বিডিলনিউজডটকম<> গত ৮ জানুয়ারি সকালে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুর রহমানের ল্যান্ড ফোনে কল করে বাদল নিজেকে বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা পরিচয় দেয়। কিন্তু ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুর রহমানের বিষয়টি সন্দেহ হলে তিনি সুপ্রিমকোর্টের বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানাকে অবহিত করেন। নাজমুন আরা সুলতানা এতে বিস্ময় প্রকাশ করলে পুরান ঢাকার কোতয়ালী থানায় ম্যাজিস্ট্রেটের পক্ষ হতে একটি মামলা হয়। ওই মামলার প্রেক্ষিতে বাদল ও তার সহযোগী মঞ্জুরুল হক ওরফে রিপন (৩৪)কে গ্রেফতার করা হয়েছে।
‘ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুর রহমান বলছেন। আমি বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা বলছি। হ্যাঁ আপনাকে যে কারণে ফোন দিলাম, আপনি রমনা থানার মামলা নম্বর…. আসামি কামাল উদ্দিন খানকে জামিন দিয়ে দিন।’ এভাবে নিজেকে বিচারপতি সাজিয়ে গাড়ি চুরি, মাদকদ্রব্য অপরাধসহ নানা মামলায় গ্রেফতারকৃত আসামিদের জামিনের তদবিরে অপর প্রান্ত থেকে ফোন দিতেন এক নারী। এরপর আসামিদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিতেন হাজার হাজার টাকা। আর এ টাকা দিয়ে দামী টাই স্যুট পরে চড়তেন সিলভার কালার প্রিমিও গাড়িতে। সঙ্গে থাকতো একজন ব্যক্তিগত সহকারী। সদা হাস্যোজ্জ্বল এবং নারীকণ্ঠের সেই পুরুষ মানুষটি হলেন রাকিব হাসান ওরফে বাদল। প্রতারণার অভিযোগে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) মঙ্গলবার গভীর রাতে বাদল ও তার সহযোগী রিপনকে নারায়ণগঞ্জ থেকে গ্রেফতার করে। এছাড়া প্রতারকদের টার্গেট ছিল অবিবাহিত প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী, বখাটে যুবক ও কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা । গতকাল দুপুরে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান ডিসি ডিবি (উত্তর) মোল্লা নজরুল ইসলাম।
গ্রেফতারকৃত বাদল জানান, তিনি দশম শ্রেণি পাস। থাকেন নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে। বাংলা, হিন্দি, তামিল ও ইংরেজী গান গাওয়ার ব্যাপারে তার প্রচুর দক্ষতা রয়েছে। মোবাইলে নারীকণ্ঠে সুন্দর সুন্দর কথা আর গান শুনিয়ে অর্থ হাতিয়ে নেয়াই ছিল তার অন্যতম কৌশল।ডিসি ডিবি আরও বলেন, বাদলের প্রতারণার মূলে পুঁজি ছিল নারীসুলভ কণ্ঠ। সে প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ীদের টার্গেট করে হঠাত্ করেই ফোন দিয়ে নারীসুলভ কণ্ঠে বলতো ‘ হ্যালো পেশকার। তুমি এখনও ফাইলটা দেওনি কেন।’ এরপর অপর প্রান্ত থেকে ব্যবসায়ী তার পরিচয় জিজ্ঞাসা করলেই নিজেকে পরিচয় দিতেন একজন বিচারপতি হিসেবে। এরপর কৌশলে ওই ব্যবসায়ীর সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলতেন। আর নানা ধরনের সহযোগিতার নামে বিভিন্ন লোকজনের কাছ থেকে হাতিয়ে নিতেন নগদ অর্থ।
এডিসি (পশ্চিম) মশিউর রহমান বলেন, বাদল কখনো নিজেকে ইউএনডিপি’র কান্ট্রি ডিরেক্টর মিস কার্নিয়াল পরিচয় দিয়ে ধনাঢ্য ব্যক্তিদের সাথে সখ্যতা গড়ে তুলতেন। তাদের লোভনীর প্রস্তাব দিতেন ইউএনডিপি’র প্রকল্পে কাজ পাইয়ে দেয়ার। আর বসের জন্য পার্সেন্টেজ হিসেবে আগেই ডাচ বাংলা ব্যাংকের একটি একাউন্টের মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিতেন। পরিচয় দিতেন গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা হিসেবে। এমনকি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী পরিচয়ে ফেসবুকে আইডি খুলে রূপসী মেয়েদের ছবি যুক্ত করে বন্ধুত্ব তৈরি করতেন। এরপর মোবাইল ফোনে গভীর রাতে নিজ কণ্ঠে ‘আমায় এত রাতে কেন ডাক দিলি প্রাণ কোকিলারে’সহ হিন্দি গান শুনিয়ে অনেকের সাথেই সম্পর্ক তৈরি করে। গোয়েন্দাদের কাছে এ ধরনের তথ্য আছে।
বাদলের এ কাজে কয়েকজন অসাধু আইনজীবী সহযোগী রয়েছেন। তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। এছাড়া বাদলের বিরুদ্ধে এর আগেও নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে ১৯ কোটি টাকার প্রতারণা এবং ফেনসিডিল ব্যবসার অভিযোগে দুটি মামলা হয়েছে। মামলাগুলো বিচারাধীন। ডিবি পুলিশ বাদলের কাছ থেকে জব্দ করেছে প্রতারণার কাজে ব্যবহূত প্রাইভেট কার , সিলমোহর, প্যাড, আইনের বই, ভিডিও ক্যাসেট, ফাইলপত্র, নগদ টাকা, মোবাইল সেটসহ অন্যান্য মালামাল।
বিচারপতি সেজে আদালতের সাথে প্রতারণার অভিযোগে গ্রেফতার প্রতারকসহ ২ আসামির ৯ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত। এরা হলেন, রূপগঞ্জ মধ্যপাড়ার বাহাদুর মিয়ার ছেলে মো. রাকিব হাসান বাদল ও তার সহযোগী রিপন। গতকাল বুধবার মহানগর ম্যাজিস্ট্রেট মাহবুবুর রহমান শুনানি শেষে এ আদেশ দেন। তদন্ত কর্মকর্তা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক হাসান আল মামুন এদের আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড নেয়ার আবেদন করেন।
Discussion about this post