দলিল অর্থ কি (Meaning of Instrument):-
সাক্ষ্য আইন, ১৮৭২ এর ৩ নং ধারা অনুযায়ী দলিল বলতে বুঝায় কোন পদার্থের উপর কোন অক্ষর, সংখ্যা, বা চিহ্নের সাহায্যে বর্নিত কোন ব্যাবহার হতে পারে এমন বিষয়কে দলিল বলা হয়।
যেমন: যে কোন প্রকারের একটি দলিল । মুদ্রিত, লিথোগ্রাফকৃত , অথবা ফটোগ্রাফকৃত সকল শব্দই দলিল, কোন মানচিত্র বা নকশাও একটি দলিল। কোন ধাতু খন্ড বা প্রস্তর খন্ডের উপর খোদিত থাকলে উহাও একটি দলিল হইবে। এমনকি একটি ব্যঙ্গচিত্রও দলিল।
একই ধারার (২) উপধারা মতে যে সকল দলিল আদালত কর্তৃক পরিদর্শনের জন্য উপস্থিত করা হয় সেগুলোকে বলা হয় দলিলভুক্ত সাক্ষ্য।
দলিলের প্রকারভেদ:-
সাক্ষ্য আইনে বাংলাদেশের দলিল সমূহকে দুভাগে ভাগ করা হয়েছে । যথা:-
(১) সরকারী দলিল( Public documents)
সাক্ষ্য আইনের ৭৪ ধারা মতে নিম্নবর্ণিত দলিলগুলো সরকারী দলিলের অন্তর্ভুক্ত।
- সার্বভৌম কর্তৃপক্ষের কার্যাবলীর লিখিত বিবরণাদি ও নথিপত্র; সংসদের আইন প্রভৃতি এর আওতাভুক্ত
- সরকারী সংস্থা এবং Tribunal এর কার্যাবলীর লিখিত বিবরণাদি ও নথিপত্র;
- বাংলাদেশের বা কমনওয়েলথের কোন অংশের বা বিদেশের আইন বিভাগীয়, বিচার বিভাগীয় কোন কর্মচারীর কার্যাবলীর লিখিত বিবরণাদি ও নথিপত্র;
- বাংলাদেশ সরকারের হেফাজতে রক্ষিত ব্যক্তিগত দলিলের নথিপত্র, ব্যক্তিগত রেজিষ্ট্রি দলিলের বিবরণ যা সরকারী হেফাজতে রেজিষ্ট্রি অফিসে রাখা হয় তা এ নিয়মের অধীন।
(২) ব্যক্তিগত দলিল( Private documents)
সাক্ষ্য আইানের ৭৫ ধারানুসারে উপরোক্ত ৭৪ ধারায় বর্ণিত দলিলাদি ব্যতীত সকল প্রকার দলিল ব্যক্তিগত।
জমির আইন কানুন:-
ভূমি আইন:-
জমি লেনদেন, বেচাকেনা, হস্তান্তর, ভূমিস্বত্ব ইত্যাদি বিষয় যে আইনে অন্তর্ভূক্ত তাকে ভূমি আইন বলে।
ভূমিস্বত্ব বা জমির মালিকানা বুঝতে হলে যিনি জমির মালিক বলে দাবি করছেন তার নামে-
- রেজিষ্ট্রিকৃত দলিল থাকতে হবে অথবা আদালত ঘোষিত স্বত্ব থাকতে হবে অথবা খতিয়ান থেকে ধারাবাহিক পর্চাসমূহ ( সিএস, এসএ, আরএস) বংশানুক্রমিক নাম থাকবে।
- নাম খারিজ করা থাকতে হবে।
- হালসন পর্যন্ত খাজনা পরিশোধের রশিদ থাকতে হবে।
- দলিলে উল্লিখিত পরিমান জমি বাস্তবে থাকতে হবে।
- দলিলে উল্লিখিত পরিমান জমি বাস্তবে স্বরজমিনে থাকতে হবে।
- প্রজাই খতিয়ান থেকে ক্রমানুসারে মালিকানার নিদর্শন থাকতে হবে ইত্যাদি।
মনে রাখবেন কখনও কখনও জাল বা নকল দলিল দেখিয়ে জমি বিক্রয় করা হয়। সেক্ষেত্রে রেজিষ্ট্রি অফিসে বর্তমান জমির মালিক কার কাছ থেকে জমিটি পেয়েছেন বা ক্রয় করছেন সে বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।
ভূমি মালিকানা পরিবর্তনের উপায়:-
মনে রাখবেন ভূমির মালিকানা বিভিন্নভাবে পরিবর্তন করা যায়। নিম্নে কয়েকটি উপায় দেওয়া হলো:-
