দেনমোহর কিঃ

দেনমোহর আইন অনুযায়ী একজন মুসলমানের বিয়েতে আল্লাহ তায়ালা কর্তৃক নির্দেশিত অপরিহার্য প্রদেয় স্বামীর পক্ষ থেকে স্ত্রী যে অর্থ-সম্পদ পেয়ে থাকে তাকেই দেনমোহর বলে। বিয়ের সময় স্ত্রীকে দেনমোহর প্রদান করা স্বামীর ওপর ফরজ।
আল্লাহ তা’আলা বলেন “তোমাদের স্ত্রীদের দেনমোহর দিয়ে দাও খুশি মনে”। তবে এ ব্যাপারে স্ত্রীর উপর কোন প্রকারের চাপ প্রয়োগ করা যাবে না। সাধারণভাবে এটি কম ধার্য করাই মুস্তাহাব।এ ছাড়া কুরআনের আরো এক আয়াতে দেনমোহরের অধিকার প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, ‘হে নবী! আমি তোমার জন্য বৈধ করেছি তোমার স্ত্রীদেরকে, যাদের দেনমোহর তুমি প্রদান করেছো।’ (সুরা আল-আহজাব, আয়াত-৫০)
দেনমোহরের বিষয়টি হালকাভাবে নিয়ে লোক দেখানো ‘অধিক দেনমোহর’ ধার্য করাতে কোনো বরকত নেই। বরং তা অহংকারের স্বামিল।
দেনমোহরের পরিমাণ কী হওয়া উচিত ইসলামী শারীআতে এ সম্পর্কে বিশেষভাবে কোন নির্দেশ দেয়া হয়নি, কোন সুস্পষ্ট পরিমাণ ঠিক করে দেয়া হয়নি। তবে এ কথা স্পষ্ট যে, প্রত্যেক স্বামীরই কর্তব্য হচ্ছে তার আর্থিক সামর্থ্য ও স্ত্রীর মর্যাদার প্রতি লক্ষ্য রেখে উভয় পক্ষের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ কোন পরিমাণ নির্দিষ্ট করে বেঁধে দেয়া। আর মেয়ে পক্ষেরও তাতে সহজেই রাজী হয়ে যাওয়া উচিত।
দেনমোহর একজন নারীর হক, যদি কোনো ব্যক্তি এটি না দেওয়ার ইচ্ছা নিয়ে বিয়ে করে তাহলে সে ব্যাভিচারী হবে। সে বিষয়েই রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন যা মুসনাদে আহমাদে বর্ণিত হয়েছে।
রাসূল (সাঃ) বলেছেন, “যে ব্যক্তি কোনো মেয়েকে দেনমোহর দেওয়ার ওয়াদায় বিয়ে করেছে, কিন্তু তা দেওয়ার ইচ্ছে নেই, সে কিয়ামতের দিন আল্লাহর নিকট ব্যাভিচারী হিসেবে দাঁড়াতে বাধ্য হবে।”- মুসনাদে আহমাদ
দেনমোহর আইন অনুযায়ী সর্বোচ্চ কোনো পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়নি। ন্যূনতম পরিমান হানাফি মাজহাবের মতে ১০ দিরহাম। অর্থাৎ ৩০.৬১৮ গ্রাম রুপা অথবা এর সমপরিমাণ মূল্য নির্ধারণ করা। এর চেয়ে কম পরিমাণ মোহর নির্ধারণ করা স্ত্রী রাজি হলেও তা শরিয়তের দৃষ্টিতে বৈধ হবে না।
অন্যসব অধিকারের মতো স্বামীর কাছে তা দাবি করা স্ত্রীর জন্য দোষের কিছু নয়। অনেকেই মনে করেন, দেনমোহরের টাকা স্ত্রীকে দিতে হয় শুধুমাত্র বিয়ের বিচ্ছেদ ঘটলে। এটা অজ্ঞতা ও চরম ভুল ধারণা। বিয়ে বিচ্ছেদ না হলেও দেনমোহরের টাকা পরিশোধ করা ফরজ।
