ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকৃত আসামি চিহ্নিত করতে দেশের সব কারাগারের কয়েদি শনাক্তে ফিঙ্গারপ্রিন্ট ও আইরিশ স্ক্যানিংয়ের মাধ্যমে বায়োমেট্রিক ডাটা পদ্ধতি চালু করতে কেন নির্দেশ দেয়া হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট।
আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে স্বরাষ্ট্র সচিব, আইন সচিব ও কারা মহাপরিদর্শককে এ রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।সোমবার (২৮ জুন) হাইকোর্টের বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন ও বিচারপতি মো. আতাউর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত ভার্চুয়াল বেঞ্চ এ আদেশ দেন ।
চট্টগ্রামে একটি হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত এক আসামির পরিবর্তে অপর একজনের কারাগারে যাওয়ার ঘটনায় মামলা সংক্রান্ত শুনানি নিয়ে এই আদেশ দেয়া হয়।
আদালতে ওই নারীর পক্ষে শুনানি করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মুহাম্মদ শিশির মনির। আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ড. মো. বশির উল্লাহ। আর তিন আইনজীবীর পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল।
এর আগে গত ৭ জুন যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি কুলসুম আক্তার ওরফে কুলসুমীর পরিবর্তে জেল খাটা মিনুকে মুক্তি দেয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। এর পরে কারামুক্তি পান মিনু।
পাশাপাশি এ ঘটনায় চট্টগ্রামের নারী শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২-এর স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটর এম এ নাছের, আইনজীবী নুরুল আনোয়ার, আইনজীবী বিবেকানন্দ চৌধুরী ও আইনজীবী সহকারী সৌরভকে আদালতে হাজির হতে বলা হয়েছিল। আদালতের নির্দেশে তারা আদালতে উপস্থিত হন।
শুনানির সময় আইনজীবী শিশির মনির আদালতকে বলেন, গত দুই বছরে আমাদের দেশে এমন ২৬টি ঘটনা ঘটেছে। যেখানে একজনের নামে আরেকজন জেলে থাকে।এ সময় শিশির মনির এ ধরনের ঘটনা রোধে দেশের জেলগুলোতে বিদেশের মত বায়োমেট্রিক পদ্ধতি চালু করতে নির্দেশনা চান। তখন আদালত রাষ্ট্রপক্ষকে শুনে রুল দেন।
মামলার বিবরণে জানা যায়, ২০০৬ সালের জুলাই মাসে চট্টগ্রামের কোতোয়ালী থানায় রহমতগঞ্জ এলাকায় কোহিনুর আক্তার ওরফে বেবী নামে এক নারী খুন হন। এ ঘটনায় কোতোয়ালী থানায় অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে একটি খুনের মামলা করা হয়। ওই মামলায় কুলসুম আক্তার ওরফে কুলসুমী নামে এক নারী গ্রেফতার হন। ২০০৮ সালে এ মামলায় অভিযোগপত্র দাখিল করেন তদন্ত কর্মকর্তা।
২০০৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি কুলসুম আক্তার জামিন লাভ করেন। এ মামলায় ২০১৭ সালের ৩০ নভেম্বর চট্টগ্রামের অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালত কুলসুমকে দোষী সাব্যস্ত করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন।
রায়ের দিন আসামি কুলসুম আক্তার ওরফে কুলসুমী আদালতে অনুপস্থিত থাকায় তার বিরুদ্ধে সাজা পরোয়ানাসহ গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন।এরপর ২০১৮ সালের ১২ জুন মিনু নামে এক নারীকে সাজাপ্রাপ্ত আসামি কুলসুম আক্তার ওরফে কুলসুমী সাজিয়ে আত্মসমর্পণ করানো হয়। তখন আদালত মিনুকে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠান।

এরমধ্যে ২০১৯ সালের ২৩ এপ্রিল কুলসুম আক্তার হাইকোর্টে আপিল করেন। একই সঙ্গে জামিনের আবেদন করেন।এদিকে চলতি বছরের ২১ মার্চ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে একটি আবেদন করেন চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার। আবেদনে তিনি বলেন, ২০১৮ সালের ১২ জুন কারাগারে পাঠানো আসামি প্রকৃত সাজাপ্রাপ্ত আসামি কুলসুম আক্তার ওরফে কুলসুমী নয়।
এ আবেদনের শুনানি শেষে কারাগারে থাকা মিনুকে আদালতের হাজির করে তার জবানবন্দি গ্রহণ করেন। তখন তিনি জানান তার নাম মিনু, তিনি কুলসুম নয়।তিনি বলেন, মর্জিনা নামে এক নারী তাকে চাল, ডাল দেবে বলে জেলে ঢুকায়। সে প্রকৃত আসামি কুলসুম আক্তারকে চিনে না।
কারাগারের রেজিস্ট্রারসমূহ দেখে আসামি কুলসুমী এবং সাজাভোগকারী আসামির চেহারায় অমিল খুঁজে পান আদালত। তখন আদালত কারাগারের রেজিস্ট্রারসহ একটি উপনথি (কাগজপত্র) হাইকোর্ট বিভাগে আপিল নথির সঙ্গে পাঠিয়ে দেন।
এ ঘটনাটি তখন গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়। গণমাধ্যমে প্রকাশিত ঘটনাটির বিস্তারিত সংগ্রহ করে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট এক বেঞ্চের নজরে আনেন। হাইকোর্ট বিষয়টি আমলে নিয়ে লিখিত আকারে বিষয়টি জানাতে নির্দেশ দিয়ে শুনানির দিন ঠিক করেন। কিন্তু এরই মধ্যে লকডাউন শুরু হলে আদালতের এখতিয়ার পরিবর্তন হয়ে যায়। পরে বিষয়টি নিয়ে বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেনের হাইকোর্ট বেঞ্চে উত্থাপন করেন আইনজীবী শিশির।
শুনানিতে তিনি বলেন, আসল আসামি সনাক্তে অনেক পদ্ধতি আছে। আইবলিং পদ্ধতি আছে এতে সনাক্ত করলে কোনো ভুল হবে না। এ বিষয়ে আমি আরও লিখিতভাবে আদালতকে জানাব। তবে মিনুর ঘটনার পেছনে একটি চক্র কাজ করছে সেটি তদন্তে একটি বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশনা দাবি করেন।
এ সময় আদালত বলেন, আমরা মনে করি এভাবে যদি আসল দোষী অর্থের বিনিময়ে হোক অথবা বিভিন্ন কৌশলের মাধ্যমে নিজেকে বাঁচিয়ে অন্য নিরপরাধ লোককে জেলের মধ্যে আটক রাখে সেটা দুর্ভাগ্যজনক।
Discussion about this post