বার কাউন্সিল লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতি কীভাবে নেবেন?
টিপিক্যাল প্রস্তুতি আর টিপিক্যাল সাজেশন সম্পর্কে
বার কাউন্সিলের লিখিত পরীক্ষার ক্ষেত্রে বিগত সালগুলোতে দেখা গেছে যে, নিয়মিতভাবে একটি সালের প্রশ্ন গ্যাপ দিয়ে তার আগের সালের প্রশ্ন থেকে সবসময় কমন থাকে। কখনো এই কমনের হার ৯৫% পর্যন্তও হয়। সর্বনিম্ন ৭০% কমন থাকে। আবার, তারও আগের দুইটি সালের পরীক্ষার লিখিত পরীক্ষার প্রশ্ন নিয়ে আরেকটু নিবিড় গবেষণা করলে দেখা যায় যে, শতভাগ কমন পাওয়া যায়! ফলে, সাল অনুসারে প্রশ্নগুলো পড়ে গেলেই মোটামুটিভাবে সকল প্রশ্নের উত্তর দিয়ে আসা যায়। তো, এই হলো টিপিক্যাল প্রশ্নের ধরণ, অন্তত বিগত এমনকি সাম্প্রতিক ৫টি প্রশ্ন বিশ্লেষণ করলে তাইই পাওয়া যায়। ফলে, বার কাউন্সিলের টিপিক্যাল প্রস্তুতি আর টিপিক্যাল সাজেশন সম্পর্কে বা এই ধরণ সম্পর্কে আমরা সকলেই জানি কমবেশি।
কিন্তু, এবারের লিখিত পরীক্ষায় কি ভিন্ন কিছু হতে যাচ্ছে?
লিখিত পরীক্ষা সম্পর্কে কথা বলতে গেলে শুরুতে সদ্যসমাপ্ত এমসিকিউ পরীক্ষার প্রশ্নটি নিয়ে আমার সামান্য অভিমত জানানো বাঞ্ছনীয়। এবারের এমসিকিউ প্রশ্ন দেখে অনেকেই হচকচিয়ে গেছেন। আসলে প্রশ্নপত্রটি হাতে নিয়ে প্রথমবার দেখার পর বা হলের সেই ১ ঘণ্টার মুহূর্তটি সত্যিই অনেক চ্যালেঞ্জিং ছিলো। যারা পাস করেছেন সত্যিই তারা যোগ্যতর ব্যক্তি! তাদেরকে অভিনন্দন। কিন্তু, প্রশ্নপত্রটি ভালো করে বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, প্রশ্নগুলো অজানা বা খুব অপরিচিত নয়। যারা মূল ধারার সাথে সম্পর্কিত করে করে এমসিকিউ পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়েছেন তারা নিঃসন্দেহে বিষয়গুলো সহজেই ধরতে পেরেছেন। আবার, অনেকে সব জানা বিষয় হওয়া সত্ত্বেও উত্তর করতে পারেননি ঠিকমতো সময় ম্যানেজ করতে না পারার কারণে। কেননা, অনেকগুলো এমন প্রশ্ন ছিলো, যেগুলোতে খুব ভালো দখল না থাকলে সঠিক উত্তর চিহ্নিত করতে সময় লেগে গেছে। মোদ্দাকথা – প্রশ্নটি বেশ স্ট্যান্ডার্ড ছিলো, কোনো নির্দিষ্ট নিয়মবদ্ধভাবে প্রশ্ন ছিলো না। সেক্ষেত্রে জানা বিষয়গুলোও অনেকের কাছে অপরিচিত ঠেকেছে।
তো, এমসিকিউ পরীক্ষার প্রশ্নের ধরনের রেশ ধরেই একটা আশঙ্কা কিন্তু থেকে যায় যে, এবারের আসন্ন লিখিত পরীক্ষা কি বিগত সালগুলোর মতো টিপিক্যাল স্টাইলে থাকবে কি না!
