অনুসন্ধানে জানা গেছে, সর্বশেষ সমাপ্ত হিসাব বছর ২০১৪ সালে এই জীবন বিমা কোম্পানিটি আইন লঙ্ঘন করে অতিরিক্ত খরচ করেছে ১৫ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। আগের বছর ২০১৩ সালে অইন লঙ্ঘন করে অতিরিক্ত ব্যয় করা হয় ১৭ কোটি ৬৩ লাখ টাকা।
এছাড়া ২০১২ সালে ৩৯ কোটি ৩৯ লাখ, ২০১১ সালে ২৩ কোটি ৭১ লাখ, ২০১০ সালে ২৭ কোটি ৫৬ লাখ ও ২০০৯ সালে ১৬ কোটি ৯৯ লাখ টাকা আইন লঙ্ঘন করে খরচ করা হয়। আইন লঙ্ঘন করে অতিরিক্ত খরচ করা টাকার ৯০ শতাংশই প্রতিষ্ঠানের পলিসি গ্রাহকদের অংশ।
বছরের পর বছর গ্রাহকের টাকা অবৈধভাবে খরচ করার কারণে আর্থিক অবস্থা দুর্বল হয়ে পড়েছে কোম্পানিটির। ফলে মুনাফা তো দূরের কথা, আসল টাকাও ফিরে পাচ্ছেন না গ্রাহকরা। দাবির টাকা চেয়ে নানা বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে। এ জন্য দাবির টাকা আদায়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) দারস্থও হয়েছেন গ্রাহক।
প্রতিষ্ঠানটির তৈরি করা প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৪ সালে গোল্ডেন লাইফ ১ হাজার ৪ জন গ্রাহকের বিমা দাবির টাকা পরিশোধ করেনি। আগের বছর ২০১৩ সালে দাবির টাকা না পাওয়া গ্রাহকের সংখ্যা ১ হাজার ১৩৬ জন এবং ২০১২ সালে দাবির টাকা পায়নি ৯৫২ জন গ্রাহক।
বিমা দাবির টাকা না দেওয়ার কারণে গ্রাহকের আস্থাও হারিয়েছে কোম্পানিটি। ফলে বিমা পলিসি বিক্রির মাধ্যমে প্রিমিয়াম আয় আশঙ্কাজনক হারে কমে গেছে।
২০১৪ সালে প্রতিষ্ঠানটির প্রথম বর্ষ প্রিমিয়াম আয় হয়েছে ১৯ কোটি ৯০ লাখ টাকা। যা ২০১০ সালে ছিলো ৮০ কোটি ২৭ লাখ টাকা। অর্থাৎ ৪ বছরের ব্যবধানে প্রতিষ্ঠানটির প্রথম বর্ষ প্রিমিয়াম আয় কমে ৪ ভাগের ১ ভাগে নেমে গেছে।
এদিকে প্রতিবছর গোল্ডেন লাইফ থেকে মোটা অঙ্কের পলিসি তামাদি হয়ে যাচ্ছে। এমনকি বছরে যে পরিমাণ নতুন পলিসি বিক্রি হচ্ছে তামাদি পলিসির হার সেই সংখ্যাও ছাড়িয়ে যাচ্ছে।
২০১৪ সালে কোম্পানিটি নতুন বিমা পলিসি বিক্রি করে ১৬ হাজার ৪৮৪টি। এর বিপরীতে তামাদি হয়েছে ৯ হাজার ৮৮৭টি। ২০১৩ সালে ৫ হাজার ৭৫৯টি পলিসি বিক্রির বিপরীতে তামাদি হয় ৩৩ হাজার ১৪২টি। তার আগের বছর ২০১২ সালে ৩৮ হাজার ৮৫৯টি নতুন পলিসি বিক্রির বিপরীতে তামাদি হয় ৫৬ হাজার ৩০৮টি।
২০১১ সালেও নতুন বিক্রি করা পলিসির তুলনায় তামাদি পলিসির সংখ্যা ছিলো বেশি। বছরটিতে নতুন পলিসি বিক্রি হয় ৬১ হাজার ৩৪টি। এর বিপরীতে তামাদি হয় ৯৮ হাজার ১৮১টি।
এসব বিষয়ে গোল্ডেন লাইফের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) সুশান্ত পরামানিকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, গোল্ডেন লাইফে অনেক সমস্যা হয়ে গেছিলো। ২০১০ সাল থেকে সমস্যা দেখা দেয়। ২০১২ সালে এসে ম্যানেজমেন্ট সংকটে পড়ে কোম্পানি।
আমি কোম্পানিটিতে ২০১৪ সালে যোগদান করেছি। এখন কোম্পানিটিকে নিয়মের মধ্য আনার চেষ্টা করছি। তবে এখনো কোম্পানির কোন সারপ্লাস (উদ্বৃত্ত) অর্থ নেই এটি সত্য। এ জন্য গোল্ডেন লাইফ পুঁজিবাজারেও তালিকাভুক্ত হতে পারছে না। আমরা এ সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছি।
তিনি বলেন, বর্তমানে কোম্পানির সম্পদের তুলনায় দায় বেশি এটি ঠিক। কিন্তু কোম্পানির টাকা আছে। রাজধানীতে ৩২ কাঠা জমির উপর কোম্পানির ভবন রয়েছে।
আইডিআরএ আইন অনুযায়ী এগুলো (ভবনসহ জমি) অ্যাসেট হিসেবে দেখানো যাচ্ছে না। এটি অ্যাসেট হিসেবে দেখানোর সুযোগ দেওয়া হলে গোল্ডেন লাইফের সারপ্লাস অর্থ চলে আসবে, বলেন সুশান্ত পরামানিক।
গ্রাহক দাবির টাকা না পাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা গ্রাহকের বিমা দাবির টাকা দিচ্ছি না এটি সম্পূর্ণ সত্যি না। পর্যায়ক্রমে গ্রাহকের বিমা দাবির টাকা পরিশোধ করা হচ্ছে।
Discussion about this post