মতিউর রহমান ফয়সাল:
আইন মানুষের উপকারের জন্য তৈরি করা হচ্ছে বা হয়েছে। মানুষের খারাপ ব্যবহার-কাজ বা উদ্যোগকে ধ্বংস করার জন্য আইন। কিন্তু এমন কিছু আইন রয়েছে যা হাসির উপকরণ হিসেবে আত্বপ্রকাশ করেছে।
ইংল্যান্ড,আমেরিকা বা এমন উন্নত দেশ সমূহে ”টর্ট আইনের” প্রয়োগ রয়েছে। আপনার শরীরে কেউ ছাদ থেকে পানি ফেলে দিল! বা আপনার সামনে এমন একটি কাজ করলো যা আপনার কাছে বিরক্তিকর বা আপনার চুল পরিমান ক্ষতি করলো! তারা এই জন্য আদালতে যেতে পারে। ক্ষতি পূরণের মামলা করে দিতে পারে। কারণ তাদের দেশে বড় বড় অপরাধ যেমন-জমি বিষয়ক বা খুন, মারামারির মত ঘটনার ফলে মামলার সংখ্যা খুবই কম। কিন্তু আমাদের দেশে এই সব ছোট বিষয় নিয়ে মামলা করার সময় কই? খুন, মারামারি, ভূমি নিয়ে মামলা করতে করতেই কোর্ট ভরে আছে মামলায়।
তবে সে যায় হোক, চলুন আজ কিছু অদ্ভুত আইন জেনে নিই বিশ্বের বিভিন্ন দেশের-
আমেরিকার অ্যারিজোনায় আইন রয়েছে, কোন ছেলেমেয়ে কাঁচা পেঁয়াজ খেয়ে স্কুলে যেতে পারবে না। আইন ভঙ্গ করলে জরিমানা । ১৮৮০ সালে স্কুলগামী বাচ্চাদের জন্য কাঁচা পেঁয়াজ খাওয়া নিষিদ্ধকরণ আইন পাস হয়। এক সময় স্কুলে যাওয়ার পথে প্রচুর ছেলেমেয়ে রাস্তার পাশের খেত থেকে স্ক্যালিয়ন নামে এক ধরনের কাঁচা পেঁয়াজ কুড়িয়ে খেত। ফলে পেঁয়াজের ভুরভুর গন্ধে ভয়ানক অস্বস্তিতে পড়ে যেতেন শিক্ষকরা। এজন্য শেষমেশ এই কাঁচা পেঁয়াজ খাওয়া নিষিদ্ধকরণ আইন প্রবর্তন করা হয় স্কুলগামী ছেলেমেয়েদের জন্য। আমেরিকায় আরেকটি প্রাচীন আইন রয়েছে, রসুন খাওয়ার চার ঘণ্টার মধ্যে কেউ গির্জা, স্ট্রিট কিংবা থিয়েটার হলে যেতে পারবে না।
জর্জিয়ায় একটা আইন আছে, ক্লাসরুমে বাচ্চারা পড়াশোনার সময় ভুলেও তাদের মুখোমুখি হওয়া যাবে না। ক্যালিফোর্নিয়ার লস অ্যাঞ্জেলসে একই বাথটাবে এক সঙ্গে দুই শিশুকে গোসল করাতে গেলে সেটা হবে ঘোর অন্যায়।
ম্যাসাচুসেটসে অনেক পুরনো আরেকটা আইন রয়েছে, গির্জায় গিয়ে কেউ চীনা বাদাম খেতে পারবে না। চীনা বাদাম খেতে গেলে খোসা ভাঙতে শব্দ হয় বলেই হইত এই আইনের প্রবর্তন করা হয়েছিল। আমেরিকার কিানেকটিকাট রাজ্যে কড়া আইন রয়েছে, কোনো বাচ্চা পা ওপরে তুলে হাতে হেঁটে রাস্তা পেরোতে পারবে না। এক সময় ছোটদের এ ধরনের প্রবণতা বেশি ছিল বলে কর্তৃপক্ষ এই আইন প্রবর্তনে বাধ্য হয়েছে।
মিশিগানে কঠোর আইন রয়েছে, যদি দোতলার চেয়ে উঁচু কোনো দালান তোলা হয়, তাহলে সেই দালানের প্রতিটা জানালায় একটা করে দড়ি ঝুলিয়ে রাখতে হবে। বাংলাদেশের গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি গুলোর জানালায় দড়ি টানানো আইন করলে মন্দ হত না! মেরিল্যান্ডে হোটেল রুমে মুরগি রাখা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। ইলিনয়িসের জিওনে কুকুর বা বেড়ালের দিকে