নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজধানীর অদূরে আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুরের তাজরীন ফ্যাশনসে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় গত দুই বছরেও কোনো সাক্ষীকে আদালতে হাজির করতে পারেনি রাষ্ট্রপক্ষ। আদালতে কোনো সাক্ষী হাজির না হওয়ায় আরামে আছে আসামিপক্ষ। সাত বছর আগে ২৪ নভেম্বর ওই অগ্নিকাণ্ডে ১১২ জন গার্মেন্টকর্মী মারা যান। আহত ও দগ্ধ হন আরও দুই শতাধিক শ্রমিক।
আলোচিত ওই ঘটনায় দায়ের করা মামলার বিচারকাজ চার বছর ধরে চলছে ঢাকার প্রথম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে। চার বছরে ১০৪ জন সাক্ষীর মধ্যে সাক্ষ্য দিয়েছেন মাত্র আটজন। গত দুই বছর কোনো সাক্ষীই আদালতে যাননি।
রাষ্ট্রপক্ষ দাবি করছে, সাক্ষীদের বর্তমান ঠিকানায় অধিকাংশকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। যে সব সাক্ষীর স্থায়ী ঠিকানা দেয়া হয়েছে তারা সঠিকভাবে আদালতের সমন পাচ্ছেন না।
রাষ্ট্রপক্ষের অতিরিক্ত কৌঁসুলি মুর্শিদ উদ্দিন খান বলেন, তাজরীন ফ্যাশনস-এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় দায়ের করা মামলাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মামলার অভিযোগপত্রে অধিকাংশ সাক্ষীর বর্তমান ঠিকানা দেয়া হয়েছে। তবে বর্তমান ঠিকানায় অধিকাংশ সাক্ষীকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। যে সব সাক্ষীর স্থায়ী ঠিকানা দেয়া হয়েছে তারা সঠিকভাবে আদালতের সমন পাচ্ছেন না। তাদের বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পরও পুলিশ তাদের গ্রেফতার করছে না।
তিনি বলেন, অনেক সাক্ষীর মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করে তাদের কল করলে তারা বলে আমরা তো আদালতের দেয়া সমন পাইনি। কীভাবে আদালতে উপস্থিত হবো। পুলিশের উচিত সাক্ষীদের আদালতে হাজির করার বিষয় আরও সচেতন হওয়া। সাক্ষীরা আদালতে উপস্থিত হলে আলোচিত মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তি করা সম্ভব হবে।
তিনি আরো বলেন, সাক্ষী হাজির না হওয়ায় মামলাটি গতি পাচ্ছে না। আমরা চাই মামলাটি যেন দ্রুত শেষ হয়। ন্যায়-অন্যায় আদালতের মাধ্যমে প্রমাণিত হবে। মামলা নিষ্পত্তি না হওয়ায় আমরা অসুবিধার মধ্যে আছি। আমরা দেশের বাইরে যেতে পারছি না। ঠিকভাবে ব্যবসাও পরিচালনা করতে পারছি না। রাষ্ট্রপক্ষের উচিত মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তি করা।
মামলার অভিযোগ থেকে জানা গেছে, ২০১২ সালের ২৪ নভেম্বর আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুরের তাজরীন ফ্যাশনসে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ১১২ জন নিহত হন। আহত ও দগ্ধ হন দুই শতাধিক শ্রমিক। ভয়াবহ ওই অগ্নিকাণ্ডের পরদিন আশুলিয়া থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) খায়রুল ইসলাম বাদী হয়ে অজ্ঞাত পরিচয় আসামিদের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন। সেই মামলায় নাশকতার পাশাপাশি অবহেলাজনিত মৃত্যুর দণ্ডবিধির ৩০৪ (ক) ধারা যুক্ত করা হয়।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) পরিদর্শক এ কে এম মহসিনুজ্জামান খান ২০১৩ সালের ২২ ডিসেম্বর ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম (সিজিএম) আদালতে তাজরীন ফ্যাশনসের এমডি দেলোয়ারসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেন। পরে ২০১৫ সালের ৩ সেপ্টেম্বর আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন ঢাকা জেলা ও দায়রা জজ এসএম কুদ্দুস জামান। মামলায় ১০৪ জন সাক্ষীর মধ্যে বিভিন্ন সময় আটজনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে।
মামলার আসামিরা হলেন- প্রতিষ্ঠানের মালিক দেলোয়ার হোসেন, চেয়ারম্যান মাহমুদা আক্তার, লোডার শামীম, স্টোর ইনচার্জ (সুতা) আল আমিন, সিকিউরিটি ইনচার্জ আনিসুর রহমান, সিকিউরিটি সুপার ভাইজার আল আমিন, স্টোর ইনচার্জ হামিদুল ইসলাম লাভলু, অ্যাডমিন অফিসার দুলাল উদ্দিন, প্রকৌশলী এম মাহবুবুল মোর্শেদ, সিকিউরিটি গার্ড রানা ওরফে আনোয়ারুল, ফ্যাক্টরি ম্যানেজার আব্দুর রাজ্জাক, প্রোডাকশন ম্যানেজার মোবারক হোসেন মঞ্জুর ও শহীদুজ্জামান দুলাল। আসামিদের মধ্যে মো. শহিদুজ্জামান দুলাল, মোবারক হোসেন মঞ্জু, মো. রানা ওরফে আনোয়ারুল, আল আমিন ও মো. শামিম মিয়া পলাতক।
Discussion about this post