অ্যাডভোকট শাহানূর ইসলাম সৈকত<>
নিত্য প্রয়োজনীয় ভেজাল খাদ্যদ্রব্য সাধারণ মানুষের জন্য ভয়ংকর বিপদের কারণ হয়ে দাড়িয়েছে। বাজারে প্রায় সব ধরনের শাক-সব্জি, দুধ, ফল-মুল ও মাছ-মাংসে ফরমালিনের উপস্থিতি পাওয়া যায় । আম, কাঁঠাল, আনারস, লিচু, আপেল, আংগুর সহ সব ধরনের ফল পাকাতে এবং টাটকা দেখাতে ব্যবহার করা হয় ক্যালসিয়াম কার্বাইড, ইথানল ও ফরমালিন-যা মানবদেহের জন্য অতীব ক্ষতিকর ।স্থল, বিমান ও নৌ-বন্দরের সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে আমদানী করা ফল-মুলের মান ভাল বলে ছাড়পত্র দেওয়া হলেও তার মধ্যে বিভিন্ন ক্ষতিকর রাসায়নিকের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়।
ফরমালিনযুক্ত খাবার ফুসফুসের কার্যক্ষমতা নষ্ট করে; লিভার ক্যান্সার, আজমা, অন্ধত্বসহ নান রোগের কারণ হয়ে দাঁড়ায় ।বর্তমানে বাংলাদেশে খাদ্য সংক্রান্ত ১৭টি আইন বিদ্যমান রয়েছে, যার অধিকাংশ নামে মাত্র ও প্রয়োগ নেই বললেই চলে ।১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনে খাদ্যে ভেজাল মেশানোর সর্বোচচ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড । উক্ত আইনে কোন কোন ক্ষেত্রে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ১৪ বছরের কারাদণ্ডের বিধানও রাখা হয়েছে । কিন্তু এ আইনের প্রয়োগ অর্থাৎ এ আইনে মামলা তেমন হয়না বললেই চলে । এমনকি কারো কথিত শাস্তি হয়েছে বলেও শোনা যায়নি ।
খাদ্যের মান বজায় রাখাসহ নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে ২০০৯ সালের ২০ জুন মহামান্য হাই কোর্ট বিভাগ একটি যুগান্তকারী রায় প্রদান করেছিল । উক্ত রায়ে প্রতিটি জেলায় খাদ্য আদালত গঠন এবং ল্যাবরেটরি প্রতিষ্ঠা করে খাদ্যের গুন ও রাসায়নিক মান পরীক্ষার জন্য খাদ্য পরীক্ষক নিয়োগের নির্দেশ দেওয়া হয়, যা আজও বাস্তবায়ন হয়নি । বর্তমানে দেশে ভ্রাম্যমান আদালতের প্রচলন রয়েছে ।
এই আদালত সংক্ষিপ্ত বিচার করে থাকে । বিশুদ্ধ খাদ্য অধ্যাদেশ ও বাংলাদেশ স্টান্ডার্ড এন্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বি এসটিআই) অর্ডিন্যান্স আনুযায়ী ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করা হয় । তবে এতে শাস্তির মেয়াদ কম ।
এই কারণে গুরুত্বর অপরাধ করেও ভেজালকারীরা কম সাজায় পার পেয়ে যায় । বাংলাদেশ দণ্ডবিধির ২৭২ ও ২৭৩ ধারায় খাদ্যে ভেজাল মেশানোর অভিযোগ প্রমাণিত হলে শাস্তির বিধান রয়েছে। ২৭২ ধারায় বিক্রয়ের জন্য খাদ্য ও পানীয়তে ভেজাল মেশানোর দায়ে কোন ব্যক্তিকে অনধিক ০৬ (ছয়) মাস পর্যন্ত শাস্তির বিধান রয়েছে । ২৭৩ ধারায় ক্ষতিকর খাদ্য ও পানীয় বিক্রয়ের অপরাধেও ০৬ (ছয়) মাসের শাস্তির বিধান রয়েছে ।
ভেজাল খাদ্য মানুষকে ক্রমে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয় । এ থেকে পরিত্রাণের জন্য এখনই কঠোর ব্যবস্থা গ্রহন করা আবশ্যক।
কিন্তু সরকারের উল্লেখযোগ্য কার্যক্রম কোথাও নজরে পড়ে না । মাঝে মাঝে রুটিন মাফিক কিছু অভিযান চালানো, কিছু জরিমানা আদায় ইত্যাদিতে সীমাবদ্ধ রয়েছে প্রশাসনিক তৎপরতা।
যেসব ব্যবসায়ীর একবার ভেজালের কারণে জরিমানা আদায় করা হচ্ছে তারাই পরক্ষণে আবার ভেজাল খাদ্য বিক্রয় করছে । তাই নিরাপদ খাবার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে অসৎ বেজল ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ ও আন্দোলন গড়ে তোলাসহ প্রয়োজনীয় আইন ও নীতি প্রণয়ন এবং তা সঠিভাবে বাস্তবায়নে সরকারকেই মুল ভুমিকা পালন করা আবশ্যক।
লেখকঃ প্রতিষ্ঠাতা মহাসচিব, জাস্টিসমেকার্স বাংলাদেশ, ইমেলঃ saikotbihr@gmail.com
Discussion about this post