ধর্ষণ নিয়ন্ত্রনে চাই অশ্লীলতার বিরূদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ!
আজকাল মিডিয়ায় চোখ বুলালেই বেশিরভাগ হেড লাইনে ধর্ষনের আপডেট চোখে পড়ে। যেন দেশে ধর্ষনের কাউন-ডাউন চলছে। যদিও সব ধরনের অবৈধ যৌন সম্পর্ক ধর্ষণ হিসেবে আইনের ভাষায় বিবেচিত হয়না তথাপিও প্রচার হচ্ছে আপাতত দৃষ্টিতে ধর্ষনের সংবাদ হিসেবে।
ধর্ষন কিংবা অবৈধ যৌন সম্পর্কের ঘটনাগুলো তথ্য প্রযুক্তির আধুনিকায়নের কল্যানে নিমিশেই জনসমুখ্যে প্রচার,প্রসার ঘটছে। এমন পৈচাশিক ঘটনা থেকে বেড়িয়ে আসছে নানা প্রকারের বিকৃত রুচির মানসিকতা।
যেমনঃ- পিতার দ্বারা মেয়ে ধর্ষিত,মামার দ্বারা ভাগ্নি কিংবা চাচার দ্বারা ভাতিজী সহ বিভিন্ন প্রকার বিকৃত যৌনাচার।
এমন সব বিকৃত রুচির ঘটনা মিডিয়ায় প্রচারের ফলে একদল মানুষরুপী পশু মনে করছে অমুক যদি এমন ঘটনা ঘটাতে পারে তাহলে আমি পারবো না কেন। ফলে অই খবর পড়া কিংবা ধর্ষনের বিরুদ্ধে আন্দোলন করা ভদ্র লোকটাও এক সময় ধর্ষক বলে নিজেই খবরের হেড লাইনে পরিনত হচ্ছে।
এমন নারকীয় পৈচাশিক ঘটনার পিছনে আসল কারণ কি? কিভাবে এমন অপরাধ প্রলুব্ধ হচ্ছে? শুধু আইনে সাজার সর্বোচ্চ মেয়াদ বৃদ্ধি করলেই কি ধর্ষণ নিয়ন্ত্রন সম্ভব? এমন সব প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বের করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করলেই হয়তবা ধর্ষণ অপরাধ নিয়ন্ত্রন সম্ভব হতে পারে।

আসুন দেখে নেই কিভাবে ধর্ষকরা প্রলুব্ধ হচ্ছে তার অন্যান্য কারণগুলোর মধ্যে কিছু কারণ-
দেশ যত বেশি আধুনিক হচ্ছে তত বেশি পশ্চিমা সংস্কৃতি এদেশে প্রবেশ করছে। পশ্চিমা সংস্কৃতির আগ্রাসনে আমরা আজ টাল-মাতাল। পশ্চিমাদের চাল-চলন,আচার-আচরণ,পোশাক-পরিচ্ছদ এখন উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে এদেশেও ব্যবহার হচ্ছে।
এসব কালচারের ফলে ভুলেই যাচ্ছি যে এদেশ সংখ্যাগরিষ্ঠতায় মুসলিম অধ্যুশিত অঞ্চল হিসেবে মুসলিম দেশ। এদেশের আধুনিক রমনিরা পাশ্চাত্য কালচারের ভেল্কিবাজিতে প্রতিযোগীতায় মেতে পড়ছে শর্ট-কার্ট পোশাক। বোরকা ও হেজাবের নামে অনেক নারীরা ইসলামকে ধোকা দিয়ে ব্যবহার করছে টাইট ফিটিং পোশাক দেখাচ্ছে শরীরের প্রদর্শনী।
রাস্তায় বাইকের পিছনে নববধুটাও বাইকের পিছনে বসে নগ্ন পোশাকে বাইক চালক বরটাকে জড়ায়ে ধরে দেখাচ্ছে নগ্নতার প্রদর্শনী। জানিনা ঘরে তাদের ভালবাসা কতটা অটুট! মেয়েদের নেই কোন পারিবারিক নিয়ম শৃঙ্খলার পোশাকের নির্দেশনা।
যে নারীর পোশাক যত শর্টকার্ট সে নারী নাকি ততটা মডার্ণ। নগ্নতাই যদি আসল আধুনিক সংস্কৃতি হতো তাহলে বনের পশুই সবথেকে বড় আধুনিক সংস্কৃতিমনা। ঘরের বাইরে নারীদের এমন হাজারো আইটেমের নগ্নতার প্রদর্শনী দেখে কত আর নিয়ন্ত্রন করবে নিজের নজরকে পুরুষ।
