শ্রদ্ধেয় ‘‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা”
আমার সালাম ও শ্রদ্ধা নেবেন। আসসালামুআলাইকুম ওয়া রহমতুল্লাহ। আশা করি পরম করুনাময়ের কৃপায় সুস্থ আছেন।
যথাযথ সম্মান প্রদর্শনপূর্বক বিনীত নিবেদন এই যে, আমি মেরাজুল ইসলাম রাজশাহী আইনজীবী সমিতির একজন শিক্ষানবিশ আইনজীবী। আমি আপনার সমীপে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলসহ দেশের সকল আইনজীবী সমিতির অনিয়ম তুলে ধরছি এবং শিক্ষানবিশ আইনজীবীদের পক্ষ থেকে আমাদের যৌক্তিক দাবীগুলো তুলে ধরছি।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনি জেনে খুশি হবেন যে, বাংলাদেশের সফল রাষ্ট্রনায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যার জনপ্রিয়তা ছিল আকাশ চুম্বি। তিনিও আইনের ছাত্র ছিলেন, এবং আইনজীবী ছিলেন। বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে ধারন করে জননেত্রী শেখ হাসিনা আপনাকে জানাচ্ছি, আমি আপনার সন্তানের মতো। আমি মেরাজুল ইসলাম ২০১৭ সাল থেকে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ বার কাউন্সিল এনরোলমেন্ট এর কোন পরীক্ষা পাইনি, অবশেষে ২০২০ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের অধীনে দীর্ঘ ৩ বছর পর ( এম সি কিউ ) পরীক্ষা নেওয়া হয়। পরবর্তী পরীক্ষার কার্যক্রম আবার কোন বছরে নেওয়া হবে এর কোন গ্যারান্টি নেই। এটা বার কাউন্সিল এর একটি ইচ্ছাকৃত অনিয়ম। আর বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের এই অনিয়মের কারণে আমারমত অনেক শিক্ষানবিশ আইনজীবী কেউ ১০ বছর, কেউ ৭ বছর, আবার কেউ বা ৫ বছর ধরে অপেক্ষা করে আসছে। যেখানে বার কাউন্সিলের আপীল বিভাগের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রতি ক্যালেন্ডার ইয়ারে (এম সি কিউ) পরীক্ষা, লিখিত পরীক্ষা এবং ভাইভা সম্পন্ন করে আইনজীবী হিসেবে সনদ প্রদান করার নিয়ম। সেখানে বাংলাদেশ বার কাউন্সিল একটি পরীক্ষা সম্পন্ন করতে পাঁচ বছর সময় লাগিয়ে দিচ্ছে।
মমতাময়ী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনি বলুন, যদি বাংলাদেশ বার কাউন্সিল এমন অনিয়ম করে তাহলে আমাদের মত শিক্ষানবিশ আইনজীবীদের ভবিষ্যৎ কোথায় যাবে? বাংলাদেশ বার কাউন্সিল পারবে কি, আমাদের ইচ্ছে করে কেড়ে নেওয়া বছর গুলোকে ফিরিয়ে দিতে। মমতাময়ী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ বার কাউন্সিল আমাদের ভবিষ্যৎ অন্ধকার করে দিচ্ছে, কারণ একজন আইনের ছাত্র আইন সম্পর্কিত কোন চাকরি করতে গেলে, সকল কোম্পানি গুলো আগেই জিজ্ঞাসা করে আমাদের আইনজীবী সনদ আছে কিনা। তাহলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনি একবার চিন্তা করুন সনদ ছাড়া আমরা কোন চাকরিও করতে পারবনা।
তাহলে বার কাউন্সিল কেন এমন অনিয়ম করছে?
