আন্দোলনের উদ্দেশ্য তখনই সফল হয় যখন শ্রেণী নির্বিশেষে তা সর্বসাধারণের আন্দোলন হয়ে ওঠে। চলমান ধর্ষণ বিরোধী আন্দোলন শাহবাগ চত্ত্বর হয়ে স্লোগানে স্লোগানে প্রতিধ্বনিত বাংলার প্রায় প্রতি শহরের কেন্দ্রীয় চত্বরে। তবে বিশেষভাবে যারা প্রতিবাদের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে তারা ছাত্র ইউনিয়ন, যদিও প্রগতিশীল ছাত্র পরিষদ, সংস্কৃতিক বিভিন্ন জোটের ব্যনারেও চলেছে ব্যপক আন্দোলন এবং পাশাপাশি মূলধারা সহ নানান দল হয়ে উঠেছে আন্দোলনের অংশ।
মূলত ছাত্র ইউনিয়ন বাম ধারার রাজনৈতিক সংগঠন, রয়েছে জ্ঞান এবং সংস্কৃতি মনা ব্যক্তিদের ব্যপক পদচারণা। সেহেতু বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা জীবনের শুরুতেই জ্ঞান অন্বেষী ও সাংস্কৃতিক মনা মননশীল শিক্ষার্থীদের কাছে সংগঠনটি হয়ে আছে আকর্ষণের স্বর্ণমন্দির। দলটি থেকে বেরিয়ে মূলধারার রাজনৈতিক প্লাটফর্মে অনেকেই রেখেছেন দেশের দুটি বড় রাজনৈতিক দলে ব্যপক ভূমিকা এবং অবিসংবাদিত অবদান। সে সূত্রে ছাত্র ইউনিয়নের মতন প্রগতিশীল দলটিকে বলা যায় রাজনীতির কারিগর ও বলিষ্ঠ নেতা তৈরির আতুড়ঘর।
বাংলাদেশের ৭১ এর বীরত্ব গাঁথা মুক্তিযুদ্ধের পূর্ব পরে আওয়ামীলীগের মূলত যোগ্য বিরোধী দল ছিল বাম দল যা কালের প্রভাবে জনগণের সমুখে প্রভাবশালী নেতৃত্ব সংকট সহ, সোভিয়েত রাশিয়া এবং চিনা-দের মাও পন্থীর সমাজতান্ত্রিক মতাদর্শগত বিভাজন এবং সর্বশেষ দেশীয় সামরিক জান্তা দের সহচর্যে পরিণত হয়েছে অকার্যকর এবং বর্তমান রাজনৈতিক পন্থা তথা লোকরঞ্জনবাদের ধারা বিবর্জিত রাজনৈতিক দলে।
তবে গণ মানুষের মৌলিক অধিকার সংক্রান্ত বিষয়গুলো নিয়ে তাদের আন্দোলনগুলোর মাঝে ক্ষণে আশা জাগায় বামপন্থী চাতক পাথির মতন ধৈর্য্য রাখা মানুষগুলোর। প্রকৃত জনসাধারণের অধিকার আদায়ে আগুন দলগুলোর সবশেষেও জ্বলছে প্রদীপের শেষ আলোর শিখা টুকু, উপযুক্ত ভবিষ্যতের আশায়।
সেই বামপন্থী ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় ধর্ষণ প্রতিবাদী কর্মকান্ডের মধ্য দিয়ে উত্থান আজ সোনালী সূর্য মণ্ডিত আশানুরূপ সম্ভাবনা। যদিও তা সুনির্দিষ্ট দাবীর অবস্থা রাখে না, কিন্তু আলোচনার কেন্দ্রে পরিণত হওয়ার বিষয়টি অনস্বীকার্য। মূল ধারার গণতান্ত্রিক দলের জন্য এখন বিশেষ মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠছে তারা। কারণ সামাজিক অবক্ষয়ের যে সভ্যতার দাবী তা এরা ফুটিয়ে তুলেছে এক কিংবদন্তী চিত্র শিল্পীর মতন, আন্দোলনের জনস্বার্থকামী পন্থা অবলম্বনের মধ্যে দিয়ে। প্রচলিত গণমাধ্যমের ক্যামেরা থেকে শুরু করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এখন তাদেরই জয়জয়কার এবং সমালোচনা। যেহেতু ধর্ষণের প্রতিবাদের মতন একটি নৈতিক দাবীর প্রতি সবারই রয়েছে সহযোগী মনোভাব এবং সংহতি।
কারণ এক সময় দেশে এসিড সন্ত্রাস বেড়ে যাওয়ার যখন কড়া আইনের গণমাধ্যমব্যপি প্রচার করেও রাষ্ট্রযন্ত্র অকার্যকর বনে যাচ্ছিল। তখন ব্যপক প্রতিবাদ, প্রতিরোধ এবং সামাজিক আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে, নানান সাংস্কৃতিক প্রতিবাদের মুখে সমাজ সচেতনতার মাধ্যমেই প্রায় তা নির্মূলের পর্যায়ভূত হয়েছে। যেখানে স্কুল পড়ুয়াদের ব্যপক নিরাপদ সড়ক আন্দোলনেও আজও কমছেনা মৃত্যুর মিছিল তবুও সামাজিক অবক্ষয়ের সংষ্কার করতে হবে আন্দোলনের মধ্যে দিয়েই কেননা এটাই উপযুক্ত ক্ষেত্র।
সবশেষে রাজনীতির একটি কথা আছে যাকে বলে বিগ পট ট্যাকটিস, এর মাধ্যমে জনগণ দেখবে সাজানো নাটক আর ক্ষমতাসীনরা করবে উদ্দেশ্য হাসিলের পায়তারা। তাই ধর্ষণের মতন সামাজিক অবক্ষয়ের আন্দোলনের পেছনে যেন ব্যক্তিগত স্বার্থের নিকট সকলের অধিকার ও নারী নিরাপত্তা নিশ্চিতের মতন মহান উদ্দেশ্যকে ক্ষুন্ন না করে কোন সংগঠনের কোন অসৎ উদ্দেশ্য, এটুকুই আমরা আশা রাখবো।
Discussion about this post