রাহুল কুমারঃ-
নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইবুনাল -১, আদালতের স্পিকার থেকে আসামীর ডাক পরতেই, ৩/৪ বছর বয়সী শিশু কোলে মধ্যবয়সী লোকটা নিজের ছেলের বয়সী এক যুবকের পরিহিত মাক্স টেনে খুলে নিয়ে সেটাই নিজের মুখে লাগিয়ে তাড়াহুড়ো আর বিচারালয়ের চাঞ্চল্যতায় প্রকম্পিত ব্যক্তি হন্তদন্ত হয়ে এজলাসে দাঁড়ায় আসামীর কাঠগড়ায়।
হ্যাঁ অবস্থা এখন এমনই কারণ আদালত পাড়ায় এজলাসে মাক্স বাধ্যতামূলক। এটা যেন হরহামেশা বাঙালি সমাজের এক বিদ্রুপ ব্যঙ্গচিত্র, কারণ অদৃশ্য এই ঘাতক ভাইরাসটি আমাদের সমাজের এক অবিশ্বাসের পর্যায়ে যেমন রয়ে গেছে, আবার যারাও বা টিভি পত্রিকা আলোচনার দ্বারা একটু আমলে নিয়েছে তাদেরও মাক্স এজলাস থেকে বেরিয়ে ঢুকে পরে পকেটে কিংবা লেগে থাকে তার থোতা বা গলায়।
এ যেন সেই চোখে কালো কাপড় বেঁধে চলা আদালতের প্রতি নাটুকে উপস্থাপনার মাধ্যমে সান্ত্বনা সৎভাবের আদর বুলিয়ে বলা, হ্যাঁ সমাজটা ভালো আছে আইনের মান্যতা চিরজীবী অটুট রয়েছে।তবে পরিস্থিতি সবক্ষেত্রেই যে বিফল তা কিন্তু নয়।
নাইমের গ্রামের স্কুল এখন বন্ধ, কায়িক শ্রমজীবী পরিবারে তার নেই লেখাপড়ার তাগাদা কিন্তু জীবনধারণের ভীতি রয়েছে অসীম। তাই নাইমের জীবনে করোনা এনে দিয়েছে রোজগারের নতুন সুযোগ, তাই সিচুয়েশনাল অন্ট্রাপ্রেনর বনে যাওয়া নাইম সবার আগে ছুটে যায় আদালত প্রাঙ্গনে। হুক হ্যাঙারে মাক্স সাজিয়ে ঘুরতে থাকে সে জজ কোর্ট, ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট, বার এসোসিয়েশন, মুহুরি বার মানে সম্পূর্ণ আদালত পাড়াকে কেন্দ্র করে।
দৈনিক আদালত পাড়ার আইন পেশাজীবী পরিচিত মুখগুলোর নিকট পাঁচ টাকা, বাহিরের মানুষদের কাছে ১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে তার কিশোর জীবনের মূল্যবান সময়গুলো। কিন্তু নাইম ভালো আছে সিজনাল বিজনেস এর প্রকৃত উপযোগিতা নাইমকে করে দিয়েছে আদালতের অংশ, কারণ এজলাসে মাক্স বাধ্যতামূলক।
তবে সচেতনতা এটাই বলে জীবনের প্রয়োজনে মাক্স বাধ্যতামূলক করা উচিত আমাদের সকলের স্বার্থে। বিভিন্ন দেশে জনসচেতনতামূলক কার্যক্রমের অংশ হিসেবে এমনকি দেশকে ভালোবাসার মতন জাতীয় প্রমাণ তুলে ধরতে স্লোগান তোলা হয়েছে, তুমি যদি তোমার দেশের জন্য কিছু করতে চাও তাহলে মাক্স পরো।
বিশেষ করে রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ প্রচার মাধ্যম আরও সুকৌশল এবং সুশীল ও শালিন উপস্থাপনার মাধ্যমে করছে মাক্স পরার অনুরোধ। অনেক বিদেশি চ্যানেলে তুলে ধরছে তাদের সময়ের নায়ক বলে যারা করোনাকালীন সময়ে মাক্স পরা সহ অন্যান্য করোনা প্রতিরোধ সংক্রান্ত নিষেধাজ্ঞা নাকে মুখে চোখে হাত না দেয়া, কুনুই ভাজ করে হাঁচি কাশি দেয়ার বিষয়টি মেনে চলছে নিষেধাজ্ঞা অনুযায়ী।
তাছাড়াও আমাদের দেশীয় চ্যানেল গুলিতে রয়েছে নানান আয়োজন, সকলের করোনার খবর রাখার প্রয়োজনীয়তা কমে আসলেও, করোনায় মৃত্যু অব্যাহত রয়েছে এখনো বাংলাদেশে। কেবল মাত্র আপনার প্রতিবেশী আত্মীয়ার কোন করোনা দূর্ভোগ ঘটলেই কেবল আপনি সচেতন হবেন, আপনার অঞ্চলের হাসপাতালটির করোনা রুগীর ভয়াবহ বেড়ে যাওয়ায় স্থান স্থানসংকুলান হচ্ছে না এমন রেখাচিত্র দেখে তবেই আপনি সাবধান হবেন।
তাহলে জেনে রাখবেন আপনার এমন অপেক্ষায় অসচেতন এবং করোনা প্রতিরোধ ব্যবস্থা না নিয়ে থাকাটাই ঠিক তেমনি পরিস্থিতি বয়ে আনবে এ দেশে। কিন্তু আমরা চাইলেই পারি করোনা ভ্যাকসিন অনাবিষ্কৃত থাকা পর্যন্ত করোনা প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে দৈনন্দিন কার্য নির্বাহ করা কেবল এবং একমাত্র এভাবেই আমরা পারি করোনার দ্বিতীয় প্রবাহ প্রতিরোধ করতে।
Discussion about this post