দীর্ঘ দেড় বছরের বেশি সময় ধরে ব্ল্যাকমেইল করে এক ছাত্রীকে ধর্ষণ করে আসছিল এক শিক্ষক।
মনিরুজ্জামান মনির নামে ওই শিক্ষক সবুজবাগ থানাধীন বাসাবো রাজারবাগ কালীবাড়ির অভয় বিনোদনী উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতেন বলে জানা গেছে।
শিক্ষক একা নয়, তার বন্ধু ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা দুলালকেও সঙ্গে নিয়ে ধর্ষণ করা হয় ছাত্রীকে। দীর্ঘ নির্যাতন-নিপীড়নে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছে ওই ছাত্রী ও তার পরিবার। মেয়ের এই অবস্থা দেখে অসহায় দরিদ্র পরিবারটি এখন চোখেমুখে অন্ধকার দেখছে। লম্পট শিক্ষককে পুলিশ গ্রেফতার করে ৩ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে। রিমান্ডে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে ছাত্রীকে ধর্ষণ ও তার গর্ভপাত করানোর কথা স্বীকার করেছে সে।
বাসাবো রাজারবাগ এলাকায় ছোট্ট একটি টিনশেড বাসায় থাকে ওই ছাত্রী ও তার পরিবার। ছাত্রীটি এবার এসএসসি পরীক্ষার্থী। যে ছাত্রীর এখন দিনরাত ব্যস্ত থাকার কথা লেখাপড়া নিয়ে সেই ছাত্রী এখন লম্পট শিক্ষকের হাতে নিগ্রহের শিকার হয়ে শুধুই কাঁদছে। নিরাপত্তাহীনতার আশংকায় বাড়ির সামনে ও আশপাশে পুলিশের পাহারা বসানো হয়েছে। আতংক, ক্ষোভ, দুঃখ, হতাশা আর কষ্টে অসুস্থ হয়ে শয্যাশায়ী ছাত্রীর বাবা। একমাত্র ভাইও লজ্জা, ক্ষোভ ও আতংকে বাসার বাইরে যেতে চান না। আসামিরা প্রভাবশালীদের মাধ্যমে মামলা তুলে নেয়া ও বিষয়টি মীমাংসা করার জন্য নানাভাবে চাপ দিচ্ছে।
ছাত্রীর মা জানান, আমাদের টানাটানি আর খুবই কষ্টের সংসার। আমার মেয়েটি ছাত্রী হিসেবে ভালো। চেয়েছিলাম শত কষ্টের মধ্যেও মেয়েটিকে উচ্চ শিক্ষিত করে তুলব। তাই আরও ভালো করার জন্য প্রাইভেট পড়তে দিয়েছিলাম। এখন যা অবস্থা দাঁড়িয়েছে সে আর পরীক্ষা দিতে পারবে কিনা জানি না। সে শারীরিক ও মানসিকভাবে এতটাই ভেঙে পড়েছে যে তাকে ডাক্তারের কাছে নিতে হয়েছে। লেখাপড়াও করতে পারছে না। ওই ছাত্রী নবম শ্রেণীতে ওঠার পর অভয় বিনোদনী উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক মনিরুজ্জামান মনিরের বাসায় গিয়ে ব্যাচে প্রাইভেট পড়া শুরু করে। মনিরের গ্রামের বাড়ি ফিরোজপুর জেলার মঠবাড়িয়া উপজেলায়।
প্রায় বছর দেড়েক আগে একদিন অন্য ছাত্রীদের ছুটি দিয়ে শুধু ওই ছাত্রীকে বাসায় রাখেন লম্পট শিক্ষক মনির। ছাত্রীকে ধর্ষণ করে কৌশলে সেটি মোবাইল ফোনে রেকর্ড করে রাখেন। পরে মোবাইলে সেই ভিডিও দেখান ছাত্রীকে। সেই ভিডিও ইউটিউব ও ফেসবুকে ছড়িয়ে দেয়ার ভয় দেখিয়ে ব্ল্যাকমেইল শুরু করেন ছাত্রীকে। দুই-এক দিন পরপরই ছাত্রীটিকে ধর্ষণ করত মনির।
এক সময় তাকে বিয়ে করার প্রলোভনও দেখায়। এক পর্যায়ে মনিরের বন্ধু ফায়ারম্যান দুলালকে ধর্ষণে সঙ্গী করে মনির। লম্পট মনিরের দৈহিক মেলামেশায় এক পর্যায়ে গর্ভবতী হয়ে পড়ে ওই ছাত্রী। কিছু দিন আগে তাকে ঘোরাতে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় তারই বন্ধু সজীব ওরফে সবুজের ক্লিনিকে নিয়ে যান। সেখানে কাজের মেয়ে পরিচয় দিয়ে ছাত্রীর গর্ভপাত ঘটান।
এরপরও চলতে থাকে ব্ল্যাকমেইল করে ধর্ষণ। এক পর্যায়ে অভিভাবক ও ব্যাচে পড়তে যাওয়া অন্য ছাত্রীরা বিষয়টি টের পায়। ছাত্রীটি তার মা-বাবাকে ব্ল্যাকমেইল ও ধর্ষণের শিকার হওয়ার বিষয়টি জানায়। ছাত্রীর মা স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতিকে বিষয়টি জানান। কিন্তু তারা পাত্তা দেননি। ১১ নভেম্বর ছাত্রীর মা বাদী হয়ে স্কুল শিক্ষক মনিরুজ্জামান, তার বন্ধু ফায়ারম্যান দুলাল ও চান্দনা এলাকার সেই ক্লিনিকের মালিক সবুজ ওরফে সজীবের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন। পুলিশ মনিরকে গ্রেফতার করে ৩ দিনের রিমান্ডে নেয়। রোববার ছিল রিমান্ডের শেষ দিন। মনিরকে স্কুল থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে কর্তৃপক্ষ। স্থানীয়দের অভিযোগ অভয় বিনোদনী উচ্চ বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতা চিত্তরঞ্জন দাস মামলা তুলে নেয়া এবং বিষয়টি মীমাংসার জন্য ছাত্রীর পরিবারের ওপর নানাভাবে চাপ দিচ্ছেন। অভিযোগ অস্বীকার করে চিত্তরঞ্জন জানান, কয়েক দিন আগে তিন যুবক মনিরকে মারধর করে মোবাইলের মেমোরি কার্ড ছিনিয়ে নিয়ে যায়। পরে তাকে ভয় দেখিয়ে তার কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা আদায় করে। ওই শিক্ষক বিষয়টি তাকে জানিয়েছে এবং থানায় একটি জিডিও করেছে। জিডির পর টাকা নিতে গিয়ে পুলিশের হাতে ওই তিন যুবকের একজন আটক হয়। পরে জানা গেছে তিনি রাজারবাগ পুলিশ লাইনে কর্মরত কনস্টেবল।
তথ্যসূত্র: যুগান্তর
Discussion about this post