ইলেকট্রনিক কমার্স বা ই-কমার্স বা ই-বাণিজ্য সিস্টেম সম্পর্কে বিস্তারিত
চূড়ান্ত ডিজিটাল কমার্স পরিচালনা নির্দেশিকা ২০২১
একনজরে:
- ই-কমার্স এর মাধ্যমে এমএলএম, জুয়া বা লটারি ব্যবসা করা যাবে না।
- মার্কেটপ্লেস এর পণ্য ডেলিভারি প্রাপ্তির ১০ দিনের মধ্যে সেলার বা বিক্রেতাকে অর্থ পরিশোধ করতে হবে বা ভিন্ন কোন চুক্তি থাকলে তা মানতে হবে।
- রেডি টু শিপ অবস্থায় অগ্রিম অর্থ গ্রহণের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ডেলিভারি পারসন বা কোম্পানিকে হস্তান্তর করা যাবে না এরকম ক্ষেত্রে ১০% এর বেশি অগ্রিম গ্রহন করা যাবে না। তবে এস্ক্র মাধ্যমে ১০০% পর্যন্ত এডভ্যান্স নেওয়া যাবে।
- সম্পূর্ন মূল্য পরিশোধের পর একই শহরে ৫ দিন, ভিন্ন শহরে ১০ দিনের মধ্যে ডেলিভারি নিশ্চিত করতে হবে।
- যেকোন অভিযোগ ৭২ ঘণ্টার মধ্যে সমাধানের উদ্যোগ নিতে হবে।
- অগ্রিম অর্থ গ্রহন করে কোন কারনে পণ্য দিতে ব্যর্থ হলে মূল্য পরিশোধের সর্বোচ্চ ১০ দিনের মধ্যে যেই মাধ্যমে অর্থ নেওয়া হয়েছে একই মাধ্যমে অর্থ ফিরত দিতে হবে।
- পরিশোধিত মূল্যের অতিরিক্ত অর্থ ফেরত দেওয়া যাবে না। ( বাণিজ্য মন্ত্রণালয় )
আধুনিক ইলেকট্রনিক কমার্স সাধারণত ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব এর মাধ্যমে বাণিজ্য কাজ পরিচালনা করে। এছাড়াও মোবাইল কমার্স, ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার ও অন্যান্য আরো কিছু মাধ্যম ব্যবহৃত হয়।
ইলেকট্রনিক কমার্স বা ই-কমার্স বা ই-বাণিজ্য একটি বাণিজ্য ক্ষেত্র যেখানে কোনো ইলেকট্রনিক সিস্টেম (ইন্টারনেট বা অন্য কোন কম্পিউটার নেটওইয়ার্ক) এর মাধ্যমে পণ্য বা সেবা ক্রয়/ বিক্রয় হয়ে থাকে।
অনলাইনে কেনাকাটাঃ-
অনলাইন গ্রোসাররা মুদি দোকান যা ব্যক্তিগত ব্যবসা তাকে অনলাইনে মুদি ও মুদি পণ্য ক্রয়ের অনুমতি দেয়। সংস্থাগুলি তখন ভোক্তাদের কাছে অর্ডার সরবরাহ করে।
জনপ্রিয় অনলাইন মুদি সমূহঃ-
নাম দেশ প্রতিষ্ঠাকাল প্রধান কার্যালয় মালিকানা বিগবাসকে ভারত ২০১১ বেঙ্গালুরু টাটা গোষ্ঠী।চালডাল.কম বাংলাদেশ ২০১৩ ঢাকা। গ্রোফার্স ভারত ২০১৩ গুরুগ্রাম জোম্যাটো জিওমার্ট ভারত। ২০১৯ মুম্বই রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ।আমাজন ফ্রেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ২০১৭ সিয়াটল অ্যামাজন স্পেন্সারর্স রিটেইল ভারত। ১৯৯০ কলকাতা আরপি-সঞ্জীব গোয়েঙ্কা গ্রুপ ফ্লিপকার্ট রিটেইল ভারত।২০১৮ বেঙ্গালুরু ওয়ালমার্ট ।
ই-বাণিজ্য ইতিহাস এবং সময়রেখা
১৯৭১ বা ১৯৭২ : উন্নত গবেষণা প্রকল্প এজেন্সী নেটওয়ার্ক (আরপানেট) ব্যাবহারে স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় সেন্টারসমূহ এবং ইন্সটিটিউটসমূহ ও ম্যাসাচুসেট্স ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি-র শিক্ষার্থীদের মধ্যে গাঁজাপাতার ক্রয় বিক্রয়ের মাধ্যমে এই রূপ বাণিজ্যের সূত্রপাত ঘটে। যাকে জন মার্কফ তার বই ‘ডোরমাউস কি বলেছে’ তে ই-কমার্সের চূড়ান্ত আইন হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
ব্যবসায়িক প্রয়োগঃ-
ব্যবসা-থেকে-গ্রাহক (B2C) ব্যবসা-থেকে-গ্রাহক ইলেকট্রনিক কমার্স সম্পাদিত হয় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও গ্রাহকের মধ্যে। এই প্রকারে দ্বিতীয় সর্বাপেক্ষা বেশি ইলেকট্রনিক বাণিজ্য সম্পাদন হয়ে থাকে।
