দেনমোহর
স্বামীর কাছ থেকে স্ত্রীর একটি বিশেষ অধিকার দেনমোহর । বর ও কনের সামাজিক অবস্থান অনুযায়ী দেনমোহর নির্ধারিত হয়। মুসলিম বিয়েতে এটি একটি বাধ্যতামূলক শর্ত। প্রয়োজনে আদালতের মাধ্যমে দেনমোহর নির্ধারণ করা যায় কিংবা স্বামী কর্তৃক যেকোনো সময় দেনমোহরের পরিমাণ বৃদ্ধি করা যায়। মুসলিম বিয়েতে বিয়ের পর অবশ্যই স্ত্রীকে উপযুক্ত দেনমোহর দিতে হবে।
দেনমোহর আদায়ের পদ্ধতিঃ-
দেনমোহর দুই প্রকার। একটি তাৎক্ষণিক দেনমোহর, যা স্ত্রীর চাওয়ামাত্র পরিশোধ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে স্ত্রী তাৎক্ষণিক দেনমোহর না পাওয়া পর্যন্ত স্বামীর সঙ্গে দাম্পত্য জীবন শুরু করতে অস্বীকার করতে পারেন।
আরেকটি হচ্ছে বিলম্বিত দেনমোহর। বিলম্বিত দেনমোহর বিবাহবিচ্ছেদ অথবা স্বামীর মৃত্যুর পর পরিশোধ করতে হয়। এ ছাড়া স্বামী সালিসি পরিষদের অনুমতি ছাড়া দ্বিতীয় বিয়ে করলে স্ত্রীকে বিলম্বিত দেনমোহর পরিশোধ করতে হবে। সাধারণত দেনমোহরের কিছু পরিমাণ বিয়ের সময় তাৎক্ষণিক দেনমোহর হিসেবে দেওয়া হয় এবং তা কাবিননামায় লিখিত থাকে। বাকিটা বিলম্বিত দেনমোহর হিসেবে ধরা হয়।আইন অনুযায়ী দেনমোহর স্বামীকে অবশ্যই পরিশোধ করতে হবে।
বিবাহবিচ্ছেদ হয়ে গেলে বা স্বামীর মৃত্যু হলে স্ত্রী তাঁর দেনমোহর আদায়ের জন্য পারিবারিক আদালতে মামলা করে তা আদায় করতে পারেন। তবে অবশ্যই তালাক বা স্বামীর মৃত্যুর তিন বছরের মধ্যে মামলা করতে হবে। স্বামীর মৃত্যু হলেও বকেয়া দেনমোহর একটি ঋণের মতো। এটি শোধ করতেই হয়। স্বামীর উত্তরাধিকারীরা এটি প্রদানে বাধ্য। অন্যথায় মৃত স্বামীর উত্তরাধিকারীদের বিরুদ্ধে মামলা করে আদায় করা যায়।
স্ত্রী আগে তালাক দিলে দেনমোহর পেতে হকদার কি ?
মনে রাখতে হবে, স্বামী বা স্ত্রী যিনিই তালাক দিন না কেন, দেনমোহরের টাকা অবশ্যই স্ত্রীকে দিতে হবে। তবে বিয়ের পর স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে দাম্পত্য জীবনযাপন না হলে কিংবা স্বামীর মৃত্যু হলে দেনমোহরের অর্ধেক পরিশোধ করা যাবে।
দেনমোহর নিয়ে অনেক ভ্রান্ত ধারণাও রয়েছে। স্ত্রী যদি স্বামীকে আগে তালাক দেন, সে ক্ষেত্রে অনেক সময় দেখা যায়, স্ত্রীকে দেনমোহরের টাকা পরিশোধ করা হয় না। স্ত্রী যেহেতু নিজ ইচ্ছা থেকে এবং নিজে উদ্যোগী হয়ে তালাক দিচ্ছেন, তাই তাঁর দেনমোহরের টাকা না দিলেও চলবে—এটি একটি ভুল ধারণা।
স্ত্রী আগে মারা গেলে দেনমোহর মাফ হয় কি?
স্ত্রী আগে মারা গেলেও দেনমোহর মাফ হয় না। স্ত্রীর উত্তরাধিকারীরা এই দেনমোহরের হকদার। তারাও মামলা করার অধিকার রাখে। কারণ, দেনমোহর সব সময়ই স্বামীর ঋণ। স্ত্রী পারিবারিক আদালতে মামলা করে দেনমোহর আদায় করতে পারবেন।
দেনমোহর দাবি করার পর স্বামী দাবি পরিশোধ না করলে স্ত্রী স্বামীর কাছ থেকে পৃথক থাকতে পারবেন ?