মমতাময়ী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনি জেনে মনে খুব ব্যাথা পাবেন বর্তমানে দেশে ৭০ হাজারের মতো শিক্ষানবিশ আইনজীবীদের পঙ্গু করে দিচ্ছে বার কাউন্সিল। দেশের বেশিরভাগ আইনজীবীগন সহ বাংলাদেশ বার কাউন্সিল আমাদের জীবন নিয়ে খেলছে। প্রতিবাদ করলে আমাদের রোল নম্বর বার কাউন্সিলে পাঠিয়ে পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করতে দেবে না বলে অগ্রিম ভয় দেখিয়ে রাখে। এর বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানাই। সম্প্রতি বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের এমনি অনিয়ম ফাঁস করেছেন বার কাউন্সিলের নির্বাচিত সদস্য বিজ্ঞ আইনজীবী জেড আই খান পান্না স্যার। এক প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি বার কাউন্সিল এর সকল প্রকার অনিয়ম তুলে ধরেন এবং তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন করেন। এখান থেকেই প্রমানিত হয় যে, বাংলাদেশ বার কাউন্সিল কতটা প্রহসন মুলক আচরণ উপহার দিচ্ছে দেশের ৭০ হাজার শিক্ষানবিশ আইনজীবীদের। দেশের অনেক আইনজীবী সমিতি থেকে শিক্ষানবিশ আইনজীবীদের প্রাকটিস বন্ধ করে দিয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ বার কাউন্সিল এর আদেশ ও বিধিমালা, ১৯৭২ এর মোট ১০১ টি বিধি রয়েছে। যাহার মধ্যে এমন একটি নিয়মও নেই যে, শিক্ষানবিশ আইনজীবীগন কোর্টে প্রাকটিস করতে পারবেনা।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী
বাংলাদেশ লিগ্যাল প্রাকটিশনার এবং বার কাউন্সিল অর্ডার, ১৯৭২ এর বিধি: ৬০(১,২) বলা হয়েছে যে বিধি অনুযায়ী অ্যাডভোকেট হওয়ার জন্য প্রত্যেক ব্যক্তিকে সর্বনিম্ন ১০ বছর ধরে আইন পেশায় নিয়োজিত আছে এমন অ্যাডভোকেটের অধীন ৬ মাস শিক্ষানবিশ আইনজীবী হিসেবে কাজ করতে হবে। আবেদন পত্রের সাথে ১০ টি মামলা ( ৫ টি সিভিল মামলা এবং ৫ টি ফৌজদারি মামলা) জমা দিতে হবে। যে অ্যাডভোকেটের অধীন শিক্ষানবিশ নেওয়া হয়, তার সাথে চুক্তি করার মেয়াদ থেকে ৩০ দিনের মধ্যে উক্ত চুক্তিপত্রসহ আবেদনপত্র বার কাউন্সিলে পৌঁছাতে হবে।
তাহলে দেশের সকল আইনজীবী সমিতি গুলো কোন বিধিমালা মেনে আমাদের শিক্ষানবিশ আইনজীবী হিসেবে কোর্টে প্রাকটিস বন্ধ করে দিয়েছে ? এই প্রশ্নে বাংলাদেশ বার কাউন্সিল নিশ্চুপ!
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এর মূল কারণ হলো লোভ আর প্রতিহিংসা। তাঁরা ভয় পায় যে, তাদের আয় কমে যাবে।
বাংলাদেশের সকল নাগরিকদের মধ্যে ন্যায়নীতির সুন্দর চর্চা, মার্জিত সংজ্ঞা, আইনের জ্ঞান অর্জন ও সুষ্ঠ নাগরিকের পরিচয় দিয়ে আসছে দেশের আইনজীবীগন। তাইলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনি বলুন একেই কি বলে সভ্যতা?
যদি দেশের প্রথম শ্রেনীর মর্যাদা পাওয়া আইনের জ্ঞান অর্জনকারী আইনজীবীগন এমন প্রহসন মূলক অনিয়ম করেন, তাহলে দেশের সাধারন জনগন কেন অনিয়ম করবে না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কোর্টে প্রাকটিসে গেলে সিনিয়ররা দিন শেষে ৫০ থেকে ১০০ টাকা হাতে ধরিয়ে দেয়, এমন কি কোন দিন শূন্য হাতে, পাঁয়ে হেটে বাসায় ফিরতে হয়। দেশনেত্রী মমতাময়ী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ডাক্তারেরা ৬ মাস প্রাকটিস করার পর যদি ডাক্তার হতে পারে, তাহলে আমরাও তো ৬ মাস প্রাকটিস করি প্রয়োজনে আমাদের প্রাকটিসের মেয়াদ বাড়ানো হোক তাহলে আমরাও তো ডাক্তারদের মত প্রাকটিস করে আইনজীবী হতে পারি।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আইনজীবী ও শিক্ষানবিশ আইনজীবীদের কোন অধিকার সুরক্ষা আইন নেই। আমরা আইনজীবী ও শিক্ষানবিশ আইনজীবীদের অধিকার সুরক্ষা আইন চাই। যাতে করে আইনজীবীদের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয় এতে করে শিক্ষানবিশ আইনজীবীদের প্রতি তাদের আর অবহেলা করার মত কোন সুযোগ থাকবেনা।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমরা বাঁচতে চাই। আমাদের জীবন কতটা কঠিন অবস্থায় আছে আমার এই চিঠি পড়ে আশা করি বুঁঝতে পেরেছেন। অবশেষে বুক ভরা কষ্ট নিয়ে আমাদের এই যৌক্তিক দাবী গুলো আপনার কাছে তুলে ধরলাম, যদি আমাদের এই দাবি গুলো আপনার কাছে যৌক্তিক মনে হয় তাহলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনার সমীপে জানাই আকুল আবেদন বাংলাদেশ বার কাউন্সিলসহ দেশের সকল আইনজীবী সমিতির সকল প্রকার অনিয়মের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করে শিক্ষানবিশ আইনজীবীসহ দেশের সকল আইনজীবীদের উপর সুবিচার করিতে জনাবের মর্জি হয়।
ইতি,
আপনার স্নেহের
মেরাজুল ইসলাম
শিক্ষানবিশ আইনজীবী ( রাজশাহী আইনজীবী সমিতি)
Discussion about this post