আমরা এই আলোচনা থেকে বুঝতে পারলাম যে দেনমোহর স্ত্রীর হক যা অবশ্যই স্বামীকে প্রদান করতে হবে এবং খুশি মনে প্রদান করতে হবে। এটা স্ত্রীর প্রতি কোন দয়া বা দান নয় বরং স্ত্রীর পাওনা।
দেনমোহর আইন কিঃ-

বিবাহ একটি সামাজিক চুক্তি। এই চুক্তি সম্পাদনের অন্যতম শর্ত দেন-মোহর। এই শর্তটি পূরণ ব্যতীত কোন বিবাহ বৈধ হতে পারে না। দেনমোহরের সংজ্ঞা দিতে ডি.এফ মোল্লা বলেন, মোহর বা মোহরানা হলো কিছু টাকা বা অন্য কিছু সম্পত্তি যা বিবাহের প্রতিদান স্বরুপ স্ত্রী স্বামীর কাছ থেকে পাবার অধিকারী। মোহরানা স্ত্রীর সন্মানের প্রতীক।সুতরাং বিয়ের আসরে বা অনুষ্ঠানে স্বামী তার স্ত্রীকে মর্যাদা স্বরুপ যে অর্থ বা সম্পদ দেয় বা দেবার অঙ্গীকার করে তাকে দেনমোহর বলে।
দেনমোহর আইন অনুযায়ী স্ত্রীর একচ্ছত্র অধিকার এবং এটা স্বামীর কাছে স্ত্রীর প্রাপ্য। বিয়েতে যদি এটি নির্ধারণ করা না হয়, তবে স্ত্রী তার মর্যাদা ও যোগ্যতার বিচারে তা পাওয়ার অধিকারী। এমন কোনো প্রতিষ্ঠিত নীতি বা যুক্তি কিংবা আইন নেই, স্ত্রী তার স্বামীর নিকট নিজেকে সমর্পণ করলে বা মৌখিকভাবে স্বামী কর্তৃক মাফ চাওয়ার পর মাফ শব্দটি উচ্চারণ করলে দেনমোহরের দাবি নিঃশেষ হয়ে যায়।
দেন-মোহর স্বামীর ঋণ, যা স্বামী তাঁর স্ত্রীকে পরিশোধ করতে বাধ্য। মাহমুদা খাতুন বনাম আবু সাইদ (২১ ডি.এল.আর) মামলায় মহামান্য বিচারপতি কর্তৃক সিদ্ধান্তে বলা হয়েছে যে, ‘সহবাসের আগে এবং পরে স্ত্রী স্বামীর কাছে তলবী মোহরানার দাবি করতে পারে এবং স্বামী তলবী তা পরিশোধ না করলে স্ত্রী তার স্বামীর অধিকারে অর্থাৎ সহবাসে যেতে স্ত্রী অস্বীকার করতে পারেন।’ এ অজুহাতে স্বামী স্ত্রী থেকে দূরে অবস্থান করলে তা পরিশোধে বাধ্য। (১১ ডি এল আর (ডবলু পি) লাহোর ১২৪। স্বামী এহেন মোহরানা পরিশোধ ব্যতীত দাম্পত্য অধিকারের ডিক্রি পেতে পারে না।
যে কোন বিষয় সম্পত্তি মোহরানার জন্য ধার্য করা যায় না। ইহা হতে হবে নগদ অর্থ, কোন বীমা পলিসি বা অন্য কোন দ্রব্য সামগ্রী। তবে কোন হারাম বস্তু হতে পারবে না। স্বামীর দখলে নেই এমন কোন সম্পত্তি হবে না। ভবিষ্যত কোন বিষয়ও এর অন্তর্ভূক্ত হতে পারবে না।
” আরো পড়ুনঃ পালিয়ে বিয়ে করতে গেলে কি কি বিষয় আপনাকে আইন অনুযায়ী জেনে রাখা উচিত। “
দেনমোহর নির্ধারণ পদ্ধতিঃ-
