একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ট্রাইব্যুনালের দেয়া মৃত্যুদণ্ডের রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে গতকাল মঙ্গলবার (২৯ মার্চ) রিভিউ করেছিলেন জামায়াতের আমীর মতিউর রহমান নিজামী। তার করা রিভিউ পুনর্বিবেচনার শুনানির জন্য আগামী ৩ এপ্রিল দিন ধার্য করেছেন আদালত।
বুধবার (৩০ মার্চ) নিজামীর রিভিউ শুনানি দ্রুত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের শুনানি শেষে চেম্বার বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী রিভিউ শুনানির জন্য আগামী ৩ এপ্রিল তারিখ নির্ধারণের আদেশ দেন।
এর আগে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একরামুল হক টুটুল এ বিষয়ে আবেদনটি করেন।
এদিকে রিভিউ শুনানির জন্য আবেদনের বিষয়টি নিশ্চিত করেছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একরামুল হক টুটুল। আপিল বিভাগের চেম্বার জজ আদালতে আজই শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে বলেও তিনি জানিয়েছিলেন।
এর আগে গতকাল মঙ্গলবার (২৯ মার্চ) নিজামী আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায়ের বিবেচনা চেয়ে রিভিউ আবেদন করেছিলেন। গতকাল নিজামীর পক্ষে রিভিউ আবেদন করেন তার আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন।
তবে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী হিসেবে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা এই রিভিউ আবেদনটি দ্রুত সময়ের মধ্যে সম্পন্নের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন বলে জানিয়েছিলেন।
উল্লেখ্য, চলতি বছরের ৬ জানুয়ারি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেয়া মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে নিজামীর মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলার সংক্ষিপ্ত আকারে চূড়ান্ত রায় দেন প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার নেতৃত্বাধীন চার বিচারপতির আপিল বেঞ্চ।
আপিল বিভাগের রায়ে বুদ্ধিজীবী হত্যাসহ একাত্তরে গণহত্যা ও ধর্ষণের দায়ে আলবদর বাহিনীর শীর্ষ নেতা নিজামীর সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখা হয়।
চলতি বছরের ১৫ মার্চ ১৫৩ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করেন সর্বোচ্চ আদালত। রায়টি রাতেই বিচারিক আদালতে গেলে মৃত্যু পরোয়ানা জারি করেন চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. আনোয়ারুল হকের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল।
এরপর মৃত্যু পরোয়ানাসহ পূর্ণাঙ্গ রায় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারসহ স্বরাষ্ট্র ও আইন মন্ত্রণালয়, ঢাকার ডিস্ট্রিক ম্যাজিস্ট্রেট (জেলা প্রশাসক) কার্যালয়সহ সংশ্লিষ্টদের কাছে পাঠানো হয়। পরদিন ১৬ মার্চ সকালে কাশিমপুর কারাগার পার্ট-২ এর কনডেম সেলে থাকা নিজামীকে মৃত্যু পরোয়ানা ও পূর্ণাঙ্গ রায় পড়ে শোনানো হয়।
আইন অনুসারে পরোয়ানা শোনার পর ১৫ দিনের মধ্যে নিজামী আপিল বিভাগের চূড়ান্ত রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ আবেদন করতে পারবেন, যার শেষদিন ছিল আজ বুধবার (৩০ মার্চ)।
উল্লেখ্য, নিজামীকে বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড এবং হত্যা-গণহত্যা ও ধর্ষণসহ সুপিরিয়র রেসপন্সিবিলিটির (ঊর্ধ্বতন নেতৃত্বের দায়) প্রমাণিত ৮টি মানবতাবিরোধী অপরাধের মধ্যে ৪টিতে ফাঁসি ও ৪টিতে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। এর মধ্যে ৩টিতে ফাঁসি ও ২টিতে যাবজ্জীবন বহাল রেখেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। ট্রাইব্যুনালের দেয়া অন্য ৩টি চূড়ান্ত রায়ে দণ্ড থেকে খালাস পেয়েছেন নিজামী, যার মধ্যে একটিতে ফাঁসি ও দু’টিতে যাবজ্জীবনের দণ্ডাদেশ ছিল।
Discussion about this post