♣এম আই মিরাজ
বিচার বিভাগের স্থিতিশীলতা, রাজনৈতিক মেরূকরণ এবং আগামী নির্বাচনকে অগ্রাধিকারসহ জেষ্ঠতা লঙ্গণের বিবেচনা কিংবা দীর্ঘ মেয়াদী বিবেচনাসহ একাধিক বিশ্লেষণের আলোকে দেশের ২৩ তম প্রধান বিচারপতি বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নাম ১ নম্বরে আছে বলে আইন পাড়ায় আনাগোনা চলছে।
জ্যেষ্ঠতা অনুসারে বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলী ২০২২ সালের ৩১ ডিসেম্বর, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ২০২৩ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর, বিচারপতি মো. নুরুজ্জামান (ননী) ২০২৩ সালের ৩০ জুন এবং বিচারপতি ওবায়দুল হাসান (শাহীন) ২০২৬ সালের ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করবেন। এ পরিস্থিতিতে সরকার এখন কাকে প্রধান বিচারপতি পদে নিয়োগের জন্য প্রস্তাব করে, সেটিই দেখবার বিষয়।
বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলী দীর্ঘদিন আপিল বিভাগের দ্বিতীয় বেঞ্চের প্রধান হিসেবে নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন। জ্যেষ্ঠতা অনুসারে তিনিই প্রধান বিচারপতি পদের দাবিদার।
বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী একইসঙ্গে জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করে আসছেন। রাষ্ট্রপতি প্রথম দফায় ২০১৫ সালের ৩০ এপ্রিল তাকে ওই পদে নিয়োগ দেন। পরে তার মেয়াদ বাড়ানো হয়। জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশন অধস্তন আদালতে বিচারক নিয়োগ-সংক্রান্ত পরীক্ষাসহ যাবতীয় কাজ এবং এর সঙ্গে সংশ্নিষ্ট বিষয়ে কোনো প্রশ্নের উদ্ভব হলে রাষ্ট্রপতিকে পরামর্শ দিয়ে থাকে। এই হিসেবে বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীও প্রধান বিচারপতি পদে পছন্দের তালিকায় আছেন।
গত দুই দশকে দেশের ইতিহাসে দেশের ২২তম প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন সর্বোচ্চ সময় এ পদে রয়েছেন। আগামী ৩০ ডিসেম্বর দেশের ২২তম প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন অবসরে যাচ্ছেন । দেশের ২৩ তম প্রধান বিচারপতি কে হচ্ছেন?
প্রধান বিচারপতি নিয়োগে জ্যেষ্ঠতা অনুসরণ করা হবে, না গতবারের মতো সুপারসিড (জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন) করে আপিল বিভাগের অন্য কাউকে প্রধান বিচারপতি পদে নিয়োগ দেওয়া হবে- এটা দেখবার বিষয়।
সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি আপিল বিভাগের যে কোনো বিচারপতিকে বা বিচারপতি হিসেবে নিয়োগের জন্য উপযুক্ত ব্যক্তিকে প্রধান বিচারপতি পদে নিয়োগ দিতে পারেন; এ কারণে পুরো বিষয়টি এখন রাষ্ট্রপতির ওপর নির্ভর করছে।
আইন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি সপ্তাহের মধ্যে সংবিধানের ৯৫ (১) অনুচ্ছেদের ক্ষমতাবলে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করবেন। ৯৫ (১) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘প্রধান বিচারপতি রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিযুক্ত হইবেন এবং প্রধান বিচারপতির সহিত পরামর্শ করিয়া রাষ্ট্রপতি অন্যান্য বিচারককে নিয়োগদান করিবেন।’
২০১৭ সালে সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার পদত্যাগের পর বিচারপতি আবদুল ওয়াহ্হাব মিয়া দায়িত্বরত প্রধান বিচারপতি হিসেবে (৮২ দিন) দায়িত্ব পালন করেছিলেন- এবারও এমন কিছু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে কিনা প্রশ্নে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘তখন সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী মামলার রায় নিয়ে এমন কিছু পরিস্থিতি হয়েছিল, যার জন্য রাষ্ট্রপতি প্রধান বিচারপতি নিয়োগে বিলম্ব করেছিলেন। এখন তেমন কোনো বিষয় নেই। আশা করছি যথাসময়ে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ হবে। রাষ্ট্রপতি যাকে নিয়োগ দেবেন, সে অনুযায়ী আইন মন্ত্রণালয় থেকে গেজেট প্রকাশ করা হবে।’
সুপ্রিম কোর্টের তথ্য অনুসারে, আপিল বিভাগে বর্তমানে পাঁচজন বিচারপতি কর্মরত আছেন। চাকরিবিধি অনুসারে তাদের অবসরের বয়সসীমা ৬৭ বছর।বয়স অনুসারেই প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের অবসর হচ্ছে।
Discussion about this post