নিজস্ব প্রতিবেদক: সুপেয় পানি পাওয়ার বিষয়ে ওয়াসার পানি পরীক্ষা করার জন্য হাইকোর্টের নির্দেশে গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটির সুপারিশ বা মতামত সংক্রান্ত প্রতিবেদনের শুনানির জন্য ১১ ডিসেম্বর (বুধবার) দিন ঠিক করেছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে পরীক্ষার বিষয়ে বিশেষজ্ঞ কমিটির দু’টি প্রতিবেদনের মতামত ওপর সেদিন হলফনামা আকারে দাখিল করা হবে।
বুধবার (৪ ডিসেম্বর) হাইকোর্টের বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
এর আগে পানি পরীক্ষায় আদালতের নির্দেশে গঠিত চার সদস্যের কমিটির প্রতিবেদন গত ৭ জুলাই আদালতে উপস্থাপন করা হয়। সেই প্রতিবেদনে ঢাকা ওয়াসার ১০টি বিতরণ জোনের ৩৪টি নমুনার মধ্যে ৮টি পানির নমুনায় ব্যাকটেরিয়া জনিত দূষণ রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়।
পরে ওয়াসার আইনজীবী ব্যারিস্টার এ এম মাসুম বলেছিলেন, সমন্বিত প্রতিবেদন আসার পর সেখানে জোন-১ ও জোন-৪- একটি মিরপুর অপরটি পাতলা খান লেনে পাওয়া ব্যাকটেরিয়া মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর বলে উল্লেখ করেছেন। সেই ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া হলো ফেকেল ও ই-কোলাই।
সমন্বিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কমিটি ঢাকা ওয়াসার ১০টি বিতরণ জোনের বিভিন্ন এলাকা থেকে দৈবচয়ন ও দূষণের অভিযোগ রয়েছে এমন ৩৪টি স্থান থেকে নমুনা সংগ্রহ করে। এর মধ্যে ৮টি নমুনায় ব্যাকটেরিয়া জনিত দূষণ পাওয়া গেছে।
পরে ওয়াসা পাতলা খান লেন ও মিরপুর জোনের পানি সংশোধন করে বুয়েট ও ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ডায়রিয়াল ডিজিজ রিসার্চ, বাংলাদেশের (আইসিডিডিআর,বি) প্রতিবেদন হাইকোর্টে দাখিল করে।
৩০ জুলাই হাইকোর্ট ওই দুই প্রতিবেদনের ওপর বিশেষজ্ঞ কমিটির মতামত চান। সে অনুসারে মতামত ইতোমধ্যে অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ে জমা দেয়া হয়েছে। সেটিই বুধবার আদালত দাখিল করা হবে।
এর আগে গত ১৬ মে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের পক্ষে পানি পরীক্ষা বিষয়ে একটি প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করেন রাষ্ট্রপক্ষ। প্রতিবেদনে ঢাকা ওয়াসার লিংকে (হটলাইন) গত তিন মাসে ময়লা পানির অভিযোগের তালিকা বিশ্লেষণ করে ১০টি জোনের ৫৯ এলাকায় ময়লা পানির প্রবণতা বেশি বলে উল্লেখ করা হয়।
এতে বলা হয়, গত ১৪ মে পানি পরীক্ষা কমিটির তৃতীয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বুয়েট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) এবং আইসিডিডিআর,বি এর ল্যাবে পানির বিভিন্ন প্যারামিটারের মূল্যহার একীভূত করে মোট বাজেট সংযুক্ত করা হলো।
বাজেটে বলা হয়, এ ১০টি জোনের প্রত্যেক এলাকা থেকে ৩৫৫টি নমুনা সংগ্রহ করা হবে। ফলে মোট নমুনার সংখ্যা দাঁড়াবে এক হাজার ৬৫টি। এই এক হাজার ৬৫টি নমুনা তিনটি ল্যাবরেটরিতে রোগজীবাণু ও ভৌত রাসায়নিক সংক্রান্ত পরীক্ষা করতে খরচ হবে মোট ৭৫ লাখ ৬১ হাজার ৫০০ টাকা।
এ প্রতিবেদন আদালতে উপস্থাপনে হাইকোর্ট বেঞ্চ এ বিষয়ে মতামত শুনতে ওই কমিটির সদস্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অণুজীব বিজ্ঞান বিভাগের (মাইক্রোবায়োলজি ডিপার্টমেন্ট) চেয়ারম্যান ড. সাবিতা রেজওয়ানা রহমানকে আদালতে আসতে বলেন।
এ আদেশ অনুসারে অধ্যাপক সাবিতা রিজওয়ানা রহমান গত ২১ মে হাইকোর্টে যান। ওই আদালতে অধ্যাপক সাবিতা বলেন, যেসব পানিতে ময়লা দেখা যাচ্ছে বা ঘোলা সেটা তো পরীক্ষার দরকার নেই, সেটা রিজেক্টেড। যেটা সাধারণত স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ এমন পরিষ্কার পানি পরীক্ষায় অগ্রাধিকার দেই, যা পান করে কোনো এলাকার রোগ ছড়াবার তথ্য মেলে। ওয়াসা যে রিপোর্ট দিয়েছে ৫৯ এলাকা নিয়ে সেটা তো কয়েক মাস আগে। ওয়াসার পানির উৎস হলো ভূমিস্থ, ভূগর্ভস্থ, শীতলক্ষ্যা বা বুড়িগঙ্গা। এসব উৎসের পানি ‘সিজন টু সিজনে’ তারতম্য থাকতে পারে।
পানি পরীক্ষার খরচের বিষয়ে তিনি বলেন, প্রতি স্যাম্পলে পাঁচ হাজার টাকা খরচ হবে। সেক্ষেত্রে ৩৪ স্যাম্পলে মোট খরচ হবে এক লাখ ৭০ হাজার টাকা। এরপর আদালত আদেশে হাইকোর্ট ৩৪ পয়েন্টে নমুনা সংগ্রহে পানি পরীক্ষা করে আদালতে প্রতিবেদন দেয়ার নির্দেশ দেন। ওই আদেশ অনুসারে, গত ২৭ জুন অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ে তা হস্তান্তর করেন।
এক রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে গত বছরের ৬ নভেম্বর হাইকোর্ট ঢাকা ওয়াসার পানি পরীক্ষার জন্য প্রতিষ্ঠানের নাম-উল্লেখ করে চার সদস্যের কমিটি গঠন করার আদেশ দেন।
গত ১৮ এপ্রিল স্থানীয় সরকার বিভাগের অতিরিক্ত সচিবকে আহ্বায়ক করে চার সদস্যের কমিটি গঠন করে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়।
কমিটির সদস্যরা হলেন- আইসিডিডিআর,বির জ্যেষ্ঠ বিজ্ঞানী মনিরুল আলম, বুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক এ বি এম বদরুজ্জামান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অণুজীব বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান সাবিতা রিজওয়ানা রহমান।
Discussion about this post