ডেস্ক রিপোর্ট
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যা মামলার সাক্ষী কমোডর (অব.) গোলাম রব্বানী হত্যা মামলায় যাবজ্জীবনপ্রাপ্ত আসামি আবু নাসের চৌধুরীকে জামিন দেননি সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দিতে কারা কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তার চিকিৎসা শেষে আবার তাকে কারাগারে ফেরত পাঠাতে বলা হয়েছে। আদেশের বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বশির আহমেদ।
তার জামিন আবেদন নিষ্পত্তি করে আদেশের নির্ধারিত দিনে মঙ্গলবার (২৪ নভেম্বর) প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের চার সদস্যের বিচারকের বেঞ্চ এ আদেশ দেন।আদালতে আজ রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বশির আহমেদ। জামিন আবেদনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী নজরুল ইসলাম চৌধুরী।এর আগে গত ১৫ নভেম্বর আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী তার আবেদনটি শুনানির জন্য আপিল বেঞ্চে পাঠিয়েছেন।
২০০৪ সালের ১১ এপ্রিল মাইক্রোবাসে কর্মস্থলে যাওয়ার সময় দুর্বৃত্তদের গুলিতে আহত হন চট্টগ্রামের কোরিয়ান এক্সপোর্ট প্রোসেসিং জোনের (কেইপিজেড) তখনকার ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা এবং জেলহত্যা মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী কমোডর (অব.) গোলাম রব্বানী। ঢাকার পর ব্যাংককে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৩ দিন পর তার মৃত্যু হয়।বঙ্গবন্ধুর এডিসি (an aide-de-camp) হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী নৌবাহিনীর সাবেক এই কর্মকর্তা চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এবং নৌপরিবহন বিভাগের মহাপরিচালকও ছিলেন।
হামলার ঘটনার পর কেইপিজেডের সাবেক প্রকৌশলী এ কে এম এমতাজুল ইসলাম চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ থানায় ‘হত্যাচেষ্টার’ অভিযোগে একটি মামলা করেন। গোলাম রব্বানীর মৃত্যুর পর এটি হত্যা মামলায় রূপান্তরিত হয়।এ মামলায় ২০০৫ সালে চট্টগ্রামের দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল আসামি মোহাম্মদ সেলিম, মোহাম্মদ হাশেম ও আব্দুল মালেক সোহেলকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। অপর দুই আসামি আবু নাসের চৌধুরী ও হুমায়ুন কবির চৌধুরীকে দেয়া হয় পাঁচ বছর করে কারাদণ্ড। এছাড়া সাইফুল ইসলামকে খালাস দেন।
রায়ের পর দণ্ডিতরা হাইকোর্টে আপিল করেন। তবে আসামিদের সবার সর্বোচ্চ শাস্তি চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষও আপিল করে।হাইকোর্টে শুনানি শেষে কেইপিজেডের সাবেক মহাব্যবস্থাপক আবু নাসের চৌধুরী ও সাবেক প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির চৌধুরীর সাজা ৫ বছর থেকে বাড়িয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ৫ বছর সশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হয়।
মোহাম্মদ সেলিমের আপিল খারিজ করে তার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বহাল রাখা হয়। এছাড়া আবদুল মালেক সোহেলের আপিল গ্রহণ করে তাকে খালাস দেয়া হয়।নিম্ন আদালতে খালাস পাওয়া সাইফুল ইসলামের বিষয়টি পুনরায় রায়ের জন্য বিচারিক আদালতে পাঠিয়েছেন হাইকোর্ট।
এর আগে হাইকোর্টে আবেদনের পর ২০০৮ সালে হাশেমকে হাইকোর্ট দণ্ড থেকে খালাস দেন। হাইকোর্টের রায় পাওয়ার পর ৮ সপ্তাহের মধ্যে হুমায়ুন কবির, আবু নাসের চৌধুরী ও মো. সেলিমকে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণ করে নিজ নিজ দণ্ড ভোগ করার নির্দেশ দেয়া হয়। পাশাপাশি এই সময়ের মধ্যে সাইফুলকেও আত্মসমর্পণ করার নির্দেশ দেন।রায় অনুযায়ী ২০১৬ সালের ১৫ ডিসেম্বর আবু নাসের চৌধুরী ও মো. সেলিম বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণ করেন।
Discussion about this post