(১) উত্তরাধিকারসূত্রে।
(২) বিক্রির মাধ্যমে ।
(৩) দান/হেবা করার মাধ্যমে।
(৪) এওয়াজ বদলের মাধ্যমে।
জমির মালিকানা বজায় রাখার জন্য যেসব বিষয়ের প্রতি নজর দেওয়া দরকার তা হল-
(১) জমি নিজের দখলে রাখা। (২) মালিকানা স্বত্ব অর্জনের সাথে সাথে নামজারী করা ।
(৩) জমির দলিল নিরাপদ স্থানে সংরক্ষণ রাখা।
(৪) প্রতি বছর নিয়মিত খাজনা দেওয়া।
(৫) খাজনার রশিদ যত্নসহকারে সংরক্ষণ করে রাখা ।
(৬) মনে রাখবেন সাবধান তা হলো সাদা কাগজে বা স্টাম্পে কখনও টিপসই বা স্বাক্ষর দেওয়া উচিৎ নয়। এমনকি লেখা কাগজও না পড়ে , না বুঝে তাতে টিপসই বা স্বাক্ষর দেওয়া যাবে না। কারণ এত নানাবিধ বিপদ হতে পারে।
জমি কেনার আগে করণীয়:-
জমি কেনার আগে নিম্নোলিখিত বিষয়গুলো অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে দেখা উচিৎ। যেমন:-
- জমি বিক্রেতার নামে রেজিষ্ট্রিকৃত দলিল আছে কিনা অথবা জমির বৈধ স্বত্ব আছে কিনা, এমনকি দখলি স্বত্ব আছে কিনা।
- হালসন পর্যন্ত খাজনা পরিশোধের রশিদ আছে কিনা।
- দলিলে উল্লেখিত পরিমাণ জমি তার দখলে আছে কিনা।
- জমিটি আংশিক বা সম্পূর্ণ বিক্রি করা হয়েছে কিনা।
- জমিটিতে অন্য কোন ওয়ারিশ আছে কিনা।
- জমির দলিলটি জাল কিনা।
- মালিকের নামে জমিটি খারিজ করা আছে কিনা।
- দলিলে উল্লেখিত দাগ নম্বর নকশার সঙ্গে মিল আছে কিনা এবং রেকর্ডের সঙ্গে খতিয়ান নম্বরের কোন মিল আছে কিনা।
- বিক্রেতা ক্রয়সূত্রে মালিক নাকি উত্তরাধিকার সূত্রে জমিটির মালিক হয়েছেন।
- জমি বর্গা বা বন্ধক দেওয়া আছে কিনা।
- দেখতে হবে জমিটির সহশরিকগণ জমিটি কিনতে চায় কিনা।
- উকিল নোটিশ করা আছে কিনা।
- সরোজমিনে জমি মেপে ভালোভাবে খোঁজ নেওয়া।
- নকশার সঙ্গে দলিলে উল্লেখিত জমির পরিমান ঠিক আছে কিনা ইত্যাদি ।
জমি কেনার সময় করণীয়:
(১) জমির দলিলের ষ্টাম্প ক্রেতার নামে খরিদ করা ও রশিদ যত্নসহকারে রাখা।
(২) দলিল রেজিষ্ট্রির সময় ক্রেতা ও বিক্রেতার উপস্থিত থাকা , স্বাক্ষর ও টিপসই ও তারিখ নিশ্চিত করা।
(৩) নিজ নামে দলিল সম্পাদন ও রেজিষ্ট্রি করা।
(৪) দলিল রেজিষ্ট্রির রশিদ সংগ্রহ করা ও যত্নসহকারে তা সংরক্ষণ করা।
(৫) ক্রেতা- বিক্রেতার পাসপোর্ট সাইজের ছবি জমা দেওয়া।
(৬) বিক্রেতার ক্রমানুসারে ২৫ বছরের মালিকের ইতিহাস দেখা।
(৭) জমির চৌহদ্দি সঠিকভাবে দেখা।
(৮) বিক্রেতার নামে নামজারির কপি এবং আরএস পর্চা উপস্থাপন করা।
জমি কেনার পর করণীয়:-
(১) রেজিস্ট্রিকৃত জমি দখল করা।
(২) নিজ নামে খারিজ করা।
(৩) নিজ নামে খাজনা দিয়ে রশিদ সংগ্রহ করা ও যত্নসহকারে সংরক্ষণ করে রাখা।
(৪) রশিদ জমা দিয়ে সাবরেজিস্ট্রি অফিস থেকে মূল দলিল সংগ্রহ করা।
(৫) জমির সকল কাগজপত্র যত্নসহকারে রাখা।
