ডেস্ক রিপোর্ট
অধস্তন বা নিম্ন আদালতের নিরাপত্তা সব সময়ই হুমকির মুখে থাকে। জঙ্গি হামলায় দুইজন বিচারক হত্যাকাণ্ডের সেই ক্ষত এখনো শুকায়নি। ২০০৫ সালে সারাদেশের আদালতগুলোতে একযোগে হামলা চালিয়েছিল জঙ্গিরা।
ঢাকার আদালতে একাধিক হত্যাকাণ্ডের ঘটনাও ঘটেছে। এমনকি অনেক বিচারকের জীবনও অনেক সময় হুমকির মুখে পড়ে। সেই সঙ্গে মামলায় জড়িত বিচারপ্রার্থীরা মাঝে মধ্যেই নানাভাবেই হেনস্তা, হামলা ও হয়রানির শিকার হন।
সম্প্রতি ঢাকার আদালত থেকে দুই জঙ্গি ছিনতাইয়ের ঘটনার পর আদালতের নিরাপত্তা কতটা নড়বড়ে তা সবার নজরে আসে। যদিও ওই দুই জঙ্গিকে এখনো গ্রেপ্তার করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এমন বাস্তবতায় গত সোমবার প্রধান বিচারপতি অধস্তন আদালত ও ট্রাইব্যুনালের নিরাপত্তায় ১১ দফা নির্দেশনা প্রদান করেন।
বিচারকদের সংগঠন বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব জেলা জজ মজিবুর রহমান এ প্রসঙ্গে গণমাধ্যমকে বলেন, প্রধান বিচারপতির দিকনির্দেশনা বাস্তবায়িত হলে কিছুটা হলেও নিম্ন আদালতের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত ও সুরক্ষিত হবে বলে আমরা মনে করি।
তিনি বলেন, আদালত থেকে জঙ্গিদের পলায়ন ‘লেক অব সিকিউরিটি। আদালতগুলো আনপ্রোটেক্টেড। এখানে কোনো স্পেশাল পুলিশ ফোর্স নেই। আমেরিকায় মার্শাল সার্ভিস রয়েছে। আমাদের সক্ষমতার মধ্যে পৃথক প্রসিকিউশন ইউনিট গঠন করা যেতে পারে। বিচারপ্রার্থীদের গুরুত্বপূর্ণ নথি এবং আলামত থাকে।
সেগুলোর সুরক্ষার জন্য আদালতে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দরকার। আমি মনে করি ২৪ ঘণ্টাই আদালত পুলিশ প্রহরায় থাকা উচিত। ঘটনা ঘটার পর সব বাহিনী আসার চেয়ে ঘটনা যাতে না ঘটে সে বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে হবে।
তিনি মনে করেন, পিবিআইকে তাদের তদন্তের পাশাপাশি আদালতের নিরাপত্তায় অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া যেতে পারে। এর মাধ্যমে একটি শক্তিশালী প্রসিকিউশন ইউনিট গঠন করা সম্ভব।
বিচারক সংগঠনের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, আদালতে নিরাপত্তার জন্য পুলিশ বিভাগের পক্ষ থেকে একটি নীতিমালা করা দরকার। কতজন পুলিশ কিভাবে ডিউটি করবে তাতে সেই দিক-নির্দেশনা থাকবে।
তিনি আরও বলেন, রাজনৈতিক কোনো কর্মসূচি থাকলে প্রায়ই আদালতে কর্মরত পুলিশ কর্মকর্তা বা সদস্যদের সেই কর্মসূচিতে সম্পৃক্ত করা হয়। এতে করে আদালতের নিরাপত্তা কিছুটা হলেও দুর্বল হয়ে পড়ে।
নাম না প্রকাশ করার শর্তে আদালত সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, জঙ্গিদের প্রতিনিয়ত সরাসরি আদালতে হাজির করে বিচারকাজ পরিচালনা করা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে। এক্ষেত্রে একটি পথ খোলা আছে। সেটি হচ্ছে ২০২০ সালের তথ্য প্রযুক্তি আইনের একটি ধারায় জঙ্গিদের বিচারকাজ তাদেরকে জেলে রেখেও করা সম্ভব।
ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এই শুনানি হবে। এতে জঙ্গিদের আনা-নেওয়ায় কোন ঝুঁকি থাকবে না। পাশাপাশি জঙ্গিদের বিচারের কাজ আইনজীবী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সম্পাদন করতে পারেন।
প্রসঙ্গত, গত সোমবার উচ্চ আদালত থেকে প্রধান বিচারপতি নিম্ন আদালতের নিরাপত্তায় ১১ দফা নির্দেশনা জারি করেন। প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী দেশের সকল অধস্তন আদালত ও ট্রাইব্যুনালের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে ১১ দফা নির্দেশনা দেন।
হাইকোর্ট বিভাগের রেজিস্ট্রার মুন্সী মো. মশিয়ার রহমান স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন এ তথ্য জানায়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দেশের সকল অধস্তন আদালত ও ট্রাইব্যুনালের সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়ে প্রধান বিচারপতি গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। সুপ্রিম কোর্ট থেকে ইতোপূর্বে একাধিকবার দেশের প্রত্যেক আদালতের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে নির্দেশ প্রদান করা হয়েছিল।
এতে আরও বলা হয়, অধস্তন দেওয়ানী আদালতে মোকদ্দমাসমূহের নথিতে বিচারপ্রার্থী জনগণের মূল দলিল বা ডকুমেন্টসহ বিভিন্ন ধরনের গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র থাকে। আদালতের হেফাজতে থাকা এসব দলিলাদি ও গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র চুরি বা নষ্ট হলে আদালতের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হবে। তাই অধস্তন সকল আদালত ও ট্রাইব্যুনালের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রধান বিচারপতি সংশ্লিষ্ট সকলকে ১১ দফা নির্দেশনা পালন করতে হবে।
নির্দেশনাগুলো হচ্ছে-আদালত ও বিচারকের বাসভবনের সীমানা প্রাচীর সুসংহত করা; আদালত ও ট্রাইব্যুনালের এজলাস বিভাগ, প্রতিটি ফটক ও আদালতের বাইরে সিসিটিভি স্থাপন করা; আদালত ভবনের বাইরে ও ভিতরে নিরাপত্তা প্রহরী দ্বারা সার্বক্ষণিক পাহারা দেওয়া; আদালত ভবনের দরজা ও জানালাগুলো নতুন করে স্থাপন করা; আদালত চত্বরে পর্যাপ্ত বৈদ্যুতিক বাতির ব্যবস্থা করা; মামলা সংশ্লিষ্ট নথিপত্রের নিরাপদ সংরক্ষণের যথাযথ ব্যবস্থা করা।
আদালতে ব্যবহারের নিমিত্ত মানসম্মত ফার্নিচার ও লকার নিশ্চিত করা; আদালত সীমানার চারদিকে সিকিউরিটি পোস্ট স্থাপন করা; জরুরি ভিত্তিতে সারাদেশের আদালত এলাকায় রাতে সার্বক্ষণিক পুলিশের টহল জোরদার করা অবকাশকালীন সময়ে আদালত ভবনের বিশেষ নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা এবং প্রত্যেক আদালত ও ট্রাইব্যুনালের কর্মকালীন সময়ে পর্যাপ্ত পুলিশ প্রহরার ব্যবস্থা করা।
দেশের প্রত্যেক আদালত ও ট্রাইব্যুনালের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য এসব নির্দেশনা আবশ্যিকভাবে প্রতিপালন করতে সংশ্লিষ্ট সকলকে নির্দেশক্রমে অনুরোধ জানানো হয়েছে বিজ্ঞপ্তিতে।
Discussion about this post