দেনমোহর দাবি করার পর স্বামী ওই দাবি পরিশোধ না করলে স্ত্রী স্বামীর কাছ থেকে পৃথক থাকতে পারবেন এবং ওই অবস্থায় স্বামী অবশ্যই তাঁর ভরণপোষণ করতে বাধ্য থাকবেন।
নারীদের চারের অধিক বিবাহে দেনমোহরর আদায় প্রসঙ্গ :-
ইসলামে পুরুষদের ৪টি পর্যন্ত বিবাহের অনুমতি রয়েছে।কিন্তু ইসলামের সমালোচকরা এই বলে অপবাদ দেয় যে, ইসলাম নারীদের অধিকার দেয় না, বহু বিবাহ বৈধ করেছে ইত্যাদি। এই বহু বিবাহ নিয়ে আল্লাহ তালা বলেন, “বিবাহ কর নারীদের মধ্য হতে যাকে তোমাদের ভালো লাগে, দুই ,তিন আথবা চারটি। আর যদি আশঙ্কা কর যে (স্ত্রীদের মাঝে) সুবিচার করতে পারবে না, তাহলে (মাত্র) একটি (বিবাহ কর) “(সুরা নিসা ০৩:০৩)
আল্লহ মানুষকে সাবধান করে বলেছেন, “তোমরা যতই আগ্রহ রাখো না কেন, তোমাদের স্ত্রীদের প্রতি সমান ব্যবহার করতে কখনো সক্ষম হবে না ”(সুরা নিসা ০৪:১২৭)
উপরের দুটি আয়াত থেকে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে যে ইসলামে চারটি বিবাহ করা বৈধ কিন্তু একটি বিবাহ করতে উপদেশ দেওয়া হয়েছে এবং বহু বিবাহে ভীতি প্রদর্শন করা হয়েছে। যেমন আল্লাহ বলেন,“তোমরা এক জনের প্রতি সম্পূর্ণরূপে ঝুঁকে পর না ও অপরকে (অপর স্ত্রীকে) ঝুলন্ত অবস্তায় রেখে দিও না ”( সুরা নিসা ০৩:১২৭)
এ ব্যপারে নবী মুহাম্মদ (স:) বলেন, “যে ব্যক্তির দুই জন স্ত্রী আছে, কিন্তু তার মধ্যে এক জনের দিকে ঝুঁকে যায়, এরূপ ব্যক্তি কিয়ামতের দিন অর্ধদেহ ধসা অবস্থায় উপস্থিত হবে।”(আহমেদ ২/৩৪৭; আসবে সুনান; হাকিম ২/১৮৬) ইবনে হিব্বান ৪১৯)
আজ থেকে এক দেড়শ বছর আগে এই ভারতেই অনেক মানুষ ৩০-৫০-৮০ এমনকি ১০০ আরো বেশি বিবাহ করত! বিশ্বাস না হলে ইশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগরের ‘বহু বিবাহ’ ও ‘বাল্য বিবাহ’ বই দুটি পড়ে দেখতে পারেন। আপনি যদি রোম সাম্রাজ্যের, গ্রীক সাম্রাজ্যের অথবা পৃথিবীর যে কোনো ইতিহাস পড়েন তাহলে দেখবেন যে সে যুগে মানুষ অনেক স্ত্রী রাখত। সে জন্য ডেভেন্পর্ট বলেছেন যে, “মুহাম্মদ (স) বহু বিবাহকে সীমার বাধনে বেধে ছিলেন।স্পষ্ট ভাবে জেনে রাখা উচিত, ইসলাম কিন্তু লাগাম ছাড়া বহু বিবাহ প্রথাকে নিষিদ্ধ করেছে।
বর্তমান দেখা যাচ্ছে মেয়েরা প্রতিনিয়ত প্রতারণা করে একের পর এক বিয়ে করছেন আর অধিকার হিসেবে দেনমোহর আদায় করছেন। সে হিসেবে বলা যায় বাংলাদেশ সরকারের একটি নতুন আইন প্রণয়ন করা উচিৎ , যাতে করে মেয়েরা এধরনের দেন মোহর আদায়ের খেলায় নিয়োজিত না থাকতে পারে। সে সাথে দেনমোহর আদায়ের ক্ষেত্রে মেয়েদের একটি সংখ্যা নিদিষ্ট করে দেওয়া উচিৎ যাতে সে পরিমানের বেশি বিয়ে করে থাকলে তার দেনমোহর আদায় একটি প্রতারণার অংশ হিসেবে হবে, এমন একটি আইন অবিলম্বে পাশ করা । ধন্যবাদ
Discussion about this post