নারীদের এমন নগ্নতার ফলে ভদ্র পুরুষটাও এক সময় শয়তানের প্রোরোচনায় মনের ভিতর নেগেটিভ-পজেটিভ তারের সংমিশ্রণ ঘটিয়ে এক সময় ফায়ার করে ফেলে। ফলে পরদিন খবরের কাগজের হয়তবা প্রথম পৃষ্ঠায় তার কুকর্মের কথা হেড লাইন আকারে চলে আসে।
আজ প্রায় প্রতিটা পন্যের বিজ্ঞাপনে মেয়েদেরকে বিজ্ঞাপনের দৃশ্যে দেখা যায়। আর আধুনিক ইউটিউব,হোয়াটস এ্যাপ,গুগলে সার্চ দিয়ে অহরহ সস্তাভাবে খুব সহজেই প্রায় সব বয়সিরাই নীল ছবি দেখে যাচ্ছে। এসব প্রভাবের ফলেও ব্যতিক্রম কিছু ধর্ষনের মতো বর্বরোচিত ঘটনাগুলো দিন দিন ঘটছে।
নারীদের অশ্লিলতার প্রদর্শনীতে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহনে ধর্ষণ নিয়ন্ত্রন হতে পারে সে বিষয় নিম্নরুপ-
দন্ড বিধির ৫০৯ ধারায় বলা আছে- কোন নারীর শালীনতার অমর্যাদার অভিপ্রায়ে কোন মন্তব্য,অঙ্গভঙ্গি বা কোন কার্যঃ-এমন কোন ব্যক্তি যদি কোন নারীর শীলতাহানির উদ্দেশ্যে এমন কিছু করে সে নারী যাতে শুনতে পায় এমন কোন কথা বলে বা শব্দ করে অথবা সে নারী যেন দেখতে পায় এমন ভাবে কোন অঙ্গভঙ্গি করে বা কোন বস্তু প্রদর্শন করে অথবা অনুরূপ নারীর গোপনীয়তা অনধিকার লঙ্ঘন করে, তবে সে ব্যক্তি এক বৎসর পর্যন্ত যেকোন মেয়াদের বিনাশ্ৰম কারাদণ্ডে অথবা অর্থ দণ্ডে, অথবা উভয়বিধ দণ্ডেই দণ্ডিত হবে”
এমন আইন কার্যকরের পিছনে আগে চাই নারীদের চলাফেরা সহ পোশাকের নগ্নতার কঠোর নিয়ন্ত্রন তথা ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে এ নগ্নতার অপরাধের ফলে সাজার ব্যবস্থা তাহলে কিছুটা নিয়ন্ত্রনে আসতে পারে। এ ধর্ষণ বর্বরতা যদিও ধর্ষনের জন্য কুবৃত্তি আসল দায়ী।

দন্ড বিধির ২৯৪ ধারায় বলা আছে অশ্লীল কার্য ও সঙ্গীত করা সম্পর্কে বলা হয়েছে-
কোন ব্যক্তি যদি অন্যের বিরক্তি সৃষ্টি করে –
(ক) কোন প্রকাশ্য স্থানে কোন অশ্লীল কাজ করে, অথবা
(খ) কোন প্রকাশ্য স্থানে বা কোন প্রকাশ্য স্থানের সন্নিকটে কোনরূপ অশ্লীল সংগীত, গাথা বা কথা গীত করে, আবৃত্তি করে বা উচ্চারণ করে,
তবে সে ব্যক্তি তিনমাস পর্যন্ত যেকোন মেয়াদের সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ডে, অথবা অর্থ দণ্ডে, অথবা উভয়বিধ দণ্ডেই দণ্ডিত হবে।
এমন আইন নারী-পুরুষ উভয়ের জন্য প্রযোজ্য করে দ্রুততার সাথে শহরে নগরে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার মাধ্যমে নগ্নতার কুবৃত্তি প্রলুব্ধকরনের সাজা নিশ্চিত করতে হবে। ঘরে ঘরে ধর্মীয় কালচার চালু করতে হবে। পারিবারিকভাবে কৃষ্টি-কালচার ও পোশাক-পরিচ্ছদের শালিনতা বজায় রাখতে হবে। ধর্ষনের পিছনে শুধু যে নারীদের নগ্ন পোশাকেই দায়ী তা নয়,এটা একটা অন্যতম কারণ মাত্র।
লেখকঃ মোঃ রায়হান আলী, কলামিস্ট,
শিক্ষানবিশ আইনজীবী,খুলনা।
Email : Mdrayhan01762gmail.com
Discussion about this post