পবিত্র কুরআনে উত্তরাধিকার সম্পত্তির বণ্টন বিষয়ে পরিষ্কার বর্ণনা রয়েছে এবং উত্তরাধিকার সম্পত্তিতে নারীর অধিকার দেয়া হয়েছে। নীচে পৃথিবীর সেরা কয়েকটি ধর্মে উত্তরাধিকারের ধারনা ও বন্টন পদ্ধতি সর্ম্পকে আলোচনা করা হয়েছে।
হিন্দু ধর্মঃ হিন্দু ধর্মগ্রন্থ বেদ অনুযায়ী হিন্দু ধর্মে মৃত ব্যক্তির রেখে যাওয়া সম্পত্তিতে স্ত্রী ও কন্যার কোনো অধিকার নেই। সব সম্পত্তি পাবে তার ছেলেরা। বেদে বর্ণিত আছে, প্রথম মানব তার সব সম্পত্তি পুত্রদের মধ্যে বণ্টন করেছেন। মৃত ব্যক্তির যদি কোনো ছেলে না থাকে তবুও তার মেয়েরা সম্পত্তির মালিক হতে পারবে না। মেয়েদের যদি কোনো ছেলে থাকে তবে তারা সম্পত্তির মালিক হবে। তবে মেয়েরা যদি সবাই অবিবাহিত হয় তবে সম্পত্তি মায়ের তত্ত্বাবধানে থাকবে এবং মেয়েরা পিতার রেখে যাওয়া সম্পত্তিতে প্রতিপালিত হবে। মৃত ব্যক্তির যদি দুই মেয়ে থাকে এবং এক মেয়ের যদি ছেলে থাকে তবে ওই ছেলে সব সম্পত্তি পাবে। যে মেয়ের কোনো ছেলে সন্তান নেই সে কিছুই পাবে না। হিন্দু ধর্ম মতে, পিতা মেয়েকে সুপাত্রে তুলে দেয়ার সময় তার সুখ-শান্তির জন্য যথাসাধ্য উপহারসামগ্রী দিতে পারবে। অর্থাৎ হিন্দু ধর্ম মতে, বিয়ের সময় পিতা মেয়েকে যথাসাধ্য সম্পত্তি দেয়ার চেষ্টা করে এবং তাই তার পিতার সম্পত্তি লাভের উপায়।বৌদ্ধ ধর্মঃ বৌদ্ধ ধর্মে উত্তরাধিকার সম্পত্তির বণ্টন বিষয়ে কোনো কিছু নির্দিষ্ট করে বলা নেই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পালি ও বুদ্ধিস্ট স্টাডিজ বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর সুকোমল বড়ুয়া বলেন, ত্রিপিটকের বিনয়পাঠে বিত্তবৈভবের সমবণ্টনের কথা বলা আছে। তবে বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারীরা সম্পত্তি বণ্টনের ক্ষেত্রে তা মানে না। নিজ নিজ সমাজ, দেশ ও আইন অনুযায়ী সম্পত্তি বণ্টন করে। ভারতবর্ষে হিন্দু আইন অনুসারে উত্তরাধিকার সম্পত্তি বণ্টন করা হয়। একই বিভাগের শিক্ষক ড. সুমন কান্ত বড়ুয়া ত্রিপিটকের উল্লেখ করে বলেন, বৌদ্ধ ধর্মে সব ক্ষেত্রে সমান অধিকারের কথা বলা আছে। তবে তা উত্তরাধিকার সম্পত্তি বণ্টনের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে কি না সপষ্ট নয়। একই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. দিলিপ কুমার বড়ুয়া, সহকারী অধ্যাপক ড. বিমান চন্দ্র বড়ুয়ার মতে, বৌদ্ধ ধর্মে উত্তরাধিকার সম্পত্তি, সংসার জীবনের সহায়-সম্পত্তি বণ্টনের বিষয়ে কোনো কিছু উল্লেখ নেই, যেমন কুরআনে রয়েছে।খ্রিষ্টান ধর্মঃ খ্রিষ্টান ধর্মে পিতার মৃত্যুর পর যদি তার কোনো পুত্র জীবিত থাকে তাহলে বোন কিছুই পাবে না। সব সম্পত্তি পাবে ছেলে। এ বিষয়টি বাইবেলে সপষ্ট করে উল্লেখ করা আছে। মৃত ব্যক্তির যদি দুই পুত্র থাকে তাহলে বড় ভাই পাবে ছোট ভাইয়ের দ্বিগুণ। মৃত ব্যক্তির যদি কোনো পুত্র না থাকে তাহলে তার রেখে যাওয়া সব সম্পত্তি পাবে তার কন্যা। যদি কোনো কন্যাও না থাকে তাহলে মৃত ব্যক্তির সব সম্পত্তি পাবে তার (মৃতের) ভাইয়েরা। যদি মৃত ব্যক্তির কোনো ভাইও না থাকে তাহলে তার সম্পত্তি পাবে নিকটাত্মীয়রা। মৃত ব্যক্তির সম্পত্তিতে বিধবা স্ত্রীর কোনো অধিকার নাই। আবার ভাই থাকলে কন্যাও কিছু পাবে না। মৃত ব্যক্তির যদি কোনো সন্তান না থাকে তুবও স্ত্রী কিছুই পাবে না। সব পাবে মৃত ব্যক্তির ভাইয়েরা।