মোহরানার পরিমান সুনির্দিষ্টভাবে বেঁধে দেয়া হয়নি। অর্থাৎ বর ও কণের উভয়ের দিক বিবেচনান্তে তা নির্ধারিত হয়। তাছাড়া স্ত্রীর পিতার আর্থ-সামাজিক অবস্থানের ভিত্তিতে এটি পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়। অপর দিকে বরের আর্থিক ক্ষমতার দিকটাও বিবেচনায় রাখা হয়।
এসব দিক বিচার বিবেচনা করেই মূলতঃ দেন-মোহর নির্ধারণ করা হয়। ১৯৬১ সালের পারিবারিক আইনের ১০ ধারা মোতাবেক দেনমোহর প্রদানের পদ্ধতি সম্পর্কে কাবিনে বিস্তারিত উল্লেখ না থাকলেও স্ত্রী চাহিবামাত্র সম্পূর্ণ টাকা পরিশোধ করতে হবে।
তবে দেন-মোহরের পরিমাণ বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করার সময়ে বা বিয়ের আসরে নির্ধারণ করতে হবে।বর নিজেই এ চুক্তি করতে পারে। এই দেন-মোহর দাম্পত্য মিলন, তালাক-বিচ্ছেদ অথবা স্বামী-স্ত্রীর মৃত্যুর দ্বারা নিশ্চিত হয়।
দেনমোহর পরিশোধের নিয়মঃ-

দেনমোহরের দুটো অংশ যথাঃ- (১) মুয়াজ্জল (আশু) দেন-মোহর (২) মু-অজ্জল (বিলম্বিত) দেন-মোহর।
(১) মুয়াজ্জল বা আশু হচ্ছে, নগদে স্ত্রীকে প্রদান করা অর্থাৎ বিয়ের আসরে দিতে হয়। বিয়ের আসরে না দিতে পারলে পারিবারিক জীবন চলাকালীন সময়ে দেনমোহরের যে অংশটুকু স্ত্রী চাহিবামাত্র স্বামী পরিশোধ করতে বাধ্য থাকে।
(২) মু-অজ্জল বা বিলম্বিত হচ্ছে, দেনমোহরের যে অংশটুকু স্বামীর মৃত্যুর পর কিংবা স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিয়ে বিচ্ছেদ বা তালাকের পর স্ত্রী পেয়ে থাকে।
জামিনদারঃ
যদি কোন ব্যক্তি স্বামীর স্ত্রীর মোহরানার দায়িত্ব নেয় তবে সে উহা পরিশোধের জন্য দায়ী হবে। বিবাহ উত্তর দেনমোহরের জন্য জামিনদার থাকলে সেক্ষেত্রেও জামিনদার দায়ী হবে। স্বামীর রেখে যাওয়া সম্পত্তি থেকে স্ত্রীর দেন-মোহর পরিশোধ করতে হবে। যদি স্বামীর উত্তরাধিকারীরা স্বামীর সম্পত্তি থেকে তা দিতে অস্বীকার করেন তাহলে স্বামীর উত্তরাধিকারীদের বিরুদ্ধে স্ত্রী পারিবারিক আদালতে মামলা করতে পারবেন। উল্লেখ্য, যদি স্বামীর আগে স্ত্রীর মৃত্যু হয় এবং স্ত্রীর দেনমোহর পরিশোধিত না হয়ে থাকে তাহলে স্ত্রীর উত্তরাধিকারীরা ঐ দেন-মোহর পাওয়ার অধিকারী। ফলে স্ত্রীর উত্তরাধিকারীরা তা পাওয়ার জন্য আদালতে মামলা করতে পারবেন।
১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইনঃ
এই আইনের ধারা ১০ এ মোহরানা সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, বিবাহের কাবিননামায় কি ধরণের দেনমোহর স্ত্রীর পাওনা হবে, তা নির্দিষ্ট করে উল্লেখ করা না থাকলে দেনমোহরের সমুদয় অর্থ স্ত্রী চাহিবামাত্রই পরিশোধযোগ্য। যদি সালিশী পরিষদের আদেশ বলে ইহা কার্যকরী হলে স্ত্রীর তা পাওনা হয়ে যায়। উহা পরিশোধ না করলে ১ মাস কারাদন্ড বা ২০০ টাকা জরিমানা বা উভয় দন্ড হতে পারে।
