নিজস্ব প্রতিবেদক: পবিত্র ঈদুল আজহার আগে সম্ভাব্য জঙ্গি হামলার আশঙ্কায় পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটকে সতর্কবার্তা দিয়েছে পুলিশ সদরদফতর। আর এরপরই রাজধানীর গুলশানে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। একারণে সোমবার বিকেল থেকে গুলশানের বিভিন্ন সড়ক ও গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। নিরাপত্তা বাড়ানো হয় শপিংমল, আবাসিক এলাকা ও কূটনীতিক পাড়ায়।
এদিন রাতে গুলশানের শুটিং ক্লাবের বিপরীতে নিয়মিত চেকপোস্টটিতে অতিরিক্ত পুলিশ দেখা যায়। এছাড়াও চেকপোস্টের পাশের রেস্টুরেন্টগুলো বন্ধ থাকতে দেখা যায়। সাধারণত এসব রেস্টুরেন্ট রাত ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত খোলা থাকে। তবে সোমবার সন্ধ্যায় এগুলো বন্ধ করতে বলে পুলিশ।
গুলশান-২ নম্বর চত্বরে ফোর পয়েন্টস বাই শেরাটন হোটেলসহ আশপাশের হোটেলগুলোর নিচে অতিরিক্ত পুলিশ দেখা গেছে। চত্বরে গুলশান নর্থ এভিনিউয়ের সামনে পুলিশের নিয়মিত চেকপোস্টেও অতিরিক্ত পুলিশের উপস্থিতি দেখা গেছে। পুলিশ সদস্যরা টর্চলাইট দিয়ে প্রতিটি গাড়ির কাঁচের ভেতর দিয়ে দেখছিলেন। সন্দেহভাজনদের গাড়ি থামিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ এবং গাড়ি থেকে নামিয়ে তল্লাশি করতেও দেখা গেছে। গুলশানের কূটনীতিক এলাকা, পিংক সিটিসহ আশপাশের শপিংমলগুলোর নিচেও পুলিশ সদস্যদের উপস্থিতি দেখা গেছে।
সানোয়ার আহমেদ নামে গুলশান-১ এর বাসিন্দা জাগো নিউজকে বলেন, এখানকার সুপারশপ-ডিপার্টমেন্টাল স্টোরগুলো রাত ৯টা থেকে ১০টা পর্যন্ত খোলা থাকে। তবে সোমবার সন্ধ্যার আগ থেকেই পুলিশ এসে দোকান বন্ধ করে দিয়েছে।
গুলশানের নিরাপত্তা বৃদ্ধির বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশের গুলশান বিভাগের উপকমিশনার ড. সুদীপ কুমার চক্রবর্তী বলেন, পুলিশ সদরদফতরের সতর্কবার্তা এবং ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে গুলশানে নিরাপত্তা বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিশেষ করে দূতাবাস কূটনীতিক এলাকা শপিংমলে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। এছাড়াও ঈদের সময় অনেকে বাড়ি ছেড়ে গ্রামের বাড়িতে যান। তাদের ফাঁকা বাড়ির নিরাপত্তায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন ও টহল বাড়ানো হয়েছে।
সম্প্রতি পুলিশ সদরদফতরের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি অপারেশনস-১) সাইদ তারিকুল ইসলাম স্বাক্ষরিত একটি চিঠিতে জঙ্গি হামলার আশঙ্কা করা হয়। চিঠিতে পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটকে সতর্ক অবস্থানে থাকতে বলা হয়েছে। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেটের (আইএস) আদলে গঠিত নব্য জেএমবি বাংলাদেশে হত্যাকাণ্ড, নাশকতা অথবা ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড চালানোর পরিকল্পনা করছে।
