শিশুটিকে দেখতে ও সময় কাটাতে পারবেন বলেছেন হাইকোর্ট। সংশ্লিষ্ট পুলিশ কমিশনারকে এ বিষয়ে সহায়তা দিতে বলা হয়েছে।
Discussion about this post