স্ত্রী কর্তৃক দেনমোহর এর মোহরানা মওকুফঃ

স্ত্রী ইচ্ছা করলে তার স্বামী বা স্বামীর উত্তরাধিকারীগণের পক্ষে আংশিক বা সম্পূর্ণ দেন-মোহর মওকুফ করে দিতে পারে। হতে পারে তা প্রতিদান ব্যতিরেকে। এহেন হ্রাস বা মওকুফ অবশ্যই স্ত্রীর পূর্ণ সন্মতিতে হতে হবে। স্ত্রী তার স্বামীর মৃত্যুতে ভারাক্রান্ত হয়ে উহা মওকুফ বা হ্রাস করলে তা তার জন্য বাধ্যতামূলক নাও হতে পারে। নাবালক স্ত্রীর দেনমোহর মওকুফ অবৈধ। ভালবাসা বা স্নেহ ইত্যাদি পাবার আশায় স্ত্রী যদি দেন-মোহর পরিত্যাগ করে তবে তার জন্য উহা বাধ্যতামূলক নয়। তবে মোহরানা যাই থাকুক না কেন স্বামী নিজ উদ্যোগে মোহরানা বৃদ্ধি করতে পারে।
দেনমোহর আইন অনুযায়ী মামলাঃ-
দেনমোহরের মামলা ও তামাদি স্ত্রী তার দেনমোহরের টাকা না পেলে সে এবং তার মৃত্যুর পর তাঁর উত্তরাধিকারীগন এর জন্য মামলা দায়ের করতে পারে। আশু দেন-মোহর স্ত্রী চাহিবা মাত্র স্বামী দিতে বাধ্য। স্বামী দিতে অস্বীকার করলে বা না দিলে সেদিন থেকে তিন বৎসরের মধ্যে স্ত্রীকে মামলা দায়ের করতে হবে। বিলম্বিত দেনমোহর আদায়ের সময়সীমা হল মৃত্যু অথবা তালাকের ফলে বিয়ে বিচ্ছেদ ঘটলে ওই তারিখ হতে তিন বৎসরের মধ্যে মামলা দায়ের করতে হবে। তা না হলে মামলা তামাদি হয়ে যাবে।স্বামী কর্তৃক স্ত্রীকে তালাক প্রদানের পর স্ত্রী যেই আদালতের এলাকায় বসবাস করেন ওই আদালতে মামলা দায়ের করতে পারেন। এর জন্য মাত্র পঁচিশ টাকা কোর্ট ফি দিতে হয়।
মোজাহেদুল ইসলাম বনাম রওশন আরা (২২ ডি.এল.আর, পৃষ্ঠা-৬৭৭) মামলায় বলা হয়েছে, দেন-মোহর কখনই মাফ হয় না। স্বামী যদি মারাও যায় তবে সে স্বামীর সম্পদ হতে তা আদায় করা যায়। অর্থাৎ স্বামীর মৃত্যুর পর যদি স্ত্রী সমুদয় অথবা শুধুমাত্র বিলম্বিত দেনমোহরের অর্থ অনাদায়ী থেকে থাকে। তবে স্ত্রী তার প্রয়াত স্বামীর ভূ-সম্পত্তি দখল করত উহার রাজস্ব বা মুনাফা হতে তা উসুল করতে পারে। কেননা ইসলামী আইনে দেনমোহরকে দেনা বলে বিবেচনা করা হয়। দেনমোহরের পরিমাণ যত বেশি হোক না কেন, পক্ষগুলোর মধ্যে স্বীকৃত হলে স্বামী তা সম্পূর্ণ রূপে স্ত্রীকে পরিশোধ করতে বাধ্য থাকবে। এমনকি স্বামীর আর্থিক সঙ্গতি না থাকলেও আদালত দেনমোহরানার দায় হতে স্বামীকে মুক্তি দেবে না।
