প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেছেন, বাংলাদেশে শত শত কোটি টাকার মালিকরাও আয়কর দেন না। তারা শত কোটি টাকা লেনদেন করেন, জাল নথি ও ব্যাংক গ্যারান্টি দিয়ে পণ্য আমদানি রফতানি করেন কিন্তু যখন এই বিষয়টি ধরা পড়ে তখন জড়িতদের খুঁজে পাওয়া যায় না। এটাই আমাদের দেশের প্রকৃত ঘটনা।
প্রধান বিচারপতি, বাংলাদেশে সবচেয়ে নিম্ন হারের ইনকাম ট্যাক্স (আয়কর) ধরা হলেও দেশের শত শত কোটি টাকার মালিক ও অধিকাংশ ব্যবসায়ীরা ইনকাম ট্যাক্স (আয়কর) দেন না।
আজ শনিবার (২৮ জানুয়ারি) সুপ্রিম কোর্ট মিলনায়তনে ‘সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড কমিটির প্যানেল আইনজীবীদের সাথে মত বিনিময় ও প্রকাশনার মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন।
সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেন, যারা আয়কর দেন না তাদেরকে সরকারি আইনগত সহায়তা সেবা দেয়ার যে প্রস্তাব এসেছে তার সঙ্গে আমি একমত নই। কারণ আমাদের দেশে সবচেয়ে কম হারে সরকার কর আদায় করে। একটি টিআইএন নম্বর ব্যবহার করে অনেকেই একাধিক গাড়ি ব্যবহার করছেন। কিন্তু আয়কর দেন না। ফলে যারা আয়কর দেন না তাদের আইনগত সহায়তা দেয়ার প্রস্তাব এটা কার্যকর করা ঠিক হবে না।
প্রধান বিচারপতি বলেন, আইনের দৃষ্টিতে সকলেই সমান। এবং সকলে আইনের সমান আশ্রয় লাভের অধিকারী। এটি সংবিধানেই রয়েছে। এটা কতোদূর বাস্তবায়ন করতে পেরেছি? আমি বলব পারিনি। এটা আমাদের অপরাগতা।
তিনি বলেন, লিগ্যাল এইডের মামলা যেসব আইনজীবী পরিচালনা করছেন তাদের প্রশিক্ষণ দেয়া দরকার। প্রশিক্ষণ দেয়া গেলেই এই দুঃস্থ বিচারপ্রার্থীরা প্রকৃতপক্ষেই আইনি সহায়তা পাবেন। এজন্য তিনি আইনের কারিগরি বিষয় যেমন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি, অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র এবং মৃত্যুর পূর্বে ব্যক্তির জবানবন্দি ইত্যাদি বিষয়ে লিগ্যাল এইডের চ্যানেল আইনজীবীদের প্রশিক্ষণ দেয়ার জন্য কমিটির চেয়ারম্যানকে অনুরোধ জানান।
প্রধান বিচারপতি লিগ্যাল এইড কমিটির চেয়ারম্যানের উদ্দেশে বলেন, দরিদ্র জনগোষ্ঠী ছাড়াও যারা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী রয়েছে তাদেরকে আইনি সহায়তা দিতে হবে। কারণ তাদের জমিজমা থেকে উচ্ছেদ করার ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। বছরে এই ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জনগণ একটি ফসল ফলিয়ে জীবন ধারণ করতেন। তাদের এই বিষয়টিও খেয়াল রাখতে হবে।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সুপ্রিম কোর্টের লিগ্যাল এইড কমিটির চেয়ারম্যান হাইকোর্টের বিচারক বিচারপিত এম ইনায়েতুর রহিম।
বিচারপতির এম ইনায়েতুর রহিম বলেন, দেশের জনগণের মাথাপিছু আয় বেড়েছে। আইনি সেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে বাৎসরিক আয়ের যে সীমাবদ্ধ বেঁধে দেয়া হয়েছে তার পরিধি বাড়ানো দরকার। আমরা মনে করি যার ওপর আয়কর প্রযোজ্য হবে না তাকে যাতে লিগ্যাল এইড দেয়া যায় এ বিষয়টি সরকারের বিবেচনা করা উচিত।
অনুষ্ঠানে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট ই্উসুফ হোসেন হুমায়ুন, জাতীয় আইনগত প্রদান সহায়তার ভারপ্রাপ্ত পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান ও মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালনা শাহিন আনাম বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন লিগ্যাল এইড কমিটির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট তাইতাস হিল্লোল রেমা। -ইত্তেফাক
Discussion about this post