নিজস্ব প্রতিবেদক: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরু হচ্ছে আজ। গতকাল রবিবার মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষদিনে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক প্রার্থী প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেছেন। ফলে তিনশো আসনের সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে আজই চূড়ান্ত বৈধ প্রার্থীদের মাঝে প্রতীক বরাদ্দ করা হবে।
তফসিল ঘোষণার পর প্রচার-প্রচারণা বন্ধ থাকলেও প্রতীক বরাদ্দ পেয়েই ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ছুটতে পারবেন প্রার্থীরা। একইসঙ্গে পোষ্টার, লিফলেট ও হ্যান্ডবিল প্রচারণায় শোভা পাবে। প্রার্থীদের পদচারণায় নির্বাচনী মাঠ সরগরম হয়ে উঠবে।
আগামী ৩০ ডিসেম্বর ভোটের ৪৮ ঘন্টা পূর্ব পর্যন্ত প্রচারণা চালাতে পারবেন প্রার্থীরা। তবে এবারের প্রচারণায় আচরণবিধি ভঙ্গের আশঙ্কা করছে খোদ নির্বাচন কমিশন (ইসি)। কারণ তফসিল ঘোষণা থেকে ভোটগ্রহণের ২১দিন পূর্বে প্রচারণায় নিষেধাজ্ঞা থাকলেও তা মানা হয়নি।
ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ জানান, সোমবার প্রতীক বরাদ্দের পরপরই প্রচারণা শুরু হবে। কোন প্রার্থী বা রাজনৈতিক দল আচরণ বিধি ভঙ্গ করলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আচরণ বিধিমালা প্রতিপালনের জন্য মাঠে রয়েছেন ম্যাজিষ্ট্রেটরা।
এদিকে নির্বাচন-পূর্ব অনিয়ম প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের জন্য কমিটি গঠন করার ১৪ দিনেও বরাদ্দ না পাওয়ায় পুরোদমে কাজ শুরু করতে পারেনি ‘নির্বাচনী তদন্ত কমিটি’ (ইলেকটোরাল ইনকোয়ারি কমিটি)।
গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) অনুযায়ী, নির্বাচনী অনিয়ম ও আচরণবিধি লঙ্ঘনের ঘটনা তদন্তে যুগ্ম জেলা জজ ও সহকারী জজদের সমন্বয়ে গত ২৫ নভেম্বর ১২২টি ‘নির্বাচনী তদন্ত কমিটি’ গঠন করা হয়। প্রতিটি কমিটিকে তিনটি খাতে ৬০ হাজার টাকা করে বরাদ্দ দেওয়া হবে। কিন্তু গতকাল পর্যন্ত নির্বাচনী তদন্ত কমিটির জন্য কোন অর্থ ছাড় হয়নি।
আইন অনুযায়ী, এই কমিটি কারও অভিযোগের ভিত্তিতে বা নিজ উদ্যোগে নির্বাচন-পূর্ব অনিয়মের অভিযোগ তদন্ত করতে পারবে। তবে এই কমিটির কাউকে সরাসরি সাজা দেওয়ার ক্ষমতা নেই। তারা অভিযোগ তদন্ত করে তিনদিনের মধ্যে নির্বাচন কমিশনকে সুপারিশ করবে।
কমিটির কয়েকজন সদস্য বলেন, তারা নিজ নিজ কার্যালয়ে ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছেন। এর আগের নির্বাচনে ‘নির্বাচনী তদন্ত কমিটি’ সংশ্লিষ্ট এলাকায় গাড়িতে টহলে থাকত। কিন্তু এবার এখন পর্যন্ত অর্থ বরাদ্দ না পাওয়ায় এই কাজটিও সেভাবে করা যাচ্ছে না।
আচরণবিধিতে যা বলা হয়েছে: নির্বাচনী আচরণবিধি অনুযায়ী, ভোটের প্রচারণায় কোনো প্রার্থী বা দলের বিরুদ্ধে কোন প্রকার উসকানিমূলক বক্তব্য দেওয়া যাবে না। সভা করতে ২৪ ঘন্টা আগে স্থান ও সময় পুলিশকে জানাতে হবে। সভার জন্য লিখিত অনুমতি নিতে হবে এবং আগে যে আবেদন করবে তাকে আগেই অনুমতি দিতে হবে।
নির্বাচনী প্রচারণায় কোন ধরণের গেট বা তোরণ নির্মাণ ও প্যান্ডেল স্থাপন করা যাবে না। দুপুর ২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত মাইক ব্যবহার করা যাবে। পোষ্টার হবে সাদাকালো। শুধু প্রার্থী এবং দলীয় প্রধানের ছবি পোস্টারে ব্যবহার করা যাবে।
প্রার্থীরা দলীয় এবং সহযোগী সংগঠনের কার্যালয় নির্বিশেষে প্রতিটি ইউনিয়নে সর্বোচ্চ একটি এবং পৌরসভা/সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ডে একটির অধিক ক্যাম্প করা যাবে না। সরকারি রেষ্ট হাউজ, ডাকবাংলো, সার্কিট হাউজ কোনো দল বা প্রার্থীর পক্ষে-বিপক্ষে প্রচারের জন্য ব্যবহার করা যাবে না, সরকারি যানবাহন ব্যবহার করা যাবে না, রাস্তাঘাট বন্ধ করে জনসভা বা প্রচার সভা করা যাবে না।
কোনো প্রার্থী বা তার পক্ষ থেকে অন্য কেউ নির্বাচনের আগে উক্ত প্রার্থীর নির্বাচনী এলাকায় বসবাসকারী কোনো ব্যক্তি, গোষ্ঠী কিংবা উক্ত এলাকা বা অন্যত্র অবস্থিত কোনো প্রতিষ্ঠানে প্রকাশ্যে বা গোপনে কোনো চাঁদা বা অনুদান দেওয়া বা দেওয়ার অঙ্গীকার করতে পারবেন না। প্রার্থী কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পরিষদের সভাপতি অথবা সদস্য হিসেবে ওই প্রতিষ্ঠানের কোন সভায় অংশ নিতে পারবেন না।
সরকারি সুবিধাভোগী ব্যক্তি অর্থাত্ প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার, মন্ত্রী, চিফ হুইপ, হুইপ, ডেপুটি স্পিকার, বিরোধী দলীয় নেতা, সংসদ উপনেতা, বিরোধী দলীয় উপনেতা, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী ও তাদের সমমর্যাদাসম্পন্ন কোন ব্যক্তি, সংসদ সদস্য এবং সিটি করপোরেশনের মেয়র সরকারি কর্মসূচির সঙ্গে নির্বাচনী কর্মকাণ্ড যোগ করতে পারবেন না।
কোন প্রার্থী তার এলাকায় সরকারি উন্নয়ন কর্মসূচিতে অংশ নিতে পারবেন না এবং এ সংক্রান্ত কোন সভায় যোগ দিতে পারবেন না। এই আইন লংঘনকারী ছয় মাসের কারাদণ্ড বা ৫০ হাজার টাকা অর্থদন্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
Discussion about this post