খালেদা জিয়ার বিভিন্ন জন্ম তারিখ ব্যবহারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গত ৩১ মে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় রিট আবেদন করেছিলেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মামুন-অর-রশিদ। গত রবিবার রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি হয়েছে।
আদালত শুনানি শেষে খালেদা জিয়ার প্রকৃত জন্ম তারিখ নির্ধারণ করতে এসংক্রান্ত নথি চেয়েছেন।
আগামী ৬০ দিনের মধ্যে সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে এসব নথি সরবরাহ করতে বলা হয়েছে। এই রিটের পক্ষে শুনানি করেছেন আইনজীবী নাহিদ সুলতানা যুথী। তিনি সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক ট্রেজারার ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ল এলামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি।
রিটের কারণ ও খালেদা জিয়ার বিভিন্ন জন্মদিন নিয়ে কালের কণ্ঠকে গতকাল সোমবার দেওয়া এক সাক্ষাত্কারে নাহিদ সুলতানা যুথী বলেন, ‘একজন মানুষের জন্ম হয় একবারই। তাই তার জন্ম তারিখও একটাই হয়। অথচ বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া পাঁচ-ছয়টি জন্মদিন পালন করেন।
একজন মানুষের তো আলাদা জন্মদিন হতে পারে না। তাই আমি খালেদা জিয়ার আসল জন্ম তারিখ উন্মোচন করতে চাই। সেই সঙ্গে চাই জনগণও খালেদা জিয়ার আসল জন্মদিন কোনটি, তা জানুক।’
১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসে খালেদা জিয়ার জন্মদিন পালনের বিষয়ে এই আইনজীবী বলেন, জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের শাহাদতের দিনই কেন খালেদা জিয়ার জন্মদিন পালন করতে হলো বা উনি কেন জন্মদিন পালনের সিদ্ধান্ত নিলেন?
এটা তো জাতীয় শোক দিবস, উনি কী জনগণের শোককে উপহাস করে ফূর্তি করতে চান? তিনি যে বাঙালির শোক দিবসকে হেয় করতে চান, বিতর্ক সৃষ্টি করতে চান; এই জন্মদিন পালন থেকে কী সেটাই বোঝা যায় না?
নাহিদ সুলতানা বলেন, মাধ্যমিক পরীক্ষার সনদ অনুযায়ী খালেদা জিয়ার জন্মদিন ১৯৪৬ সালের ৫ সেপ্টেম্বর, কাবিননামায় ১৯৪৪ সালের ৯ আগস্ট, পাসপোর্ট অনুযায়ী ১৯৪৬ সালের ৫ আগস্ট এবং করোনাভাইরাস পরীক্ষার রিপোর্ট অনুযায়ী ১৯৪৬ সালের ৮ মে। ১৯৯১ সালে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর দৈনিক বাংলা পত্রিকায় খালেদা জিয়ার জন্মদিন হিসেবে উল্লেখ করা হয় ১৯৮৫ সালের ১৯ আগস্ট।
এ ছাড়া জাতীয় শোক দিবস ১৫ আগস্ট তিনি জন্মদিন পালন করেন। কোনো ব্যক্তির যদি এতগুলো জন্মদিন হয়, তাহলে কী জনগণ বিভ্রান্ত হচ্ছে না!
আইনজীবী নাহিদ সুলতানা বলেন, ‘খালেদা জিয়া কিন্তু আগে ১৫ আগস্ট জন্মদিন পালন করতেন না, ১৯৯৩ সালের ১৫ আগস্ট থেকে তিনি এই জন্মদিন পালন করেন। উনি কি এটা নির্বোধের মতো করছেন, নাকি বুঝে-শুনে করছেন বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর দিনটিকে বিতর্কিত করার জন্য?
এমন কাজ তো একমাত্র রাজাকাররা করতে পারে। খালেদা জিয়া কী তাহলে রাজাকারের তকমা নিয়েছেন? ১৫ আগস্টে খালেদা জিয়ার জন্মদিন পালন ব্যক্তিগতভাবে আমাকে ব্যথিত তো করেই, আমার মনে হয় পুরো জাতিকেই এটি কষ্ট দেয়। আমাদের তরুণ প্রজন্মও ব্যথিত হয় এমন ঘটনায়।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরো বলেন, ‘আমার পরিবারের দু-একজন সদস্যেরও জন্মদিন ১৫ আগস্ট। তারা কিন্তু ওই দিন নিজেদের জন্মদিন পালন করে না, বরং তারা ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করে খালেদা জিয়ার জন্মদিন পালন করাকে।
মুক্তিযুদ্ধে আমার পরিবারের অনেক সদস্য প্রাণও দিয়েছেন। আমার খুব কষ্ট হয় ভেবে একজন বয়স্ক মানুষ জাতির পিতার মৃত্যুদিনে, জাতীয় শোক দিবসে কিভাবে জন্মদিন পালন করেন! এটা তো রীতিমতো জাতিকে বিভ্রান্ত করা, বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি নিশ্চিহ্ন করার একটা অপপ্রয়াস। এতে জাতির পিতাকে চরমভাবে অবমাননা করা হয়।
তিনি বলেন, ‘এটা পরিকল্পিতভাবে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি বিনষ্ট করার অপপ্রয়াস। আমাদের তরুণ প্রজন্মকে এটা জানানোর চেষ্টা করা যে ১৫ আগস্ট খালেদা জিয়ার জন্মদিন, জাতীয় কোনো শোক দিবস নয়। এমন অপপ্রয়াস জাতি চায় না, আমরা চাই না। এমন অবস্থায় জাতি জানতে চায়, আমরাও জানাতে চাই, খালেদা জিয়ার আসল জন্মদিন কোনটা।
এটা যদি খালেদা জিয়ার আসল জন্মদিন হতো তাহলে জনগণ ভাবতো হয়তো বিরোধী দল হিসেবে পালন করছে। কিন্তু নকল জন্মদিন বানিয়ে যদি পালন করা হয়, সেটা অবশ্যই অপরাধ। এ ছাড়া একজন মানুষের অনেক জন্মদিন রাখা আইনতও অপরাধ। খালেদা জিয়া তিনবারের প্রধানমন্ত্রী, এমন অপরাধ করা কি উনার সাজে?’
Discussion about this post