ডেস্ক রিপোর্ট
দেশের সবধরনের সেবা খাতে লেগেছে আধুনিকতার ছোঁয়া। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় খোদ রাজধানীর যানবাহন নিয়ন্ত্রিত হয় পুলিশের হাতের ইশারায়। কোথাও রশি দিয়ে বাধা তৈরি করে আটকানো হয় গাড়ি। রাজধানীর ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা আধুনিকায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে অনেকবার। কিন্তু এবার ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ভিন্নরকম ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার উদ্যোগ নিচ্ছে, যেখানে যানবাহন নিয়ন্ত্রণে ইন্টারসেকশনে লাগবে না পুলিশের।
দক্ষিণ সিটির কর্মকর্তা বলছেন, তাদের অধীনে ৫৩টি ইন্টারসেকশনে বসতে যাচ্ছে আধুনিক স্বয়ংক্রিয় ট্রাফিক সিগন্যাল বাতি। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে গাড়ি চলা ও থামার নির্দেশনা দেবে। আর এগুলো মনিটরিং করা হবে হবে কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে। যা স্থাপিত হবে দক্ষিণ সিটির প্রধান কার্যালয়ে।
দক্ষিণ সিটির ট্রাফিক ইঞ্জিনিয়ারিং সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী কাজী বোরহান উদ্দিন বলেন, আমাদের ৫৩টি ইন্টারসেকশনের সিগন্যাল বাতি বর্তমানে নষ্ট। আমরা এগুলো সরিয়ে স্বয়ংক্রিয় ট্রাফিক সিগন্যাল বাতি স্থাপন করবো। এছাড়া আমরা রাস্তা, ফুটপাত, ইন্টারসেকশন প্রশস্ত করবো। রাস্তা দিয়ে পথচারী পারাপারের জেব্রা ক্রসিং মার্কিং করবো। তিনি জানান, তারা স্বয়ংক্রিয় ট্রাফিক সিগন্যাল বাতি লাগানোর কাজটি বছরের মধ্যেই শেষ করতে চান।
বোরহান উদ্দিন বলেন, আগামী মাসের মধ্যেই এ কাজের জন্য আমরা পরামর্শক নিয়োজিত করবো। তারা আমাদের পরিকল্পনা, নকশা ও খরচ নির্ধারণ করে দেবে। এ কাজের খরচ সরকার দিবে নাকি সিটি করপোরেশন নিজস্ব তহবিল থেকে খরচ করবে— আমরা এখনও সিদ্ধান্ত নেইনি।
তিনি জানান, সিটি করপোরেশন একটা নীতিমালা তৈরি করছে। যা স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে অনুমোদনের জন্য। এতে ট্রাফিক কিভাবে নিয়ন্ত্রিত হবে এবং কার দায়িত্ব কী হবে সবই থাকবে।
সিটি করপোরেশনের ট্রাফিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের এ কাজে প্রয়োজনীয় জনবল ও সক্ষমতার আছে কিনা—জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষের জন্য আমাদের সফটওয়্যার প্রকৌশলী লাগবে। তাছাড়া, সিগন্যাল বাতি মেরামতের কাজে অনেক টেকনিশিয়ান দরকার হবে। এগুলো আমাদের ভাবনায় রয়েছে।
দক্ষিণ সিটির মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস ও এ বিষয়ে গত বুধবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে মেট্রো রেল লাইন- ৬ এর অগ্রগতি ও সম্ভাবনা অনুষ্ঠানে বলেছেন, হাতের ইশারায় ঢাকা শহরের ট্রাফিক আর চলবে না। আমরা ৫৩টি চৌরাস্তায় ট্রাফিক সিগন্যাল আধুনিকায়নের উদ্যোগ নিয়েছি।
তিনি পুলিশকে এ উদ্যোগের দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে অন্তর্ভুক্ত হয়ে কাজ করার জন্য অনুরোধ জানান।
এ বিষয়ে যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মো. হাদিউজ্জামান বলেন, এ ধরনের কাজে বিনিয়োগ করার আগে ঢাকা শহরের ধীরগতি ও গতিসম্পন্ন যানবাহনের লেন আলাদা করা দরকার। না হলে এ কাজে সফলতার সম্ভাবনা নাই।
তিনি বলেন, ঢাকা শহরে এক সড়কে ১৮ রকমের যানবাহন একসঙ্গে চলে। কোনওটা রিকশার, ঠেলাগাড়ির মতো, কোনওটা ধীরগতির। আবার কোনওটা বাসের মত গতিসম্পন্ন। এভাবে কোনও ব্যবস্থা কাজ করবে না। জাইকা এ ধরনের একটি পরীক্ষামূলক প্রকল্প নিয়েছিল যা ব্যর্থ হয়েছে।
তিনি দক্ষিণ সিটি কর্তৃপক্ষকে একসঙ্গে ৫৪টি ইন্টারসেকশনে বিনিয়োগ না করে ধীরগতি ও উচ্চগতির গাড়ির জন্য আলাদা লেন করে একটি সুনির্দিষ্ট অংশে পরীক্ষামূলকভাবে এ ব্যবস্থাপনা প্রয়োগ করার পরামর্শ দেন। এ কাজে সফলতা পেতে উত্তর সিটি করপোরেশনকে কেও একই উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানান।
প্রসঙ্গত, বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে ‘নির্মল বায়ু ও টেকসই পরিবেশ’প্রকল্পের আওতায় ঢাকা শহরে রিমোট কন্ট্রোলারসহ ১০৯টি স্বয়ংক্রিয় সিগন্যাল স্থাপন করা হয়েছিল। যার অনেকগুলো উদ্বোধনের দিনই সচল করা যায়নি বলে জানিয়েছেন দুই সিটির কর্মকর্তারা। সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন
Discussion about this post