ব্যক্তিগতভাবে আমরা জানা নেই এবিষয়ে। তবে, অনুমান করি যে, এবারে বার কাউন্সিলের লিখিত পরীক্ষার ক্ষেত্রে আরেকটি চমক হয়তো আসছে। ফলে এই লেখার শুরুতেই বর্ণিত টিপিক্যাল কায়দায় প্রস্তুতি নেওয়া হয়তো খুব বেশি বুদ্ধিমানের কাজ হবে না। কিন্তু, তার মানে এটাও নয় যে, উক্ত টিপিক্যাল কায়দার প্রস্তুতি ছেড়ে দিয়ে ভিন্নরকম কোনো প্রস্তুতি নিতে হবে! আমার মতে, প্রস্তুতি ফলত তিনটি স্তরে নিতে হবে।
১. প্রথাগত সাজেশন ভিত্তিতে প্রস্তুতি [বার কাউন্সিলের বিগত সালগুলোর প্রশ্ন পর্যালোচনায়]
২. প্রবলেম বেজড প্রশ্ন ও ড্রাফটিং রিলেটেড প্রশ্নের প্রস্তুতি [বার কাউন্সিলের বিগত সালগুলোর বিশেষ করে ২০০৯ সালের আগের প্রশ্নগুলো থেকে প্রবলেম বেজড প্রশ্ন এবং গতানুগতিক ড্রাফটিং রিলেটেড প্রশ্ন]
৩. নতুন প্রশ্ন, যা কখনো বার কাউন্সিলের পরীক্ষায় আসেনি [এক্ষেত্রে জুডিসিয়ারির লিখিত পরীক্ষার প্রশ্ন এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশ্নগুলোর দিকে আলোকপাত করতে হবে সীমিত আকারে হলেও]
উপরোক্ত তিন স্তরে নিজের প্রস্তুতি সাজিয়ে নিতে পারলে সবচেয়ে ভালো হয়, কোনোই সন্দেহ নেই। কিন্তু বিশেষত ৩ নং স্তরে বর্ণিত প্রশ্নগুলো কাভার করতে গেলে আসলে এক বিশাল বহরের প্রস্তুতি নিতে হয়, যা কিনা অনেকেই নিজের নিজের বাস্তবতায় পেরে উঠবেন না। তথাপি, এমসিকিউ পরীক্ষার জন্য যা যা পড়েছিলেন সেখান থেকেই বেশ কিছু বিষয় নজর বুলিয়ে যাওয়া বা সংশ্লিষ্ট অধ্যায়ভিত্তিক মূল আইনে বর্ণিত বিষয়গুলোর সাথে পরিচয় রেখে দেওয়া, যেন চরম বিপদেও বেসিক কিছু বিষয় লিখে দিয়ে আসতে পারেন।
যা পড়বেন তার পুরাই পড়বেন! নো হাফডান স্টাডি!
এবার আসি প্রস্তুতি সংক্রান্ত আরো কিছু পরামর্শ প্রসঙ্গে। পরীক্ষার ঠিক ১৫ দিন আগে অনেক খুঁটিনাটি বিষয় বলবো। এখন শুধু মেজর তিনটি প্রসঙ্গ খেয়াল রাখতে বলি।
ধরা যাক, দণ্ডবিধির আত্মরক্ষার পরিধির আলোচনা পড়লেন, কিন্তু সে সংক্রান্ত কোনো প্রবলেম বেজড (বিগত সালগুলোর প্রশ্নে খুঁজলে পেয়ে যাবেন) প্রশ্নের প্রস্তুতি নিয়ে গেলেন না, তাইলে কিন্তু ধরা খাবেন। একটা প্রশ্নের অর্ধেক না পারা মানেই আপনি পরীক্ষা দেবেন ৯২বা ৯৩ মার্কের ভেতর, তখন সামান্য একটুর জন্য ৫০ নম্বর পাস মার্ক তোলাও কঠিন হয়ে পড়বে। তখন পিছিয়ে পড়লেনতো! সো, সাজেশন যেটাই ফলো