বগুড়া প্রতিনিধি: চাঁন মিয়া মন্ডল
ফুলগাছ খাওয়ায় ছাগল মালিককে দুই হাজার টাকা জরিমানা করেছিলেন বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সীমা শারমিন। বৃহস্পতিবার (২৭ মে) বিকেলে সেই ছাগল মালিকের কাছে পৌঁছে দেয়া হয়েছে। জরিমানার টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দিয়েছেন ইউএনও নিজে।ইউএনও সীমা শারমিন বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
তিনি বলেন, ‘বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে উপজেলা চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম খান, স্থানীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ও গণ্যমান্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে ওই নারীকে ছাগল ফেরত দেয়া হয়েছে। জরিমানার টাকা আমি দিয়েছি। তাকে সংশোধনের জন্য জরিমানা করেছিলাম; শাস্তি দেয়ার জন্য নয়।
ইউএনও আরও বলেন, ‘মোবাইল কোর্টের টার্গেট অন্য কিছু ছিল না। জাস্ট সংশোধনের জন্য তাকে ছাগল ফেরত দেয়া হয়েছে। ছাগল বিক্রির অভিযোগ ভিত্তিহীন। জরিমানা করার পর ছাগল আমার এখানে নিরাপত্তার জন্যই জিম্মায় রাখা হয়েছিল একজনের কাছে; যাতে ছাগলের কোনো ক্ষতি না হয়।
ফেরত পাওয়া ওই ছাগল মালিক সাহারা বেগম বলেন, ‘১০ দিন ধরে আমার ছাগল তাদের কাছে থাকায় খুব অসুস্থ হয়ে পড়েছে। এভাবে একটি পশুকে আটকে রাখা ঠিক না। ছাগল এর আগে বাগানের ফুল খায়নি বলেও দাবি করেন তিনি।
তিনি আরও জানান, উপজেলা পরিষদ চত্বরের ডাকবাংলো সংলগ্ন এলাকায় তারা বসবাস করেন। তার স্বামীর নাম জিল্লুর রহমান। গত ১৭ মে ছাগলটি হারিয়ে যায়। অনেক জায়গায় তিনি ছাগলটির সন্ধান করেন। পরে এলাকার লোকজন তাকে জানায়, ছাগলটি ইউএনওর এক নিরাপত্তাকর্মীর কাছে রয়েছে। তিনি ইউএনওর বাসার পাশে গিয়ে এক নিরাপত্তাকর্মীকে ছাগলকে ঘাস খাওয়াতে দেখেন। এ সময় সাহারা বেগম ছাগল নিতে চাইলে তাকে ছাগল দেয়া যাবে না বলে সাফ জানিয়ে দেন ওই নিরাপত্তাকর্মী।
নিরূপায় হয়ে তিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে গেলে তাকে তিনি (ইউএনও) বলেন, ফুলগাছের পাতা খাওয়ার অপরাধে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে দুই হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। জরিমানার টাকা দিয়ে ছাগল নিয়ে যান। জরিমানার টাকা পরিশোধ করতে না পারায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা গত ২২ মে শনিবার ছাগলটি বিক্রি করে দিয়েছেন বলে সাহারা খাতুন অভিযোগ করেন।
ছাগল আটক ও এর মালিককে জরিমানা প্রসঙ্গে ইউএনও সীমা শারমিন ওইসময় বলেছিলেন, উপজেলা চত্বরে একটি পার্ক করা হয়েছে। সেখানে ফুলের গাছ লাগানো হয়েছে। কিন্তু এখানে ওই ছাগল এসে গাছের ফুলগুলো খেয়েছে কয়েকবার। এ বিষয়ে ছাগলের মালিককে সতর্ক করা হয়েছে। কিন্তু উনি কথা শোনেননি। এ কারণে গণউপদ্রুপ আইনে ভ্রাম্যমাণ আদালতে দুই হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।।
উপজেলা চত্বরে লাগানো ফুল গাছের পাতা খাওয়ায় ছাগল আটকে রেখে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে দুই হাজার টাকা জরিমানা করা করেছিলেন বগুড়া আদমদীঘি উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা সীমা শারমিন। ১০ দিন আটকে রাখার পর আজ বিকেলে মালিকের কাছে ছাগলটি ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
ছাগলের মালিক সাহারা বেগম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘সাংবাদিকদের লেখালেখিতে ছাগলটি ফেরত পেয়েছি। এই বিষয়ে মধ্যস্থতা করেছেন উপজেলা চেয়ারম্যান রাজু ভাই। আমার মতো গরিব মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য সবাইকে ধন্যবাদ।
১০ দিনে ছাগলটি আধমরা হয়ে গেছে। ও মানুষের কাছাকাছি থাকতেই বেশি পছন্দ করে। ছাগল আটকে রেখে আমার অনুপস্থিতিতেই ইউএনও দুই হাজার টাকা জরিমানা করেছিলেন। পরে টাকা দিতে পারিনি বলে একজনের কাছে বিক্রি করে দেন’, বলেন সাহারা বেগম।
আদমদীঘি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম রাজু খান বলেন, ‘সাহারা বেগম একাধিকবার অনুরোধ করায় আমি মধ্যস্থতা করেছি। ছাগল ফেরত দেওয়া হয়েছে।’
মালিকের অনুপস্থিতে কীভাবে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে জরিমানা করলেন? জবাবে ইউএনও বলেন, ‘মোবাইল কোর্টে মালিক উপস্থিত ছিলেন। হয়তো তিনি বিষয়টি তখন বুঝতে পারেননি।’
উল্লেখ্য, গত ১৭ মে আদমদীঘি উপজেলা চত্বরে লাগানো কিছু ফুল গাছের পাতা খাওয়ায় একটি ছাগল আটকে রাখে আনসার সদস্যরা। ছাগলের মালিক সাহারা বেগম ছাগল আনতে গেলে তার সঙ্গে দেখা করেননি ইউএনও। তিন দিন পর তাকে দুই হাজার টাকা জরিমানার কথা জানানো হয়। জরিমানা দিতে না পারায় ছাগল বিক্রির অভিযোগ উঠে ইউএনও’র বিরুদ্ধে।
Discussion about this post