বগুড়া প্রতিনিধি: চাঁন মিয়া মন্ডল
বরিশালে গৌরনদী উপজেলায় শ্বশুরবাড়িতে স্ত্রীকে বেড়াতে নিয়ে এসে হত্যার পর মরদেহ সেফটিক ট্যাংকে ফেলে দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে বগুড়া জাহাঙ্গীরাবাদ সেনানিবাসের এক পরিচ্ছন্নতা কর্মীর বিরুদ্ধে। পুলিশের হাতে আটকের পর পরিচ্ছন্নতা কর্মী সাকিব হোসেন (২৪) তার স্ত্রী নাজনীন আক্তারকে (১৯) হত্যার কথা স্বীকার করেছেন।
সাকিব পুলিশকে জানান, শ্বাসরোধ করে হত্যার পর গৌরনদীর বাটাজোর ইউনিয়নের হরহর গ্রামের তার বাবার ঘরের পাশে সেপটিক ট্যাংকে স্ত্রী নাজনীন আক্তারের মরদেহ ফেলে দেন।
সাকিব হোসেনের কথার সূত্র ধরে মঙ্গলবার (১ জুন) সকাল ১০টা থেকে সেপটিক ট্যাংকসহ আশপাশের এলাকায় তল্লাশি শুরু করেছে বগুড়া সদর থানা পুলিশের একটি দল। তাদের তল্লাশি কাজে সহায়তা করছে গৌরনদী থানা পুলিশ। তবে দুপুর ১টা পর্যন্ত নাজনীন আক্তারের মৃতদেহের সন্ধান মেলেনি। তবে সেপটিক ট্যাংকের ভেতর থেকে নাজনীন আক্তারের ওড়না ও শরীরের চামড়ার কিছু অংশ পাওয়া গেছে।
নাজনীন আক্তার বগুড়া সদরের সাবগ্রাম (উত্তরপাড়া) এলাকার মো. আব্দুল লতিফের মেয়ে।আটক সাকিব হোসেন গৌরনদীর বাটাজোর ইউনিয়নের হরহর গ্রামের আব্দুল করিম আকন্দের ছেলে। আড়াই বছর আগে বগুড়া জাহাঙ্গীরাবাদ সেনানিবাসে পরিচ্ছন্নতা কর্মী হিসেবে চাকরি পান। সেই সুবাদে তিনি বগুড়ায় থাকতেন।
নাজনীন আক্তার গত ২৪ মে থেকে নিখোঁজ ছিলেন। এ ঘটনায় গত ২৬ মে বাবা আব্দুল লতিফ বগুড়া সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। বিষয়টি জানতে পেরে সেনানিবাস কর্তৃপক্ষ সোমবার (৩১ মে) সাকিব হোসেনকে পুলিশে সোপর্দ করে।
জিডি সূত্রে জানা গেছে, ২০২০ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ধর্মীয় রীতি মেনে সাকিব হোসেনের সঙ্গে নাজনীন আক্তারের বিয়ে হয়। তবে বিয়ের পর নাজনীন তার বাবা-মায়ের সঙ্গে থাকতেন। সাকিব গত ২৪ মে স্ত্রী নাজনীকে ফোন দিয়ে বলেন, তার (সাকিব) বাবা খুবই অসুস্থ। অসুস্থ বাবাকে দেখতে নাজনীনকে তার গৌরনদীর বাটাজোর ইউনিয়নের হরহর গ্রামে যেতে হবে। সাকিব নাজনীনকে গোদাপাড়া চারমাথা বাসস্ট্যান্ডে দ্রুত আসতে বলেন। নাজনীন বাসে করে গৌরনদীর উদ্দেশে রওনা হন। এরপর নাজনীনের সঙ্গে আর তার বাবা-মায়ের যোগাযোগ হয়নি।
পরবর্তীতে বাবা-মা নাজনীন ও সাকিবের নম্বরে কল করলে দুটি নম্বরই বন্ধ পাওয়া যায়। এ ঘটনা উল্লেখ করে আব্দুল লতিফ থানায় জিডি করেন।তদন্ত কর্মকর্তা বগুড়া সদর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. গোলাম মোস্তফা জানান, নাজনীন নিখোঁজের ব্যাপারে খোঁজ নিতে সোমবার সাকিব হোসেনকে জিজ্ঞাসবাদ করা হয়।
সাকিব এসময় মিথ্যা কথা বলে পুলিশকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেন। এরপর আটক করে থানায় নিয়ে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে বলেন, বাবার অসুস্থতার মিথ্যা কথা বলে গত ২৪ মে নাজনীনকে নিয়ে তিনি বাবার বাড়ি গৌরনদীর বাটাজোর ইউনিয়নের হরহর গ্রামে আসেন।
তার বাবা আব্দুল করিম পেশায় ভ্যানচালক। আর্থিক অবস্থা খুবই নাজুক। এসব কথা গোপন করে সাকিব নিজেদের অবস্থা সম্পন্ন পরিবারের ছেলে পরিচয় দিয়ে নাজনীনকে বিয়ে করেছিলেন। সাকিবের কাছে নাজনীন এসব কথা গোপন করার কারণ জানতে চানতে চান।
এসময় তাদের মধ্যে ঝগড়া বেধে যায়। একপর্যায়ে রাগে নাজনীন সাকিবকে ভিক্ষুকের ছেলে বলে গাল দেন। সাকিব এতে ক্ষিপ্ত হয়ে নাজনীনের গলায় রশি লাগিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন। এরপর বাবা-মায়ের সহায়তায় ঘরের পেছনে থাকা সেপটিক ট্যাংকে স্ত্রী নাজনীন আক্তারের মৃতদেহ ফেলে দিয়ে বগুড়া ফিরে গিয়ে কর্মস্থলে যোগ দেন।
গৌরনদী থানার পরিদর্শক মো. তৌহিদুজ্জামান জানান, সকালে সাকিবকে সঙ্গে নিয়ে বগুড়া সদর থানা পুলিশের একটি দল গৌরনদী আসে। এরপর গৌরনদী থানা পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে তারা নাজনীনের মৃতদেহ উদ্ধারে বাটাজোর ইউনিয়নের হরহর গ্রামে যান।
আগেই এ খবর পেয়ে সাকিবের বাবা-মা সেখান থেকে পালিয়েছেন। সকাল ১০টা থেকে প্রথমে সেপটিক ট্যাংক পরিষ্কার করে তার মধ্যে তল্লাশি করা হয়। ট্যাংকের ভেতর থেকে নাজনীন আক্তারের ওড়না ও শরীরের চামড়ার কিছু অংশ পাওয়া গেছে। তবে পুরো মৃতদেহ সেখানে নেই। বাড়ির আশপাশে তল্লাশি অব্যাহত রয়েছে।
Discussion about this post