নতুন পেঁয়াজ বাজারে আসার আগে সে দেখাচ্ছে কি ধরনের মূল্যবান সে !গতকালই দেখলাম পেঁয়াজের বাজার 130 টাকা ছাড়িয়েছে ! কিন্তু এই ব্যপারটি পুরোপুরিই অপ্রত্যাশিত বলে মনে করি ।
একটু খেয়াল করুন আলুর ব্যপারটি । যখন বেশী পরিমানে আলু উৎপাদিত হয় তখন রাস্তায় ফেলে কৃষকরা প্রতিবাদ করে আবার অভাবের সময় পঁচিশ থেকে ত্রিশ টাকা !
আলু কি রপ্তানি করা যায় না যখন চাহিদার তুলনায় বেশী উৎপাদিত হয় ? চিংড়ি রফতানি করতাম তা শেষ হয়ে গেল চিংড়িতে ওজন বাড়ানোর জন্য ব্যবহৃত জেলের কারণে !ওজন বাড়াতে গিয়ে দূষণের শিকার চিংড়ি এখন রপ্তানি অযোগ্য হওয়ার পথে!সবজির বেলায়ও ঘটল এরকমটাই ।
পেঁয়জের এই দামি মৌসুমের সময় কেউকি অনেক টাকা হাতিয়ে নেয় নি ? কৃত্তিম সংকট তৈরী করে কেউ যে অনেক টাকা হাতিয়ে নেয়নি তার বিশ্বাস কি ?
বেসরকারি চাকুরেদের টিন সার্টিফিকেট বাধ্যতামূলক করা হয়েছে যাতে তারা কর ফাঁকি দিতে না পারে তবে যারা এক মৌসুমে অনেক টাকা উপার্জন করছে তাদের কি টিন সার্টিফিকেট নেই ? এখানে উল্লেখ্য যে যার মূল বেতন ষোল হাজার টাকা তাকেও করের আওতায় আসতে হবে !
বিষয়টা ভাববার । প্রত্যেকটি ব্যবসায়ী এবং যারা নির্দিষ্ট টাকার বাইরে হঠাৎ করে টাকা বেশী পরিমানে উপার্জন করছে তার জন্য জবাব দিহিতা না থাকে তবে চালের দামও নিয়ন্ত্রন সম্ভব নয়, পেঁয়াজেরও নয় !এই সিন্ডিকেটটি একেকটা মৌসুমকে লক্ষ করে বসে থাকে । গত কয়েক বছর আগে রসুনের দামের ক্ষেত্রে অবহেলা দেখেলিাম । রাজশাহী অঞ্চলের মানুষ রসুন রাস্তায় ফেলে প্রতিবাদ করেছিল । বর্তমানে ডিমের দামের এমন অবস্থা । সর্বনিম্ন দামের রেকর্ডও হয়েছে ! যে ডিম বিক্রি করছে তার যেমন পেঁয়াজ কিনতে হচ্ছে তেমনি পেঁয়াজ যে বিক্রি করছে তারও ডিম কিনতে হচ্ছে । আর এখানেই তৈরী হয়ে যাচ্ছে ফারাগ আর এই ফারাগ সরাসরি প্রভাব ফেলছে অর্থনীতিতে ।
অর্থনৈতিক এই অব্যবস্থাপনার কারণে একশ্রেণী সবসময়ই লাভবান শ্রেণীতে রুপান্তরিত হয়ে যাচ্ছে যাকে আমরা চিনে থাকি মধ্যস্বত্যভোগী হিসেবে ।
বেসরকারি চাকুরীজীবিরা যদি আয় বহির্ভূত টাকা দিয়ে কোন সম্পদ অর্জন করে তবে টিন সার্টিফিকেট থাকায় সরকারের কাছে সহজেই একটা হিসাব চলে যাবে এবং সে দর্নীতি করলে তা স্পষ্ট হয়ে উঠবে সবার কাছে । কিন্তু যারা ব্যবসার সাথে জড়িত তাদের ক্ষেত্রে ? অনেকেই একটি ট্রেড লাইসেন্স এর বিপরীতে অনেকগুলো ব্যবসা চালাতে পারে এবং আয়ের পরিমান যত দেখাচ্ছে তার চেয়ে বেশী আয়ও করতে পারে এবং তার প্রমাণ দেখা যায় চালের দাম বাড়ার পরের অবস্থায় । মজুদের মধ্যেও দুর্নীতি করে অনেকে চাল আটকে রেখেছে তার সীমার অনেক বাইরেও । এই বিষয়গুলো থেকে বের হয়ে আসার জন্য নতুন ভাবে নতুন কৌশল নিয়ে ভাবতে হবে ।
ভোটার আইডি কার্ডের সাথে মিলিয়ে টিন সার্টিফিকেট করা হোক । তবে প্রতি বছরে প্রতিটি মানুষ সরকারের কাছে আয় ব্যয়ের হিসেব দিতে বাধ্য হবে ।একটি নাম্বারের সাথে সবগুলো আয়ের বিবরণী থাকলে সঠিক হিসেব নিতেও সহজ হবে বলে মনে করি ।
অনেকক্ষেত্রেই দেখা যায় জ্ঞাত আয় বর্হিভূত সম্পদগুলো প্রায় সবাই স্ত্রী, স্বজন বা অন্যান্য আত্নীয়দের নোমে করা হয় যাতে সহজেই সরকারকে ফাকি দেওয়া যায় । এক্ষেত্রে একটি পরিবারের মোট আয়ের উপর ভিত্তি করে নির্দিষ্ট আয়ের উপরে হলে অবশ্যই ঐ পরিবারের অন্য সদস্যদেরও করের আওতায় নিয়ে আসার যায় । এতে করেও দুর্নীতি কমানো সম্ভব হতে পারি ।
যখন আন্তর্জাতিক বাজার কোন পণ্যের দাম বাড়ে তখন জিনিস পত্রের দাম কিছুটা বাড়তেই পারে এটা স্বাভাবিক কিন্তু যখন শুধু অভ্যন্তরে বাড়ে তখন আগের বছরের উৎপাদনের গড় একটা হিসেব থাকলে মনে হয় কার্যকরী ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব অথবা একটি টার্গেট সেট করে উৎপাদনের ব্যবস্থাও ভালো ফল বয়ে নিয়ে আসতে পারে ।অর্থাৎ এ্ বছর কোন খাদ্য শস্য কতটুকু প্রয়োজন ছিল এবং আগামীতে কতটুকু শস্য প্রয়োজন হতে পারে তার টার্গেট সেট করে উৎপাদন ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রন করার জন্য ব্যবস্থা গ্রহন করতে হবে । এ বিষয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলের দৃষ্টি আকর্ষন করছি ।
লেখকঃ সাঈদ চৌধুরী
সদস্য, উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি
শ্রীপুর, গাজীপুর
Discussion about this post