‘নির্ভয়া’ নামে এক প্যারামেডিকেল ছাত্রীকে গণধর্ষণ ও হত্যার দায়ে চার আসামির মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখেছে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট। শুক্রবার (৫ মে) এ রায় ঘোষণা করা হয়।
ওই ছাত্রীকে পাঁচ বছর আগে ২০১২ সালের ডিসেম্বরে একটি চলন্ত বাসে গণধর্ষণ করা হয়েছিল। গুরুতর আহত অবস্থায় পরে সিঙ্গাপুরের এক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সে বছরেরই ২৯ ডিসেম্বর সে মারা যায়।
এর আগে নিম্ন আদালত ও দিল্লি হাইকোর্ট চারজন ধর্ষণকারীকে ফাঁসির সাজা দিয়েছিল। সেই আদেশের বিরুদ্ধেই আপীল করেছিল চার দন্ডপ্রাপ্ত আসামী।
৪৪ দিনের ম্যারাথন শুনানী শেষ হয়েছিল গত ২৭ মার্চ, কিন্তু তখন কোনও রায় দেয়নি সুপ্রীম কোর্ট।
শীর্ষ আদালতের তিন সদস্যের বেঞ্চ আপীলের শুনানীর জন্য দুজন এমিকাস কিউরি বা বিশেষজ্ঞ আইনজীবী নিয়োগ করেছিল, যদিও দন্ডপ্রাপ্তরা নিজস্ব উকিল নিয়োগ করেছিল।
ওই দুজন এমিকাস কিউরি পুলিশের তদন্তের কিছু ত্রুটি খুঁজে বার করেছিলেন। তবে সুপ্রীম কোর্ট শুক্রবার ফাঁসির আদেশই বহাল রাখে।
নির্ভয়াকে ধর্ষণ ও হত্যার সঙ্গে জড়িত এক অভিযুক্ত বিচার চলাকালীন জেলে আত্মহত্যা করে। এছাড়া দোষী সাব্যস্ত আরেক অপরাধী নাবালক প্রমাণিত হওয়ায় তাকে কিশোর অপরাধীদের জন্য প্রযোজ্য আইন অনুযায়ী সংশোধনাগারে পাঠায় আদালত।
২০১২ সালের ১৬ ডিসেম্বর ‘নির্ভয়া’কে গণধর্ষণ, শারীরিক অত্যাচার করার পরে নগ্ন অবস্থায় চলন্ত বাস থেকে ছুঁড়ে ফেলে দেওয়া হয়েছিল । ওই ছাত্রীটি তার এক বন্ধুর সঙ্গে সিনেমা দেখে বাড়ি ফেরার সময়ে যে বাসে উঠেছিলেন, সেখানেই যাত্রী সেজে বসেছিল ওই ধর্ষকরা।
একটি পুলিশ জীপ ‘নির্ভয়া’ ও তার বন্ধুকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে।
ঘটনা জানাজানি হতেই সারা ভারতে স্বতস্ফূর্ত বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে যা একসময়ে অভূতপূর্বভাবে রাষ্ট্রপতির বাসভবনের প্রধান ফটক পর্যন্তও পৌঁছে গিয়েছিল।
ওই বিক্ষোভ থেকে একদিকে যেমন ওই গণধর্ষণের ঘটনায় জড়িতদের ফাঁসির দাবি উঠেছিল, তেমনই তোলা হয়েছিল ধর্ষণ বন্ধে কঠোর আইন প্রবর্তনের দাবী।
দুদিনের মধ্যেই দিল্লি থেকে চার জন গ্রেপ্তার হয়, আর কয়েক দিন পরে এক নাবালক ও ষষ্ঠ অপরাধী ধরা পড়ে।
অন্যদিকে ‘নির্ভয়া’র শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকায় বিশেষ এয়ার এম্বুলেন্সে চাপিয়ে সিঙ্গাপুরে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু ২৯ ডিসেম্বর মারা যায় ‘নির্ভয়া’।
তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং এবং কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী ‘নির্ভয়া’র মরদেহ গ্রহণ করার জন্য নজিরবিহীনভাবে বিমানবন্দরে হাজির ছিলেন। মনে করা হয় দেশ জুড়ে যে গণবিক্ষোভ চলছিল, তাতেই চাপে পড়ে মি. সিং আর মিসেস গান্ধী ভোররাতে হাজির হয়েছিলেন সেখানে।
অত্যন্ত গোপনীয়তার সঙ্গে, ব্যাপক নিরাপত্তার চাদরে মুড়ে ফেলে ‘নির্ভয়া’র শেষকৃত্য সম্পন্ন করা হয়।
অত্যাচারের বীভৎসতার নিরিখে ওই গণধর্ষণ ছিল একরকম নজিরবিহীন। যেটা শুক্রবার ভারতের সুপ্রীম কোর্টও তার চূড়ান্ত রায়ে উল্লেখ করেছে। ‘নির্ভয়া’র অন্ত্রে একাধিকবার লোহার রড ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছিল, শরীরের নানা জায়গায় কামড়ের চিহ্ন পাওয়া গিয়েছিল, যেগুলিকে সুপ্রীম কোর্ট বিরলতম বলে উল্লেখ করেছে। খবর বিবিসি বাংলার।
Discussion about this post