ব্যবসা-থেকে-ব্যবসা (B2B):
ব্যবসা-থেকে-ব্যবসা ইলেকট্রনিক কমার্স সম্পাদিত হয় একাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে। ৮০ শতাংশের (৮০%) মত ইলেকট্রনিক কমার্স ব্যবসা-থেকে-ব্যবসা প্রকার এর অন্তর্ভুক্ত।
গ্রাহক-থেকে-গ্রাহক (C2C):
গ্রাহক-থেকে-গ্রাহক ইলেকট্রনিক কমার্স সম্পাদিত হয় একাধিক ব্যক্তি ও গ্রাহকের মধ্যে। ইলেকট্রনিক বাজার ও অনলাইন নিলাম এর মাধ্যমে সাধারণত এই ধরনের বাণিজ্য সম্পাদিত হয়।
ব্যবসা-থেকে-সরকার (B2G):
ব্যবসা-থেকে-সরকার ইলেকট্রনিক কমার্স সম্পাদিত হয় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও রাষ্ট্রীয় খাতের মধ্যে। এটি সাধারনত ব্যবহৃত হয়ে থাকে রাষ্ট্রীয় কেনা/বেচা, লাইসেন্স সংক্রান্ত কার্যাবলী, কর প্রদান ইত্যাদি ক্ষেত্রে।
গ্রাহক থেকে সরকার (সি টু জি):
কখনো সরসরি জনগনের কাছ থেকে সরকার বিভিন্ন সেবার বিনিময় ফি বা কর নিয়ে থাকে। যখন এর মাঝে কোন মাধ্যমৈ থাকেনা তখন এটা গ্রাহক থেকে সরকার পক্রিয়া বলে বিবেচিত হয়। ডিজিটাল গভর্নেন্স-এর আওতার এ ধরনের সেবা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
মোবাইল কমার্স (m-commerce):
মোবাইল কমার্স ইলেকট্রনিক কমার্স সম্পাদিত হয় তারবিহীন প্রযুক্তি যেমন মোবাইল হ্যান্ডসেট বা পারসোনাল ডিজিটাল অ্যাসিস্টেন্ট (PDA) এর মাধ্যমে। তারবিহীন যন্ত্রের মাধ্যমে তথ্য আদান-প্রদানের গতি ও নিরাপত্তা বৃদ্ধির সাথে সাথে এই ধরনের বাণিজ্য জনপ্রিয়তা লাভ করছে।
সরকারী নিয়ন্ত্রণ
ভারত, তথ্য প্রযুক্তি আইন, ২০০০ এর মাধ্যমে ভারতে ই-বাণিজ্যের নিয়ন্ত্রণ করা হয়।
ক্ষেত্রসমূহ
পণ্য ও সেবা কেনা/ বেচা।মূল্য পরিশোধ।পণ্য নিলাম।বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এর পণ্য ও সেবার মূল্যের তুলনামূলক বিশ্লেষন।টিকেট ক্রয়।পণ্য ও সেবা অর্ডার ও বুকিং দেয়া।অনলাইন বিজ্ঞাপন বাণিজ্য। ইত্যাদি।
উপকরণ সম্পর্কিত বিষয়সমূহঃ-.
বিক্রেতার জন্যঃ ই-কমার্স উপযোগী ওয়েবসাইট।দ্রুত ও কার্যকরভাবে অর্ডার প্রক্রিয়া করার জন্য ইন্টারনেট ও সার্ভার।
মধ্যবর্তী মাধ্যমঃ ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার,ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে মূল্য প্রদানের ও সমধর্মী সেবা প্রদানকারী ব্যাংক প্রতিষ্ঠান।
দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পণ্য পরিবহনকারী প্রতিষ্ঠান। পণ্য ও মুদ্রা স্থানান্তর ও পরিবহনে নিরাপত্তা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান।
গ্রাহকের জন্যঃ ইন্টারনেট সুবিধা। মূল্য পরিশোধের জন্য ক্রেডিট কার্ড বা সমধর্মী মাধ্যম।
সরকারিভাবেঃ ই-কমার্স এর নিরাপত্তা ও মান নিশ্চিত করার জন্য জাতীয় আইন ও নীতিমালা। বাণিজ্য বাজারে প্রভাব।
অর্থনীতিবীদদের মতেঃ-
যেহেতু ইলেকট্রনিক কমার্স গ্রাহকদের বিভিন্ন পণ্য সহজে খুঁজে পাওয়া এবং তুলনামূলক বিশ্লেষনের একটি ক্ষেত্র তৈরি করে দিয়েছে, তাই এটি প্রতিযোগিতামূলক বাজার তৈরীতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করছে। বাংলাদেশের ই কমার্স বাজার বর্তমানে ১৬০০ কোটি টাকার বেশি।
Discussion about this post