কেউ জ্বলন্ত সিগারেট ছুঁড়ে দিতে পারবে না। মিশিগানের ডেট্রয়েটে কেউ কোনো কুমিরকে জোর করে আগুনের দিকে ঠেলে দিতে পারবে না। হাওয়াই দ্বীপে কানের ভেতর কয়েন গুঁজে রাখা গুরুতর অপরাধ। ক্যালিফোর্নিয়ার সুসানভিলে সুড়–ৎ সুড়–ৎ করে সুপ খাওয়া স্থানীয়দের জন্য অমার্জনীয় অপরাধ সান দিয়েগোতে একটা আইন রয়েছে, রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে গান গেয়ে পেট চালায়, তাদের অবশ্যই কাপড় পরতে হবে। কোন সমস্যা থেকে এই আইনের উদ্ভব হয়েছে, তা বোধ হয় ব্যাখ্যা না করলেও চলবে।
আমেরিকার নিউইয়র্ক শহরে একটা অদ্ভুত আইন প্রচলিত আছে যে, পুরুষ নারীর সাথে ভালোবাসার অভিনয় করলে জরিমানা হবে ২৫ ডলার। এ আইনে আরো আছে যে, পুরুষদের শহরের এদিক-সেদিক অযথা ঘোরা ও নারীদের সঙ্গে ভালোবাসার ভান করা যাবে না! আমাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একটা আইন আছে, প্রকাশ্যে কোনো ছেলেকে কোনো মেয়ের সাথে কথা বলতে দেখা গেলে ২৫ পয়সা জরিমানা, এই ২৫ পয়সা জরিমানা গুনেই ১৯২১/১৯৫০ সালের দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছাত্রীরা প্রেম করতো । আইনটি এখনো আছে তবে কার্যকারিতা নাই।
এখানে দেয়া বেশির ভাগ আইন অনেক পুরোনো। যার এখন কার্যকারিতা নেই। তাই আইন প্রয়োগ কারী সংস্থা এই সব নিয়ে আর ভাবে না। এখন এই সব আইন অদ্ভুত আর মজার বলেই মানুষ মনে রাখছে।
অ্যারিজোনায় সাবান চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়লে শাস্তি হলো, সেই সাবান দিয়ে ততক্ষণ পর্যন্ত চোরকে গোসল করানো, যতক্ষণ পর্যন্ত না সাবানটা পুরোপুরি শেষ হয়। নিউইয়র্কে কোনো উঁচু বিল্ডিং থেকে লাফিয়ে পড়ার শাস্তি হলো মৃত্যুদণ্ড! শিকাগো শহরে ১৭ বছর বয়স না হওয়া পর্যন্ত সিটি হলের সামনে দিগম্বর বা উলঙ্গ হয়ে প্রতিবাদ করা যায়। ফ্লোরিডায় দিগম্বর বা উলঙ্গ হয়ে øান/গোসল করা অপরাধ বলে গণ্য হবে। ওহিও অঙ্গরাজ্যের অক্সেফার্ডে কোনো পুরুষের পোস্টারের সামনে দাঁড়িয়ে পোশাক খোলা মহিলাদের জন্য নিষিদ্ধ।
ইংল্যান্ডে পার্লামেন্টে মৃত্যুবরণ করার শাস্তি মৃত্যুদন্ড আর যদি রাণীর ছবি উল্টো করে লাগানো হয় তে অবশ্যই শাস্তি পাবে। কানাডাতে পাবলিক প্লেসে প্রস্রাব করা ও থুথু ফেলার জন্যে ১০০ কানাডিয়ান ডলার জরিমানা দিতে হয়। সৌদি আরবে দরিদ্র হওয়া আইনত নিষিদ্ধ। যদি কোন সৌদি নাগরিক যথাযথ আইনসম্মত আয়-রোজগার না করেন তাহলে তাকে কারাগারে বন্দি রাখার বিধান রয়েছে। পর্তুগালে সমুদ্রে মূত্রত্যাগ করা কে আইন করে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
এমনসব আজব ও অদ্ভুত আইন প্রয়োজনের তাগিদে হয়েছিল বা হচ্ছে। তবে এখানকার বেশির ভাগ আইন বর্তমানে অকার্যকর, সভ্যতার বিবর্তন ও সময়ের তাগিতে বিলুপ্ত।
Discussion about this post