নামজারি কীভাবে করবেন?
নামজারি কীভাবে করতে হয় তা জানেন? নামজারি এমন একটি সহজ প্রক্রিয়া যেটি আপনি নিজেই করতে পারবেন।কোন দালাল,ভূমিদস্যু, বা অন্য কোন ব্যক্তির সহায়তা ছাড়াই আপনি নিজেই নিজের নামজারী করতে পারবেন।
এতে করে যা লাভ হবে তা হলোঃ- দালালদের অন্যায় আবদার কিংবা ভূমি অফিসের অসাধু ব্যক্তিদের দ্বারা প্রতারিত হয়ে দীর্ঘদিন যাবৎ ভোগান্তির সম্ভাবনা থাকবেনা।মনে রাখবেন নিজে নামজারি প্রক্রিয়াটি বুঝতে যদি আপনার সমস্যা হয় তাহলে এসি ল্যান্ড সদর সার্কেল অফিসের একটি ‘হেল্পডেস্ক’ বা ‘সেবাকেন্দ্র’ খোলা রয়েছে এবং সেখানে একজন দায়িত্ববান অফিস সহকারী সার্বক্ষণিক আপনাকে সহযোগিতার জন্য নিয়োজিত রয়েছেন।

নামজারি প্রক্রিয়াঃ-
(১) আবেদনকারী কর্তৃক নামজারির আবেদন দাখিল (ফ্রন্টডেস্কে)।
(২) হেল্পডেস্ক কর্মচারী কংক আবেদনের প্রাথমিক যাচাই ।
(৩) সহকারী কমিশনার (ভূমি)’র নিকট আবেদন গ্রহণের জন্য উপস্থাপন।
(৪) সহকারী কমিশনার (ভূমি) কতক আবেদন গ্রহণ।
(৫) আবেদন যথাযথ ভাবে না হওয়ার আবেদন খারিজ।
(৬) ভূমি সহকারী কর্মকর্তা (ভূসক) এর নিকট তদন্তের জন্য প্রেরণ।
(৭) ভূমি সহকারী কর্মকর্তা (ভূসক) এর নিকট হতে এসি ল্যান্ড অফিসে প্রস্তাব প্রাপ্তি
(ইতিবাচক)।
(৮) ভূমি সহকারী কর্মকর্তা (ভূসক) এর নিকট হতে এসি ল্যান্ড অফিসে প্রতিবেদন প্রান্তি
(নেতিবাচক)।
(৯) সংশ্লিষ্ট নামজারি সহকারীর নিকট হস্তান্তর।
(১০) আবেদন খারিজ অথবা পরবর্তী আবেদনের প্রেক্ষিতে পুনর্বিবেচনা।
(১১) এসি ল্যান্ডের নিকট হতে কানুনগোর মতামতের জন্য প্রেরণ।
(১২) (প্রয়ােজনীয় ক্ষেত্রে) সার্ভেয়ারের সরেজমিনে দখল সংক্রান্ত তদন্ত প্রতিবেদন।
(১৩) পক্ষগণের শুনানী গ্রহণ
(১৪) এসি ল্যান্ডের নিকট চুড়ান্ত অনুমােদনের জন্য উপস্থাপন।
(১৫) এসি ল্যান্ড কর্তৃক চূড়ান্ত অনুমোদন।
(১৫) এসি ল্যান্ড কর্তৃক আবেদন খারিজ
(১৬) অন্যান্য ব্যবস্থা গ্রহণ

নামজারি করতে কি কি জানতে হবে?
নামজারি করতে যে সকল বিষয়গুলো জানতে হবে তা নীচে দেয়া হল:
(১) সম্পত্তি অধিগ্রহণ, জমি বিক্রি, দান, , নিলাম ক্রম, হস্তান্তর হলে নতুন ভূমি মালিকের নামে রেকর্ডভুক্ত করতে হবে।
(২) আপনাকে জানতে হবে নামজারি করা কখন প্রয়োজন।
(৩) ভূমি/জমির মালিকের মৃত্যুর কারণে উত্তরাধিকারদের নাম সরকারি রেকর্ডে রেকর্ডভুক্ত করতে হবে।
(৪) দেওয়ানী বা সিভিল কোর্টের রায় বা ডিক্রীমূলে সম্পত্তি বা জমির মালিকানা লাভ করলে সে রায় অনুযায়ী নামজারির আবেদন করা যাবে।
নামজারি আবেদনের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র:
নামজারি আবেদনে রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইনের ১৪৩ (খ) ধারা অনুযায়ী রেকর্ডীয় মালিক মৃত্যুবরণ করলে সেই ওয়ারিশগণ নিজেদের মধ্যে একটি বন্টননামা দলিল রেজিস্ট্রি করবেন । উক্ত রেজিস্টার্ড বন্টননামাসহ নামজারির জন্য আবেদন করবেন। তবে আপনি কিভাবে মালিকানা লাভ করেছেন তার উপর নির্ভর করবে কোন কোন কাগজপত্র আপনাকে সংযুক্তি আকারে জমা দিতে হবে।
(১) মূল আবেদন ফরম পুরণ ।
(২) এক কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি ।
(৩) সর্বশেষ খতিয়ান উত্তরাধিকারসূত্রে পেয়েছেন তাঁর খতিয়ান বা ক্রয় সূত্রে আপনি পেয়েছেন ।
(৪) ২০ টাকা মূল্যের কোর্ট ফি।
(৫) ওয়ারিশসূত্রে মালিক হলে অনধিক তিন মাসের মধ্যে ইস্যুকৃত মূল ওয়ারিশন সনদপত্র দরকার হবে।
(৬) জাতীয় পরিচয়পত্র/পাসপোর্ট/জাতীয়তা সনদপত্র স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর কর্তৃক ইস্যু থাকতে হবে।
(৭) ক্রয়সূত্রে ভুমির মালিক হলে দলিলের সার্টিফায়েড/ফটোকপি প্রয়োজন হবে।
(৮) বায়া দলিলের ফটোকপি বার বার উক্ত জমি ক্রয়-বিক্রয় হয়ে থাকলে সর্বশেষ দলিলটি দরকার হবে।
(৯) চলতি বছর বাংলা সন অনুযায়ী ধার্যকৃত ভূমি উন্নয়ন কর (এলডি ট্যাক্স) বা খাজনার রশিদ লাগবে ।
(১০) আদালতের রায়ের ডিক্রির মাধ্যমে জমির মালিকানা লাভ করলে উক্ত রায়ের সার্টিফায়েড/ফটোকপি ।

