এডভোকেট এম শাহ আলম
ইদানীং মহামান্য উচ্চ আদালতের জামিন জালিয়াতি নিয়ে অনলাইনে অনেক লেখা লেখি হচ্ছে। তাই নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারলাম না বলেই লিখছি। আমাদের বারের (সাতক্ষীরা আইনজীবী সমিতি)গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সভাপতি /সম্পাদক পদে পরপর দু’বার নির্বাচিত হলে একবার গ্যাপ দিতে হয়, সেই হিসাবে আমি এবার নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারি নাই। বিগত দু’বছরের বেশ কিছু ঘটনার একটা আজ আপনাদের সামনে তুলে ধরছি।
জনৈকা ফারজানা মতিন তন্নী গত ইং ০৩.১০.১৯ তারিখে সাতক্ষীরা জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি /সম্পাদক বরাবর এ্যাড জনাব মশিউর রহমান ফারুক সাহেবের বিরুদ্ধে জাল-জালিয়াতির একটি অভিযোগ করেন।
তিনি তার অভিযোগে উল্লেখ করেন যে তার স্বামী রাসেল আহম্মেদ পলাশ সহ অনান্যদের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১১খ/৩০ ধারায় সাতক্ষীরা সদর থানায় গত ইং ১৪.০১.১৯ তারিখে ১৬ নম্বর মামলা করেন, যাহার জি/ আর ১৬/১৯।(সাত)।
উক্ত মামলার প্রধান আসামি রাসেল আহম্মেদ পলাশ গত ইং ১৪.০১.১৯ তারিখে পুলিশ কতৃক ধৃত হন। জনাব ফারুক সাহেব আসামি পক্ষের আইনজীবী হিসাবে গত ইং ১৬.০১.১৯ তারিখে অধস্তন আদালত থেকে আসামির জামিনের আবেদন না- মন্জুর করান।এবং উক্ত ন-মন্জুর আদেশের বিরুদ্ধে তিনি বিজ্ঞ দায়রাজজ আদালতে ক্রিঃমিস ৪৪৮/১৯ নম্বর মামলা দাখিল করেন। গত ইং ০৭.০২.১৯ তারিখে ক্রিঃ মিস ৪৪৮/১৯ নম্বর মামলাটি উভয় পক্ষের শুনানি অন্তে না- মন্জুর হয়।
কিন্তু আসামি রাসেল আহম্মেদ পলাশ গত ইং ১০.০২.১৯ তারিখে মহামান্য সুপ্রিম কোর্ট, হাইকোর্ট বিভাগের ক্রিঃ মিস ৮৭১৮/১৯ নম্বর মামলায় কারা মুক্ত হন।উল্লেখ্য সাত তারিখের পরে আট এবং নয় তারিখ সরকারি ছুটির দিন ছিল।অভিযোগ কারী পক্ষের মনে সন্দেহ হওয়ায় খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন।
মহামান্য সুপ্রিম কোর্ট হাইকোর্ট বিভাগের মাননীয় বিচারপতি জনাব মোঃ রেজাউল হক এবং মাননীয় বিচারপতি জনাব জাফর আহমেদ মহোদয়ের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ থেকে সাতক্ষীরা থানার মামলা নম্বর ১৬,তাং ১৪.০১.১৯,জি/আর ১৬/১৯ নম্বর মামলায় গত ইং ০৪.০২.১৯ তারিখে এক বছরের জন্য জামিন পাইয়াছে।
কিন্তু মূল বিষয় টি হলো উক্ত ক্রিঃ মিস ৮৭১৮/১৯ নম্বর মামলায় যে সার্টিফাইড কপি দাখিল করা হইয়াছে, তাহা সম্পূর্ণ জাল,উক্ত সার্টিফাইড কপি একটি বিশেষ ক্ষমতা আইনের মামলার সার্টিফাইড কপি।