দেনমোহর আইন সংক্রান্ত তথ্যঃ

দেনমোহর কতপ্রকার, এটি ছাড়া বিয়ে বৈধ কিনা, তা কীভাবে ধার্য করা হয়, তালাক বা মৃত্যুর আগে দেনমোহর দাবি করা আইনসঙ্গত কিনা, তা আদায়ে স্ত্রী কী কী ব্যবস্থা নিতে পারেন, বিয়ের উপহার(শাড়ি,গহনা) দেনমোহরের অংশ কিনা, স্বামীর মৃত্যুর পর স্ত্রী কখন তা দাবি করতে পারেন ,স্ত্রী স্বামীর সম্পত্তি দখলে রেখে দেনমোহর আদায় করতে পারেন কিনা, এটি নিয়ে বিরোধ হলে কোন আদালতে মামলা হবে।
দেনমোহর আইন বিষয়ে কিছু জিজ্ঞাসাঃ-

মির্জাপুর গ্রামের সালমার সাথে মিরপুর গ্রামের ছোট ব্যবসায়ী আসাদের বিয়ের সময় কোন দেনমোহর ধার্য করা হয় নি। আসাদ শর্ত দেয় যে সালমা দেনমোহরের দাবি করতে পারবে না। বিয়ের পর থেকেই তাদের মধ্যে বনিবনা হচ্ছিল না। বিয়ের তিন বছর পর সালমা আসাদের কাছে দেনমোহর চায় এবং দেনমোহর না পেয়ে সে আলাদাভাবে বসবাস করতে থাকে। অবশ্য সালমা আলাদাভাবে বসবাস করলেও আসাদের কাছ থেকে ভরণপোষণ আদায় করত।
মুসলিম আইন অনুযায়ী দেন-মোহর হলো বিয়ের অন্যতম শর্ত । এই শর্ত অনুযায়ী স্ত্রী স্বামীর নিকট থেকে বিয়ের সময় কিছু অর্থ বা সম্পত্তি পায় বা পাওয়ার অধিকার লাভ করে। এটি বিয়ের সময়ই ধার্য বা ঠিক করা হয়। এটি স্ত্রীর একটি বিশেষ অধিকার। আইনে যে কোন অবস্থায়ই একজন স্বামী কর্তৃক স্ত্রীর কাছে দেনমোহর পরিশোধ যোগ্য। স্ত্রী যে কোন সময় তা দাবী করতে পারেন। তালাক বা মৃত্যুর সাথে এর কোন সম্পর্ক নেই।
যদি স্ত্রী স্বামীর কাছে দেনমোহর চেয়ে না পায় তাহলে কি করবে ?
এক্ষেত্রে যা করা উচিত তা হলো স্বামী দেনমোহর দিতে অস্বীকার করলে স্ত্রী তা আদায়ের জন্য আদালতে যেতে পারেন। তাৎক্ষণিক দেনমোহর চাওয়ার পর স্বামী তা দিতে অস্বীকার করলে ৩ বছরের মধ্যে পারিবারিক আদালতে তাৎক্ষণিক দেনমোহর আদায়ের জন্য মামলা করতে হবে। বিলম্বিত দেনমোহর আদায়ের ক্ষেত্রে যেহেতু সময়সীমা বাঁধা নেই ফলে স্বামী বা স্ত্রী তালাক দিলে অথবা স্বামী মৃত্যুবরণ করলে পারিবারিক আদালতে ৩ বছরের মধ্যে মামলা করতে হবে। তালাক হয়ে গেলে স্ত্রীকে স্বামীর দেনমোহরের টাকা বা সম্পত্তি দিতে হবে। মনে রাখা প্রয়োজন দেনমোহর ও ভরণপোষণ সম্পূর্ণ আলাদা।
যদি কাবিননামায় দেনমোহর হিসেবে স্থাবর বা অস্থাবর সম্পত্তি দেয়ার কথা উল্লেখ না থাকে তবে স্ত্রীকে উপহার হিসেবে স্থাবর বা অস্থাবর সম্পত্তি দিলে তা দেনমোহর হিসেবে পরিশোধ হবে না।
স্বামী মারা যাবার পর স্ত্রী কিভাবে দেনমোহর দাবী করতে পারে ?