এসম্পর্কিত আমাদের আরো একটি আর্টিকেল নিষ্কণ্টক জমি ক্রয় করছেন কী না জানবেন যেভাবে
জমি ক্রয়বিক্রয়ে রেজিস্ট্রশন একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আইনে কোন কোন দলিল অবশ্যই রেজিস্ট্রেশন করতে হবে , সে ব্যপারে পরিস্কার বলা আছে। রেজিস্ট্রিযোগ্য দলিলের ক্ষেত্রে রেজিস্ট্র না হলে ঐ দলিল নিয়ে কোন আদান প্রদান প্রমানিত হয়না।
১ জুলাই ২০০৫ তারিখ থেকে সকল দলিল রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
জমি রেজিস্ট্রেশনের জায়গা/স্থান:-
জমির সম্পাদিত দলিল সাবরেজিস্ট্রি অফিসে অবশ্যই নিদিষ্ট সময়ের মধ্যে রেজিস্ট্রি করতে হবে। জমিটির সম্পূর্ণ অংশ বা জমির অধিকাংশ যে উপজেলায় আছে সে উপজেলার সাবরেজিস্ট্রি অফিসে দলিল করতে হবে। তবে জমিটির কম অংশ কোন উপজেলায় অন্তর্ভূক্ত হলেও সে উপজেলার সাব -রেজিষ্ট্রিস অফিসেও দলিল রেজিষ্ট্রি করা যায়।
জমির দলিল রেজিস্ট্রির সময়সীমা:-
জমির দলিল সম্পাদনের তারিখ থেকে ৩ মাসের মধ্যে দলিল রেজিস্ট্রি করতে হয়। যদি সম্বব না হয় তাহলে জরিমানাসহ পরবর্তী মাসের মধ্যে রেজিস্ট্রি করতে হয়।
যে সকল দলিল রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক:-
(১) বন্টননামা
(২) বিক্রয়
(৩) দান
(৪) রেহেন
(৫) বায়নানামা বলে হস্থান্তর
(৬) লিজ
(৭) হেবা
(৮) এওয়াজবদল/ বিনিময় দলিল
জমি রেজিস্ট্রি বাবদ ব্যয়:-
বিভিন্ন সময়ে সরকারী প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশন ফি এর কম বেশি হতে পারে।
জমির দলিল কি?
জমির মালিকানা প্রমাণের লিখিত সাক্ষ্যই দলিল । তবে এই দলিল অবশ্যই রেজিস্ট্রিকৃত হতে হবে।
জমির দলিল চেনার উপায়:-
(১) বিক্রেতার নামে দায়মুক্তি সনদ যা সাবরেজিস্ট্রির অফিস থেকে পাওয়া যাবে।
(২) ক্রমানুসারে মালিকানা বদলের প্রমান থাকতে হবে।
(৩) বালাম বই হতে বিক্রেতার স্বাক্ষর বা আঙুলের ছাপ দেখা যেতে পরে।
বিভিন্ন প্রকার জমির দলিল:-
(১) সাফ কবলা (Clear Kabla documents/ Sale Deeed ) দলিল ।
(২) হেবা বিল এওয়াজ ( Heba Bel Ewaz Deed)
(৩) দান/হেবা (Gift/Heba Deed )
দান বৈধ হওয়ার ৩ টি শর্তঃ
(ক) দাতা কর্তৃক দানের (ইজাব) ঘোষণা প্রদান করা।
(খ) গ্রহীতা বা কর্তৃক তার পক্ষ থেকে দান গ্রহন(কবুল) করা।
(গ) দাতা কর্তৃক গ্রহীতাকে দানকৃত সম্পত্তির দখল দেওয়া।
(৪) আমমোক্তারনামা (Power of Attorney Deed )
(৫) বন্টননামা (Partition Deed)
(৬) এওয়াজ বদল দলিল (Exchange Deed )
(৭) মুক্তিনামা দলিল (Resale Deed)
(৮) অছিয়তনামা/উইল ( Will Deed)
(৯) বায়নানামা দলিল(Documentary documents )
(১০) বন্ধকি দলিল (Mortgage Deed )
দলিল বাতিলের কারণ :-