করেন, প্রশ্ন কম পড়েন আর বেশি পড়ে নিরাপদ প্রস্তুতিই নেন না কেন, বিবেচনায় রাখবেন কোন টপিক আপনি পড়ছেন। প্রশ্নের দিকে তাকিয়েই সেটাকে সংশ্লিষ্ট টপিকের ক্যাটেগরিতে সেট করে ফেলবেন। এবং তৎক্ষণাৎ আরো বিবেচনায় নেবেন যে, এখান থেকে আরো কি কি প্রশ্ন বিগত সালগুলোতে এসেছিলো। আমরা জ্যুসি ল এর শিক্ষার্থীদেরকে এটাকে মূল প্রশ্নের ভ্যারিয়েশন বলে বুঝিয়েছি। অর্থাৎ একটি টপিকের মূল প্রশ্নের আরো কয়েক রকম ভ্যারিয়েশন যা বিগত বছরগুলোতে এসেছিলো বা একেবারে নতুন প্রশ্ন আকারে হাজির হতে পারে – এরকম প্রশ্নগুলোও হিসেব করে পড়ে নিতে হবে। আধো আধো পড়া যাবে না।
যেমন ধরুন, টিপিক্যাল সাজেশন হিসেবে এবারে দণ্ডবিধির তিনটি প্রশ্ন বিশেষ জরুরি।
১. দন্ডবিধি ২৯৯ ও ৩০০ ধারাসমূহে সংজ্ঞায়িত অপরাধসমূহের মধ্যে প্রধান পার্থক্যগুলাে উদাহরণসহ আলােচনা করুন।[Discuss the essential differences between the offences defined in Sections 299 and 300 of the Penal Code with examples.] [বার : ২০১৫ + বার : ২০১২ + বার : ২০১০ + বার : ২০০৮ [অগাস্ট]]
২. দণ্ডবিধির সংশিষ্ট ধারাসমূহ উল্লেখপূর্বক পৃথক উদাহরণসমূহ ‘প্রতারণা’ এবং ‘অপরাধমূলক বিশ্বাসভঙ্গ’ বিশ্লেষণ করুন।[Analyse the ingredients of cheating and criminal breach of trust’ mentioning the relevant sections of the Penal Code and giving separate examples.] [বার : ২০১৫ + বার : ২০১২ + বার : ২০১২ + বার : ২০০৭]
৩. আত্মরক্ষার অধিকার বলতে কি বুঝায়? আত্মরক্ষার অধিকারের পরিধি কতখানি? উদাহরণসহ আলোচনা করুন। [What is the right of private defence? To What extent such right of private defence is available? Discuss with illustration.] [বার : ২০১২ + বার : ২০০৮]
টিপিক্যাল সাজেশন হিসেবে আমি এখানকার ৩ নং এবং ২ নং প্রশ্নকে বেশি এগিয়ে রাখবো। আমরা, এই অংশের আলোচনার সুবিধার্থে ৩ নং প্রশ্ন তথা দণ্ডবিধিতে বর্ণিত ব্যক্তিগত আত্মরক্ষার অধিকার সংক্রান্ত প্রশ্নটি বিবেচনায় নিয়ে আলোচনা করে ব্যাপারটি বুঝিয়ে দেই যে, কোনোরকম হাফডান স্টাডি করা যাবে না, তথা সামগ্রিক প্রস্তুতি কীভাবে নিতে হয়।
