এড. মোঃ হাবিবুল হক
বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী যাদের ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নম্বর বা টিআইএন রয়েছে তাদের জন্য আয়কর রিটার্ন দাখিল করা বাধ্যতামূলক।
সেটি না করলে জরিমানা করার বিধান রয়েছে।তবে, রিটার্ন দাখিল করলেই যে আয়কর দিতে হবে তা নয়। কারো আয় যদি করযোগ্য না হয়
তাহলে তার আয়কর দেবার প্রয়োজন নেই, শুধু রিটার্ন জমা দিলেই হবে।
আয়কর রিটার্ন দাখিল করা জটিল কোন বিষয় নয়।তবে কিছু বিষয়ে অবশ্যই সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। তা না হলে আইনগত ঝামেলায় পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
ইনকাম ট্যাক্স আইন অনুযায়ী বেশ কিছু আয়, করের আওতায় পড়ে।যেমন চাকরি থেকে পাওয়া বেতন, ব্যবসা থেকে আয়, বাড়িভাড়া থেকে পাওয়া অর্থ, কোন সম্পত্তি বিক্রি ও হস্তান্তর ফলে প্রাপ্ত অর্থ, জামানতের সুদ (সঞ্চয়পত্র, বন্ড, ব্যাংকের সুদ ইত্যাদি), কৃষি হতে আয়।
সম্পদের স্বচ্ছ বিবরণ:
আপনার ব্যক্তিগত আয়, ব্যাংকে গচ্ছিত টাকা, সঞ্চয়পত্র, শেয়ার, ডিবেঞ্চার এবং অন্যান্য স্থাবর সম্পদের বিবরণ আয়কর রিটার্ন দাখিলের সময় সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরতে হবে।
যদি আপনি কোন সম্পদের বিবরণ রিটার্নে তুলে না ধরেন, তাহলে সেটি বৈধ হবে না এবং আপনি আইনগত ঝামেলায় পড়েতে পারেন।
যথাযথ কাগজপত্র দাখিল:
যখন আয়কর রিটার্ন দাখিল করা হয় তখন তার সাথে কিছু প্রমাণ এবং কাগজপত্র দিতে হয়।চাকরিজীবী হলে বেতন এবং সুযোগ-সুবিধার বিবরণ, ব্যাংকে টাকা জমা থাকলে সুদ থেকে পাওয়া টাকার সার্টিফিকেট জমা দিতে হবে।
এছাড়া সঞ্চয়পত্র ক্রয় করা হলে সেটির ফটোকপি এবং মুনাফা বাবদ পাওয়া টাকার সার্টিফিকেট দিতে হবে। এজন্য সব ধরনের কাগজপত্র সর্বক্ষণ একটি কপি গ্রাহকের কাছে রাখার জন্য পরামর্শ দেয়া হয়।
রিটার্ন ফরম পূরণ:-
আপনি চাইলে নিজে রিটার্ন ফর্ম পূরণ করে জমা দিতে পারেন অথবা একজন ভালো আয়কর আইনজীবীর পরামর্শ নিতে পারেন।ভালো আয়কর আইনজীবী থাকাটাও জরুরি। অনেক সময় আইনজীবীদের ভুলের কারণে করদাতা ঝামেলায় পড়তে পরেন।আইনজীবী আপনার আয়, ব্যয় এবং সম্পদের পরিমাণ কিভাবে তুলে ধরছেন সেটি খেয়াল করবেন এবং বোঝার চেষ্টা করবেন।
প্রথমবার রিটার্ন দাখিলের ক্ষেত্রে সতর্কতা:-
যারা প্রথমবার রিটার্ন জমা দিচ্ছেন তারা ফর্ম পূরণের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকুন। সম্পদের বিবরণ দাখিলের ক্ষেত্রে স্বচ্ছ থাকুন। কোন কিছু লুকানোর চেষ্টা করবেন না। অনেকে মনে করেন, প্রথমবার সব সম্পত্তির বিবরণ না দিয়ে ধাপে-ধাপে প্রতিবছর সেগুলো দেখানো হবে। কিন্তু এটি একটি ভুল ধারণা।বিষয়টি যদি আয়কর কর্তৃপক্ষের নজরে আসে তাহলে আপনি আইনগত ঝামেলায় পড়তে পারেন।
ধরুন, কারো দুই কোটি টাকা আছে। কিন্তু তিনি সেটা রিটার্ন দাখিলের সময় দেখালেন না। যদি তদন্তের মাধ্যমে এটি বেরিয়ে আসে, তাহলে আয়কর বিভাগ প্রশ্ন করেতে পারে, কেন এটা লুকানো হলো? এ প্রশ্নের জবাব দিয়ে বের হয়ে আসা সহজ নয়।
আয়-ব্যয়ের সংগতিপূর্ণ রিটার্ন দাখিল:-
আয়কর রিটার্ন দাখিলের সময় আপনি আয় যেমন দেখাবেন, তেমনি ব্যয়ও দেখাবেন। আয়ের সাথে ব্যয়ের সামঞ্জস্য থাকাটা জরুরি। আপনার জীবনযাত্রার ব্যয়, আয়ের সাথে যদি সামঞ্জস্যপূর্ণ না হয় তাহলে আপনি আইনগত ঝামেলায় পড়তে পারেন।
কৃষি আয় এড়িয়ে যাবেন না। কৃষিখাত থেকে আপনার কোন আয় থাকলে সেটি সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরতে হবে। কৃষি জমি থেকে শস্য বা মৎস্য উৎপাদনের মাধ্যমে প্রতিবছর আপনি যে আয় করেন, সেখান থেকে উৎপাদন খরচ বাদ দিয়ে বাকি টাকার উপর কর দিতে হবে। যদি কৃষি আপনার একমাত্র আয়ের উৎস হয়ে থাকে তাহলে কিছু বাড়তি সুবিধা পাওয়া যাবে।
বাড়ি ভাড়া থেকে আয়:-
আপনি যদি বাড়িভাড়া দিয়ে কোন আয় করেন তাহলে আপনাকে সেটি অবশ্যই আয়কর রিটার্নে উল্লেখ করতে হবে। সেক্ষেত্রে যে অংশটি আপনি ভাড়া দিয়েছেন, সেটির আয়তন কত তা উল্লেখ করতে হবে।
বাড়িভাড়া বাবদ প্রতিমাসে ২৫ হাজার টাকার বেশি আয় হলে বাড়ির মালিককে সেটি ব্যাংক হিসেবে জমা রাখতে হবে। সেটি না করলে জরিমানা করার বিধান রয়েছে।
Discussion about this post