(১) পক্ষগণের অযোগ্যতা: নাবালক, শত্রুদেশের নাগরির, আদালত কর্তৃক দেউলিয়া ঘোষিত ব্যক্তি এবং সুরাপানে মত্ত ব্যক্তি, পাগল ও জ্ঞানশূন্য ব্যক্তি কর্তৃক সম্পাদিত দলিল বাতিল বলে গণ্য হবে।
(২) প্রচলিত রীতিবিরূদ্ধ : কোন আইনজীবী, তার মক্কেলকে মামলায় জয়ী করার অঙ্গীকারে কিংবা ডাক্তার রোগীর রোগ সারিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতিতে কোনরূপ লাভজনক শর্তে চুক্তি সম্পাদন করলে তা বাতিল হবে।
(৩) আইনবিরূদ্ধ: অর্পিত সম্পত্তি ক্রয়বিক্রয়ের উপর নিষেধাজ্ঞা থাকলে ও আদালত কর্তৃক নিষেধাজ্ঞা থাকলে, সে সম্পত্তি হস্তান্তর করে কোন দলিল সম্পাদিত হলে তা বাতিল বলে গন্য হবে।
(৪) ভয়ভীতি ও প্রতারণা: দলিলদাতাকে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে বা লোভলালসা দেখিয়ে বা বলপূর্বক আটক করে কোনরূপ দলিলপত্র সম্পাদন করলে তা বাতিল বলে গণ্য হবে।
(৫) অন্যায় উদ্দেশ্য : বৈধভাবে প্রতিষ্ঠিত কোন সরকার বা রাষ্টকে উচ্ছেদ করার নিমিত্তে কোনরূপ সংগঠনের চুক্তি বা এই উদ্দেশ্যে তহবিল গঠনের উদ্দেশ্যে সম্পত্তি বিক্রির দলিল বাতিল বলে গণ্য হবে। জুয়া খেলা বা নারী অপহরণ, ধর্ষণ বা অনুরূপ কোন হীন উদ্দেশ্যে ব্যাবহারের নিমিত্ত ক্রয়বিক্রয়ের দলিল বাতিল বলে গণ্য হবে।
খাজনা দেওয়ার নিয়ম:-
ইউনিয়ন ভূমি অফিসে খাজনা দিতে হয়। প্রতি বছর ১ লা বৈশাখ থেকে চৈত্র মাসের শেষদিন অফিস চলার সময় পর্যন্ত খাজনা দেওয়া যায় । নিজে গিয়ে খাজনা পরিশোধ করে রশিদ অর্থাৎ দাখিলা সংগ্রহ করতে হয়। যৌথ জমির খাজনা সবাই মিলে ভূমি অফিসে গিয়ে দিতে হয়।
জমির ম্যাপ:
জমির ম্যাপ হলো মূলত জমিটি কোন মৌজার, কোন স্থানের, কত নম্বর দাগে রয়েছে তার নকশাকে ম্যাপ বলা হয়।
জমির খতিয়ান, জমির পর্চা, জমির রেকর্ড, জমির পরিমাপ ইত্যাদি
সিএস (Cadastral- ক্যাডাস্ট্রাল –সার্বিক) জরিপ
১৮৮৫ সালের বঙ্গীয় প্রজাস্বত্ব আইনের আওতায় সিএস জরিপ কার্যক্রম ১৮৮৮ সালে কক্সবাজার জেলা থেকে শুরু হয় এবং ১৯৪০ সালে দিনাজপুর জেলায় জরিপের মাধ্যমে তা শেষ হয়। শতকরা ১০০ ভাগ জমি সরোজমিনে জরিপ করে সিএস খতিয়ান প্রস্তুত করা হয় বলে বর্তমানেও এটি হচ্ছে সর্বপেক্ষা নির্ভরযোগ্য জরিপ। বর্তমান বাংলাদেশের পার্বত্য জেলামূহ ও সিলেট ছাড়া সারা দেশে সিএস জরিপ কার্যক্রম পরিচালিত হয়।
এস এ (State Acquisition )
সরকার কর্তৃক জমিদারি গ্রহনের উদ্দেশ্যে রাষ্ট্রীয় অধগ্রহন ও প্রজাস্বত্ব আইন ১৯৫০ অনুসারে ,
১৯৫৬-১৯৬২ সালের মধ্যে একটি সংক্ষিপ্ত জরিপ কার্যক্রম চালানো হয়। এ জরিপের নাম স্ট্রেট অ্যাকুজেশন (State Acquisition ) সংক্ষেপে এস এ জরিপ এবং এই জরিপের মাধ্যমে প্রণীত খতিয়ানকে বলা হয় এস এ খতিয়ান। সারা বাংলাদেশে একইসঙ্গে এসএ অপারেশন পরিচালানার মাধ্যমে রেন্ট রোল এবং স্বত্বলিপি প্রস্তুত করা হয় । কিন্তু দক্ষ জনবলের অভাবে এ কাজটি সুষ্ঠভাবে সম্পন্ন হয়নি। ফলে স্বত্বলিপি প্রকাশের পর সারা দেশে ভুলভান্তির অভিযোগ ওঠে এবং জনগণের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দেয়। সেজন্য এসএ খতিয়ান গ্রহনযোগ্যতা হারায়।
