ধর্ষক কারা হয়ে উঠছে ? ধর্ষকরা কি মায়ের গর্ভে জন্ম নেয়নি ? মা’কি নারী নয় ?
প্রতিদিন নতুন নতুন ধর্ষণের খবর ! প্রতিদিন মৃত্যু, প্রতিদিন অনৈতিকতার এমন অস্থির সংবাদ নিজেকে মানুষ ভাবাচ্ছে না আর ! কত স্কুল, কত কলেজ, কত উপাশনালয়, কত কত পারিবারিক বন্ধন দিনশেষে কিছু মানুষ হত্যাকারী !
কতজনকে আমরা চিহ্নিত করবো, কতজনকে শাস্তি দিলে অন্যজন ভাববে কাজটি আর করা যাবেনা অথবা কতজন মানুষ আছে যারা নিজে থেকেই পাপ থেকে বের হয়ে আসবে ?
কি হল সমাজের বা দেশের মানুষের ? নারীদের নিরাপত্তা দেয়া যাচ্ছেনা । নারীদের নিরাপত্তার কথাতেও তর্ক উঠে যায় সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমে । অপসংস্কৃতির দোষ, ধর্মহীনতার দোষ, দোষ অশ্লীল পোষাকের !
সব শুধু দোষ আর দোষ । কিন্তু নিজের প্রবৃত্তিকে যারা সংবরণ করতে পারছেনা তাদের মনটাইতো আসলে বিষাক্ত অথবা দোষী । যে পুরুষ মায়ের গর্ভ থেকে জন্ম নিয়েছে সে পুরুষ নারীদের প্রতি শ্রদ্ধা কেন দেখাতে পারছেনা ? শিশু, বৃদ্ধ, মধ্য বয়স্ক কোন নারীই নিরাপদ নয় !
বাসে ধর্ষণ হয়, হাসপাতালে ধর্ষণ হয়, স্কুলে ধর্ষণ হয় হলটা কি ? সবাইকে শুধু দেখছি সামাজিক দোষ খুঁজে বেড়াচ্ছে । তথ্য প্রযুক্তির অবাধ স্বাধীনতার সময়ে শুধু অবাধ যৌনতা ছড়ালো কেন ? তথ্য প্রযুক্তি দিয়ে মানুষ উৎকর্ষ সাধন করছে, তথ্য প্রযুক্তি দিয়ে মানুষ দ্রুত কাজ করতে পারছে, জানতে পারছে তথ্য আর এক শ্রেণীর মানুষ হয়ে উঠছে অপরাধ প্রবন !
এই অপরাধ প্রবন মানুষগুলোকে কেউ রুখতে পারছেনা । কেউ তাদের কোন কথাও শোনাতে পারছেনা । বাসের হেলপার, ড্রাইভার, আর কয়েক জন একা হলেই কোন মেয়ে একা থাকলে তাকে ধরে মেরে ফেলছে !
কিভাবে সম্ভব হচ্ছে এমনটা ? ধর্ষণ বন্ধে সরকারের এমন কিছু সিদ্ধান্ত এখন প্রয়োজন যাতে করে তাৎক্ষনিক ধর্ষন বন্ধ করা সম্ভব হয় ।
ধর্ষক সে ধর্ষকই । সে কোন মায়ের গর্ভে জন্ম নিয়েছে কিনা সেটাও একটা বড় প্রশ্ন হয়ে উঠছে এমন অবস্থায় !
যে শিক্ষকরা ধর্ষক হয়ে ওঠেন দেখতে হয় তাদেরও পরিবার আছেন, সন্তান আছে অথচ তারা দিন শেষে ধর্ষক !
মসজিদের ইমাম, সে কিনা দিনশেষে বলাৎকারের মত পাপ করেও ইমামতি করে যায় দিনের পর দিন !
কোথায় শিক্ষা, কোথায় ধর্ম আর কোথায় আমাদের সঠিক পথে চলা । যে জীবনে একবার সুরা ফাতিহা সঠিকভাবে পড়েছে, যে একবার বলেছে হে আল্লাহ আমাকে সঠিক পথ দেখাও সে কিভাবে এমন অনৈতিকতার পথ বেছে নিচ্ছে !
এই লেখাটিতে অনেকগুলো প্রশ্ন । আমার কাছে এ প্রশ্নগুলোর উত্তর তেমন নেই । সন্ধ্যায় প্রতিদিন টেলিভিশনে খবর দেখার সময় কিছু দিন আগ পর্যন্তও আমার ছোট্ট মেয়ে নিতু ধর্ষণের সংবাদ শুনে জিজ্ঞেস করতো বাবা মেয়েটি কিভাবে মারা গিয়েছে !
এখন আর সে জিজ্ঞেস করেনা । হয়ত বুঝতে শিখছে আস্তে আস্তে ! বাবা হিসেবে কন্যা শিশুদের সামনে কতটা মাথা নত হয়ে যাচ্ছে আমাদের দিন দিন তা কেউ কি বুঝে উঠতে পারছেন ?
এবার আর্তনাদের কথা যদি বলি তবে এগুলোই অভিশাপ হয়ে আসছে আমাদের কাছে ফিরে । ধর্ষণের ফলে শিশুর কোলে শিশু দেখতে হয়, ছিন্ন বিচ্ছিন্ন লাশ পড়ে থাকা দেখতে হয়, দেখতে হয় অসহায় মা বাবাদের কান্না !
আসলে দিন শেষে ক্লান্ত শরীরে এগুলো আমরা আর নিতে পারিনা । আইন আছে, বিচার আছে, বিচার করার মানুষ আছে কিন্তু তবুও বোঝার মানুষ কমে যাচ্ছে । অপারগতার শৃঙ্ক্ষলে আটকে যাওয়া থেকে আমরা বের হবো কি করে এটাই এখন বড় প্রশ্ন !
তবে ধর্ষণ সমূলে বন্ধে আরও বেশী উদ্যোগী হতেই হবে । অমানবিক মানুষগুলো কোন ঠাঁই নেই সমাজে । আইনের আওতায় আনতে হবে পারিবারিক অপরাধীদেরকেও । যারা সামান্যতম নারী উত্তোক্তকারী আছে বলে বোঝা যায় তাদের আইনের আওতায় আগেই নিয়ে আসতে হবে । পরিবারকেই এগুলো বন্ধে বেশী কাজ করতে হবে । রাষ্ট্রের উপর যেভাবে দায় এসে পড়ছে তাতে করে সত্যিই আমরা এখন বড় বেশী হতাশ । সামাজিক কাউন্সিলিং বাড়ানোর পাশাপাশি আইনের প্রয়োগ আরও দ্রুতগতির করতে হবে ।
Discussion about this post