তো, আপনি যখন প্রাথমিক সাজেশন হিসেবে আত্মরক্ষার ব্যক্তিগত অধিকার সম্পর্কে উপরোক্ত ৩ নং প্রশ্নটি ভালোভাবে আয়ত্ব করতে যাবেন [আমার প্রস্তাবিত প্রথম স্তরের প্রথাগত বা টিপিক্যাল প্রস্তুতির অংশ হিসেবে], তখনই আপনাকে সাথে সাথে বিবেচনায় নিতে হবে যে, এ সংক্রান্তে কোনো প্রবলেম বেজড প্রশ্ন এসেছিলো কিনা। [আমার প্রস্তাবিত দ্বিতীয় স্তরের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে] এবং তারওপরে চেষ্টা করতে হবে দণ্ডবিধির সাধারণ ব্যতিক্রমসমূহ থেকে আর কোনো বিশেষ প্রশ্ন সম্পর্কে ধারণা রাখার প্রয়োজন আছে কি না [আমার প্রস্তাবিত তৃতীয় স্তরের নতুন প্রশ্নের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে]।
তো, এবারে আমরা দেখি যে, প্রস্তুতির দ্বিতীয় স্তর হিসেবে বার কাউন্সিলের বিগত প্রশ্নগুলোতে প্রবলেম বেজড প্রশ্ন এসেছিলো কিনা! নিচে একটি প্রশ্ন দেখতে পাচ্ছেন, যা কিনা বার কাউন্সিলের বিগত ২০০২ সালের পরীক্ষায় এসেছিলো। এই প্রশ্নটিও সমাধান করে যেতে হবে আপনাকে।
প্রশ্ন : ক্যাম্পাসে দুইদল ছাত্রের মধ্যে একটি অবাধ লড়াই সংঘটিত হইয়াছে। উভয়পক্ষ শক্তি পরীক্ষার জন্য আগ্নেয়াস্ত্র দ্বারা লড়াই করিতে সংকল্পবদ্ধ। ফলে অবাধ লড়াইয়ে ‘ক’ দলের একজন সদস্য ‘খ’ দলের গুলিতে মারা যায়। খ বিচারে আত্মপক্ষ সমর্থনে বলে যে, যদি সে গুলি না করিত তবে সে স্বয়ং নিহত হইত। সুতরাং আত্মরক্ষার খাতিরে সে ক দলের একজন সদস্যকে হত্যা করিয়াছে। খ আত্মরক্ষামূলক আইনের আশ্রয় লাভ করিতে পারে কিনা, আলোচনা করুন। [বার : ২০০২]
এবারে আসি, প্রস্তুতির তৃতীয় স্তর হিসেবে জুডিসিয়ারি বা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের এলএলবি কোর্সের প্রশ্ন হিসেবে আর কোনো ভ্যারিয়েশন উপস্থিত ছিলো কিনা। এখানে আমরা শুধুই জুডিসিয়ারির বিগত প্রশ্নগুলোর দিকে আলোকপাত করবো।
১. ক. সাধারণ ব্যতিক্রমসমূহ কি কি? কোনো একটি কাজ কোনো একটি ব্যতিক্রমের অন্তর্ভুক্ত দাবি করা হলে এ দাবি প্রমাণের দায়িত্ব কার ওপর বর্তায়?
খ. একজন ডাক্তার সরল বিশ্বাসে তার রোগীকে জানায় যে সে বাঁচবে না। এ কথা শোনার পর রোগীটি মানসিক আঘাতে মারা যায়। ডাক্তার জানতেন যে, একথা শোনার পর রোগীর মৃত্যু হতে পারে। এক্ষেত্রে ডাক্তারের কোনো অপরাধ হবে কি? দণ্ডবিধি, ১৮৬০ এর সংশ্লিষ্ট ধারা উল্লেখপূর্বক উত্তর দিন।[জুডি. : ২০০৭]২. ক. আত্মরক্ষার অধিকার বলতে কি বোঝেন? আত্মরক্ষার কতদুর পর্যন্ত প্রয়োগ করা যায়?
