সিরাজ প্রামাণিক, কুষ্টিয়া থেকে: আগামী সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে কুষ্টিয়া-১ আসনের জন্য আওয়ামী লীগের বিকল্প প্রার্থী খোঁজা হচ্ছে। আর এক্ষেত্রে নাম সর্বত্র আলোচনা হচ্ছে কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামীলীগের প্রচার সম্পাদক, দৌলতপুরের কৃতি সন্তান, ক্লিন ইমেজের তরুণ প্রজন্মের অহংকার, রাজপথের লড়াকু সৈনিক এ্যাডভোকেট হাসানুল আসকার হাসু’র নাম।
ভারতের কাটাতারের বেড়া সংলগ্ন কুষ্টিয়া-১ (দৌলতপুর) আসন। সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সীমান্তবর্তি এই উপজেলায় বেশ জোরেশোরেই বইছে ভোটের হাওয়া। জেলার বৃহত্তম এ উপজেলার ১৪টি ইউনিয়ন নিয়ে নির্বাচনী আসন। কুষ্টিয়া-১ আসনে ২০০৮ সালের আগ পর্যন্ত বিএনপির দাপট থাকলেও এখন তা আগের মত নেই। আওয়ামী লীগ সমর্থিত বর্তমান এমপি রেজাউল হক চৌধুরী ও সাবেক এমপি আফাজ উদ্দিন এক অপরের প্রতিদ্বন্দী। সেকারণ এলাকাবাসী এ দ্বন্ধ নিরসনে ও এলাকার উন্নয়নের স্বার্থে এ্যাডভোকেট হাসানুল আসকার হাসু’কে এমপি হিসেবে দেখতে চায়।
তাঁর রয়েছে রাজনৈতিক বর্ণাঢ্য জীবন। ১৯৮৭ সালে স্কুল জীবনে তিনি স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে সরাসরি যোগদান করেন। ১৯৯১ সালে কলেজ জীবনে রাজশাহী সরকারী নিউ ডিগ্রী কলেজ শাখার ছাত্রলীগকে সুসংগঠিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। ১৯৯৭ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ মতিয়ার হল শাখার সংগ্রামী সাধারন সম্পাদক পরবর্তীতে তিনি ১৯৯৮ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের প্রচার সম্পাদক হিসেবে কাজ করেন। পড়াশুনা শেষে নিজ এলাকায় ফিরে এসে ২০০৪ সালে দৌলতপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক হিসেবে ও ২০০৫ সালে কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামীলীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক পদে অধিষ্ঠিত হন। বর্তমান তিনি কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামীলীগের প্রচার সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। দৌলতপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের সদস্য হিসেবেও রয়েছেন।
এছাড়া তিনি বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনের সাথে জড়িত রয়েছেন। দৌলতপুর উপজেলার সর্ববৃহৎ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দৌলতপুর অনার্স কলেজের সভাপতি, বাহিরমাদী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি, রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির আজীবন সদস্য, “ল-ইয়ার্স” ক্লাব কুষ্টিয়ার সাধারন সম্পাদক সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সামাজিক প্রতিষ্ঠানে ত্রাণ ও আর্থিক সহায়তা সহ সেবা প্রদান করে আসছেন।
এছাড়াও ঐতিহ্যবাহী আওয়ামীলীগ পরিবারের সদস্য হওয়ায় সামাজিক ও আঞ্চলিক জনপ্রিয়তা রয়েছে। তাঁর চাচা মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক মরহুম আজিজুর রহমান আক্কাস। তিনি ছিলেন সাবেক এমএনএ ও এমপি (কুষ্টিয়া-দৌলতপুর) এবং কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামীলীগের প্রাক্তন সভাপতি। ২০০১ সালে জাতীয় নির্বাচনের পর বিএনপি জামায়াত জোট কর্তৃক নির্যাতিত নেতা-কর্মীদের আইনগত ও আর্থিক সহায়তা প্রদান করায় নির্যাতিত