বিডি ল নিউজঃ
১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর ২১ ফেব্রুয়ারি ইউনেস্কো কর্তৃক আন্তর্জাতিকভাবে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি পেলেও এ দেশের উচ্চ আদালতে এখনো উপেক্ষিত রাষ্ট্রভাষা বাংলার ব্যবহার।
সূত্র জানায়, সুপ্রিম কোর্টের আপিল ও হাইকোর্ট বিভাগে প্রথা ও রীতিনীতির কথা বলে স্বাধীনতার ৪৩ বছরে এখনো সব কাজকর্ম চলছে ইংরেজি ভাষাতেই। সুপ্রিম কোর্টের আপিল ও হাইকোর্ট বিভাগে বিচারকরা রায়, আদেশ বা নির্দেশনা দিচ্ছেন ইংরেজিতেই। শুধু তা-ই নয়, আইনজীবীরাও তাদের শুনানিও করেন ইংরেজি ভাষায়।
অথচ সর্বস্তরে বাংলা ভাষা প্রচলনের জন্য ১৯৮৭ সালে প্রণীত আইন রয়েছে।
এর আগে ২০১১ সালে জাতীয় আইন কমিশন উচ্চ আদালতে বাংলা ভাষা ব্যবহারে গুরুত্ব আরোপ করে আইন সংস্কারের সুপারিশও করেছিল।
আইনজ্ঞরা বলছেন, উচ্চ আদালতে বাংলা ভাষা ব্যবহারে আইনগত কোনো জটিলতা নেই। মাতৃভাষা বাংলায় উচ্চ আদালতে রায় দেওয়া হলে সাধারণ বিচারপ্রার্থীরা সহজেই তা বুঝতে পারতেন। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট আদালতের বিচারপতির সদিচ্ছাই যথেষ্ট।
আইন কমিশনের সদস্য অধ্যাপক ড. এম শাহ আলম বলেন, যেহেতু বর্তমানে উচ্চ আদালতে বাংলা ভাষা প্রচলনে কোনো আইনগত বাধা নেই, সেহেতু বিচারপতিরা ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় মাতৃভাষা বাংলা ব্যবহার করতে পারেন। সুপ্রিম কোর্টে বাংলাতে অনেক বিচারপতি রায় লিখেছেন। সুপ্রিম কোর্টের ইতিহাসে সর্বপ্রথম বিচারপতি আমীরুল ইসলাম চৌধুরী বাংলা ভাষায় রায় লেখেন। বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক বাংলা ভাষায় সর্বাধিক রায় লিখে ইতিহাস সৃষ্টি করেন। তাই বর্তমান সময়ে সুপ্রিম কোর্টের বিচারকরা বাংলায় রায় লিখলে কোনো সমস্যা হবে না বলে মনে করি।
জানা যায়, প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান এবং এ বি এম খায়রুল হক, বিচারপতি এম আমীরুল ইসলাম চৌধুরী, কাজী এবাদুল, এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরীসহ কয়েকজন বিচারপতি উচ্চ আদালতে বাংলা ভাষায় কয়েকটি উল্লেখযোগ্য রায় দিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন। কিন্তু সেই অর্থে তাদের অনুসরণ করেননি অন্য বিচারপতিরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জার্মানি, জাপান, ফ্রান্স, স্পেন ও নেদারল্যান্ডসসহ উন্নত বিশ্বে বিচারপ্রার্থীদের শুনানি ও রায় বোঝার জন্য উচ্চ আদালতে দাফতরিক কাজসহ আদালতের রায় ও আদেশ চলে তাদের নিজস্ব ভাষায়।
সংবিধানের ৩ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘প্রজাতন্ত্রের ভাষা হবে বাংলা।’ সুপ্রিম কোর্ট রুলসেও ভাষা হিসেবে প্রথমে ‘বাংলা’ এবং পরে আদালতের ভাষা ব্যবহারের কথা বলা হয়েছে।
দেশের নিম্ন আদালতের প্রায় সর্বক্ষেত্রে বাংলায় রায় ও আদেশ দেওয়া হচ্ছে। ১৯৮৭ সালে প্রণীত বাংলা ভাষা প্রচলন আইনের ৩(১) ধারায় বলা হয়েছে, ‘আইন আদালতের সওয়াল জবাব এবং অন্যান্য আইনগত কার্যাবলী অবশ্যই বাংলায় লিখিতে হইবে।’
এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার সৈয়দ আমিনুল ইসলাম বলেন, কোন ভাষায় রায় দেবেন এটা একান্তই বিচারপতিদের বিষয়। তারা ইচ্ছা করলে যেকোন ভাষায় রায় দিতে পারেন। এক্ষেত্রে কোন বাধ্যবাধকতা নেই। উচ্চ আদালতে বাংলা ভাষার ব্যবহারে কোনো বাধা নেই।
Discussion about this post