নামজারি কীভাবে করতে হয় তার আবেদনের পদ্ধতি:
(১) আবেদন ফরমের তথ্য যথাযথভাবে পূরণ করবেন।
(২) বিএস খতিয়ান নম্বর আপনার সাথে যে খতিয়ানের লেখা আছে তা দেখে পূরণ করবেন।
(৩) আবেদন পূরণ করে আপনার স্বাক্ষর আবেদনকারীর প্রকৃত মোবাইল নম্বর উল্লেখ কর।
(৪) আপনার পাসপোর্ট সাইজের ছবিটি আবেদনপত্রের উপর সংযুক্ত করবেন।
(৫) যখন আপনাকে একটি রশিদ দেয়া হবে তখন সেখানে আপনাকে পরবর্তী তারিখগুলি জানিয়ে দেওয়া হবে।
ভূমি-সহকারী কর্মকর্তার নিকট আপনার আবেদন প্রেরণের ২০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন এসি ল্যান্ড অফিসে দাখিলের সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। ভূমি-সহকারী কর্মকর্তা আপনার সকল কাগজপত্র যাচাই বাছাইয়ের পর একটি প্রতিবেদনসহ এসি ল্যান্ড অফিসে প্রেরণ করবেন।
পরবর্তী পর্যায়ে আপনার আবেদন প্রাথমিকভাবে যথার্থ পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্ট পক্ষদেরকে নিয়ে শুনানীর জন্য তারিখ নির্ধারণ করা হবে। শুনানীর দিন কোন আপত্তি না থাকলে সর্বশেষ এসি ল্যান্ডের নিকট চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে।
ভূমি-সহকারী কর্মকর্তার নিকট হতে এসি ল্যান্ড অফিসে নামজারির নথি আসার পরে সর্বোচ্চ ২০ দিনের মধ্যে আপনার আবেদন যথার্থ থাকলে খারিজ হবে যা আপনাকে SMS এর মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হবে।
আপনার নামজারির আবেদন চূড়ান্ত অনুমোদনের পরে খতিয়ান প্রস্তুতের জন্য সব্বোর্চ ২ দিন সময় লাগে। এ পর্যায়ে রেকর্ড হতে অনুমোদিত হিসাব অনুযায়ী জমি কর্তন করা হয় ও প্রস্তুতকৃত খতিয়ান স্বাক্ষর করার জন্য রেডি করা হয়।
এরপর আপনাকে এসি ল্যান্ড অফিসে যোগাযোগ করে ডিসিআর ডুপ্লিকেট কার্বন রশিদ নামজারি ফি বাবদ ১১৫০টাকা জমা করে খতিয়ান সংগ্রহ করতে হবে। একটি নামজারি প্রক্রিয়া নিষ্পত্তি হওয়ার জন্য মহানগরের ক্ষেত্রে ৬০ (ষাট) কার্যদিবস সরকার কর্তৃক নির্ধারিত রয়েছে।
নামজারির ক্ষেত্রে সহকারী কমিশনার (ভূমি) অফিসের হেল্পডেস্ক (সেবাকেন্দ্র) থেকে সর্বমোট ৫0 টাকায় সকল ফর্ম (কোর্ট ফি সহ) পাওয়া যায়।
নামজারি অনুমোদন খতিয়ান গ্রহনের জন্য সরকার নির্ধারিত ফি সর্বমোট ১১৫০ টাকা করা হয়েছে।
কোন প্রকার দালাল/ব্রোকার/মুন্সী ব্যতিত আপনি নিজেই নামজারির আবেদন করুন। প্রয়োজনে সরাসরি এসি ল্যান্ডের সাথেই কথা বলুন।
উপসংহারঃ- উপরোক্ত নামজারি প্রক্রিয়াটির প্রতিটি পদক্ষেপ অনুযায়ীই বেশিরভাগ (প্রায় ৯০%) নামজারি মামলা সম্পন্ন করা হয়। তবে কোন কোন নামজারি মামলা প্রক্রিয়াধীন অবস্থায় কোন সুনির্দিষ্ট অভিযোগ/আপত্তি/দখল/দলিল/ওয়ারিশগণদের মধ্যে বন্টন সংক্রান্ত সমস্যা ইত্যাদির কারণে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নামজারি সম্পন্ন সম্ভব না-ও হতে পারে। এসব জটিলতার কারণে নির্ধারিত প্রক্রিয়ার বাইরে এসি (ল্যান্ড) এর নির্দেশনা অনুযায়ী সম্পন্ন হয়ে থাকে।
খতিয়ান ও নামজারি সম্পর্কে জানতে ক্লিক করূনঃ-
লেখকঃ ল ফর ন্যাশনস, ইমেইলঃ lawfornations.abm@gmail.com, মোবাইল: 01842459590.
Discussion about this post