বিডিলনিউজ: জাতিসংঘের হিউম্যান রাইটস অফিসের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিশেষজ্ঞরা বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধের সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন।। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, জাতিসংঘের দুইজন নিরপেক্ষ মানবাধিকার বিশেষজ্ঞ মৃত্যুদণ্ডসহ সাম্প্রতিক কয়েকটি রায়ের ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করে যুদ্ধাপরাধের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার জন্য সুষ্ঠু বিচারের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন।
তারা দণ্ডাদেশ প্রদানের ক্ষেত্রে যথাযথ প্রক্রিয়া অবলম্বন করা হয়নি বলে উল্লেখ করেছেন। বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল সম্প্রতি আবুল কালাম আজাদের অনুপস্থিতিতে মৃত্যুদণ্ড দেয়। তারা বলেন, এই মামলায় সুষ্ঠু বিচারের যথাযথ প্রক্রিয়া নিশ্চিত করা হয়নি। এরপর গত ৫ ফেব্রুয়ারি ট্রাইব্যুনাল আবদুল কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়। আরো কয়েকটি মামলার বিচার কাজ চলছে এই ট্রাইব্যুনালে। এসব মামলায় আসামিদের মৃত্যুদণ্ড হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।
এক্সট্রা জুডিসিয়াল, এক্সিকিউশন, সামারি অথবা আরবিট্রারি সংক্রান্ত জাতিসংঘের স্পেশাল র্যাপোর্টিয়ার ক্রিস্টোফ হিনসা ও ইন্ডিপেনডেন্স অব জাজেস অ্যান্ড ল’ইয়ার্স সংক্রান্ত স্পেশাল র্যাপোর্টিয়ার গ্যাব্রিয়েলা নাউলা বলেন, এসব আসামিকে ট্রাইব্যুনালের কাছ থেকে সুষ্ঠু বিচার পেতে হবে।
১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় সংঘটিত গণহত্যাসহ সব হত্যাকাণ্ড, যুদ্ধাপরাধ ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের বিচারের উদ্দেশ্যে সরকার ২০১০ সালের মার্চে বাংলাদেশ যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে। জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞদ্বয় বলেন, যুদ্ধাপরাধের বিচার করার গুরুত্বপূর্ণ একটি প্লাটফর্ম হচ্ছে এই ট্রাইব্যুনাল। তাই এই ট্রাইব্যুনালকে অবশ্যই সুষ্ঠু বিচারের যথাযথ উপাদান ও বিচারের যথাযথ প্রক্রিয়ার প্রতি সম্মান দেখাতে হবে। হিনসা আজাদের অনুপস্থিতিতে মৃত্যুদণ্ড দেয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন। এ মামলায় মৃত্যুদণ্ড দেয়ার আগে যথাযথ বিচারিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়েছে কি না তা নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, যে মামলায় মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়, সে মামলায় কঠোরভাবে ন্যায়বিচারের মানদণ্ড ও যথাযথ বিচারিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করা দরকার। তিনি আরো বলেন, সর্বোচ্চ সাজা কেবল তখনই দেয়া যায়, যখন সুষ্ঠু বিচারের সম্ভাব্য সব রক্ষাকবচ নিশ্চিত করা হয় কিংবা অন্তত ইন্টারন্যাশনাল কোভেনেস্ট অন সিভিল অ্যান্ড পলিটিক্যাল রাইটসে বর্ণিত বিধিগুলো মানা হয়। কেননা বাংলাদেশ এই আন্তর্জাতিক সনদে স্বাক্ষরদাতা একটি দেশ।
মিস নাউল জানান, ট্রাইব্যুনালের বিচারক ও প্রসিকিউশনের নিরপেক্ষতা এবং নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচারকদের স্বাধীনতার ব্যাপারে যেসব প্রশ্নের উদ্ভব ঘটেছে সে ব্যাপারে তিনি উদ্বিগ্ন। বিবাদীপক্ষের সাক্ষী ও আইনজীবীরা বৈরী আচরণ, ভয়ভীতি প্রদর্শন ও হয়রানির একটি আবহ তৈরি হওয়ার অভিযোগ করেছেন। তিনি আরো বলেন, যথাযথ প্রক্রিয়ার ন্যূনতম দাবি হচ্ছে, আসামিরা তাদের আইনজীবীর সাথে অবাধে কথা বলতে পারবেন। তাদের বিষয়াদি উপস্থাপনে পর্যাপ্ত সময় পাবেন এবং তাদের পক্ষে সাক্ষী দেয়ার জন্য পছন্দমাফিক সাক্ষী হাজির করাতে পারবেন। তিনি আরো বলেন, সমগ্র বিচার প্রক্রিয়ায় বাদী-বিবাদীকে সমান সুযোগ-সুবিধা দানের নীতির প্রতি সম্মান জানাতে হবে। জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞদ্বয় বলেন, নিম্ন আদালতে বিচার প্রক্রিয়ায় কোনো ত্রুটি-বিচ্যুতি হয়েছে কি না আপিল আদালতে সেগুলো সতর্কতার সাথে পরীক্ষা করে দেখতে হবে। তারা আরো বলেন, আপিলে মৃত্যুদণ্ড প্রদানের ক্ষেত্রে আপিল প্রক্রিয়াকেও বিশ্বাসযোগ্য হতে হবে।সূত্র:ইত্তেফাক
Discussion about this post