খ. আত্মরক্ষার অধিকার প্রয়োগে শরীর ও সম্পত্তি রক্ষার্থে কখন আক্রমণকারীর মৃত্যু ঘটানো যেতে পারে? উদাহরণসহ উত্তর দিন। [জুডি. : ২০১৩]৩. ‘ক’ ব্যথার কষ্ট নিয়ে একজন সার্জনের নিকট এলো, যিনি অস্ত্রপচারের ফলে ‘ক; এর মৃত্যু হতে পারে – এটা জেনেও ‘ক’ এর মৃত্যু ঘটানোর কোনো অভিপ্রায় ছাড়াই সরল বিশ্বাসে ‘ক’ এর মঙ্গলার্থে অস্ত্রপচারটি করেন। উক্ত অস্ত্রপচারের পর ‘ক’ মারা যায়। ‘ক’ এর মৃত্যুর জন্য সার্জনকে দায়ী করা যায় কি? ব্যাখ্যা করুন।[জুডি. : ২০১৪]
উপরোক্ত তিনটি প্রশ্ন জুডিসিয়ারিতে বিগত লিখিত পরীক্ষায় আসা প্রশ্ন। এরও বাইরে অন্যান্য সালেও প্রশ্ন এসেছে তবে তার বেশিরভাগই ২ নং প্রশ্নটির অনুরূপ। উপরন্তু ২ নং প্রশ্নটি মূলত বার কাউন্সিলের পরীক্ষাতেও কাছাকাছি ধারণাতেই বা ধরণেই এসেছিলো। তো, আমার প্রস্তাবিত তৃতীয় স্তরের প্রস্তুতি হিসেবে কিন্তু জুডিসিয়ারিতে আসা উপরোক্ত ১ নং এবং ৩ নং প্রশ্নটিও দেখে রাখতে হবে।
এরওপরে আর কিছু লাগে?!
অর্থাৎ টিপিক্যাল বা প্রথাগত সাজেশন হিসেবে বার কাউন্সিলের যেই প্রশ্ন পড়বেন সে সংশ্লিষ্ট বিগত সালের প্রবলেম বেজড প্রশ্ন দেখে যেতে হবে এবং জুডিসিয়ারিতে আসা প্রশ্নের ভ্যারিয়েশনগুলোও দেখে যেতে হবে।
কি বুঝলেন? প্যারা লাগতেছে নাকি? আমিতো মনে করি যারা এবারের এমসিকিউ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন, তাদের কাছে এসব মামুলি ব্যাপার-স্যাপার।
খানিক মার্কেটিং করে রাখি যে, আইনের ধারাপাত – লিখিত বইটিতে [মার্চের শেষ সপ্তাহে প্রকাশিতব্য] এই ধরনেই সাজানোর চেষ্টা করছি। জানিনা, কতটা পারবো; তবে চেষ্টা করবো। বইয়ে সবকিছু যুক্ত করতে না পারলেও অন্তত কোচিং এ সর্বোচ্চ এফোর্ট দিয়ে এগুলো শেখানোর চেষ্টা করবো।
সময় ডিস্ট্রিবিউশন : মিনিট বনাম শব্দসংখ্যা
পরীক্ষার প্রশ্নে মাণবণ্টন উল্লেখ থাকে। সাথে সর্বমোট সময়। কিন্তু পরীক্ষার্থীদের কাজ হচ্ছে সময় বণ্টন করে নেয়া প্রতিটি প্রশ্নের জন্য। তবে সময় বণ্টনের আগে দরকার নিজের সক্ষমতার নির্মোহ-বস্তুনিষ্ঠ পর্যালোচনা। যারা আমাদের সাথে আগে থেকে পরিচিত তারা জানেন যে, লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতির প্রাথমিক পরামর্শের সময়ই আমরা বলেছিলাম যে, আপনি মিনিটে কত শব্দ লিখতে পারেন সেটার একটা এ্যাভারেজ হিসেব করে নেন। আমরা আনুমানিক জনা চল্লিশেক শিক্ষার্থীর কাছ থেকে তাদের লিখতে পারার রেকর্ড নিয়েছি। প্রথম দিকে বেশি পারলেও দেখা যায় শেষমেষ মিনিটে ১৫/১৬ টি শব্দ বাংলায় লেখা যায়। এটা এভারেজ। কেউ হয়তো ১৮ টি, আবার কেউ ২০ টি শব্দও পারতে পারে। আমরা একটা কাঠামোবদ্ধ হিসাব করে দেখতে পারি।
৪ ঘণ্টায়, মানে ২৪০ মিনিটে ১০০ নম্বরের পরীক্ষা হলে প্রতিটি নম্বরের জন্য ২.৪ মিনিট পাওয়া যায়।
তাহলে ১৫ নম্বরের প্রশ্নের উত্তর লেখার জন্য সময় পাওয়া যায় – ১৫*২.৪ = ৩৬ মিনিট।
তো, যদি প্রতি মিনিটে ১৫ টি শব্দ আপনি গড়ে লিখতে পারেন তাহলে
আপনি ৩৬ মিনিটে লিখতে পারবেন – ১৫*৩৬ = ৫৪০ টি শব্দ।
এটাও মাথায় রাখুন যে, আরো ২ টি করে শব্দ বেশি লিখতে পারলেই
১৭*৩৬ = ৬১২ টি শব্দ লেখা সম্ভব।
এর চেয়েও বেশি সম্ভব।
আপনি যেসব নোট পড়লেন সেসবের শব্দসংখ্যা হিসেব করেছেন কি?
