ক্রীড়া ডেস্ক: জুয়াড়ির (বুকি) কাছ থেকে অনৈতিক প্রস্তাব গোপন করায় বাংলাদেশের অধিনায়ক সাকিব আল হাসানকে সব ধরনের ক্রিকেট থেকে দুই বছরের জন্য নিষিদ্ধ করেছে বিশ্ব ক্রিকেটের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি)। এর মাঝে এক বছর স্থগিত নিষেধাজ্ঞা।
আইসিসির দুর্নীতি-বিরোধী কোডের ৩টি আইন লঙ্ঘন করার অপরাধ সাকিব মেনে নেয়ার পর এই শাস্তি দিয়েছে আইসিসি। আকসুর কাছে তথ্য না জানানোয় এই শাস্তি পেয়েছেন বিশ্ব সেরা এই অলরাউন্ডার। ভবিষ্যতে একই অপরাধ হলে স্থগিত নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে।
আইসিসির পক্ষ থেকেই এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এই তথ্য জানানো হয়। আগামী বছরের ২৯ অক্টোবরের পর থেকে মর্যাদাপূর্ণ এমসিসির সদস্য সাকিব আবারো সব ধরনের ক্রিকেট খেলতে পারবেন।
আজকের দিনটি (২৯ অক্টোবর) প্রথম প্রহর দেশের ক্রিকেটের জন্য নিঃসন্দেহে কালো অধ্যায়ের একটি। এই রাতেই যে জানা গেলো জাতীয় ক্রিকেট দলের টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক সাকিব আইসিসি কর্তৃক নিষিদ্ধ হলেন। সারাদিন অনেক জলঘোলা হওয়ার পর অবশেষে সন্ধা নাগাদ আইসিসি থেকে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিশ্ব সেরা এই অলরাউন্ডারকে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।
তবে আইসিসির এই শাস্তি মেনে নিয়ে সাকিব আল হাসান বলেন, ক্রিকেট না খেলতে পারাটা আমার জন্য দুঃখজনক। তবে, আমার ওপর যে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে, আমি তা মেনে নিচ্ছি। আমি ম্যাচ পাতানোর প্রস্তাব পাওয়ার পরেও বিষয়টি আকসুকে জানাইনি। নিজের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করিনি। পৃথিবীর অন্যান্য খেলোয়াড়দের মতো আমিও দুর্নীতিমুক্ত ক্রিকেট দেখতে চাই। আশা করি, আমার মতো ভুল ভবিষ্যতে আর কেউ করবে না।
আইসিসির জেনারেল ম্যানেজার আলেক্স মার্শাল বলেন, সাকিব তার ভুল স্বীকার করেছে। তরুণরা যাতে ভবিষ্যতে এই ধরনের কাজে জড়িয়ে না পড়ে, সে এই নিয়ে কাজ করবে বলে জানিয়েছে। তার এই প্রস্তাব পেয়ে আমরা আনন্দিত।
আইসিসির দুর্নীতি দমন নীতিমালায় আছে, কোনো ক্রিকেটার, কোচিং স্টাফ, আম্পায়ার, স্কোরার, গ্রাউন্ডসের সদস্য, জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক ক্রিকেট সংশ্নিষ্ট যে কেউ জুয়াড়ির কাছ থেকে যে কোনো ধরনের প্রস্তাব পেলে তাৎক্ষণিকভাবে তা আইসিসি বা সংশ্নিষ্ট দেশের ক্রিকেট বোর্ডের দুর্নীতি দমন কর্মকর্তাদের জানাতে হবে। যতটা দ্রুত সম্ভব সেটা করার নির্দেশনা আছে। এজন্য প্রতিটি সিরিজ বা টুর্নামেন্ট শুরুর আগে আইসিসি থেকে ক্রিকেটার এবং অফিসিয়ালদের সচেতন করতে জুয়াড়িদের সম্পর্কে অবগত করা হয়।
আইসিসির তালিকাভুক্ত জুয়াড়িদের ছবি ও ফোন নম্বর টানিয়ে দেওয়া হয় ড্রেসিংরুমের পাশে। প্রতিটি আন্তর্জাতিক সিরিজে আকসুর সদস্য উপস্থিত থাকেন। বাংলাদেশে ঘরোয়া ক্রিকেট মৌসুম শুরুর আগেও আইসিসির দুর্নীতি দমন বিভাগের নির্দেশনা মেনে খেলোয়াড়, টিম অফিসিয়াল, ম্যাচ অফিসিয়াল এবং গ্রাউন্ডস কর্মীদের সচেতন করা হয়। এ কাজটি করেন বিসিবির দুর্নীতি দমন কর্মকর্তা মেজর (অব.) মোর্শেদুল ইসলাম। ক্রিকেটারদের নিরাপত্তা এবং জুয়াড়িদের ছায়া থেকে দূরে রাখতে আইসিসি ওয়ানডে বিশ্বকাপেও বাংলাদেশ দলের সঙ্গে রাখা হয়েছিল তাকে।
ফিক্সিং প্রতিরোধে আইসিসির সচেতনতামূলক কার্যক্রমগুলোতে সাকিব বরাবরই উপস্থিত ছিলেন। ২০০০ সাল থেকে চালু হওয়া ‘আইসিসি অ্যান্টিকরাপশন রুলস অ্যান্ড রেগুলেশনস’ ভালোই জানা বাংলাদেশ অধিনায়কের। এই নিয়ম অনুসরণ করে আগে একবার জুয়াড়ির ফোন পাওয়ার বিষয়ে আকসু ও বিসিবিকে জানিয়েছিলেন তিনি। অথচ সেই সাকিবই কি-না দুই বছর আগে এত বড় একটা ভুল করে ফেলেছেন।
আকসুর নিয়মে আছে, কোনো ক্রিকেটার, ম্যাচ অফিসিয়াল, টিম অফিসিয়ালসহ সরাসরি ক্রিকেটে সম্পৃক্ত কোনো ব্যক্তি জুয়াড়িদের কাছ থেকে প্রাপ্ত অনৈতিক প্রস্তাব না জানিয়ে চেপে গেলে, লুকানোর চেষ্টা করলে বা আকসুর জিজ্ঞাসাবাদেও অস্বীকার করলে তার বিরুদ্ধে ‘আইসিসি অ্যান্টিকরাপশন’ ধারা ২.৪.২, ২.৪.৩, ২.৪.৪, ২.৪.৫ ও ২.৪.৬ কার্যকর হবে। এক্ষেত্রে সর্বনিম্ন ছয় মাস আর সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের নিষেধাজ্ঞা দিতে পারবে আইসিসি।
Discussion about this post