পৃথিবীতে মানুষ বসবাসের শুরুতেই বিধিবদ্ধ কোন আইন ছিল না। সমাজে শৃঙ্খলা ছিল না। প্রত্যেক ব্যক্তি অপরকে শত্রু ভাবত। সেই সময়টাকে বলা হয় ‘The state of nature’। আস্তে আস্তে মানুষ একতাবদ্ধ হওয়ার সাথে সাথে আইন ব্যাবস্থার ও উন্নতি সাধিত হতে লাগল। বর্তমানে পৃথিবীর পুরো আইন ব্যাবস্থাকে দু’ভাগে ভাগ করা হয়েছে। একটি, Common law system আর অন্যটি Civil law system। যে Legal system এ লিখিত আইনের পাশাপাশি অলিখিত আইন তথা-ধর্ম,প্রথা,বিচারকের প্রজ্ঞা ইত্যাদিকে গুরুত্ব দেয়া হয় সেই আইন ব্যাবস্থাকে common law system বলা হয়। ব্রিটেন ও এর সাবেক উপনিবেশগুলোতে এই ব্যবস্থা প্রচলিত। অপরপক্ষে,যে আইন ব্যাবস্থায় শুধু লিখিত আইনই সর্বেসর্বা সেই ব্যাবস্থাকে civil law system বলে।ফ্রান্স,ইতালি,জার্মানিতে civil law system প্রচলিত। বাংলাদেশ উত্তরাধিকার সূত্রে ব্রিটেন থেকে common law system লাভ করেছে,কিন্ত এই ব্যবস্থা কি আমাদের দেশে পুরোপুরি কার্যকর করা হয়েছে?
ফৌজদারি বিচার ব্যাবস্থা:বাংলাদেশের ফৌজদারি বিচার ব্যাবস্থা হলো,যখন কোন মামলা আদালত কতৃক আমলে নেয়া তিনি সেটা তদন্তের ভার দেন একজন পুলিশ অফিসারকে (Investigating Officer-IO)। সাধারণত OC দের এই দ্বায়িত্ব দেয়া হয় সেটা যে ধরণের মামলাই হোক,হত্যা,ধর্ষণ ইত্যাদি।যেহেতু এইসব অফিসারদের উপর শত শত তদন্তের ভার থাকে তাই এরা সঠিকভাবে তদন্ত করতে পারে না। তার উপর আছে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ,উৎকোচ গ্রহণ সহ নানা ধরণেরপ্রতিবন্ধকতা। ফলে দায়সারাগোছের একটি তদন্ত প্রতিবেদনের কারণে বিচার অনেক সময় ভুল পথে
পরিচালিত হয়। কিন্তু ব্রিটেনে অপরাধ যদি খুব বড় ধরণের হয় এবং বিচারক ন্যায়বিচারের স্বার্থে যদি মনে করেন এই অপরাধের অধিকতর তদন্ত হোক তখন বিচারক নিজেই ঘটনাস্থলে গিয়ে তদন্ত করতে পারেন। এই পদ্ধতিকে বলা হয়
‘Inquisitorial system’। আমাদের দেশে অপরাধের ধরণ যত গুরুতরই হোক বিচারক কখনো প্লেসে যেতে পারেন না।ফলে আমরা পিছিয়ে আছি এবং অনেকক্ষেত্রে মানুষ সুষ্ঠু বিচার পাচ্ছে না।দ্বিতীয় বিষয় হলো,ব্রিটেনে ‘জুরি ব্যাবস্থা ‘
চালু আছে। এই ব্যাবস্থায় একটি বিচারিক বোর্ড থাকে। সেখানে বোর্ডের সদস্যরা একটি অপরাধের পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ করেন। সদস্যগণ অপরাধীর অপরাধের মাত্রা,ধরণ,অপরাধের মানসিকতা (Mens Rea), বয়স,অপরাধের কারণ ইত্যাদি বিশ্লেষণ করেন। যেহেতু এই পদ্ধতিতে অপরাধীর সবকিছু বিবেচনা করা হয়,তাই এই বিচারগুলো হয় বাস্তবমুখী এবং যথাযথ। অন্যদিকে,আমাদের দেশে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অপরাধের ধরণ,তদন্ত প্রতিবেদন,স্বাক্ষীর উপর ভিত্তি করে বিচার করা হচ্ছে যা প্রকৃত common law system এর অনুসারী নয়।
ধরা যাক,একজন বৃদ্ধ এবং একজন যুবক বাকবিতন্ডা শুরু হলো।যুবক বৃদ্ধকে ছোট একটি লাঠি দিয়ে আঘাত করলো। বৃদ্ধ মারা গেল। মামলা বাংলাদেশের আদালতে আনা হলো।দেখা গেল স্বাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে কোর্ট তাকে ফাঁসি দিয়েছে।একই মামলা ব্রিটেনের আদালতে গেল।আদালত জুরি বোর্ডে পাঠালো।জুরি বোর্ডড যুবকের হত্যার উদ্দেশ্য ছিল কিনা,আঘাতের ধরণ ইত্যাদি বিবেচনা না করে তাকে শাস্তি দিবে না। সুতরাং,একথা পরিষ্কার যে বাংলাদেশ এখনো তার আইন ব্যাববস্থা পুরোপুরি কার্যকর করতে পারে নি।এই শূন্যতাকে যত দ্রুত জয় করা যাবে ততই
আমাদের বিচার ব্যাবস্থা উন্নত হবে এবং মানুষের অধিকতর আস্থা অর্জনে সক্ষমহবে।
ইমরান হোসেন লেখক: আইন শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
Discussion about this post