বিডি ল নিউজঃ
বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোটের অনির্দিষ্টকালের অবরোধের দেড় মাস কেটেছে। ফাঁকে ফাঁকে পালন করা হচ্ছে হরতালও। মামলায় জর্জরিত তৃণমূল বিএনপির নেতা-কর্মীরা টানা এই কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে এখন ক্লান্ত, পরিশ্রান্ত। সেই সঙ্গে গুম, খুন, অপহরণ বা গ্রেফতার আতঙ্কে দীর্ঘদিন ধরে বাসা-বাড়িতে থাকছেন না অনেকেই। নেতা-কর্মীদের প্রশ্ন- এ অবরোধ-হরতাল কর্মসূচির শেষ হবে কবে? আন্দোলনের সফলতা নিয়েও রয়েছে তাদের হাজারো জিজ্ঞাসা। অবশ্য এসবের উত্তর জানেন না বিএনপির অধিকাংশ কেন্দ্রীয় নেতাও। তা ছাড়া হরতাল-অবরোধের মধ্যে ‘ক্রসফায়ার’ বা ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নেতা-কর্মী নিহতের ঘটনা তৃণমূলের পাশাপাশি বিএনপির নীতিনির্ধাকরদের ভাবিয়ে তুলেছে। পরিস্থিতি বিবেচনায় আগামী মাসে পরিবর্তন আসতে পারে আন্দোলনের কৌশলে। সূত্রমতে, তৃণমূল নেতা-কর্মীদের গাঢাকা দেওয়ার কারণে হরতাল-অবরোধ অনেকটা গতিহীন হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে গেল সপ্তাহের হরতাল-অবরোধে ঢাকাসহ বিভাগীয় শহরগুলোয় তেমন কোনো প্রভাব পড়েনি। পেট্রলবোমা বা ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনাও কমে এসেছে। অনেকটাই স্বাভাবিক পরিস্থিতি বিরাজ করে জেলা শহরগুলোয়। এরই মধ্যে অবরোধের সঙ্গে আজ থেকে আবারও ৭২ ঘণ্টার হরতাল ডাকা হয়েছে। বুধবার সকাল থেকে ফের ৪৮ ঘণ্টা হরতাল দেওয়ারও চিন্তাভাবনা চলছে। তবে এ কর্মসূচির সফলতা নিয়েও নানা প্রশ্ন রয়েছে। সে কারণে আন্দোলন কর্মসূচির কৌশল পরিবর্তনের কথা ভাবা হচ্ছে। হরতাল-অবরোধের মধ্যে আগামীকাল ঢাকাসহ সারা দেশে বিক্ষোভ কর্মসূচি দেওয়া হয়েছে।বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া বলেন, ‘একটি জনসভায় যোগদানকে কেন্দ্র করে চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে অবরুদ্ধ করে রাখার পরিপ্রেক্ষিতেই অবরোধ কর্মসূচি চলে আসছে। আমাদের সভা-সমাবেশ কিংবা কোথাও দাঁড়াতে দিচ্ছে না সরকার। বিএনপিকে রাজনৈতিকভাবে ধ্বংসের অপচেষ্টা চলছে। আন্দোলন ছাড়া আমাদেরইবা কী করার আছে?’ তিনি বলেন, ‘তৃণমূল বিএনপি আন্দোলন সংগ্রামে চালকের আসনে আছে। নানা বাধাবিপত্তি সত্ত্বেও তৃণমূল আন্দোলন চালিয়ে যেতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’ তৃণমূল নেতারা জানান, মাসের পর মাস তারা আত্মগোপনে থেকে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। হাজার হাজার মামলা ছাড়াও প্রতিদিনই গুম, খুন বা ক্রসফায়ার আতঙ্ক তাড়া করছে তাদের। এ ক্ষেত্রে রাজধানীতে আন্দোলন কর্মসূচির সমালোচনাও করেন কেউ কেউ। মহানগরের হেভিওয়েট নেতারা মাঠে নামলে আন্দোলনের চিত্র পরিবর্তন হতো বলে মনে করেন মাঠের নেতারা। কারও কারও মতে, আর্থিকভাবে সহায়তা পেলে আন্দোলন আরও বেগবান হতো। তা ছাড়া কেন্দ্রের পাশাপাশি জেলা পর্যায়ের হেভিওয়েট নেতারা মাঠে নামলেও আন্দোলন গতি পেত। নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলার বিষয়ে কেন্দ্র থেকে আরও সহযোগিতা প্রয়োজন বলেও মনে করেন তৃণমূলের নেতারা। জানা গেছে, ঢাকাকে সারা দেশ থেকে মোটামুটি বিচ্ছিন্ন করে রাখার ক্ষেত্রে তৃণমূলের নেতা-কর্মীরাই সক্রিয় ভূমিকা পালন করে যাচ্ছেন। বরাবরের মতো ঢাকা মহানগর বিএনপি এবারও ব্যর্থ। ওয়ার্ড, থানা কিংবা মহানগর পর্যায়ের নেতারা আন্দোলন শুরুর আগেই আত্মগোপনে চলে গেছেন। রাজধানীতে যেসব বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটছে তা ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা-কর্মীরা করছেন। দীর্ঘদিন ঢাকা মহানগরে বিএনপির সংখ্যাগরিষ্ঠ ওয়ার্ড কাউন্সিলর থাকলেও আন্দোলনে অধিকাংশ মাঠছাড়া। নেতা-কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে অনেকেই যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রেখেছেন। এ প্রসঙ্গে মহানগর বিএনপির এক নেতা বলেন, ‘রাজধানী আর তৃণমূলের আন্দোলন কর্মসূচি যথাযথভাবে পালন করার ক্ষেত্রে কিছুটা পার্থক্য রয়েছে। পুলিশের কারণে রাজধানীতে কোথাও দাঁড়ানোও যায় না। এই বাস্তবতা সবাইকে বুঝতে হবে। তার পরও ঢাকার আন্দোলনে গতি আনতে প্রয়োজনীয় কৌশল নেওয়া হচ্ছে। হরতাল-অবরোধের পাশাপাশি বিক্ষোভ কর্মসূচি এজন্যই দেওয়া হয়েছে।’ বরিশাল মহানগর মহিলা দলের সভানেত্রী বিলকিস জাহান শিরিন বলেন, ‘যত বাধাবিপত্তিই আসুক, একটি যৌক্তিক পর্যায়ে না যাওয়া পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত রাখতে তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা সফল হবই।’ রাজশাহীর বাঘা উপজেলা বিএনপির সভাপতি নূরুজ্জামান খান মানিক বলেন, ‘তৃণমূল বিএনপিকে ক্লান্ত বলা যাবে না। কারণ, চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশনা অক্ষরে অক্ষরে পালনের চেষ্টা করছেন মাঠের নেতা-কর্মীরা। দল যত দিন চাইবে তত দিনই কর্মসূচি পালন করব আমরা।’ খুলনার ফুলতলা উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলাউদ্দিন সরদার মিঠু বলেন, ‘আন্দোলন করতে গিয়ে আমরা যত না ক্লান্ত তার চেয়ে বেশি ক্লান্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। কিন্তু আমাদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। আন্দোলন ছাড়া আর মুক্তির উপায় নেই।’ বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবুল হোসেন খান বলেন, ‘শুধু আমরাই নই, দেশের ১৬ কোটি মানুষই আজ ক্লান্ত। আওয়ামী লীগ-পুলিশ সবাই ক্লান্ত। কিন্তু আমরা ক্লান্ত হলেও আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।’
Discussion about this post