নেতা-কর্মীদের আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। দলীয় কোন্দল নিরসনের জন্য জেলা আওয়ামীলীগের প্রতিনিধি হিসেবে দৌলতপুর উপজেলায় সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করছেন। সুবক্তা হওয়ার কারণে সরকারের উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডগুলো জনগণের মধ্যে ভালভাবে তুলে ধরতে সক্ষম। ব্যাপক প্রচারনার মাধ্যমে জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে সরকারের উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডসমূহ জনগণের মধ্যে তুলে ধরেছেন। মাদকের বিরুদ্ধে মানীয় প্রধানমন্ত্রী দৃঢ় অবস্থান ঘোষনার পর বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তা ও পুলিশ কর্মকর্তা সহ দলীয় নেতা-কর্মী এবং দৌলতপুরের বিভিন্ন অঞ্চলের জনগণকে সাথে নিয়ে মাদক বিরোধী প্রচার প্রচারণার মাধ্যমে মাদক নির্মূলে ব্যাপক ভূমিকা পালন করে চলেছেন।
বর্তমান ও সাবেক সংসদ সদস্যদের মধ্যে চলমান বিরোধের কারনে বঞ্চিত ও হতাশ নেতা-কর্মীদের পাশে থেকে জননেত্রী শেখ হাসিনার আদর্শ ও ভিশনকে বাস্তবায়ন করার লক্ষে সকল নেতা-কর্মীদের একত্রিত করার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। ইতোমধ্যে দলের নবীন ও প্রবীণ নেতা-কর্মী সহ তরুণ প্রজন্ম এবং সাধারণ ভোটারদের মধ্যে আস্থা ও গ্রহণ যোগ্যতা অর্জন করেছেন। তাছাড়াও বিভিন্ন পেশাজীবীদের মধ্যে সমন্বয় সাধন করতে সক্ষম হয়েছেন। ব্যক্তিত্ব ও গ্রহণ যোগ্যতার কারনে তৃণমূল পর্যায়ে গণসংযোগের ফলে নৌকা প্রতীকের পক্ষে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছেন। তাছাড়া দৌলতপুর উপজেলার বৃহত্তর ফিলিপনগর ইউনিয়ন, রামকৃষ পুর ইউনিয়ন, প্রাগপুর ইউনিয়ন, চিলমারী ইউনিয়ন সহ মথুরাপুর ইউনিয়ন এলাকার জনসাধারণের আস্থাভাজন ও প্রিয় ব্যক্তি হওয়ায় আঞ্চলিকতার দিক থেকে অন্যন্য সকলদের চেয়ে অনেক এগিয়ে রয়েছেন নৌকার কান্ডারী এ প্রার্থী।
সততা, দানশীলতা, মার্জিত ব্যবহার এবং সামাজিক কর্মকান্ডের জন্য সাধারন জন সাধারনের মধ্যে খুবই জনপ্রিয়। প্রতিষ্ঠিত আইনজীবী হিসেবে দলীয় নেতা-কর্মীদের এবং সাধারন জনগণকে আইনগত সহায়তা প্রদানের কারনে এবং শিক্ষানুরাগী ব্যক্তি হিসেবে সমাজে সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য।
এদিকে আওয়ামী লীগের পাশাপাশি বিএনপিতেও প্রার্থী নিয়ে জট দেখা দিতে পারে বলে জানা গেছে। উপজেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক এমপি রেজা আহমেদ বাচ্চু মোল্লাকে দলের একক প্রার্থী মনে করেন বেশির ভাগ নেতাকর্মি। তবে ২০০৮ সালে মনোনয়ন পাওয়া জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি আলতাফ হোসেন শেষ পর্যন্ত বাচ্চু মোল্লার গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়াতে পারে। পাশাপাশি উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শহীদ সরকার মঙ্গল ও বিএনপির বর্ষিয়ান নেতা আলতাফ হোসেন, এ্যাডভোকেট রমাজান আলী সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকায় রয়েছেন।
বড় দুই দলের বাইরে জাতীয় পার্টি থেকে সাবেক প্রতিমন্ত্রী কুরবান আলীর ছেলে জেলা জাতীয় পার্টির সাধারন সম্পাদক ফারিয়ার জামিল জুয়েল নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এছাড়া উপজেলা জাসদের (ইনু) সাধারন সম্পাদক শরিফুল ইসলাম নির্বাচন করবেন।
Discussion about this post