নিজস্ব প্রতিবেদক: অভিযোগ গঠন পর্যায়ে হত্যা মামলার প্রধান আসামিকে অব্যাহতি দিয়ে নড়াইলের সাবেক জেলা ও দায়রা জজ শেখ আব্দুল আহাদ মারাত্মক ভুল করেছেন, যা বেআইনী এবং ন্যায়বিচারের পরিপন্থী বলে মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট। একইসাথে শেখ আব্দুল আহাদের দায়রা মামলা সংক্রান্ত বিচারিক ক্ষমতা প্রয়োগ এক বছরের জন্য স্থগিত করার সুপারিশ করেছে আদালত।
আজ সোমবার এক রায়ে হাইকোর্ট বলেছেন, নড়াইলের সাবেক দায়রা জজ শেখ আব্দুল আহাদের বিচারিক ক্ষমতা কমিয়ে দেওয়া সম্বলিত রায়ে এ অভিমত দিয়েছেন হাইকোর্ট। আজ হাইকোর্ট বেঞ্চের দেওয়া ওই রায় প্রকাশিত হয়েছে।
বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ গত ২৯ আগস্ট সংক্ষিপ্ত রায় দেন। ওই রায়ের পরই আইন মন্ত্রণালয় শেখ আব্দুল আহাদকে নড়াইল থেকে প্রত্যাহার করে নেয়।
হাইকোর্টের রায়ে বলা হয়েছে, নড়াইলের দায়রা জজ আসামির আবেদনে নিষ্পত্তির সময় মামলার এজাহার, অভিযোগপত্র, সাক্ষীদের জবানবন্দীসমূহ, সুরতহাল ও ময়না তদন্ত প্রতিবেদন অর্থাৎ মামলার নথি ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আদৌ বিবেচনায় নেননি। শুধুমাত্র আসামিপক্ষের বক্তব্য এবং আসামির পেশাগত অবস্থান বিবেচনায় নিয়ে তাকে মামলা হতে অব্যাহতি দেয়ার বিষয়টি আমাদের কাছে শুধু বিস্ময়করই মনে হয়নি বরং দায়রা জজের দায়রা মামলা পরিচালনার যোগ্যতা এবং ফৌজদারী আইন সম্পর্কে তাঁর জ্ঞান ও ধারনা সম্পর্কে যুক্তিসংগত সন্দেহের সৃষ্টি করেছে, যা মেনে নেয়া খুবই কষ্টকর।
রায়ে বলা হয়, তাকে হাজির হতে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার পর তিনি একজন দায়িত্বশীল সরকারি কর্মকর্তা হয়েও দীর্ঘদিন পলাতক থেকে চাকরি করেছেন। এ অবস্থায়ও জেলা ও দায়রা জজ আদালত হতে আত্মসমর্পণের পর তাৎক্ষণিকভাবে জামিন লাভের বিষয়টিও আমাদের কাছে অস্বাভাবিক মনে হয়েছে। এতে অনেক প্রশ্নেরও জন্ম দিয়েছে।
রায়ে আরো বলা হয়, এই আদালত থেকে কারণ দর্শানোর প্রেক্ষিতে নড়াইলের দায়রা জজ শেখ আবদুল আহাদ লিখিতভাবে একটি জবাব প্রদান করেন, যেখানে তিনি ভুল স্বীকার করে নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়েছেন। কিন্তু আমাদের কাছে আরো মনে হয়েছে যে, বিজ্ঞ বিচারক আইনগত ভুল করেছেন-এ ধরনের কোন আত্ম-উপলব্ধি বা অনুশোচনার অবস্থান থেকে ক্ষমা চাননি। বরং মনে হয়েছে যে, যেহেতু হাইকোর্ট বিভাগ ভুল ধরেছে কেবলমাত্র সে কারনেই তিনি ভুল স্বীকার ও ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন।
নড়াইলের কালিয়ার চন্ডিনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনের সড়কে ২০১৫ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি নড়াইলের কালিয়ার কলেজ ছাত্র এনামুলকে গুলি করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। ঘটনার পরদিন মল্লিক মাঝহারুল ইসলাম ওরফে মাঝাসহ ৬৮ জনের নাম উল্লেখ করে নিহতের ভাই নাজমুল হুদা কালিয়া থানায় মামলা করেন। এই মামলায় তদন্ত শেষে ২০১৭ সালের ৩০ জানুয়ারি পুলিশ অভিযোগপত্র দাখিল করে। এরপর প্রধান আসামি নড়াইল জেলা জজ আদালতে হাজির হয়ে জামিনের আবেদন করলে ২০১৮ সালের ২৯ নভেম্বর জামিন দেয় আদালত।
এরপর ওই মামলায় চলতি বছরের ১০ জুন নড়াইলের জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মামলার প্রধান আসামি মাঝার নাম বাদ দিয়ে অভিযোগ গঠন করেন। এরপর বিচারিক আদালতের ওই আদেশ বাতিল চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেন নিহত এনামুলের ভাই নাজমুল হুদা। এ আবেদনে গত ৭ জুলাই হাইকোর্ট এক আদেশে মামলার প্রধান আসামি মল্লিক মাঝহারুল ইসলামকে আত্মসমর্পনের নির্দেশ দেন। একইসঙ্গে জেলা ও দায়রা জজ শেখ আব্দুল আহাদের বিচারিক ক্ষমতা কেন প্রত্যাহার করা হবেনা সেবিষয়ে বিচারকের কাছে ব্যাখ্যা জানতে চান।
এই আদেশের পর সংশ্লিষ্ট আসামি নড়াইল আদালতে আত্মসমর্পন করে জামিনের আবেদন করলে আদালত তাকে জামিন দেন। নড়াইল আদালতের দেওয়া এই জামিন কেন বাতিল করা হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। উভয় রুলের ওপর চূড়ান্ত শুনানি শেষে গত ২৯ আগস্ট রায় দেন হাইকোর্ট, যা আজ প্রকাশিত হলো।
Discussion about this post