সাতক্ষীরার তৎকালীন বিজ্ঞ দায়রাজজ জনাব সাদিকুল ইসলাম তালুকদার সাহেবের আদালতের ক্রিঃ মিস ১২৪/১৯নম্বর মামলা যাহা বিশেষ ক্ষমতা আইনের মামলা এর জাল সার্টিফাইড কপি দাখিল করে মহামান্য উচ্চ আদালতে ক্রিঃমিস ৮৭১৮/১৯ নম্বর মামলা দাখিল করেন।
কিন্তু ক্রিঃ মিস ১২৪/১৯ নম্বর মামলায় রাসেল আহম্মেদ পলাশ নামে কোন আসামি ছিল না। এবং উক্ত ক্রিঃ মিস ১২৪/১৯ নম্বর মামলা টা কখনোই বিজ্ঞ দায়রাজজ আদালত থেকে না- মন্জুর হয় নাই বরং উক্ত মামলার আবেদন কারী সকল আসামি গত ইং ১৬.০১.১৯ তারিখে জামিনে মুক্তি পায়।
জনাব ফারুক সাহেব অন্যায় লাভ ওলোভের বশে জাল সার্টিফাইড কপি প্রস্তুত করে মহামান্য উচ্চ আদালতে দাখিল করে অপরাধ করেছেন। বিষয় টি আমি মহামান্য উচ্চ আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
যাইহোক এহেন অভিযোগের কারণে তাকে কারণ দর্শনোনোটিস দেওয়া ছিল আমার অপরাধ।জনাব ফারুক সাহেবের এটাই প্রথম অপরাধ নয়,তিনি সাতক্ষীরা সদর থানার জি/আর ৪১২/১৮ নম্বর মাদক মামলার পলাতক আসামি রেজাউল করিম কে কাঠগড়ায় না উঠিয়ে জামিন করিয়ে দিবেন বলে তার বাবা মোঃ আব্দুল্লাহর নিকট থেকে ৭৫০০০ টাকা নিয়ে একটি জাল সার্সিং স্লিপ দেন।
জামিনের প্রমান হিসাবে ঐ সার্সিং স্লিপে জি.আর. ও হিসাবে জেসমিন নামে একজনের স্বাক্ষর আছে কিন্তু আমার জানা মতে ঐ নামে কখনো কোন জিআরও সদর কোর্টে ছিল না। আমার সময়ের কমিটি কেন তার বিচার করতে গেল এটা আমার অপরাধ। কোর্টপুলিশ এবং স্টাফ দের অনেকেই তার কাছ থেকে অবৈধ সুযোগ সুবিধা গ্রহণ করেন।
তার বিরুদ্ধে জেলখানার আসামি দের স্বাক্ষর, এবং কারাকতৃপক্ষের স্বাক্ষর জাল করার অভিযোগ আছে। সকল ডকুমেন্টস আমার কাছে সংরক্ষিত আছে। আরও একটি ঘটনা আমি জানাতে চাই, আমি সভাপতি হিসাবে দায়িত্ব পালন কালে সাতক্ষীরা শহরের ইটাগাছা পুলিশ ফাঁড়ির একজন সাব ইন্সপেক্টর এবং সদর থানার একজন অফিসার আমার নিকট এসে জানান সদর থানার ঐ অফিসারের বিরুদ্ধে যশোর কোর্টে একটি মামলা আছে, ঐ মামলা ডিসচার্জ করার জন্য বিজ্ঞ বিচারক শামসুল ইসলাম এবং বিচারক শিমূল বিশ্বাসের নাম করে ৪৫০০০০ টাকা নিয়েছেন। কিন্তু কোন কাজ করেন নাই আবার টাকা ফেরত দিচ্ছেন না।
পরবর্তীতে ঐ পুলিশ কর্মকর্তা খোঁজ নিয়েছেন, বিজ্ঞ বিচারক গন সৎ।আমি ব্যক্তিগত ভাবে এই দুজন বিজ্ঞ বিচারক কে চিনি এবং জানি। দুজনেই অত্যান্ত সৎ এবং নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন।
এই যদি হয় আইনজীবীর অবস্থা তাহলে এই পেশার মান কোথায় দাঁড়ালো? এদের জন্য আজ আমাদের মান-মর্যাদা ভুলিন্ঠিত হচ্ছে। প্রত্যেক বার থেকে এজাতীয় আইনজীবীদের চিহ্নিত করে ব্যবস্হা গ্রহণ করা হোক।
Discussion about this post