ইহুদি ধর্মঃ কোনো ব্যক্তি মারা গেলে তার সব সম্পত্তি তার পুত্রদের মধ্যে বণ্টন করা হবে। ইসলাম ধর্মে যেমন দেনমোহরের ব্যবস্থা রয়েছে, তেমনি ইহুদি ধর্মের কেতুবাহ পাওনা থাকলে তা স্ত্রীকে পরিশোধ করতে হবে স্বামীর রেখে যাওয়া সম্পত্তি থেকে। এ ছাড়াও বিয়ের সময় স্ত্রীর অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বিষয়ে যদি কোনো চুক্তি হয় তাহলে তাও পালন করতে হবে। স্ত্রী যদি অন্যত্র বিয়ে না করে বৈধব্য জীবনযাপন করে তাহলে যত দিন খুশি মৃত স্বামীর সংসারে থাকতে পারবে। মৃত ব্যক্তির প্রথম সন্তান পুত্র হলে সে অন্যদের তুলনায় সম্পত্তির দ্বিগুণ পাবে। তবে প্রথম সন্তান মেয়ে হলে সে দ্বিগুণ পাবে না। মৃত ব্যক্তির কোনো পুত্র না থাকলে সব সম্পত্তি কন্যা পাবে। বিয়ের আগ পর্যন্ত মেয়েরা পিতার সম্পত্তির দ্বারাই প্রতিপালিত হবে। প্রত্যেক কন্যা পিতার সম্পত্তি থেকে যৌতুক পাবে। মৃত ব্যক্তির যদি কোনো সন্তান না থাকে তাহলে তার সম্পত্তি তার ভাইয়েরা পাবে। যদি কোনো ভাই না থাকে তাহলে তার চাচারা পাবে। যদি কোনো চাচাও না থাকে তাহলে তার নিকটাত্মীয় স্বজনরা পাবে। স্ত্রী মারা গেলে তার সব সম্পত্তি স্বামী পাবে। স্বামী না থাকলে পুত্র-কন্যারা পাবে। সন্তানও যদি না থাকে তাহলে তার পিতা তার সম্পত্তির অধিকারী হবে। মৃতের যদি পিতাও না থাকে তাহলে তার ভাইবোন তার সম্পত্তি পাবে। ভাইবোনও না থাকলে নিকটাত্মীয় স্বজনরা পাবে।
সুতরাং উত্তরাধিকার সম্পত্তি বণ্টনে ইসলামের রীতিনীতিই উন্নত, শ্বাশত, ন্যায়, যুক্তিযুক্ত ও সঠিক। কেউ কেউ এটার উত্তর দিতে না পেরে বিজ্ঞানকে টেনে আনছেন। এটা তাদের পুঁজি হারাবার কারনে হয়েছে। ধর্ম ও বিজ্ঞান দুটো আলাদা জিনিস। ধর্ম ধার্মীক তৈরী করে, বিজ্ঞান প্রযুক্তি তৈরী করে। পৃথিবীর কোন দেশে কোন ধর্ম বিজ্ঞান তৈরী করেনা। ধর্মে হয়ত বিজ্ঞানের পক্ষে কথা বলা আছে। সে ক্ষেত্রেও ইসলাম এগিয়ে, দুনিয়ার কোন ধর্মে বিজ্ঞানকে স্বীকৃতি দেয়নি একমাত্র ইসলাম ব্যতীত। কোন ধর্মীয় গোষ্টি হয়ত বিজ্ঞানে অবদান রেখেছেন সেটা আলাদা কথা। তবে তার অর্থ এই নয় যে যারা আজ অবদান রাখতে পারেনি তারা কালও অবদান রাখতে পারবে না। সেটা ভবিষ্যতের জন্য রেখে দিলে। মানব সভ্যতা বিনির্মানে ইসলামের অবদান অন্য জাতীর চেয়ে হাজার গুনে বেশী আছে। বিভেদ তৈরী হতে পারে শুধু সেখানে, কেউ নৈতিক গুনকে সেরা মনে করবে, কেউ বিজ্ঞানের গুনকে সেরা মনে করবে আবার কেউ পকেটের স্বাস্থ্যকে সেরা গুন মনে করবে। সেখানে কেউ এক হবেনা। আর আজকের বিষয় বস্তুতে ইসলামী ধ্যান ধারনার বিকল্প নাই, এটাই মানব সভ্যতায় নারী উপর সুবিচার।
ধন্যবাদান্তেঃ আকরামস
Discussion about this post