” আরো জানুন মৃত বেক্তির সম্পত্তি বন্টনের নিয়ম এবং করনীয়। “
স্বামীর মৃত্যুর পর দেনমোহর স্ত্রীর কাছে স্বামীর ঋণ হিসেবে ধরা হবে স্বামীর মৃত্যুর পর দাফন, কাফন ও অন্যান্য অনুষ্ঠানাদি শেষ হবার পর স্বামীর অন্যান্য ঋণ পরিশোধ করার সময় স্ত্রী দেনমোহর দাবী করতে পারেন।স্বামীর রেখে যাওয়া সম্পত্তি থেকে স্ত্রীর দেনমোহর পরিশোধ করতে হবে।যদি স্বামীর উত্তরাধিকারীরা স্বামীর সম্পত্তি থেকে দেনমোহর দিতে অস্বীকার করেন তাহলে স্বামীর উত্তরাধিকারীদের বিরুদ্ধে স্ত্রী পারিবারিক আদালতে মামলা করতে পারবেন। যদি স্বামীর আগে স্ত্রীর মৃত্যু হয় এবং স্ত্রীর দেনমোহর পরিশোধিত না হয়ে থাকে তাহলে স্ত্রীর উত্তরাধিকারীরা ঐ দেনমোহর পাওয়ার অধিকারী। ফলে স্ত্রীর উত্তরাধিকারীরা দেনমোহর পাওয়ার জন্য আদালতে মামলা করতে পারবেন।
স্ত্রী কি স্বামীর সম্পত্তি দখলে রেখে দেনমোহর আদায় করতে পারেন?
স্বামী দেনমোহর পরিশোধ না করলে স্ত্রী স্বামীর সম্পত্তি নিজ দখলে রাখতে পারেন। স্বামী জীবিত থাকা অবস্থায় কোন স্ত্রী কোন সম্পত্তি দখলে রাখলে এবং স্বামীর মৃত্যুর পর স্ত্রী ঐ সম্পত্তির দখল ভোগ করতে থাকলে, তার দখলটি বৈধ ও আইনসম্মত হবে। স্ত্রী দখলকৃত সম্পত্তির খাজনা, লাভ বা আয় থেকে দেনমোহরের টাকা আদায় করতে পারবে। এ সময়ে কেউ তাকে দখল থেকে উচ্ছেদ করতে চাইলে, সে দখল উদ্ধারের মামলা করতে পারবে।
দেনমোহর নিয়ে কোন আদালতে মামলা করা যায় ?
” আরো জানুন মামলা করার নিয়ম নীতি। ”
দেনমোহর সংক্রান্ত মামলা স্থানীয় সহকারী জজ আদালতে দায়ের করতে হবে। এ আদালত ১৯৮৫ সাল থেকে পারিবারিক আদালত হিসেবে কাজ করছে। স্ত্রী যে এলাকায় বসবাস করেন সে এলাকার পারিবারিক আদালতে দেনমোহর সংক্রান্ত মামলা করতে পারেন।
দেনমোহর কি যৌতুক ?
মুসলিম আইন অনুযায়ী দেনমোহর বিয়ের একটি অন্যতম শর্ত। দেনমোহর স্বামী কতৃর্ক স্ত্রীকে পরিশোধ যোগ্য একটি আইনগত দায়। সুতরাং দেনমোহর এবং যৌতুক পুরাপুরি দু’টি ভিন্ন বিষয়।
স্ত্রী কর্তৃক তালাক দিলে স্বামী দেনমোহর পরিশোধ করবেন কি ?
অবশ্যই, দেনমোহর হলো বিয়ের শর্ত,যার সাথে তালাকের কোন সম্পর্ক নাই।
তালাক দিলেই কি দেনমোহর পরিশোধ করতে হয় ?
বিয়ের সময় অথবা বিয়ের পর যে কোন সময় দেনমোহর পরিশোধযোগ্য।
স্বামীর মৃত্যু হলে কি স্ত্রী দেনমোহর পাবেন ?
স্বামীর রেখে যাওয়া সম্পত্তি থেকে অন্যান্য দেনা পরিশোধের মতো স্ত্রীর দেনমোহরও পরিশোধ করতে হবে।
লেখকঃ ল ফর ন্যাশনস, ইমেইলঃ lawfornations.abm@gmail.com, ওয়েবসাইটঃ www.lawfornations.com, মোবাইল: 01842459590.
Discussion about this post