বলা বাহুল্য যে, ৪ ঘণ্টায় তার মানে আপনি এভারেজে ৩৬০০ শব্দ লিখতে পারবেন পুরো খাতা জুড়ে। কেউ কেউ হয়তো ৪০০০ শব্দ লিখতে পারবেন। আপনি যেই হ্যান্ডনোট বা গাইড বই পড়ছেন সেগুলোর শব্দসংখ্যা সম্ভবত কোনোটাতেই ৫৫০ থেকে ৬৫০ শব্দের ভেতরে নয়। এটা একটা অসুবিধা কিন্তু। সো, যে বই দেখেই প্রস্তুতি নিন না কেন, এমনভাবে পড়ুন যেন, আপনার সামর্থ্যে ঠিকঠাক খাপে খাপ মিলে যায় কমবেশি। আমার লেখা প্রকাশিতব্য ‘আইনের ধারাপাত – লিখিত’ বইয়ে সে বিবেচনা রাখার চেষ্টা করেছি। দেখা যাক।
ছোট উত্তর লিখে কি পাস করা সম্ভব?
অনেকেই মনে করেন যে, উত্তর ছোট হলে পাস করা যাবে তো? আমরা বরং উল্টো প্রশ্ন করতে চাই – বড় করে উত্তর লিখতে গিয়ে যদি ৮৫ নম্বরের উত্তর খাতায় দিয়ে আসেন তাহলে কি পাস করা সম্ভব?? সময়ের বিবেচনা, আপনার হাতের লেখার স্পিড এগুলো সবই কিন্তু বিবেচনায় নিতে হবে। ফলে উত্তর ছোট হলো কিনা সেটা নিয়ে টেনশন করে লাভ নাই। সেই বিখ্যাত গল্পটা মনে আছে কি আপনাদের? একসময় ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষার ইংরেজি ১ম পত্রে একটা ছোট গল্প ছিলো – A mother in Mannville নামে। মনে আছে? একটা বিখ্যাত কথোপকথন ছিলো এরকম –
He said, “I can chop some wood today.”
I said, “But I have a boy coming from the orphanage.”
“I’m the boy.”
“You? But you’re small.”
“Size doesn’t matter chopping wood,” he said.
মূল কথাটা হলো – যা চাইলো পরীক্ষায় তা ঠিকঠাক অল্প কথাতেই বলতে পারলে নম্বর পাবেন না কেন? আর আইনের বিষয়ে সাহিত্য লেখার দরকার নেই তো। আইনের বিষয় সবসময়ই যথাসম্ভব সংক্ষিপ্ত কিন্তু মূলানুগ হইলেই হয়ে যায়। ফলে বড় উত্তর নিয়া টেনশন নিবেন না।
শেষকথা
আসলে শেষকথা এখুনি বলার মতো পরিস্থিতি নেই। সময় কম। খুব রাফলি লিখলাম এই লেখাটি। ভবিষ্যতে আরো পরামর্শ নিয়ে আসতে থাকবো।
সকলের জন্য শুভকামনা।
অ্যাডভোকেট মুরাদ মোর্শেদ
লেখক : আইনের ধারাপাত – সিরিজ গ্রন্থের লেখক,
ফাউন্ডার : আইনকানুন একাডেমি ও juicylaw.com
যোগাযোগ : 01712-908561
Discussion about this post