মোঃ মনিরুজ্জামান:-
আমাদের মতো মেয়েদের কেউ ভালোবাসে না।তোমরা তো ভালোবাসার জন্য চাও নরম মেয়ে।আর আমাদের বাস্তবতাতো শক্ত প্রাচিরে ঘেরা।সকালটা শুরু হয় থালা-বাসনের সাথে যুদ্ধ করে আর সন্ধা শেষ হয় টিউশনি দিয়ে।তোমার ডায়রিটা পড়লাম।ডায়রির প্রতিটা পাতা আইনের ধারা দিয়ে সাজানো, কিছু কবিতা দেখলাম, কিছু গল্পও সেগুলোতেও কোন না কোন ভাবে ধারা জুড়ে দিয়েছো।
দেখো CrPC তে যেমন নয়টা কারনে গ্রেফতারি পরোয়ানা ছাড়াও গ্রেফতার করা যায় তেমনি নরম মেয়ে ছাড়াও নয় প্রকার মেয়েদের ভালোবাসা যায়।
তুমি হয়তো জানো শ্যামা মেয়ে আর পকেট খালি ভবঘুরে যুবকের প্রেম লেখকের লেখা গল্পেই শোভা পায় বাস্তবতায় না।
হুম ভবঘুরে হয়েই ঘুরতে ছিলাম পুলিশ ৫৫ ধারার বিধান অনুযায়ী গ্রফতার করে থানায় নিয়ে গেল আবার ৬৩ ধারায় মুচলেকা নিয়ে ছেড়েও দিলো।পুলিশ যদি ভবঘুরেকে গ্রফতার করতে পারে,তাহলে একটা শ্যামা মেয়ে কেন পারবেনা এই ভবঘুরেটাকে তার জীবনে বন্দী করতে?
তোমার এই শক্ত আইনের ধারাগুলো আমার মাথায় ঠুকছে না।চলো ঐ পার্কের বেঞ্চে গিয়ে বসি।
চলো পার্কের বেঞ্চে তোমার কোলে মাথা রেখে একটা রোমান্টিক কবিতা পড়ে শোনাই।
ও একটু হাসলো।আমরা পার্কের বেঞ্চে গিয়ে বসলাম,ওর কোলে আমার মাথা রাখা হয়নি তবে পাশাপাশি বসে একটা কবিতা পড়তেছি। এমন সময় দুই জন পুলিশ আসলো আমাদের কাছে। পুলিশগুলোর কাঁধের ব্যাচ দেখে বুঝলাম একজন এসআই এবং একজন কন্সটেবল।তারা বললো আপনাকে গ্রেফতার করা হলো।আমি বললাম গ্রেফতারি পরোয়ানা দেখান।
এসআইটা বললো বিনা পরোয়ানায় গ্রেফতার।
দেখুন পুলিশ অফিসার আপনারা CrPC এর ৫৪ ধারা অনুযায়ী নয়টা ক্ষেত্রে বিনা পরোয়ানায় গ্রেপ্তার করতে পারেন আমিতো নয়টা ক্ষেত্রের কোনটাতেও পরি না।কেননা
এক নম্বরে বলা আছে কোন ব্যক্তি আমলযোগ্য অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকলে।
আমি তো কোন আমলযোগ্য অপরাধ করি নাই।পার্কে কোন মেয়ের সাথে বসে থাকা তো আমলযোগ্য অপরাধ না।আর উনি অবিবাহিত মেয়ে,বিবাহিত হলে নাহয় দণ্ডবিধির ৪৯৭ ধারা অনুযায়ী ব্যভিচার কথা ভাবতেন।তাও আবার ব্যভিচার আমলঅযোগ্য অপরাধ, ম্যজিষ্ট্রেটের অনুমতি ছাড়া গ্রেফতারও করতে পারবেন না।
দ্বিতীয়তো কারন ছাড়া কারো কাছে ঘর ভাঙ্গার সরঞ্জাম থাকলে।আমার কাছে শুধু একটা মোবাইল ফোন আর ইয়ারফোন আছে এগুলা দিয়ে তো কারো ঘর ভাঙ্গা যায় না।উল্টা তো আপনারা আমাদের ঘর ভাঙ্গার জন্য আসছেন।
তৃতীয়তো সরকারি আদেশ দ্বারা কাউকে অপরাধী ঘোষণা করা হলে। সরকার আমাকে আবার অপরাধী ঘোষণা করলো কবে? অথচ আপনারাই কালকে আমায় ভবঘুরে উপাধি দিয়ে গ্রেফতার করলেন আবার ছেড়েও দিলেন। তাহলে তো এই ক্ষেত্রেও গ্রেফতার করতে পারবেন না।
চতুর্থতো কারো কাছে চোরাই মাল থাকলে বা চোরাই মাল আছে বলে সন্দেহ করলে। আমার কাছে চোরাই তো দুরে থাক কোন মালই নাই।এই ফোনটা আমার নামেই রেজিষ্ট্রেশন করা।
পঞ্চমতো পুলিশের কাজে বাধা দিলে বা আইন সঙ্গত হেফাজত থেকে পলায়ন করলে বা করার চেষ্টা করলে।আমি তো আপনাদের কোন কাজে বাধা দেই নি বরং আপনারাই আমাদের কাজে বাধা দিচ্ছেন।আর আমি আপনাদের হেফাজত থেকে পলায়ন করি নাই, মুচলেকা দিয়ে আসছি।তাহলে তো এই ক্ষেত্রেও গ্রেফতার করতে পারবেন না।
ষষ্ঠতো প্রতিরক্ষা বাহিনী থেকে পলায়ন করলে। আমি তো কোন দিন কোন প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যই ছিলাম না,পলায়ন কিভাবে করবো?
সপ্তমত বাংলাদেশের বাইরে সংঘটিত কোন অপরাধ যা বাংলাদেশের আইনে আমলযোগ্য।আমি তো কোনদিন কক্সবাজারই যাই নাই আর দেশের বাইরে কেমনে যাবো আমার তো পাসপোর্টই নাই।আর দেশের বাইরে অপরাধ করা তো বহুদূরের কথা।
অষ্টমত কোন মুক্তিপ্রাপ্ত আসামী ৫৬৫(৩) ধারার বিধান লঙ্ঘন করলে।আমি আসামি হলাম কবে? আর ৫৬৫(৩) ধারার কোন বিধানতো লঙ্ঘন করি নাই।
নয় নম্বরটা বললাম না কেননা এই নয় নম্বর ক্ষেত্রে পুলিশ ইচ্ছে করলেই গ্রেফতার করতে পারে।বললাম তাহলে কেন গ্রেফতার করতে আসছেন?
এসআই বললো নয় নম্বর ক্ষেত্রটা বলুন।
পরে বাধ্য হয়ে বললাম অন্যকোন পুলিশ অফিসার গ্রেফতার করার অনুরোধ করলে।
তখন এসআই বললো এই নয় নম্বর ক্ষেত্রেই আপনাকে গ্রেফতার করা হলো।ওসি স্যার আপনাকে গ্রেফতার করতে বলছেন।
কি আর করার দেশের নাগরিক যখন আইনের প্রতি শ্রদ্ধাতো করতেই হবে।প্রিয়াকে পার্কের বেঞ্চে বসিয়ে আমি চলে গেলাম থানায়।
আরো পড়ুনঃ-
Discussion about this post