চিঠিতে বলা হয়, ‘জাতীয়-বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট ও গোয়েন্দা তথ্য পর্যালোচনায় জানা গেছে, তথাকথিত আইএস আসন্ন ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে কথিত ‘বেঙ্গল উলায়াত’ ঘোষণার উদ্যোগ নিয়েছে। আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক ঘটনাপ্রবাহ বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, সাধারণত বড় ধরনের সন্ত্রাসী হামলার মাধ্যমেই ‘বেঙ্গল উলায়াত’ ঘোষণা করা হয়। এই অবস্থায় আইএসের দেশীয় অনুসারী নব্য জেএমবির সদস্যরা হামলা পরিচালনাসহ যেকোনো জঙ্গি হামলা বা বোমা হামলার মাধ্যমে হত্যাকাণ্ড সংঘটনসহ নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড করতে পারে। তাই পুলিশের সকল ইউনিটকে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করে যথাযথ নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা আবশ্যক।
চিঠিতে গোয়েন্দা তথ্যের বরাতে হামলার টার্গেট হিসেবে পুলিশ (পুলিশের কোনো টিম, স্থাপনা বা যানবাহন), বিমানবন্দর, তিন দেশের দূতাবাস ভবন বা দূতাবাস সংশ্লিষ্ট বিশেষ ব্যক্তি, অথবা শিয়া-আহমদিয়া উপাসনালয়, মাজারকেন্দ্রিক মসজিদ, চার্চ, প্যাগোডা, মন্দির টার্গেট করা হতে পারে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। হামলার সম্ভাব্য দিন-তারিখ উল্লেখ না থাকলেও হামলার সময় ‘সকাল ৬-৭টা অথবা সন্ধ্যা ৭-১০টায়’ হতে পারে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
হামলাকারীর পরিচয়ের বিষয়ে গোয়েন্দা তথ্যের বরাতে বলা হয়, হামলাকারীর বয়স ১৫ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তার চেহারা ক্লিন সেভড দাড়ি থাকতে পারে, গোফহীন হতে পারে। পরনে শার্ট, টিশার্ট, প্যান্ট, ক্যাপ মাস্ক ও কেডস থাকতে পারে। পেছনে ব্যাকপ্যাক থাকতে পারে। হামলার সময় হামলাকারীর অস্ত্র সম্পর্কেও উল্লেখ করা হয়েছে।
চিঠিতে সুপারিশ হিসেবে উগ্রপন্থী বা তাদের সংগঠনের ওপর নজরদারি বৃদ্ধি, পুলিশের সবাইকে ব্যক্তিগত নিরাপত্তা বজায় রাখা, পুলিশের গাড়ি-স্থাপনা খালি বা পরিত্যক্তভাবে ফেলে না রাখা, পুলিশের ভবনগুলোতে প্রবেশের সময় নিরাপত্তা ও পরিচয় নিশ্চিত করা, স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর নজরদারি বৃদ্ধি করা, চেকপোস্টে তল্লাশি বাড়ানো, সন্দেহ হলে ব্যাগ-দেহ তল্লাশি করা, সন্দেহজনক এলাকায় ব্লকরেড করতে সংশ্লিষ্ট ইউনিটকে নির্দেশ দিয়েছে পুলিশ সদরদফতর।
চিঠির বিষয়ে পুলিশ সদরদফতরের মহাপরিদর্শক (এআইজি-মিডিয়া) মো. সোহেল রানা বলেন, ‘জঙ্গিবাদ সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তবুও দেশ ও জনগণের সর্বোচ্চ সুরক্ষা ও কল্যাণ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ন্যূনতম কোনো আশঙ্কার সুযোগ আমরা রাখতে চাই না। অতীতে উৎসব বা উপলক্ষ কেন্দ্রিক হামলা আমরা দেখেছি। তাই নিয়মিত কার্যক্রমের পাশাপাশি এবং এর অংশ হিসেবে আমরা সকল উৎসব এবং জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানের আগে সংশ্লিষ্ট সকল ইউনিটকে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করতে নির্দেশনা দিয়ে থাকি। এবারও তেমনটি করা হয়েছে।’
Discussion about this post