আন্তর্জাতিক ডেস্ক: সাত বছর আগে সামরিক বাহিনীর একটি স্কুলে হামলার মামলার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে তলব করেছেন দেশটির সুপ্রিমকোর্ট। তলবের পর বুধবার দেশটির সুপ্রিমকোর্টে তিনি হাজির হয়েছেন বলে খবর দিয়েছে পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম ডন।
২০১৪ সালে পাকিস্তানের পেশওয়ারের একটি আর্মি পাবলিক স্কুলে (এপিএস) তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তানের (টিটিপি) সদস্যরা হামলা চালিয়ে অন্তত ১৪৭ জনকে হত্যা করে। নিহতদের কমপক্ষে ১৩২ জন শিশু। এই ঘটনায় দেশটির আদালতে একটি মামলা বিচারাধীন রয়েছে।
পাকিস্তানের এক সময়ের নিষিদ্ধ এই সংগঠনের সঙ্গে দেশটির বর্তমান সরকার পুরোপুরি অস্ত্র-বিরতির ঘোষণা দেওয়ার পর বুধবার সুপ্রিম কোর্ট প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে তলব করেন। ডন বলছে, প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে তলবের পর সুপ্রিম কোর্ট এলাকায় ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা মোতায়েন করা হয়।
কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্যে সুপ্রিম কোর্টে ইমরান খানের উপস্থিতিতে ওই মামলার শুনানি শুরু হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের ১ নম্বর আদালত কক্ষে বেশ কয়েকজন আইনজীবী, নিরাপত্তা কর্মকর্তা এবং এপিএস স্কুলে হামলায় হতাহতদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে উপস্থিত আছেন ইমরান খান।
পাক প্রধানমন্ত্রীর আগে সুপ্রিম কোর্টে উপস্থিত হয়েছেন দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ রশিদ। এর আগের শুনানির সময় দেশটির প্রধান বিচারপতি গুলজার আহমেদের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ ২০১৪ সালের ১৬ ডিসম্বরের হামলায় হতাহতদের পরিবারের সদস্যদের ব্যাপারে সরকার কী পদক্ষেপ নিয়েছে, তা আদালতকে জানাতে অ্যাটর্নি জেনারেলকে নির্দেশ দিয়েছিল।
আদালতে প্রধানমন্ত্রী ইমরানের খানের উদ্দেশে বিচারপতি ইজাজুল আহসান বলেন, হামলায় হতাহতদের বাবা-মায়ের (যারা এপিএস হামলায় তাদের সন্তানদের হারিয়েছেন) সন্তুষ্টি প্রয়োজন। দেশটির প্রধান বিচারপতি এপিএস মামলার ঘটনায় প্রধানমন্ত্রীকে তার সরকারের নেওয়া পদক্ষেপের বিষয়ে আদালতকে জানাতে বলেন।
টিটিপির সঙ্গে অস্ত্রবিরতি: পাকিস্তানের কট্টরপন্থী ইসলামীগোষ্ঠী টিটিপির সঙ্গে গত সোমবার এক মাসের অস্ত্রবিরতি চুক্তি হয়েছে দেশটির সরকারের। তবে দুই পক্ষ রাজি থাকলে অস্ত্রবিরতির মেয়াদ আরও বাড়তে পারে বলে জানিয়েছেন দেশটির তথ্যমন্ত্রী ফাওয়াদ চৌধুরী। টিটিপি বা তেহরিক-ই তালেবান পাকিস্তান নিজেদেরকে আফগানিস্তানের তালেবানগোষ্ঠীর পাকিস্তান শাখা বলে দাবি করে।
আফগানিস্তানের তালেবানগোষ্ঠীর মতোই পাকিস্তানের গণতান্ত্রিক সরকারকে উচ্ছেদ করে নিজেদের সরকার গঠন করতে চায় টিটিপি। পাকিস্তানজুড়ে শরিয়া আইন চালুর দাবিতে বেশ কয়েক বছর ধরে তৎপরতা চালিয়ে আসছে তেহরিক-ই-তালেবান। এর আগে কয়েকবার টিটিপি ও পাকিস্তানের সরকারের মধ্যে সমঝোতায় উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল, কিন্তু প্রতিবারই ব্যর্থ হয়েছে সেসব উদ্যোগ।
বর্তমান শান্তি চুক্তি অনুযায়ী, আগামী ৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত উভয়পক্ষের অস্ত্রবিরতি চলবে। মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী ফাওয়াদ চৌধুরি বলেন, ‘নিষিদ্ধ গোষ্ঠী তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তানের সঙ্গে জন্য সম্পূর্ণ অস্ত্রবিরতিতে সম্মত হয়েছে পাকিস্তানের সরকার। এই অস্ত্রবিরতির মেয়াদ আরও বাড়তে পারে।’
পাকিস্তানের নারী শিক্ষা অধিকার কর্মী ও শান্তিতে নোবেলজয়ী মালালা ইউসুফজাইকে হত্যাচেষ্টার মাধ্যমে পশ্চিমা বিশ্বে পরিচিতি পায় টিটিপি। রয়টার্সের তথ্যমতে, টিটিপির একের পর এক আত্মঘাতী হামলা ও বোমা হামলায় এরই মধ্যে পাকিস্তানের কয়েক হাজার সামরিক-বেসামরিক মানুষ নিহত হয়েছেন।
Discussion about this post