আরএস(Rivisional Settlement/Survey )
১৯৫০ সালের রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহন ও প্রজাস্বত্ব আইনের ৭৯ ধারার বিধান মোতাবেক বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে ১৯৬৫ সালে সারা দেশে সরকার খতিয়ান হালনাগানকরণের উদ্দেশ্যে সংশোধনী জরিপ(Rivisional Settlement/Survey ) কার্যক্রম শুরু করেন। অনেক জেলায় আর এস ( Rivisional Settlement/Survey) পর্চা প্রকাশ করা হয়েছে। কিছু কিছু জেলায় এখনও আরএস পর্চা প্রকাশ করা হয়নি। জরিপ কার্যক্রম এখনও চলমান রয়েছে।
জোনাল জরিপ:
ভূমি সংস্কার কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক রিভিশনাল সেটেলমেন্ট (RS ) পদ্ধতির পরিবর্তে ১৯৯৫-৮৬ অর্থ বছরে স্থায়ী পদ্ধতির সেটেলমেন্ট শুরু হয়। ১০ টি বৃহত্তর জেলায় আরএস জরিপ কাজ হয় এবং এ জরিপে সৃষ্ট খতিয়ানকে বাংলাদেশ সার্ভে বা বিএস খতিয়ান বলে। কেউ আবার একে আরএস খতিয়ান বলে।
বিএ স (Bangladesh Survey)
বিএস খতিয়ানের মূল্য অত্যধিক। অনেক জেলায় আর এস জরিপের পরিবর্তে বিএস জরিপ (Bangladesh Survey ) করা হয়েছে। নারায়ণগঞ্জ জেলায় আরএস জরিপের পরও অনেজ মৌজায় বিএস (Bangladesh Survey ) করা হয়োছে।
আংশিক বা দিয়ারা জরিপ (Diara Settlement )
মনে রাখবেন একটি জেলায় সম্পূর্ণভাবে এই জরিপ করা হয়না বলে এক আংশিক জরিপ বলা হয়ে থাকে। সাধারণত নদী বা সাগর থেকে জেগে ওঠা চরে ( সিকস্তি/ পয়স্তি) জরিপ করার ক্ষেত্রে এই জরিপকার্য পরিচালিত হয়। দরিয়া তেকে দিয়ারা শব্দটি এসেছে । চরের জমি জরিপ করার জন্য দিয়ারা জরিপ করা হয়। ১৮৭১-৭২ সালে রাজস্ব পুনঃনির্ধারণের প্রয়োজনে গঙ্গানদীর তীরবর্তী রাজশাহী বিভাগীয় এলাকায় সর্বপ্রথম দিয়ারা জরিপ আরম্ভ হয়।
জেলা প্রশাসকের চাহিদাপত্র পেলে দিয়ারা সেটেলমেন্ট কার্য পরিচালনা করতে পারে।পূর্বে কিছু কিছু জায়গায় পেটি জরিপ করা হয়েছে । মনে রাখবেন দলিল করার সময় তফসিলে অবশ্যই পেটি দাগ উল্লেখ্য করতে হবে।
পরিশেষে বলা যায় যে উপরে উল্লেখিত বিষয়গুলো জনগনের জানা একান্ত জরুরি । আরো বিভিন্ন আইনের বিস্তারিত জানতে আমাদের সঙ্গে থাকুন এবং আপনার অজানা বিষয়টি কমেন্ট করে জানান। আমরা চেষ্টা করবো আপনাদের মতামতের ভিত্তিতে বিভিন্ন আইন সম্পর্কে চমৎকার ধারনা দেওয়ার জন্য। ধন্যবাদ!
লেখকঃ ল ফর ন্যাশনস, ইমেইলঃ lawfornations.abm@gmail.com, ওয়েবসাইটঃ www.lawfornations.com.
Discussion about this post